মিসাইল পরীক্ষা শুরু করেছে উত্তর কোরিয়া

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email

একতা বিদেশ ডেস্ক : দক্ষিণ কোরিয়া থেকে পাওয়া খবরে বলা হচ্ছে যে, উত্তর কোরিয়া ছোট-পরিসরের একাধিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনীর যৌথ প্রধানদের বরাত দিয়ে জানানো হয় যে, উত্তর কোরিয়ার পূর্বাঞ্চলের হোদো উপদ্বীপ থেকে চালানো হয় এই পরীক্ষা। গত মাসে পিয়ংইয়ংয়ের এক বিবৃতিতে এই পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণে ব্যবহার হওয়া অস্ত্রকে নতুন ‘ট্যাকটিক্যাল গাইডেড ওয়েপন’ বা কৌশলগত নির্দেশিত অস্ত্র হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। এ খবর দিয়েছে বিবিসি বাংলা। ভিয়েতনামে অনুষ্ঠিত হওয়া উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠকের পর এই প্রথম পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করলো উত্তর কোরিয়া। উত্তর কোরিয়া ‘পূর্ব উপকূলের হোদো উপদ্বীপের ওনসান শহর থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে একাধিক ছোট পরিসরের মিসাইলের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছে’ বলে দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনীর যৌথ প্রধানরা একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। এতে বলা হয়, মিসাইলটি ৭০ থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে। এর আগেও বড় পরিসরের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা এবং ক্রুজ মিসাইল উৎক্ষেপণের জন্য হোদো উপদ্বীপকে ব্যবহার করা হয়েছে। উত্তর কোরিয়ার সংবাদ মাধ্যম কেসিএনএ’র ভাষ্য অনুযায়ী এপ্রিল মাসে হওয়া এই কৌশলগতভাবে নির্দেশিত অস্ত্রের উৎক্ষেপণ কিম জং-উন নিজে তদারকি করেছেন। পরীক্ষাতে ‘বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে বিবিধ পদ্ধতিতে মিসাইল ছোড়ার’ বিষয়টি যাচাই করা হয়। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন এই অস্ত্রটি ভূ-পৃষ্ঠ, সাগর এবং বায়ু তিন মাধ্যম থেকেই উৎক্ষেপণ করা সম্ভব। এই অস্ত্রটি মিসাইল কিনা তা নিয়ে এখনো সন্দেহ রয়েছে। তবে অধিকাংশ পর্যবেক্ষক মনে করেন যে, এটি একটি ছোট পরিসরের অস্ত্র ছিল। উল্লেখ্য, গত বছর কিম জং উন বলেছিলেন তারা পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালাবে না এবং আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালেস্টিক মিসাইল উৎক্ষেপণ বন্ধ করবে। তবে এই প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কার্যক্রম চলছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। গত মাসেও স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবিতে উত্তর কোরিয়ার প্রধান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জায়গায় কাজ চলার আভাস পাওয়া গেছে। উত্তর কোরিয়া দাবি করে তারা এত ক্ষুদ্র নিউক্লিয়ার বোমা তৈরি করেছে যা দীর্ঘ পরিসরের মিসাইল বা ব্যালেস্টিক মিসাইলে করে অনায়াসে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানতে পারে। এদিকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা লংঘনের অভিযোগে উত্তর কোরিয়ার একটি কার্গো জাহাজ জব্দ করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জাহাজটি কয়লা পরিবহনে ব্যবহার করা হতো, জানিয়েছে মার্কিন বিচার বিভাগ। কয়লা উত্তর কোরিয়ার বৃহত্তম রপ্তানি পণ্য হলেও এর ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা আছে। ‘ওয়াইজ অনেস্ট’ নামের এ জাহাজটি ২০১৮ সালের এপ্রিলে ইন্দোনেশিয়ায় প্রথম আটক হয়। ওই বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র সেটি জব্দের আবেদন করে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা লংঘনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র এবারই প্রথম উত্তর কোরিয়ার কোনো জাহাজ জব্দ করল। ফেব্রুয়ারিতে ভিয়েতনামের হ্যানয়ে দুই দেশের শীর্ষ বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর গত সপ্তাহেই পিয়ংইয়ং দুই দফা স্বল্প মাত্রার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাও চালিয়েছে। ওয়াশিংটনের ওপর চাপ বাড়ানোর কৌশল হিসেবেই তারা এটি করছে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। জাহাজ জব্দের সঙ্গে এসব পরীক্ষার কোনো সম্পর্ক নেই, জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। ‘ওয়াইজ অনেস্ট জাহাজটির নিবন্ধনের তথ্য গোপন করে উত্তর কোরিয়া তাদের উন্নত মানের কয়লা বিদেশিদের কাছে বিক্রি করেছে বলে আমাদের অফিস জানতে পেরেছে,’ বলেছেন মার্কিন কৌঁসুলি জিওফ্রে এস বারমেন। জাহাজটির মাধ্যমে ভারী যন্ত্রপাতি আমদানি করে উত্তর কোরিয়া তাদের সক্ষমতা আরও বাড়িয়েছে এবং এটি পিয়ংইয়ংকে বারবার নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ তার। মার্কিন ব্যাংক হিসাবে ডলারের মাধ্যমেই জাহাজটির রক্ষণাবেক্ষণ খরচ দেয়া হতো, যা যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষকে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। পরপর দুই দফা উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজ জব্দের ঘটনাকে দুই দেশের নাজুক সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই দেখছেন পর্যবেক্ষকরা। দুই দেশ ফের বৈরিতার পথে হাঁটছে বলেও অনুমান তাদের।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..