আফ্রিকায় যেভাবে গল্পের জন্ম হয়

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email

রাজীব দত্ত: ইদুঁরতো ধনী-গরিব সবার ঘরেই যাইতে পারতো, তাই সে ম্যালা কিছু জানতো-দেখতো। আর তা দিয়ে সে গল্প বানাইতো, তার শিশু কইন্যার জন্য। প্রত্যেকটা গল্পেরই আলাদা আলাদা জামা-কাপড় ছিল। লাল, নীল, হলুদ, সবুজ, সাদা এবং কালো। এসব গল্পরা ইদুঁরের ঘরের ভিতর ঘুরতো ফিরতো আর তার কাজ কর্ম করে দিতো। একদিন একটা ভেড়া ইদুঁরের ঘরের উপর দিয়ে বেহুদা দৌড় দিলো। তার ভাঙাচোরা ঘর। অইটুকু দৌঁড়েই দরজার পাল্লাটা ভেঙে গেলো। আর অম্নি সবগুলা গল্প ঘর ছেড়ে বাইরে বেরোয় গেল এবং পৃথিবীর এখানে-অইখানে ছড়ায় পড়ল। আফ্রিকার লোকগল্প কাছিম তখন পানিতে নয়, ডাঙার উপর থাকতো। একবার কয়েকজন শিকারী একটা কাছিম ধরলো। তারা কাছিমটি তাদের গ্রামের মাতব্বরের কাছে নিয়ে আসলো। মাতব্বর এ প্রাণি আগে দেখেনি। জিজ্ঞেস করলো, কেমনে খাইতে হয় এইটা? কাছিম নিজেই বলে উঠলো, আগে আমারে মাইরা ফেলতে হবে। তারো আগে আমার উপরের খোলাটা ভাইঙা ফেলতে হবে। তাইলে লাডি ল, মাতব্বর হুকুম দিতে গেলেই কাছিম বলে উঠলো, না না আমারে পানিতে ডুবায় মারতে হবে, তাইলেই... সাথে সাথেই মাতব্বরের লোকজন কাছিমটাকে নদীতে নিয়ে গিয়ে ফেলে দিল। কাছিমটা একটু একটু করে ডুবে গেল। লোকজনও খুশি হয়ে উঠলো। তারা আরো যখন খুশি হয়ে উঠলো, কাছিমটি একটু একটু করে ভেসে উঠলো। হাসতে হাসতে বলল, কড়াই-লাকড়ি নিয়া লাভ নাই। ঠিক করছি আমি এখন থেইকা এই পানিতেই থাকবো। তোমরা ভালো থাইকো। সেই থেকে কাছিম পানিতেই থাকা শুরু করলো। আফ্রিকার লোকগল্প-২ অনেক কাল আগে সূর্য আর পানির খুব দোস্তি ছিল আর তারা এক গ্রামেই থাকতো। সূর্য সুযোগ পাইলেই পানির ঘরে গিয়া ঘুরে আসতো। কিন্তু পানি মোটেও যাইতো না। তাই সূর্য একদিন মন খারাপ কইরা বললো, দোস্ত আমিতো তোমার ঘরে এসে বেড়াই যাই। তুমি তো আমারে একবার দেখতেও গেলা না। পানি হাসলো, দোস্ত কি বলবো, তুমি তো জানো, আমার সংসার বড়। আমি গেলে তোমার ঘরে তো আর জায়গা হবে না, তাই যাই না। সূর্য শুনে লজ্জ্বা পাইলো। আরে এইটা কোনো কথা হইলো! আইসো! তোমার জন্য আমি বড় কইরা ঘর করবো। সূর্য ঘরে গিয়া তার বউ চাঁদরে বললো। চাঁদও খুশি। তারপর দুইজনে মিলে বিশাল এক ঘর বানাইলো এবং পানিরে দাওয়াত দিলো। পানি ও তার পরিবার আসলো। একটু একটু করে যে-ই ঢোকা শুরু হইলো, ঘর ভরে যাওয়া শুরু হইলো। পানিতে ঘরের চৌকি-জানালা ডুবে গেল। পানি সূর্যরে সাবধান করে দিলো। দোস্ত সময় আছে। দেখো, এখনো ম্যালা বাকি! সূর্য হাসে, আরে ব্যাপার না! আসতে থাকো। পানি আসতে থাকলো। পানিতে ঘরের চালা ছুঁই ছুই। পানি আবার সূর্যরে বুঝাইলো। সূর্য পাত্তা দিলো না। ডুবতে ডুবতে সমস্ত ঘর ভরে যখন গাছের আগাও ডুবলো। সূর্য আর চাঁদ বউ-জামাই মিইলা আসমানে উঠে গেলো। আর নামে নাই। আফ্রিকার লোকগল্প-৩ পৃথিবীর প্রথম দিককার ঘটনা। ঈশ্বর তখন সবে মানুষ আর কিছু প্রাণি বানাইছে মাত্র। তাই তাদের প্রতি তার প্রেমের সীমা ছিল না। কেউ মারা গেলেই খুব মন খারাপ করতেন। তাই তিনি তার প্রধান বার্তাবাহক যে কুত্তা, তারে দিয়া মানুষের কাছে খবর পাঠাইলেন যে, কেউ মারা গেলে তারে যেন উঠানে রেখে, তার উপর কাঠের ছাই ছিটায়, তার পরে কবর দেয়া হয়। তাইলে সে মৃতলোক আবার জিন্দা হয়ে উঠবে। কুকুর রওনা দিল। মানুষ থাকে ম্যালা দূরে। তাই সে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে গেল খুব। খিদাও পাইল। তাই হাঁটা থামায় আশপাশ থেকে কিছু খাবার জুটায় নিল। তারপর খেয়ে দিল এক ঘুম। আর জাগে না। অইদিকে কুত্তা ফিরে না দেখে, ঈশ্বর এইবার ভেড়ারে পাঠাইল। একই খবর দিয়ে। ভেড়া ছিল একটু বোকাসোকা টাইপের। সে ঘাস চিবাইতে চিবাইতে যাইতে যাইতে অর্ধেকটাই ভুলে গেল। গিয়া বলল, ঈশ্বর বলছে মারা গেলে কবর দিয়া দিতে। মানুষ দেয়া শুরু করে দিলো। এইদিকে, ঘুম ভাঙার পর তো কুত্তার পুরা মাথাই আউলা। সে উঠেই দৌড় লাগাইল। হাঁফাইতে হাঁফাইতে গিয়া বললো, এ এ ব্যাপার। এখন থেকে এইটাই কর। কিন্তু মানুষ তারে বিশ্বাস করলো না একটুও। তারা ভেড়ার কথামতোন কবর দেয়াই চালু রাখলো। মরার গায়ে ছাই ছিটাইলো না। আর তাই মরা মানুষও মরাই রয়ে গেলো। আর বেঁচে আসলো না।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..