কিউবার বিপ্লব ও ফিদেল কাস্ট্রো

বিমল কান্তি দাস

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email

কমরেড ফিদেল কাস্ত্রো ১৯২৬ সালে ১৩ আগস্ট কিউবার বিরানে জন্মগ্রহণ করেন। হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন শাস্ত্র নিয়ে পড়া অবস্থায় তিনি ছাত্র আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন ও ছাত্র সংসদের নেতা নির্বাচিত হন। ছাত্রজীবন শেষে রাজনীতিতে জড়ান। তখন কিউবাতে কমিউনিস্ট পার্টি ছিল, কিন্তু কিউবান কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ না দিয়ে তিনি ১৯৪৭ সালে কিউবান পিপলস পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৫২ সালে কিউবার জাতীয় নির্বাচনে পিপলস পার্টির প্রার্থী হিসেবে তিনি নির্বাচনে অংশ নেন। কিন্তু মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মদদপুষ্ট স্বৈরাচারী বাতিস্তা সামরিক অভ্যুত্থান করে কার্লোস প্রিয়র সরকারকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে এবং নির্বাচন বাতিল করে দেয়। বহুবছর ধরে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ল্যাটিন আমেরিকার অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ, জনগণকে শাসন শোষণ লুণ্ঠন নিপীড়ন করে আসছে। ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোকে মার্কিনের তাবেদার রাষ্ট্র বানানো, তাদের দাবিয়ে রাখতে অপচেষ্টায় লিপ্ত থেকেছে। এ কারণে ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশের জনগণ অতীত থেকেই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের দালালদের শোষণ নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করে আসছে। এ অঞ্চলে বিভিন্ন দেশে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের শাসন, শোষণ, লুণ্ঠন, নিপীড়নে জনগণের জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম ও শ্রেণিসংগ্রাম এক সূত্রে গ্রথিত হয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালাল সরকারগুলোর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই সংগ্রামে পরিণত হয়। তখন কিউবাতেও জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম ও শোষণ মুক্তির সংগ্রামের বাস্তবতা বিরাজ করছিল। ১৯৫২ সালে ১০ মার্চ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সমর্থন নিয়ে একনায়ক বাতিস্তা কিউবার নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে এবং সংবিধান বাতিল করে। মার্কিনের মদদে বাতিস্তা সরকার অতিমাত্রায় কিউবার জনগণকে শাসন-শোষণ, লুণ্ঠন, নির্যাতন করতে থাকে। এতে জনগণ বাতিস্তা সরকারের প্রতি বিক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদী হয়ে উঠে। জনগণের দুঃখ কষ্ট ক্ষোভ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও বাতিস্তা সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। সেসময় ফিদেল কাস্ত্রো বাতিস্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করার জন্য মনঃস্থির করেন এবং ‘দ্য মুভমেন্ট’ নামে একটি বাহিনী গঠন করেন। পরবর্তীতে এই বাহিনী ‘ছাব্বিশ জুলাই আন্দোলন’ নামে পরিচিতি হয়। তিনি ১৩১ জন বিপ্লবীকে নিয়ে ১৯৫৩ সালে ২৬ জুলাই কিউবার ২য় বৃহত্তম সামরিক ঘাঁটি মনকাডা দুর্গ আক্রমণ করেন এবং সান্টিয়াগো শহরে বিপ্লবের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তখন ফিদেল কাস্ত্রো’র বাহিনী পরাজিত হয়। বিপ্লবীদের অনেকেই বাতিস্তা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। বাতিস্তা সরকারের পেটুয়া বাহিনী অমানসিক নির্যাতন করে, অনেক বিপ্লবীকে হত্যা করে। ফিদেল কাস্ত্রোসহ অনেকেই গ্রেপ্তার হন। বিচারে ফিদেল কাস্ত্রোকে ১৫ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। বাতিস্তা বিরোধী গণআন্দোলনের ২ বছর পর ফিদেল কাস্ত্রো জেল থেকে মুক্তি পায়। পরে বিপ্লবী বন্ধুরাসহ তিনি মেক্সিকো চলে যান। সেখানে বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী চে গুয়েভারা ফিদেল কাস্ত্রোর সাথে সাক্ষাৎ করে। তাঁরা কিউবার বিপ্লবে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই সংগ্রাম করার সিদ্ধান্ত নেন। তখনকার সময় কিউবার কমিউনিস্ট পার্টিও বাতিস্তা সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। তখন ১৯৫৬ সালে ২৫ নবেম্বর ফিদেল কাস্ত্রো ও চে গুয়েভারা ৮২ জন বিপ্লবী যোদ্ধা সহ ‘গ্রানামা’ নামক নৌকায় করে কিউবা রওনা হন। পরিকল্পনা ছিল কিউবার সিয়েরা মায়েস্ত্রার পর্বতমালায় ঘাঁটি গড়বে। বতিস্তা সরকার ফিদেল বাহিনীর আগমন টের পেয়ে ফিদেল বাহিনীর উপর হামলা চালায়, এতে বিপ্লবী বাহিনীর কয়েকজন নিহত হয়, বাকিরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে আবার বিপ্লবীরা একত্র হয়ে সিয়েরা মায়স্ত্রার পর্বতমালায় আশ্রয় নিয়ে ফিদেল ও চে এর নেতৃত্বে গেরিলা যুদ্ধ আরম্ভ করেন। কিউবার জনগণ ফিদেল কাস্ত্রো ও চে গুয়েভারার নেতৃত্বে বিপ্লবীদের সশস্ত্র লড়াই সংগ্রাম সমর্থন করেন ও বিপ্লবীদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাতিস্তা সরকারের পতনে এগিয়ে আসেন। ১৯৫৯ সালের জানুয়ারি মাসে বিপ্লবী বাহিনী হাভানা শহর দখল করে বিপ্লবী সরকার গঠন করে। প্রথম বিপ্লবী সরকারে প্রেসিডেন্ট হন ম্যানুয়েল উরুতিয়া, প্রধানমন্ত্রী হন হোসো মিরো কর্দানো, ফিদেল প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন। প্রথম বিপ্লবী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হোসে মিরো ভূমি সংস্কার ও সমাজ সংস্কার মূলক কাজে বিরোধিতা করে পদত্যাগ করায় ১৯৫৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফিদেল কাস্ট্রোকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়। তখনকার সময় বিপ্লবী সংস্কার কার্যক্রমে (প্রথম) প্রেসিডেন্ট বিরোধিতা করায় গণ আন্দোলনে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্যহন এবং অন্য একজনকে প্রেসিডেন্ট করা হয়। ফিদেল প্রধানমন্ত্রী থাকেন। সেসময় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ কিউবার বিপ্লবকে নস্যাৎ করার জন্য বহু অপচেষ্টা, চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র চালিয়ে যেতে থাকে। অন্যায়ভাবে কিউবার উপর হামলা চালায়। কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি। কাস্ত্রো ও বিপ্লবী বাহিনী এর দাঁতভাঙা জবাব দেয়। ফিদেল কাস্ত্রো, চে গুয়েভারাসহ কিউবার কমিউনিস্ট ও বাম নেতৃবৃন্দ সেদেশের বিপ্লবী বামপন্থি পার্টিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য পদক্ষেপ নেয়। তাঁরা ঐক্যবদ্ধভাবে ১৯৬২ সালে ইউনাইটেড পার্টি অব সোস্যালিস্ট রিভিলিউশন গঠন করেন এবং এর ধারাবাহিকতায় ১৯৬৫ সালে ঐক্যবদ্ধ ভাবে নতুন করে কিউবার কমিউনিস্ট পার্টি পুনর্গঠন করেন এবং ফিদেল ক্যাস্ট্রোকে ঐক্যবদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টির ফাস্ট সেক্রেটারি নির্বাচিত করা হয়। মার্কসবাদ বিরোধী কিছু বামপন্থি বুদ্ধিজীবী কাস্ট্রো ও কিউবার বিপ্লব সম্পর্কে নানান ভুল ও বিভ্রান্ত মতামত প্রচার করেন। তাদের কেউ বলেন কাস্ট্রো কমিউনিস্ট ছিলেন না। কিউবার বিপ্লবে কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা ছিল না। কাস্ট্রো জাতীয়তাবাদী ছিলেন। আবার তাদের কেউ কেউ বলেন বিপ্লব করতে কমিউনিস্ট পার্টির দরকার নেই- ইত্যাদি, ইত্যাদি। এসব যারা বলেন কিউবার বিপ্লব সম্পর্কে তাদের পরিষ্কার ধারণা নেই। কিউবায় বিপ্লবের আগে সেখানে রাজনৈতিকভাবে কমিউনিস্ট ও জাতীয়তাবাদী- দুটো ধারাই ছিল। ফিদেল কাস্ট্রোর ভাই রাহুল ক্যাস্ট্রো কমিউনিস্টদের নেতা ছিলেন। কাস্ট্রো মার্কসবাদী ছিলেন না কিন্তু তিনি প্রগতিশীল ছাত্র নেতা ছিলেন। তখনকার বাম ও প্রগতিশীল ছাত্র নেতাদের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বাধিক জনপ্রিয়। জাতীয়তাবাদীদের রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মেই তিনি ছিলেন। কিউবার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয়তাবাদী ও কমিউনিস্ট- দুই ধারাই জনপ্রিয় ছিল। কিউবার তখনকার জাতীয়তাবাদীরা ছিল প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী। গণআন্দোলনের ক্ষেত্রে কমিউনিস্ট পার্টি ও জাতীয়তাবাদীদের অভিন্ন কর্মসূচি ছিল। কিউবার বিপ্লবে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়ায় কমিউনিস্ট পার্টি টিকে থেকেছে, অন্যরা মার্কসবাদের মতাদর্শ ধারণ করে কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যুক্ত হয়েছে। ফিদেল কাস্ট্রোও তাই করেছেন। ফলে কিউবার বিপ্লবে কমিউনিস্ট পার্টিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে দেখার কোন সুযোগ নেই। কিউবায় কমিউনিস্ট পার্টির উদ্যোগেই সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সফল হয়েছে। কিউবায় বিপ্লবের আগে যে ধরনের প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী একটা রাজনৈতিক শক্তি সেখানে ছিল আজকের বিশ্বায়নের যুগে এ জাতীয় জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক শক্তির উপস্থিতি পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। অতএব কমিউনিস্ট ও বামপন্থিরা ছাড়া আজকের যুগে কোন বিপ্লবের চিন্তা করার সুযোগ নেই। তখনকার বিশ্ব পরিস্থিতিতে কিউবা বিপ্লবের পন্থা ঠিকই ছিল। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে কিউবার নতুন সংবিধান রচিত হওয়ার পর ফিদেল কাস্ত্রোকে কিউবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হয়। ২০০৬ সালে তিনি অবসর নেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মার্কসবাদ, বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ কায়েমের লক্ষ্যে রাশিয়া, চীন, ভিয়েতনাম, উত্তর কোরিয়াসহ বিশ্বের দেশে দেশে যেভাবে বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল, কিউবার বিপ্লব সংঘটিত হয় তা থেকে একটু ভিন্ন বাস্তবতায়। ফিদেল প্রথমে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ না দিয়ে পিপলস পার্টিতে যোগ দেন। পিপলস পার্টির হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ, পরে গেরিলা বাহিনী গঠন, এরমধ্য দিয়ে মার্কসবাদী, লেনিনবাদী দর্শন গ্রহণ, ১৯৫৯ সালে বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল, ‘৬২ সালে ইউনাইটেড পার্টি অব সোস্যালিস্ট রিভিলিউশন গঠন, ‘৬৫ সালে ঐক্যবদ্ধভাবে কিউবার কমিউনিস্ট পার্টি গঠন মার্কসবাদী রাজনীতিতে এ এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন। কিউবার এ বিপ্লবী ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ায় অন্যান্য দেশের বিপ্লবের ধরনের সাথে ভিন্নতা রয়েছে। তখনকার সময় কিউবার জনগণকে শোষণ নিপীড়নের ক্ষেত্রে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এবং একনায়ক বাস্তিতা সরকারবিরোধী জাতীয় মুক্তি ও শোষণমুক্তির লড়াই সংগ্রামে শ্রমজীবী মানুষ ও সাধারণ জনগণের দেশপ্রেম, মুক্তির তীব্র আকাঙ্ক্ষা, তাঁদের বিপ্লবী পরিবর্তনে সম্পৃক্ত করে এবং ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে মেহনতি জনতা লড়াই সংগ্রামে অংশ নেয় এবং বিপ্লবের মাধ্যমে বাতিস্তা সরকারের পতন ঘটায়। একজন দেশপ্রেমিক সংগ্রামী নেতা, গেরিলা বিপ্লবী কমিউনিস্ট ফিদেল কাস্ত্রো, তাঁর নাম কিউবাসহ বিশ্বের শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি মানুষ ও কমিউনিস্টদের মাঝে অক্ষয় হয়ে থাকবে। সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাকের ডগায় অবস্থান করে ১৯৫৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত সাম্রাজ্যবাদের চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র, নানামুখী চাপ, অবরোধের মধ্যেও ফিদেল কাস্ত্রো, কিউবার কমিউনিস্ট পার্টি ও শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বে কমিউনিস্ট আদর্শ ধারণ করেই টিকে আছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ৬৩৮ বার ফিদেলকে হত্যা করতে চেষ্টা করেছিল, বারবার কিউবার কমিউনিস্ট নেতৃত্ব ও কিউবার কমিউনিস্ট পার্টিকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি। ফিদেল কাস্ত্রো মার্কিন ও তার দালালদের বিরুদ্ধে জনগণের জাতীয় সেন্টিমেন্ট, শোষিত নিপীড়িত জনগণের মনের ভাষা বুঝতে পেরেছিলেন। শোষিত নিপীড়িত জনগণের সাথে একাত্ম হয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালাল বাতিস্তা সরকারের বিরুদ্ধে কিউবার কমিউনিস্ট-বাম-দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদীদের নিয়ে লড়াই সংগ্রামে অগ্রসর হওয়া, শোষিত নিপীড়িত জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও শোষণমুক্তির চেতনাকে আত্মিকভাবে ধারণ করে বিপ্লবী লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ফিদেল ও তাঁর বিপ্লবী বাহিনী নিজেরাই বিপ্লবী কমিউনিস্টে পরিণত হয়েছিলেন। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালাল বাতিস্তা সরকার বিরোধী লড়াই সংগ্রামে ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে জনগণের মজবুত ভিত্তি গড়ে উঠায় জাতীয় সংগ্রাম ও শ্রেণিসংগ্রাম এক সূত্রে গ্রথিত হয়ে যে বিপ্লবী আন্দোনের জন্ম নেয়, তা বুর্জোয়া, মধ্যবিত্ত সুবিধাবাদী, লুটেরা বুর্জোয়া শ্রেণির করায়ত্ত না হয়ে সত্যিকার বিপ্লবীদের হাতে নেতৃত্ব থাকায় বিপ্লবের সুফল শোষক লুটেরা বুর্জোয়া শ্রেণি হাইজাক করতে পারেনি। পিপলস পার্টির হয়ে লড়াই সংগ্রামে বিপ্লবী পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় ফিদেল ও তাঁর বিপ্লবী সংগঠন শোষক লুটেরা শ্রেণির ধারক বাহক না হয়ে সত্যিকার বিপ্লবী কমিউনিস্টে পরিণত হন। ফলে কিউবার বিপ্লব ও বিপ্লবীরা পথ হারায়নি। কিউবা লুটেরা বুর্জোয়াদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়নি। ফিদেলের কিউবায় যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের একমাসের রেশন ১০ কেজি চাল, ৬ কেজি সাদা চিনি, ২ কেজি লাল চিনি, ২৫০ মিলি রান্নার তৈল, ১২টি ডিম, ১ প্যাকেট কফি, ৬ কেজি মাংস, প্রতিদিন একটি করে বড় রুটি, প্রতি ৩ মাসে ১ ব্যাগ লবণ, গর্ভবতী নারী এবং ৭ বছর বয়সের নিচে শিশুর জন্য প্রতিদিন ১ বোতল দুধ, অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পুষ্টিকর খাদ্য। পুরো মাসের রেশনের জন্য প্রত্যেক নাগরিককে ২ ডলারের কম অর্থ দিতে হয়। কিউবা আজ শিক্ষা চিকিৎসায় অনেকদূর অগ্রসর। কিউবায় রয়েছে উৎকৃষ্ট উন্নততর চিকিৎসাব্যবস্থা। কিউবার ১ কোটি ১০ লাখ মানুষের জন্য রয়েছে ৯৫ হাজার চিকিৎসক, ৮৫ হাজার নার্স। এবারের করোনাকালে সমাজতান্ত্রিক কিউবা দেখিয়ে দিয়েছে কমিউনিস্ট শাসিত দেশে কিভাবে মহামারি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কিভাবে মহাদুর্যোগের মোকাবিলা করতে পারে। করোনা ভাইরাসের থাবা থেকে কিউবার জনগণকে সুরক্ষা দিয়ে সাথে সাথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে কমিউনিস্ট কিউবা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে এবং পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী বলয়ের লম্ফঝম্প অসার প্রমাণিত করেছে। চিকিৎসা নিয়ে ব্যবসা নয়, শোষণ নয়, এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ কিউবার চিকিৎসা ব্যবস্থা। কিউবায় রয়েছে রাষ্ট্রপ্রধানসহ প্রত্যেক নাগরিকের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা। এমনি এক সমাজতান্ত্রিক দেশ কিউবা। অদ্যাবধি কিউবার কমিউনিস্ট পার্টি ও সে দেশের জনগণ বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী মোড়ল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নাকের ডগায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। শত ষড়যন্ত্র অবরোধেও টিকে আছে ফিদেল কাস্ট্রোর কিউবা। ফিদেল একটি বিপ্লবী প্রতীক, একজন সফল কমিউনিস্ট, সফল রাষ্ট্রনায়ক। মেহনতি মানুষের প্রকৃত বন্ধু। বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের নেতা ও শিক্ষক। কিউবার মহান বিপ্লবী ফিদেল কাস্ত্রোকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা ও লাল সালাম। লেখক: সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, সিপিবি, নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটি

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..