একতা বিদেশ ডেস্ক :
বিদ্রোহীদের হাত থেকে তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ ইদলিব পুনরুদ্ধারের যে চেষ্টা সিরিয়া করছে, তা নিয়ে তুরস্কের সাথে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার হুমকি তৈরি হয়েছে। গত ১০ দিনে ইদলিবে বিদ্রোহীদের টার্গেট করে সিরিয় সৈন্যদের হামলায় কমপক্ষে ১২ জন তুর্কি সৈন্য নিহত হবার ঘটনায় ভয়ানক ক্ষেপে গেছে তুরস্ক। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সিরিয়াকে হুমকি দিয়েছেন। তুরস্কের পার্লামেন্টে ক্ষমতাসীন একে পার্টির এক সভায় ভাষণে মি এরদোয়ান বলেন, ‘আর একটি তুর্কি সৈন্যের গায়ে আঁচড় লাগলে সিরিয়ার রক্ষা নেই। আমি ঘোষণা করছি যে, এখন থেকে একজন তুর্কি সৈন্যও যদি আহত হয়, তাহলে সিরিয়ার যে কোনো জায়গায় তাদের সৈন্যদের ওপর আঘাত করা হবে। যে কোনো পন্থায়, তা আকাশ পথে হোক আর স্থলপথে, কোনোরকম দ্বিধা ছাড়াই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ শুধু সিরিয়াকেই হুঁশিয়ার করে ক্ষান্ত হননি এরদোয়ান। প্রথমবারের মত সরাসরি তিনি রাশিয়ার তীব্র সমালোচনাও করেছেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, রাশিয়া ইদলিবে ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে। সিরিয়ায় রাশিয়ার একটি বিমান ঘাঁটি রয়েছে, এবং বেশ কিছুদিন ধরেই ইদলিবের আকাশের নিয়ন্ত্রণ রাশিয়ার হাতেই, এবং বিদ্রোহীদের অবস্থানে বিমান হামলাগুলো করছে প্রধানত রুশ যুদ্ধবিমান। সুতরাং সিরিয়ার যে কোনো জায়গায় প্রয়োজনে আকাশপথে সিরিয়ার সৈন্যদের টার্গেট করার হুমকি দিয়ে মি.এরদোয়ান পরোক্ষভাবে সিরিয়ার মিত্র রাশিয়াকেও রক্তচক্ষু দেখাচ্ছেন। ইদলিব নিয়ন্ত্রণ করছে যে সব সশস্ত্র মিলিশিয়া গোষ্ঠী তার সিংহভাগই তুরস্ক সমর্থিত। গত বছর রাশিয়া এবং ইরানের সাথে একটি সমঝোতার ভিত্তিতে, ইদলিবে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে তুরস্ক ১২টি ‘সামরিক পর্যবেক্ষণ’ ছাউনি স্থাপন করে। এই ছাইনিগুলোর বেশ কয়েকটি এখন সিরিয় সেনাবাহিনী ঘিরে ফেলেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান শুধু কি মুখেই হুমকি দিচ্ছেন, নাকি সত্যিই তিনি সিরিয়ার সাথে পুরোদস্তুর লড়াইতে জড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত। পর্যবেক্ষকরা নিশ্চিত করে কিছু ধারণা করতে পারছেন না। তবে সংবাদদাতারা বলছেন, গত কদিন ধরে ইদলিবে নতুন করে অতিরিক্ত সৈন্য এবং ভারি অস্ত্র মোতায়েন শুরু করেছে তুরস্ক। এছাড়া, তুরস্কের সরকার নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া বলছে, গত কদিনে তুরস্ক ইদলিবে নতুন করে শত শত ট্যাংক এবং হাজার হাজার সৈন্য সমাবেশ করেছে। সিরিয়ার একটি সামরিক হেলিকপ্টার গুলি করে নামানোর যে ঘটনা ঘটেছে তার পেছনে তুরস্কের হাত রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এছাড়া, তুরস্ক দাবি করছে গত কদিনে তারা সিরিয়ার ১১৫টি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে যাতে কমপক্ষে একশো সৈন্য মারা গেছে, যদিও সিরিয়া সরকারের পক্ষ থেকে এমন কিছু নিশ্চিত করা হয়নি।
তুরস্কের প্রেসিডেন্টের এই হুমকি-ধামকি এবং লড়াইয়ের পাঁয়তারা রাশিয়া যে ভালোভাবে নেবেনা, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। কারণ, ইদলিব পুনর্দখলে ইরানের পাশাপাশি রাশিয়া প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করছে। রাশিয়ার সরকারের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি শান্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে ঠিকই, কিন্তু একইসাথে মস্কো হুঁশিয়ার করেছে, সিরিয় সৈন্য এবং রুশ সামরিক লক্ষ্যবস্তুকে কেন্দ্র করে ‘যে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ গ্রহণযোগ্য নয়। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান গত ১২ ফেব্রুয়ারি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে টেলিফোনে কথা বলেছেন। পাশাপাশি, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ইদলিবের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে তুরস্কের একটি প্রতিনিধিদল খুব শিগগিরই মস্কো যাবে।
অন্যদিকে, তুরস্কের হুমকি-ধামকি উপেক্ষা করে রুশ বিমান বাহিনীর সহযোগিতায় সিরীয় সৈন্যরা ইদলিবে তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তারা সামরিক এবং অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মহাসড়কের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। গত কদিনে সিরীয় সৈন্যরা ইদলিবের ৬০০ বর্গ কিলোমিটার জায়গা থেকে বিদ্রোহীদের হটিয়ে দিয়েছে। প্রতিদিনই তারা নতুন নতুন শহর এবং গ্রামের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে। ইদলিবের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার এই অভিযান নিয়ে সিরিয়া এবং তুরস্কের মধ্যে পুরোদস্তুর যুদ্ধ শুরু হয় কিনা - তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। জাতিসংঘের হিসাবে ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ইদলিবে প্রায় আট লক্ষ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। তুরস্ক এবং সিরিয়ার মধ্যে এমনকি স্বল্প-মাত্রার লড়াই হলেও শরণার্থী পরিস্থিতি নতুন করে ভয়ানক রূপ নেবে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।