শীতে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগ সতর্ক থাকলে এড়ানো সম্ভব
একতা স্বাস্থ্য ডেস্ক :
বাংলাদেশে শীত এলেই মানুষের জীবনযাত্রা বদলে যায়। ঢাকার মতো শহরে শীত তেমন তীব্র না হলেও গ্রামীণ অঞ্চলগুলোতে এখন বেশ ঠান্ডা অনুভূত হয়। শীতের সকাল, কুয়াশার আবরণ আর নরম রোদ মিলিয়ে এক ধরনের স্বস্তির আবহ তৈরি হলেও এ সময়ে নানা রকম শারীরিক সমস্যা বাড়তে দেখা যায়। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের জন্য এই মৌসুমটি কখনই পুরোপুরি নির্ভার নয়।
আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তন, বাতাসে ধুলাবালির পরিমাণ বৃদ্ধি এবং পরিবেশের আর্দ্রতা কমে যাওয়া-সব মিলিয়ে শরীরকে খাপ খাওয়াতে কিছুটা সময় লাগে। সেই সময়েই রোগব্যাধির প্রকোপ দেখা দেয়।
মৌসুমের শুরুতে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ঠান্ডাজনিত সমস্যা- কাশি, সর্দি, গলা ব্যথা, কোল্ড অ্যালার্জি ও অ্যাজমা বেড়ে যাওয়া। মাঝেমধ্যে শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যাও দেখা দেয়, যা হালকা অসুখ থেকেও গুরুতর জটিলতায় রূপ নিতে পারে।
চিকিৎসকেরা সতর্ক করছেন, অনেক সময় ঠিকমতো নজর না দিলে সাধারণ সর্দি-কাশি নিউমোনিয়াতেও পরিণত হতে পারে। তাই শিশু-বয়স্কদের সামান্য অসুস্থতাও গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।
এছাড়া শীতে ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়ার মতো মশাবাহিত রোগও দেখা দেয়। আবার ডেঙ্গুও এখন শুধু বর্ষাকালেই সীমাবদ্ধ নয়- শীতকালেও এর প্রকোপ কম নয়। তাই কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, গিঁটে ব্যথা বা বারবার জ্বর উঠলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
ঠান্ডা পড়লে অনেকে পাতলা পায়খানা বা হজমের গোলমালে ভোগেন। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি দেখা যায়।
বাইরের খাবার এড়িয়ে চলা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা এবং গরম কাপড় পরিধানই এই সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে পারে।
এদিকে শীতে ত্বকের শুষ্কতা যেন সাধারণ নিয়মের মতোই। হাত-পা ফেটে যাওয়া, চুলকানি বা ত্বক খসখস করা-এসবই কম আর্দ্রতার কারণে হয়। প্রতিদিন অলিভ অয়েল, নারিকেল তেল, লোশন বা গ্লিসারিন ব্যবহার করলে ত্বক অনেকটাই ভালো থাকে।
শীতের সবচেয়ে বড় ঝুঁকিগুলোর একটি হচ্ছে বাতাসে ধুলাবালির আধিক্য। ঢাকা শহরের বাতাস তো এমনিতেই দূষিত; শীতে তা আরও ঘনীভূত হয়। ফলে নাক-গলা-ফুসফুসে জটিলতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ জন্য বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি।
ডায়াবেটিস বা দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্তদের জন্য শীত আরও চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। ঠান্ডা আবহাওয়া রক্তে চিনির মাত্রা পরিবর্তন করতে পারে, অনিদ্রার সমস্যা বাড়াতে পারে। তাই নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসরণ এবং ওষুধ সঠিকভাবে গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তবে শীত কোনো আতঙ্কের সময় নয়, বরং সঠিক অভ্যাসে এটি আনন্দময় হয়ে উঠতে পারে। গরম পোশাক, সুষম খাবার, প্রচুর পানি পান, নিয়মিত ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই পারে শীতকে নিরাপদ ও উপভোগ্য করে তুলতে। সচেতন থাকলেই শীতের প্রতিটি সকাল হবে সুস্থতার এক নতুন শুরু।
Login to comment..








প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন