ফেব্রুয়ারিতেই একুশে বইমেলা চায় সংস্কৃতিকর্মীরা
একতা প্রতিবেদক :
নির্বাচন আর রোজার কারণে অমর একুশে বইমেলা এবার ডিসেম্বরে এগিয়ে আনা হলেও, এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চেয়েছে ৩১টি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্য।
ফেব্রুয়ারিতেই বইমেলা করার দাবি জানিয়ে ৫ অক্টোবর বাংলা একাডেমির সামনে মানববন্ধন শেষে একাডেমির মহাপরিচালককে স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা।
মানববন্ধনে উদীচীর শিল্পীগোষ্ঠীর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাবিবুল আলম বলেন, অমর একুশে বইমেলার সঙ্গে বাঙালির আবেগ ও চেতনা জড়িত। লেখক সৃষ্টি, সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশে এই মেলার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু দেশে নয়, বিদেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও অনেকে বইমেলা কেন্দ্র করে দেশে ফেরার পরিকল্পনা করে থাকেন। বইমেলা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে সংস্কৃতিকর্মীরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও হতাশ।
উদীচী সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন বলেন, “ একুশে বইমেলা জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ ও শ্রেণি নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের বৈচিত্রপূর্ণ ও অসাম্প্রদায়িক মিলনস্থল হিসাবে যথেষ্ট গুরুত্ব অর্জন করেছে। ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে যে বইমেলা, সেই বইমেলা আয়োজন নিয়ে এই অনিশ্চয়তা মেনে নেওয়া হবে না।”
বইমেলা পিছিয়ে দেওয়াকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দেখছেন জানিয়ে সাংস্কৃতিক ঐক্যের আহ্বায়ক মফিজুর রহমান লালটু বলেন, “যারা বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে পছন্দ করে না। যে শক্তি জনগণের মাঝে সাম্প্রদায়িক ও অন্ধ কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোজগত সৃষ্টি করতে চায়, যারা স্বাধীনতা ও আবহমান বাংলা সংস্কৃতি-বিরোধী, তারাই একুশে বইমেলাকে নস্যাৎ করতে চায়।
“একুশে বইমেলা বন্ধ করার জন্য কেউ কেউ দীর্ঘদিন ধরে ষড়যন্ত্র করছে। হয়ত তারা এভাবে পিছিয়ে একদিন বন্ধ করে দেবে। আমরা সেই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে দেব না।”
কবি কামরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, “কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেন, পৃথিবীর কোথাও নাকি মাসব্যাপী বইমেলা হয় না। তারা কি এটা জানেন, যে পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের মানুষ এভাবে ভাষার জন্য জীবনও দেয়নি।”
মুক্তধারার চিত্তরঞ্জন সাহা বটতলায় চট পিছিয়ে ২১শে ফেব্রুয়ারিতে বইমেলার যে সূচনা করেছিল তার যে আদর্শ ছিল, তাকে সমুন্নত রাখতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কামরুজ্জামান বলেন, “একুশে বইমেলা শুধুমাত্র বই বিক্রির মেলা নয়, এর সাথে আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, ঐতিহ্য জড়িত। জড়িত আছে জনগণের দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম ও স্বাধীকার-স্বাধীনতার সংগ্রামী চেতনা।”
সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন, কবি হাসান ফকরী, মওলানা ভাসানী পরিষদের সদস্য বেলাল চৌধুরী, জাতীয় গণফ্রন্টের ভারপ্রাপ্ত সম্বয়কারী রজত হুদা, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, গণসংস্কৃতি কেন্দ্রের সভাপতি লেখক জাকির হোসেন, প্রগতি লেখক সংঘের বিমল কান্তি দাস, শহীদ আসাদ পরিষদের আরিফ খান ইউসুফ জাই, সমাজ চিন্তা ফোরামের আহ্বায়ক কামাল হোসেন বাদল, বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুন নূজহাত মনীষা, সংহতি সংস্কৃতি সংসদের সদস্য শিকদার হারুন মাহমুদ প্রমুখ।
সমাবেশ শেষ বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমের হাতে স্মারকলিপি দেন গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যের নেতারা।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, “দেশ-বিদেশের অগণিত লেখক, প্রকাশক এবং লক্ষ লক্ষ পাঠক একুশে বইমেলার জন্য অপেক্ষায় থাকেন। বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশীরা এমনকি অনেক বিদেশি নাগরিক বইমেলাকে কেন্দ্র করে ঢাকায় আগমণের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে থাকেন। একুশের বইমেলার চিরাচরিত সময়সূচির পরিবর্তনে এধরনের বহু ঘটনা ও ব্যক্তিগত সূচিরও বিপর্যয় ঘটবে।”
নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং আইনশৃঙ্খলার অজুহাতে কোনক্রমেই একুশে বইমেলা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত ‘ক্তিযুক্ত নয়’ জানিয়ে করে স্মারকলিপিতে বলা হয়, “বই মেলার পাঠকের উপস্থিতি কোনোভাবেই নির্বাচনের পরিবেশে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে না। ইতোপূর্বে ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের নজির রয়েছে, সেসময় বইমেলা স্থগিতের কোন ঘটনা ঘটেনি।”
বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে শুধুমাত্র নির্বাচনের দিন বইমেলা বন্ধ রাখতে পারে বলেও স্মারকলিপিতে অভিমত দেওয়া হয়।
“আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন হিসেবে চাই না বইমেলা স্থগিতের ইস্যুতে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক, যার ফলে পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি পূণর্বাসনের সুযোগ পায়।”
একুশে বইমেলা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ সুবিবেচনার পরিচয় দিয়ে পাঠক, লেখক এবং প্রকাশকের প্রত্যাশা পূরণে মনোযোগী হবেন এবং বাংলা একাডেমির গৌরবময় ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট ভূমিকা রাখবেন বলে মনে করছে গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্য।
বাংলা একাডেমি গত ১৮ সেপ্টেম্বর জানিয়েছে, চলতি বছরের ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে ২০২৬ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বইমেলার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে রোজা শুরু হবে। তার আগেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের সব প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এ দুটো বিষয় মাথায় রেখে একুশে বইমেলার তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে একাডেমির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
১৯৮৩ সালে এরশাদের সময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের কারণে একবার বইমেলা বন্ধ হয়েছিল। এছাড়া বইমেলা বন্ধ থাকার নজির নেই। তবে কোভিড মহামারীর সময় ২০২১, ২০২২, ২০২৩ সালে বইমেলার সময় পরিবর্তন করে মার্চ মাসে নেওয়া হয়েছিল।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম নেতাদের বলেন, ফেব্রুয়ারিতে মেলা করা একাডেমির জন্যও ভালো। তবে এ নিয়ে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশনা ও বিক্রেতা সমিতি এবং প্রকাশকদের অন্য সংগঠনের নেতাদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। প্রকাশক, মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করেই ডিসেম্বরে মেলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। মেলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অসম্মতি থাকায় ডিসেম্বরে মেলার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে। আবার মধ্য ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হলে ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে মেলা করার সম্ভাবনা খুব কম। প্রকাশকেরা এতে সম্মত নন। বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে মেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে মহাপরিচালক জানান।
প্রথম পাতা
বৈষম্যবিরোধী গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণের অঙ্গীকার
সফল করতে দেশব্যাপী ঝটিকা সফর চলছে
‘শরৎ উৎসব’ করতে পারেনি সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী
ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ৫০ হাজার ছাড়াল
ট্রাম্প ও ব্লেয়ার গাজায় আসলে কী করতে চান
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের পথ খুঁজছে কমিশন
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রাশিয়া, চীন, ভারত ও পাকিস্তান
খাগড়াছড়িতে ধর্ষণ ও সহিংসতায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি
বাতিল হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ‘মামলা ও সাজা’
বন্দর রক্ষায় সভা সমাবেশের কর্মসূচি বামজোটের
‘আখের’
Login to comment..