
একতা প্রতিবেদক :
চা-শ্রমিকরা এদেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখলেও স্বাধীন বাংলাদেশে চরম রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের শিকার। নাগরিকদেরঅধিকার থেকে বঞ্চিত চা-জনগোষ্ঠীর মানুষেরা। বাঁচার মত মজুরি, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষার মত মৌলিক অধিকারগুলো রাষ্ট্র এখনো নিশ্চিত করতে পারে নি। ব্রিটিশ আমলের নানা কালা কানুন এখনো চা-বাগানগুলোতে অটুট আছে। চা-শ্রমিকদের মজুরি বঞ্চনা থেকে শুরু করে এই শোষণ-বৈষম্য থেকে মক্ত করতে চা-শ্রমিকদের লড়াইয়ের পাশে দেশের সচেতন নাগরিকদের দাঁড়াতে হবে।
২৭ নভেম্বর চা-শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র ‘র ৩য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে খাদিম চা-বাগানে সমাবেশে সংগঠনের সভাপতি এবং খাদিম চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি সবুজ তাঁতি এসব কথা বলেন।
শ্রমিকনেতা সবুজ তাঁতির সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মনীষা ওয়াহিদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি সৈয়দ ফরহাদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক খায়রুল হাছান, সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রধান সমন্বয়ক এস এম শুভ, খাদিম চা-বাগানের শ্রমিক অনিতা নায়েক, চা-শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের দপ্তর সম্পাদক দীপ্ত নায়েক প্রমুখ।
সিপিবি সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি সৈয়দ ফরহাদ হোসেন সমাবেশে বলেন, ‘কমিউনিস্ট পার্টি শ্রমিক মেহনতি মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে লড়াই করে। উৎপাদনের মাধ্যমে যারা গোটা অর্থনীতিকে সচল রাখেন তাদের বঞ্চিত করে মানবিক রাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয়। মালিকের মুনাফার লোভের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেই শ্রমিকদের অধিকার আদায় করে নিতে হবে। ইতিহাসের এটাই শিক্ষা। তেমনিভাবে চা-শ্রমিকদের লড়াইকে বিজয়ের পথে এগিয়ে নিতে কমিউনিস্ট পার্টি সর্বদা কাজ করে যাবে।’
সংগঠনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক এস এম শুভ সারাদেশের চা-শ্রমিকদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘চা-শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র জন্মলগ্ন থেকেই চা-শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লড়াইকে বেগবান করার লক্ষ্যে চা-শ্রমিকদের সংগঠিত করে যাচ্ছে। দেশের সবচেয়ে বঞ্চিত, উপেক্ষিত চা-জনগোষ্ঠী হিসেবে চা-শ্রমিকদের লড়াইটাও কঠিন। দীর্ঘকাল ধরে শোষণ -বঞ্চনার যে ব্যবস্থা ব্রিটিশ কাল থেকে গড়ে তোলা হয়েছে সে ব্যবস্থার উচ্ছেদ করতে না পারলে চা-জনগোষ্ঠীর কাক্সিক্ষত মুক্তি সম্ভব নয়। আর সেজন্য ঐক্যবদ্ধ আপসহীন নিরবচ্ছিন্ন লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। সে লড়াইয়ে চা-শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র নেতৃত্ব দিবে।’
ভূমিহীন চা-শ্রমিকদের ভূমির অধিকার প্রদানের লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক রালিকা প্রণয়নের বিষয়টি উল্লেখ করে এস এম শুভ আরও বলেন, ‘চা-শ্রমিকদের লড়াই সংগ্রামের কারণেই আজ সরকার ভূমি বরাদ্দের লক্ষ্যে তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে। কিন্তু তালিকা প্রস্তুতির কাজে চা-শ্রমিকের সম্পৃক্ত করা হয় নি। চা-শ্রমিকদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত ভূমির আইনি অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে সবুজ তাঁতি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের সংগ্রামকে আরও তীব্র করতে হবে। বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।’
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর সিলেট শহীদ মিনারে চা-শ্রমিক কনভেনশনের মাধ্যমে চা-শ্রমিকের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। পরবর্তীতে চলতি বছরের ২৯ জুন শ্রীমঙ্গলে প্রথম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনের নতুন নামকরণ হয় ‘চা-শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র’।