অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি লালন মেলা
শুভ চন্দ্র শীল, কুষ্টিয়া থেকে ফিরে
দীর্ঘদিন ধরে অসাম্প্রদায়িক দেশের কর্তাগিরি দখল করে আছে লালন উৎসব। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের এক টুকরো প্রতিচ্ছবি হচ্ছে কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ার এই ‘লালন মেলা’। যেই মেলায় দেখা মিলে সাম্যের। থাকে না কোন ধর্ম-বণ, জাত-পাত। মানুষের মতো মানুষ হওয়ার ব্রত নিয়ে লালনের যে সংগ্রাম-আদর্শ, তারই স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতিবছরের ন্যায় এবারো কুষ্টিয়ার কুমারখালীর লালন মাজারে ১৬ অক্টোবর থেকে চারদিনব্যাপী লালন মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
সরকার জাতীয়ভাবে উদযাপনের ঘোষণা ও কর্মসূচি নেওয়ায় অন্যবারের তুলনায় এবার বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান দিবস পালন হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশে। শুধু কুষ্টিয়ার কুমারখালীর লালন মাজারে নয়, দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও লালনের উৎসব আয়োজন করার খবর পাওয়া গেছে। বিশেষ করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে জাতীয়ভাবে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত লালন উৎসব এক বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে।
মেলা আয়োজক কমিটির এক সদস্য বলেন, লালন বলে গেছেন- মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি। মানুষকে ভালোবাসতে হবে, স্রষ্টার সৃষ্টিকে ভালোবাসতে হবে তবে জীবনের আসল স্বাদ পাওয়া যাবে। লোভ-হিংসা কিংবা বিভেদ নয়, মানুষকে কাছে টেনে নিতে পারলেই লালনকে ভালোবাসা যায়। গুরুজীর বাণী, ধ্যান-তত্ত্ব মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতেই এই আয়োজন।
গত ১৯ অক্টোবর সরেজমিনে, লালন উৎসবে দেখা মিলে সকল ধর্ম-বর্ণ, জাত-পাতবিহীন মানুষের এক মিলনমেলা। পুরো আখড়াবাড়িতে যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। সাধু, বাউল, লালনভক্ত আর অনুসারীদের গান, আলোচনা এবং ভাব বিনিময়ে মুখর ছিল এলাকাটি। এছাড়াও বিদেশি নাগরিকদের মেলায় বাউল গান পরিবেশন ও পরিদর্শন করতে দেখা মিলে। হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ মেলা- খেলনা, দোলনা, মাটির তৈজসপত্র, মুড়ি-মুড়কি, তিলের খাজা, মিষ্টান্নের বাহারি দোকান ও সুসজ্জিত পৃথক পৃথক গানের আসরও ছিল সারিবদ্ধভাবে। এছাড়াও লালন আখড়ায় সরকারিভাবে পরিচালিত তিনদিনব্যাপী সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় ছিল দর্শক-ভক্তদের উপচেপড়া ভিড়। মেলা প্রাঙ্গনসহ পুরো শহরটি ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তার চাদরে।
একটা সময় মেলাটি খুলনা-রাজশাহী অঞ্চলের মিলনমেলা হলেও আস্তে আস্তে মেলাটি দেশের জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়। এ বছরের মেলায় রাশিয়া, ফ্রান্স ও ভারতসহ বিভিন্ন বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা অনেকাংশে ছিল বলে জানান মেলা কর্তৃপক্ষ।
নবতৃণ আখড়াবাড়ির এক শিল্পী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাউল মেলায় প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ আসে। তবুও ‘প্রকৃত মানুষ’ খুঁজে পাওয়া যায় না। দেখলেন তো এবার কত মাজারে ভাঙচুর হলো। গত সপ্তাহেও এক বাউলের ওপর হামলা করছে। সাধুরা গান করে, ঢোল বাজায়, এসব-ই এখন তাদের দোষ।
লালন-ভক্ত অনুরাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুরুর দিক থেকে লালন মেলার আয়োজক এবং পরিচালনা দায়দায়িত্ব ছিল ‘একতারা বহনকারী’দের হাতে। আস্তে আস্তে মেলাও সরকারিকরণ হয়ে গেছে।
তাদের অভিযোগ, লালন সারা বিশ্বের। লালন সমগ্র জগতের। লালনকে একটা দেশের সম্পদ বানানো মানে তাকে ছোট করা। ফকির-সন্নাসীদের দাবি, লালন মেলার আয়োজক তালিকায় প্রকৃত সাধু, ভক্ত, বাউল, ফকির, সন্নাসী ও লালন অনুসারীদের রাখতে হবে।
প্রথম পাতা
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক কনভেনশন ৩১ অক্টোবর
বাম-গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা হলেই কৃষকের প্রকৃত মুক্তি আসবে
শিক্ষকদের তিন দফাসহ সব দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান
কমরেড ইলাহদাদ খানের চিরপ্রস্থান
‘দেশের কোনো সম্পদ বিদেশিদের দেওয়ার অধিকার কারোর নেই’
সিপিবির কর্মসূচি
জুলাই সনদ ও বামপন্থিদের নীতিনিষ্ঠ অবস্থান
‘মুদ্রাদোষ’
এসব কিসের আলামত?
কমরেড আহসান উল্লাহ চৌধুরীর জীবনাবসান
ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা ২৬০ ছাড়াল
Login to comment..








প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন