ঢাকাএকতা প্রতিবেদক :
ময়মনসিংহে (১২ মার্চ) বাম গণতান্ত্রিক জোটের মিছিলে সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে, সারাদেশে নারী-শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন, মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে সহিংসতার প্রতিবাদে এবং সিপিবি নেতা লাকী আক্তারকে যারা হত্যার হুমকি দিচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার-বিচারের দাবিতে রাজধানীতে সমাবেশ ও মিছিল করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পর্ষদ।
১২ মার্চ বাম গণতান্ত্রিক জোটের বিক্ষোভ সমাবেশ বিকাল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, সারাদেশে সহিংসতা ক্রমবর্ধমান হারে চলছে। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী কর্তৃক নারী বিদ্বেষী উস্কানিমূলক বক্তব্য নারীর উপর সহিংসতাকে মদত যোগাচ্ছে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকার এসব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে তো পারছেই না বরং গতকাল আমরা দেখলাম ধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মিছিলে পুলিশ বর্বরোচিত হামলা করে অনেক শিক্ষার্থীকে গুরুতর আহত করেছে। একদল মব সিপিবি নেতা লাকী আক্তারের গ্রেফতার ও ফাঁসীর দাবিতে মিছিল করেছে বিভিন্ন গোষ্ঠী। কেননা লাকী আক্তার ধর্ষণের বিরুদ্ধে মশাল মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন। সরকারের উপদেষ্টারা সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে বলে বেড়াচ্ছেন এসকল মবকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে কিন্তু তাদের নাকের ডগাতেই এই মব সন্ত্রাস চলছে। অথচ, কার্যকর ব্যবস্থা সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে না।
বামজোট নেতৃবৃন্দ হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, কমরেড লাকীসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের যারা হত্যার হুমকি দিচ্ছে তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচার করুন, অন্যথায় যেকোন পরিস্থিতির দায় প্রশাসন এড়াতে পারবে না। দেশবাসী গভীর উদ্বেগ, উৎকন্ঠা ও ঘৃনাভরে লক্ষ্য করে আসছে যে, পতিত ফ্যসিবাদী সরকারের মত বর্তমান সরকারও ছাত্র, শ্রমিক, শিক্ষক, আদিবাসী, বিভিন্ন পেশাজীবিদের দাবি আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথে না হেঁটে এসব গণতান্ত্রিক আন্দোলন বল প্রয়োগ করে দমনের পথ বেছে নিয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাসদ (মার্কসবাদী)’র সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী প্রমুখ। সমাবেশ শেষে নগরীর বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
নেতৃবৃন্দ বলেন, কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে আজ বিকেল ময়মনসিংহের মালগুদাম থেকে মিছিল শুরু করে বাম গণতান্ত্রিক জোট ময়মনসিংহ জেলার নেতাকর্মীরা। মিছিল গাঙ্গিনাপাড়ে ঢোকার পরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি অংশের একটা মিছিল বাম জোটের মিছিলের উপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করে। ‘শাহবাগী গোসল কর’ সহ বিভিন্ন উস্কানীমূলক স্লোগান দিয়ে কিছুক্ষণ পর বৈষম্যবিরোধী
গাইবান্ধা ছাত্রদের একটি অংশের সাথে যুক্ত হয় ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের একটা মিছিল। এর পরপরই তারা নতুন বাজার মফিজউদ্দিন প্লাজার সামনে বামজোটের নেতাকর্মীদের উপর পিছন থেকে যৌথভাবে হামলা করে। প্রথমেই নারী কর্মীদের উপর হামলা করে, ইটপাটকেল ছুঁড়ে এবং নেতাকর্মীদের গণহারে লাথি, কিল, ঘুষি মারতে থাকে। নেতৃবৃন্দের হাত থেকে ব্যানার ছিনিয়ে নিয়ে ধস্তাধস্তি করে।
সন্ত্রাসীদের এই ন্যাক্কারজনক হামলায় আহত হন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ময়মনসিংহ জেলা আহ্বায়ক আরিফুল হাসান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বাকৃবি শাখার সহ-সভাপতি অর্ণব দাস, আনন্দমোহন কলেজের যুগ্ম আহ্বায়ক জুঁইসহ বামজোটের নেতৃবৃন্দ।
এক পৃথক বিবৃতিতে সিপিবির নেতৃবৃন্দ এই ন্যাক্কারজনক হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন এলাকায় গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ মিছিলে বর্বরোচিত হামলা করে সরকার ফ্যাসিবাদী আচরণ করছে। সারাদেশে খুন ধর্ষণ নিপীড়নের বিরুদ্ধে সাধারণ ছাত্র-জনতা যখন আন্দোলন করছে, সেই আন্দোলনকে ‘শাহবাগী’ ট্যাগ দিয়ে দমনের চেষ্টা করছে কিছু সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী। তারই অংশ হিসেবে আজকে ময়মনসিংহে বামজোটের নেতাকর্মীদের উপর এই ন্যাক্কারজনক হামলা। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ সচেতন দেশবাসীকে এধরনের হামলা রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে সিপিবি ও বামজোট নেতৃবৃন্দ, রাজধানীতে প্রতিবাদ মিছিলে পুলিশের হামলার পর আন্দোলনকারীদের নামে মামলা দেওয়াকে হাস্যকর উল্লেখ করে, তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং হামলাকারী পুলিশের বিচার দাবি জানান তারা।
একই দাবিতে দেশজুড়ে সমাবেশ করে বাম গণতান্ত্রিক জোট। সংবাদদাতাদের প্রাপ্ত খবরের টুকরা:
চট্টগ্রাম : দেশে ক্রমবর্ধমান ধর্ষণ, নারী নির্যাতন ও মব ট্রায়াল বন্ধের দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোট চট্টগ্রাম জেলা শাখার উদ্যোগে একই দিনে নগরীর আন্দরকিল্লা মোড়ে বিকাল ৪টায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
জোট ও বাসদ জেলা শাখার সমন্বয়ক আল কাদেরী জয়ের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ জাহাঙ্গীর, বাসদ (মার্কসবাদী) জেলা শাখার সদস্য আসমা আক্তার প্রমুখ। আরো উপস্থিত ছিলেন সিপিবি জেলা শাখার সভাপতি অশোক সাহা, বাসদ নেতা হেলাল উদ্দিন কবির প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন বাসদ জেলা শাখার সদস্য আকরাম হোসেন।
সিরাজগঞ্জ : ১২ মার্চ সকালের দিকে সিরাজগঞ্জ জেলা শহর তথা প্রেসক্লাবের সামনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা সারাদেশের কর্মসূচির অংশ হিসেবে মানববন্ধন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি জেলা কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শহিদুল্লাহ সবুজ, সিপিবি জেলা কমিটির সম্পাদকমণ্ডলির সদস্য শেখ সুলতান আহমেদ, বাসদ জেলা কমিটির আহ্বায়ক নব কুমার কর্মকার প্রমুখ।
চাঁদপুর : মব জাস্টিসের প্রতিবাদে ও দ্রুত সংসদ নির্বাচনের দাবিতে চাঁদপুরে বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত ১২ মার্চ বিকাল ৫টার দিকে
নারায়ণগঞ্জ এ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
শহরের শপথচত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি জেলা কমিটির সভাপতি জাকির হোসেন মিয়াজী, জেলা বাসদ আহ্বায়ক শাহজাহান তালুকদার, জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন, জেলা বাসদ সদস্য জি এম বাদশা প্রমুখ।
গাইবান্ধা : দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট, গাইবান্ধা জেলা।
গত ১২ মার্চ সকাল ১১টার দিকে গাইবান্ধা শহরের গানাসাস মার্কেটের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। জোটের জেলা সমন্বয়ক ও সিপিবি জেলা সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মুকুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মিছিল পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ মার্কসবাদী জেলা আহ্বায়ক আহসানুল হাবীব সাঈদ, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ জেলা সম্পাদক রেবতী বর্মন, বাসদ জেলা আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী প্রমুখ।
পরে বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ১নং রেল গেইটে এসে শেষ হয়।
নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে বাম গণতান্ত্রিক জোট জেলার উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সিপিবি জেলা কমিটির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন সিপিবি জেলার সাধারণ সম্পাদক শিবনাথ চক্রবর্তী, বাসদ জেলার সদস্য সচিব আবু নাঈম খান বিপ্লব, বাসদ জেলা ফোরামের সদস্য সেলিম মাহমুদ, সিপিবি নেতা জাকির হোসেন, নূরুল ইসলাম, ইকবাল হোসেন, বাসদ নেতা এস. এম. কাদির, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসিমা আক্তার, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জেলা সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারহানা চৈতি প্রমুখ।
খুলনা : কেন্দ্রীয় ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১২ মার্চ বিকাল ৫টার দিকে খুলনায় নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
জোটের খুলনা জেলা কমিটির আহ্বায়ক ও সিপিবি জেলা কমিটির সভাপতি ডা. মনোজ দাসের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি কেন্দ্রীয় সম্পাদক ও জেলা কমিটি সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক এস এ রশীদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও জেলা সম্পাদক গাজী নওশের আলী, বাসদ জেলার সদস্য সচিব কোহিনুর আক্তার কনা প্রমুখ।
সমাবেশগুলোতে জোটের নেতারা বলেন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ধর্ষণ, দখল-চাঁদাবাজি, রাহাজানিসহ আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতিতে জানমাল ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতায় মানুষ দিশেহারা। সরকার সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদর দমনের ক্ষেত্রে শুধু ব্যর্থই নয়, বরং সরকারের নির্বিকার, দায়িত্বহীন ভূমিকা এসকল কাজকেই উৎসাহিত করছে। সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলছেন, দেশে গাজার মত পরিস্থিতি বিরাজ করছে; সেনা প্রধান বলছেন, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে আবার তথ্য উপদেষ্টা বলছেন, দেশে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে; সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারি আনিসুজ্জামান বলেছেন, নির্বাচিত সরকার না এলে দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটবে না। এ থেকেই বোঝা যায় দেশের হাল কি!
নেতৃবৃন্দ, অবিলম্বে সরকারকে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করার আহ্বান জানান এবং একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি করেন।