জুলাই সনদ ও বামপন্থিদের নীতিনিষ্ঠ অবস্থান

মো. কিবরিয়া

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
সাম্প্রতিক সময়ে বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে জুলাই সনদ স্বাক্ষর করা হলো। নয় মাস ধরে দীর্ঘ আলাপ আলোচনার পর শেষদিকে অনেকটা তড়িঘড়ি করে, এবং এর বাস্তবায়নের উপায় সম্পর্কিত আলোচনা অমীমাংসিত রেখেই সনদ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠান করা হলো। প্রধান উপদেষ্টা অত্যন্ত আনন্দের সাথে বললেন, “এই সনদ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আমরা বর্বরতা থেকে সভ্যতার জগতে এসেছি!” একসময় ব্রিটিশরা এসে যেমন আমাদের ‘সভ্য’ করেছিলো, এখনো পশ্চিমারা দেশে দেশে গণতন্ত্র ফেরি করার নামে নয়া উদারবাদের আড়ালে নয়া উপনিবেশ স্থাপন করে ‘বর্বর’দের ‘সভ্য’ বানানোর প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে গঠিত ঐকমত্য কমিশন সেভাবে আমাদের ‘সভ্য’ বানিয়েছেন বলে মনে করছেন কি না, তা আমাদের জানা নেই। সভ্যতার নিদর্শন (!) এই জুলাই সনদে এতদিন ‘বর্বর’ হয়ে থাকা জনগণের দৈনন্দিন জীবনযাপনের সাথে সম্পর্কিত কোনো বিষয় অবশ্য ঠাঁই পায়নি। সরকার শিক্ষা ও কৃষির মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংস্কার করার মত কোনো প্রয়োজন মনে করেননি, তাই সে বিষয়ে কমিশনই গঠন করেননি। আবার শ্রম, নারী, পুলিশ ইত্যাদি বিষয়ে সংস্কার কমিশন গঠন করলেও তার কোনো সুপারিশ ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হতে পারেনি। যেহেতু বর্বরতা থেকে সভ্যতায় উত্তরণের বিষয়টি কেবল শাসনতান্ত্রিক(!), তাই মৌলিক আর্থসামাজিক কাঠামোকে অক্ষুণ্ন রেখেই সংবিধান ও শাসনপদ্ধতির উপরিকাঠামোয় কিছু সংস্কার করলেই দেশ নতুন সভ্যতায় প্রবেশ করবে, ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন ঘটবে, রাষ্ট্র আপনা আপনি গণতান্ত্রিক হয়ে উঠবে, এমন বয়ানই তৈরি করার আপ্রাণ চেষ্টা হয়েছে। সিপিবিসহ চারটি বামপন্থি দল এবং এনসিপি এই বহুল আলোচিত জুলাই সনদে এখনো স্বাক্ষর করেনি। বামপন্থি দলগুলো এবং এনসিপি সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন কারণে এই সনদে স্বাক্ষর করেনি। এনসিপি মূলত চায় জুলাই সনদে উত্থাপিত ভিন্নমতগুলোকে নির্বাচনের আগেই গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করে পরবর্তী জাতীয় সংসদকে গণপরিষদ বা সংস্কার সভার ক্ষমতা দিয়ে নতুন ‘২৬’-এর সংবিধান রচনা করতে। তাদের মূল ভাবনাজুড়ে আছে কেবল সংবিধান। তাদের কাছে সংবিধানই হলো ফ্যাসিবাদের মূল ভিত্তি। বিদ্যমান আর্থসামাজিক কাঠামোকে অক্ষুণ্ন রেখে সংবিধান বদলাতে পারলেই দেশে ফ্যাসিবাদ নির্মূল হয়ে যাবে, এরকম অলীক কল্পনার জগতে তারা বাস করে। অথচ ‘বৈষম্যবিরোধী’ ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রনেতারা যখন ‘নতুন বন্দোবস্ত’-এর কথা বলে দল তৈরি করেছিলেন, তখন কেউ কেউ তাদের কাছে অনেক আশা করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তাদের নতুন বন্দোবস্ত উপরিকাঠামোর কিছু বদলের নামে জনস্বার্থমূলক বিষয়গুলোর আমূল পরিবর্তনের ইস্যুকে আড়াল করে পুরনো ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখারই বন্দোবস্ত। সুতরাং পুরনো ব্যবস্থার দলগুলোর সংস্কারের বয়ান এবং বর্তমান ইন্টেরিম আবিষ্কৃত ‘সভ্যতা’র বয়ানের সাথে তাদের খুব বেশি দূরত্ব নেই। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে মতপার্থক্য দূর হলে তারাও জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে বলে জানিয়েছে। অন্যদিকে সিপিবিসহ চারটি বামপন্থি দল জুলাই সনদে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বিষয়ে তাদের আপত্তি বারবার জানিয়েছেন। তারা বারবার বলেছেন, সব দলের ঐকমত্য হওয়া বিষয়গুলোই কেবল জুলাই সনদের মূল অংশে থাকতে পারে, প্রয়োজন হলে ভিন্নমতগুলো অতিরিক্ত (অ্যানেক্স) প্রতিবেদনে সংযুক্ত করা যেতে পারে। কমিশন এই প্রস্তাব আমলে নেয়নি। এর ফলে আদর্শিকভাবে পুরোপুরি বিপরীত মেরুর বিষয়গুলোতেও ‘ভিন্নমতসহ’ পরোক্ষ সম্মতি দিতে দলগুলোকে বাধ্য করা হয়েছে। সংবিধানের মূলনীতিসহ অন্যান্য আদর্শিক বিষয়ে বিপরীত আদর্শিক মেরুর দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য সম্ভব নয়, এই বিবেচনা থেকে এ বিষয়গুলোকে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার এজেন্ডা থেকে বাদ রাখতে বারবার অনুরোধ করলেও তারা তাতে কর্ণপাত করেনি। সংবিধান সংস্কার কমিশন যে ব্যাখ্যা দিয়ে সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার মত মৌলিক আদর্শিক বিষয়কে সংবিধান থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছিল, তাকেই ঐকমত্য কমিশন নানা কৌশলে বাস্তবায়ন করতে চেয়েছে। এইসব মতামতের সাথে বাম দলগুলো আদর্শিকভাবেই একমত হতে পারে না। এছাড়াও সনদের পটভূমিতে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাস সঠিকভাবে উপস্থাপন না করে ইতিহাসের একতরফা বয়ান যুক্ত করা হয়েছে। জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা মানে সেই বয়ানে একমত পোষণ করা। এছাড়াও ভিন্নমত থাকা সত্ত্বেও জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করা, জুলাই সনদের বিষয়ে আদালতে আপত্তি উপস্থাপন না করার অঙ্গীকার করা, এসব বিষয় গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করে বলে বাম দলগুলো মনে করেছে। এছাড়াও সংবিধানের তফসিল থেকে প্রক্লেমেশন অফ ইন্ডেপেন্ডেন্স, ডিক্লারেশন অফ ইন্ডেপেন্ডেন্স বাদ দেয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্তেরও বিরোধিতা করেছে বাম দলগুলো। তাদের এইসব মৌলিক আপত্তির মুখে কেবলমাত্র স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করলেও বাকি বিষয়ে ঐকমত্য কমিশন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সুতরাং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাম দলগুলোর সনদে স্বাক্ষর করার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। অথচ, রাষ্ট্রের মৌলিক পরিবর্তনের বিষয়গুলো এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত নেই জেনেও বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো আন্তরিকভাবেই ঐকমত্য কমিশনে আলোচনায় অংশ নিয়েছিল। রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য উপরিকাঠামোর কিছু প্রয়োজনীয় সংস্কার করেও গণতান্ত্রিক সংগ্রামের পথে যদি কিছুটা অগ্রসর হওয়া যায়, সেটি ছিলো তাদের লক্ষ্য। তারা ঐকমত্য কমিশনে রাষ্ট্রের শাসনতান্ত্রিক বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ মত দিয়েছে, বহুক্ষেত্রে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে একমত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- ঐকমত্য কমিশন প্রস্তাবিত বিষয়গুলোর মধ্যে মাত্র ৯-১০টিতে সিপিবি ভিন্নমত দিয়েছে, ৬-৭টি বিষয়ে বিরত থেকেছে, বাকিগুলোতে একমত পোষণ করেছে। কিছুক্ষেত্রে আলোচনায় বামপন্থিদের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। সবকিছুর পরেও যদি রাষ্ট্রকে অধিকতর গণতান্ত্রিক করা, ক্ষমতা ভারসাম্য তৈরি করাই এই সনদের উদ্দেশ্য হত, সিপিবিসহ বামপন্থিরা তাকে সমর্থন করতে দ্বিধা করতো না। একারণে একমত না হয়েও অনেক বিষয়ে ঐকমত্যের জন্য তারা আলোচনা থেকে বিরত থেকেছে, কোন বিষয়ে নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসে একমত হয়েছে। কিন্তু ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদের পটভূমিতে যেভাবে একতরফা ইতিহাসের বয়ান দিয়েছে, তফসিল থেকে যেভাবে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল মুছে ফেলতে চেয়েছে, সংবিধানের মূলনীতির মত আদর্শিক বিষয় যেভাবে চাপিয়ে দিতে চেয়েছে, সনদের অঙ্গীকারনামায় যেভাবে হাত-পা বেঁধে দিতে চেয়েছে, তাতে বোঝা গেছে, জুলাই সনদের উদ্দেশ্য নিছক গণতান্ত্রিক সংস্কার নয়, বরং এর অন্যতম এজেন্ডা ইতিহাসের একতরফা বয়ান প্রতিষ্ঠিত করা এবং সংবিধানকে ডানপন্থি, মুক্তবাজার উপযোগী করা। এরকম হবার সম্ভাবনা আছে জেনেও বামপন্থিরা ঐকমত্য কমিশনে অংশ নিয়েছে, কেননা এর মাধ্যমে তারা নিজেদের অবস্থানকে স্পষ্ট করতে চেয়েছে, রাষ্ট্রের উপরিকাঠামোর অধিকতর গণতন্ত্রায়নের এজেন্ডায় অবদান রাখতে চেয়েছে এবং জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম স্টেকহোল্ডার হিসেবে বোঝাতে চেয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থান কেবল ডানপন্থিদের নয়। ঐকমত্য কমিশনের ভেতরে ও বাইরে বামপন্থিদের নীতিনিষ্ঠ অবস্থান বিভিন্ন ক্ষেত্রে উগ্র ডানপন্থিদের বিভিন্ন প্রস্তাবনাকে সফল হতে দেয়নি। কিন্তু, রাষ্ট্রের উপরিকাঠামোর গণতন্ত্রায়নের জন্য সংবিধানের অপারেটিভ অংশে কতক জরুরি সংস্কারের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে, আদর্শিক ও রাজনৈতিক প্রশ্নগুলোকে এজেন্ডায় নিয়ে এসে, ঐকমত্য কমিশন বামপন্থিদের স্বাক্ষর করার সুযোগ রাখেনি। বামপন্থিরা কোনো চাপ বা প্রলোভনের মুখে আদর্শিক পজিশনের কাছে সারেন্ডার করে সেখানে স্বাক্ষরও করেনি। ইতিহাসে গণপরিষদ বিতর্কে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বা মানবেন্দ্র লারমার কথা যেভাবে উল্লেখ আছে, হয়তো একসময় বামপন্থিদের এই অবস্থানও সেভাবে আলোচিত হবে। বামপন্থিরা স্পষ্ট করে বলেছে, সনদে স্বাক্ষর না করলেও ঐকমত্য কমিশনে যেসব বিষয়ে তারা একমত হয়েছে, তা বাস্তবায়নের জন্য তারা সহযোগিতা করবে। কিন্তু আদর্শিক বিষয়ে রাজনৈতিক লড়াই তারা চালিয়ে যাবে। একথা সকলেরই উপলব্ধিতে আনা জরুরি যে, জুলাই গণঅভ্যুত্থান কোনো নির্দিষ্ট দল বা ইশতেহার সামনে নিয়ে হয়নি। জনগণ এই গণঅভ্যুত্থানের মূল শক্তি, জনগণের কাতারে থেকেই বামপন্থিরা এই অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অথচ দেখা গেল জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ডানপন্থিরা, কতকক্ষেত্রে উগ্র ডানপন্থি শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতার ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে। উগ্রডানপন্থি-মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি বুক ফুলিয়ে তাদের বয়ান শুধু প্রচার করছে তা-ই নয়, কতকক্ষেত্রে তা চাপিয়ে দিচ্ছে, ভিন্নমতের ওপর হামলে পড়েছে। বামপন্থিদের বড় অংশই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিলেও তারা কেন পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেনি, তার অনেক বাস্তব কারণ আছে। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বর্তমানের আর্থ-সামাজিক নানা উপাদানের কারণে ডানপন্থিরা সমাজে ও রাষ্ট্রে শক্ত অবস্থান করে নিয়েছে। বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, দেশি বিদেশি নানা স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর স্বার্থের সাথেও ডানপন্থি শক্তি নানাভাবে নিজেদের অভিযোজিত করে নিয়েছে। ফলত, ইন্টেরিম সরকারও ডানপন্থিদের মদদ দিয়েছে। এর পাশাপাশি এটাও সত্যি যে, বামপন্থি দাবিদারদের এক অংশ আওয়ামী লীগের সাথে জোটবদ্ধ ছিলো, এক অংশ দক্ষিণপন্থিদের উত্থানের ভয়ে আওয়ামী পতনের লড়াইয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলো। বামপন্থি দাবিদারদের কারো কারো এ ধরনের অবস্থানের কারণে বামপন্থিদের মার্জিনালাইজ করা ডানপন্থি শক্তির জন্য সহজ হয়েছে। আওয়ামী শাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বামপন্থি দলের বহু নেতাকর্মী ১৫-১৬ বছর মার খেয়েছে, জেলে গিয়েছে, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের মধ্যে বামপন্থিরাও রয়েছেন, কিন্তু সেই লড়াইকে নানাভাবে ভুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে আওয়ামীপন্থিরা যেমন মুক্তিযুদ্ধ ও আওয়ামী লীগকে সমার্থক হিসেবে প্রচার করেছে, একইভাবে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরাও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বামপন্থিদের যেকোনো অবস্থানকে আওয়ামী বয়ান হিসেবে প্রচার করার চেষ্টা করছে। এই সুযোগে পতিত স্বৈরাচার ও তাদের মদদপুষ্টরা জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেয়ার জন্য বামপন্থিদের নানাভাবে আক্রমণ করছে, সে অংশগ্রহণকে ভুল হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করতে চেষ্টা করছে। ইন্টেরিমের ডানঘেঁষা অবস্থান তাদের বয়ানকেও শক্তিশালী করছে। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও বামপন্থিরা কিন্তু সাধ্যমতো লড়াই করছে। ডানপন্থিদের এক অংশ প্রথমেই চেয়েছিল সংবিধানকে ছুঁড়ে ফেলতে, মুক্তিযুদ্ধকে ৪৭ দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে। এর বিরুদ্ধে বামপন্থিরা লড়েছে। মুক্তিযুদ্ধকে আওয়ামী বয়ানের বাইরে নিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধকে রক্ষার লড়াই তারা করেছে এবং করে যাচ্ছে। ৭১-এর বিভিন্ন নিশানা মুছে দেওয়ার যে প্রক্রিয়া তার বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নিয়েছে বামপন্থিরা। সংবিধানকে ছুঁড়ে ফেলার নামে, পুনর্লিখনের নামে তাকে ডানপন্থি চেহারা দেওয়ার আয়োজনের বিরুদ্ধেও লড়ছে বামপন্থিরা। দৃঢ় এ অবস্থানের জন্য উগ্র ডানপন্থি ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি কিছু ক্ষেত্রে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। তবে শক্তি ভারসাম্য অনুকূলে না থাকায়, ডানপন্থিদের বয়ান অনেকক্ষেত্রে শক্তিশালী অবস্থান করে নিচ্ছে। এই সময়ে বামপন্থিরা একই সাথে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। করিডোর প্রদান, বন্দরকে আলাপ আলোচনা ছাড়াই তাড়াহুড়া করে বিদেশি কোম্পানির কাছে লিজ দেওয়ার বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে। আজ বিভিন্ন মহলে বামপন্থিদের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে নানাদিক থেকে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। বামপন্থিরাও জনগণের কাছে নিজেদের অবস্থান ভালোভাবে তুলে ধরতে হয়তো কিছুক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। তবুও বামপন্থিদের এই নীতিনিষ্ঠ অবস্থান, ভবিষ্যতে জনগণের লড়াইকে আরো এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে– এ প্রত্যাশা করাই যায়।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..