নেদারল্যান্ডসে কৃষক আন্দোলন

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email

একতা বিদেশ ডেস্ক : নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের নিঃসরণ কমাতে সরকারের গৃহীত নীতির প্রতিবাদ করতে জড়ো হয়েছেন দেশটির কৃষকরা। অসন্তুষ্ট কৃষকরা ১৯ ফেব্রুয়ারি ট্রাক্টর চালিয়ে দ্য হেগের প্রাণকেন্দ্রে আসেন। অসন্তুষ্ট কৃষকদের ট্রাক্টর র?্যালি আটকাতে দ্য হেগের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নিরাপত্তা চৌকি বসিয়েছিল নেদারল্যান্ডসের সেনাবাহিনী। এছাড়াও, ট্রাক্টর নিয়ে কৃষকরা যেনো দ্য হেগে জড়ো হতে না পারেন সে লক্ষ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে হাইওয়েতে ট্রাক্টর চালানোর অনুমতি সংক্রান্ত বিশেষ টিকেট ইস্যু করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই নিয়ম না মানায় ৩৩ বছর বয়সী একজন কৃষককে আটক করেছে পুলিশ। ২০ ফেব্রুয়ারি নেদারল্যান্ডসের সংসদে দূষণ কমানো নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্তগ্রহণ বিষয়ক বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। তার আগে কৃষকদের এই আন্দোলন থেকে বলা হয়, বিমান চলাচল, নির্মাণ ও অন্যান্য শিল্প পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী হলেও কৃষিকে অসমানুপাতিকভাবে আক্রমণ করছেন আইন প্রণেতারা। উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ থেকে আসা একজন কৃষক জানিয়েছেন, কেনো সবসময় কৃষকদেরকেই টার্গেট করা হয়? দূষণের জন্য দায়ী গ্যাসের নিঃসরণ কমাতে তাদেরকে আরও কিছুদিন সময় দেওয়া প্রয়োজন। কিংবা কোনো বিকল্প প্রস্তাবনাও দেওয়া যেতে পারে। প্রসঙ্গত, নেদারল্যান্ডসের কৃষিখাত অত্যন্ত সমৃদ্ধ। দেশটির মুদ্রা ইউরো। অর্থনৈতিক স্বাধীনতার সূচক অনুসারে দেশটি ১৭৭টি দেশের মধ্যে ১৭তম স্থান অধিকার করেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের হিসাব অনুযায়ী এটি বিশ্বের ১৩তম সর্বোচ্চ মাথাপিছু স্থুল আভ্যন্তরীণ উৎপাদনধারী (ক্রয়ক্ষমতা সাম্যের বিচারে) দেশ। ২০১৭ সালে জাতিসংঘের বিশ্ব সুখ প্রতিবেদনে দেশটির বিশ্বের ৬ষ্ঠ সর্বোচ্চ সুখী দেশের মর্যাদা দেওয়া হয়, যা দেশটির জীবনযাত্রার উচ্চমানের প্রতিফলন। ২০১৮ সালের ওইসিডি প্রকাশিত উন্নততর জীবন সূচক অনুযায়ী নেদারল্যান্ডস কাজ-জীবন ভারসাম্যের বিচারে বিশ্বের ১ম স্থান অধিকারী রাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরে নেদারল্যান্ডস বিশ্বের ২য় বৃহত্তম কৃষি ও খাদ্যপণ্য রপ্তানিকারক রাষ্ট্র। মাটির উর্বরতা, মৃদু জলবায়ু এবং অত্যন্ত উন্নত নিবিড় কৃষিপদ্ধতির কারণে এই সাফল্য সম্ভব হয়েছে। প্রায় ৫৪ হাজার ফার্ম রয়েছে নেদারল্যান্ডসের আনাচে কানাচে। কৃষি জমি প্রায় ২ মিলিয়ন হেক্টর, জমি ক্ষেত্রের প্রায় যা ৫৭% জমি। এর মধ্যে প্রায় ১/৩ আবাদযোগ্য জমি এবং ২/৩ চারণভূমি, এবং উদ্যান-জমি ১৪০,০০০ হেক্টর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে দীর্ঘমেয়াদী মন্দায় ভুগতে থাকা নেদারল্যান্ডস তার কাঠামোকে কৃষির বিপুল উন্নতি সাধনের মাধ্যমে অতিক্রম করে। এমনকি প্রতিবেশী শিল্প দেশগুলির বাজারে প্রক্রিয়াকৃত কৃষি পণ্য যেমন মাখন, পনির, বেকন, ডিম এবং শাকসব্জী সরবরাহের এক মাত্র ভরসা হয়ে ওঠে। কৃষিজমি বিনিময় করে কৃষিজমি পুনরায় সাজানোর জন্য এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা সহ্য করতে পারে এমন উপযুক্ত আকারের কৃষকদের বিকাশের জন্য কৃষি নীতিগুলি তৈরি করে নেদারল্যান্ড। তবে ১৯৬০ এর দশকে টেক্সটাইল শিল্পের পতন এবং পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের দুর্দান্ত বিকাশের সাথে, ডাচ শিল্প কাঠামোর একটি বড় রূপান্তর ঘটে। ইস্পাত, যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রনিক্স এবং শিপ বিল্ডিং এর মত ভারী শিল্পের দিকে মনোনিবেশ করে নেদারল্যান্ড। এমনকি মিষ্টান্নের উৎপাদন, চকোলেট, রেয়ন, সোডা, মার্জারিন ইত্যাদি কৃষি নির্ভর শিল্পে সর্বেসর্বা হয়ে ওঠে নেদারল্যান্ড। এবং শিল্প নির্ভর অর্থনীতিতে রূপ নেয় দেশটি। তবে আন্তর্জাতিক মহলে জলবায়ু পরিবর্তনের ভূমিকার প্রতিশ্রুতি হিসেবে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের নিঃসরণ কমাতে শিল্প কারখানায় নজর এর বিপরীতে কৃষকদের উপরই চাপ প্রয়োগ করছে নেদারল্যান্ড। আর ডাচ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন (এফএনভি) এর মত ইউনিয়ন থাকা সত্ত্বেও নেই কোনো কৃষক সংগঠন। ফলে নিয়মিতই বিক্ষোভে নামছেন কৃষকরা। এমনকি গতবছরের অক্টোবরেও দেশটির কৃষকরা এরকম একটি ট্রাক্টর র?্যালি নিয়ে প্রতিবাদে জড়ো হয়েছিলেন।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..