এসব কিসের আলামত?

আহমেদ মিঠু

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
দেশে চরম রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেই হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা জনমনে নতুন করে সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে পর পর তিনটি বড় অগ্নিকাণ্ড নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা। চট্টগ্রাম ও ঢাকায় শিল্প কারখানার পর দেশের প্রধান বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া স্রেফ দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত নাশকতা- তা এখনো স্পষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষিত নির্বাচনের সময় যতো ঘনিয়ে আসছে, ষড়যন্ত্রের নানামুখী শক্তি যে ততোই তৎপর হচ্ছে- এ নিয়ে কারোই সন্দেহ নেই। বিভিন্নভাবে এর আলামতও স্পষ্ট হচ্ছে। গত ১৪ অক্টোবর ঢাকার মিরপুরে ভবনে পোশাক কারখানা ও রাসায়নিক গুদামে ভয়াবহ আগুনে ১৬ জন শ্রমিকের প্রাণ যায়। এরপর ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম ইপিজেডে আগুন লেগে একটি কারখানা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। এই দুটি ঘটনার রেশ না কাটতেই ১৮ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে কারখানায় আগুনের ঘটনার পরই অনেকে এগুলো অস্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেন। এরপর বিমানবন্দরের মতো জায়গায় ভয়াবহ আগুন সেই সন্দেহ আরো বাড়িয়ে দেয়। এবার খোদ সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতেও ‘নাশকতা’র সন্দেহ করা হয়। বলা হয়, ‘নাশকতা বা অগ্নিসংযোগের কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে সরকার তাৎক্ষণিক ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে। কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বা উসকানির মাধ্যমে জনজীবন ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করার সুযোগ দেওয়া হবে না।’ দেশ ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অর্থাৎ, নির্বাচন বিঘ্নিত করতে কোন না কোন মহল যে ভেতরে ভেতরে খেলাধূলায় মেতে উঠেছে, সরকারের এই বিবৃতিতে তার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। বাংলাদেশকে ঘিরে বহুমুখী ষড়যন্ত্র নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে এদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা জিইয়ে রেখে ভূ-রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করে নেওয়া সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বহু দিনের কৌশল। তারা কখনো বাংলাদেশে স্থিতিশীল গণতন্ত্র ও জনগণের প্রকৃত ক্ষমতায়ন চায় না। বিগত দেড় দশকে ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী গণতন্ত্রকে হরণ করে, নির্বাচনের নামে প্রহসন করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছে। প্রতিবারই সাম্রাজ্যবাদীরা লোকদেখানো নানা তৎপরতা চালালেও অনির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়নি। দীর্ঘদিন ধরে ওৎ পেতে থাকা সেই সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী শক্তি বাংলাদেশের উপর আধিপত্য বিস্তারে এখন মরণকামড় দিতে চাইছে। সেজন্য তারা চলমান অস্থিতিশীলতা দীর্ঘায়িত করতে চাইছে। অন্তবর্তীকালীন সরকারের নতজানু নীতির কারণে বাংলাদেশ ঘিরে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদসহ বিদেশি শক্তির নানা নীল-নকশা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় রেখে চট্টগ্রাম বন্দরসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার নীলনকশা বাস্তবায়নে উঠেপড়ে লেগেছে। ইতিহাস বলছে, বাংলাদেশে সাম্রাজ্যবাদ ও বহুজাতিক পুঁজির সবচেয়ে বড় দোসর হলো মৌলবাদ। গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগের চরম অপশাসন ও নীতিহীন রাজনীতির সুযোগে দেশে দক্ষিণপন্থী উগ্র প্রতিক্রিয়াশীলতার চরম উত্থান ঘটেছে। ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সাম্প্রদাায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে সমাজকে চরমভাবে বিভক্ত করে এই অপশক্তিটি এখন রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে উঠেপড়ে লেগেছে। প্রকাশ্য আস্ফালনের পাশাপাশি উগ্রবাদীদের গোপন তৎপরতাও অব্যাহত রয়েছে। রাজনীতির ঘোলাটে পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে একাত্তরের পরাজিত প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীটি এখন রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো আগামী ফেব্রুয়ারিতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তাদের স্বপ্নভঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। এটা তাদের কাছেও দিবালোকের মতো পরিস্কার। এ কারণে এই অপশক্তিটি মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও পরিস্থিতি পুরোপুরি তাদের অনুকূল না হলে নির্বাচন হতে দিতে চায় না। এ কারণে এই গোষ্ঠিট পরিকল্পিত অস্থিরতা সৃষ্টি করে নির্বাচন বানচালের পরিবেশ সৃষ্টি করেত পারে বলে সাধারণ মানুষের ধারণা। অন্যদিকে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকলেও ড. ইউনূসের সরকার জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে জীবন-জীবিকার সমস্যা সমাধান ও দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে নিতে দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়ায় পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি নানা ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়া এই শক্তিটি দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে ১৫ বছরের হত্যা-গুম-দুর্নীতির বিচার ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা নস্যাৎ করতে চায়। নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষায় তারা মরণকামড় দিবে- এতে কোন সন্দেহ নেই। বহুমুখী এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে চলমান সংকট থেকে উত্তরণের একটাই পথ, দ্রুততম সময়ের মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা। যে কোন ধরনের সংশয় ও ষড়যন্ত্র কাটিয়ে ঘোষিত সময়ের মধ্যে টাকার খেলা, পেশীশক্তির দাপট, প্রশাসনিক কারসাজি ও মৌলবাদী আস্ফালনমুক্ত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করা হবে- দেশবাসীর প্রত্যাশা এটাই।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..