নাসা গ্রুপের ১৬ কারখানা বন্ধ বেকার হাজারো শ্রমিক

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
একতা প্রতিবেদক : শেষ পর্যন্ত আশুলিয়ায় নাসা গ্রুপের ১৬টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। ঘোষণা অনুসারে, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে এসব কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হচ্ছে। এর আগে দফায় দফায় কারখানাগুলো অস্থায়ীভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিল। এদিকে বকেয়া বেতন পরিশোধ ও কারখানা চালুর দাবিতে শত শত শ্রমিক গতকাল বুধবার আশুলিয়ায় সড়কে নেমে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে। শ্রমিকরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে ওই সময় চার পুলিশ সদস্যসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হন। শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোমিনুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, ‘শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করলে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় এবং জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। প্রথমে আমরা তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু তাঁরা কর্ণপাত করেননি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে এবং যান চলাচল সচল রাখতে জলকামান ও লাঠিপেটা করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। নাসা গ্রুপের কারখানার শ্রমিকরা জানান, এখনো তাঁদের আগস্ট মাসের বেতনসহ যাবতীয় পাওনা পরিশোধ করেনি কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আকস্মিক এই সিদ্ধান্তে শ্রমিকরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। তাঁরা অবিলম্বে বকেয়া বেতন পরিশোধসহ যাবতীয় পাওনা দ্রুত পরিশোধ ও বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানান। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গতকাল সকাল থেকেই নাসা গ্রুপের শত শত শ্রমিক বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁদের অবরোধের কারণে সড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শিল্প পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তাঁরা শ্রমিকদের অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু শ্রমিকরা তাঁদের দাবিতে অনড় থাকলে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে এবং লাঠিচার্জ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরে আয়োজিত ত্রিপক্ষীয় সভায় জানানো হয়, বিদ্যুৎ-গ্যাসসংকট ও ক্রয়াদেশ না থাকায় আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে কারখানার সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। চুক্তি অনুযায়ী, শ্রমিকদের আগস্ট মাসের বেতন ১৫ অক্টোবরের মধ্যে, সেপ্টেম্বর মাসের বেতন ৩০ অক্টোবরের মধ্যে এবং অন্যান্য পাওনা ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করার আশ্বাস দেওয়া হয়। নাসা গ্রুপের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা নাসা বেসিক, নাসা গ্লোবাল ও নাসা হাই-টেকের ২৭ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। এ ঘটনার জেরে শিল্পাঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে উত্তেজনা। এ ছাড়া এই গ্রুপের আরো কারখানা বন্ধ হওয়ায় শত শত শ্রমিক সংক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। জানা গেছে, গত বছরের ২ অক্টোবর রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেপ্তার হন নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। তিনি কারাগারে গেলে নাসা গ্রুপের বিভিন্ন কারখানায় বেতন-ভাতা অনিয়মিত হয়ে পড়ে। দফায় দফায় কারখানা বন্ধের নোটিশ দিয়ে এক পর্যায়ে স্থায়ীভাবে এই গ্রুপ কারখানাগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। জানা গেছে, শ্রমিকের পাওনা পরিশোধের জন্য এই গ্রুপ সম্পত্তি বিক্রি করতে রাজি হয়। শ্রমিকদের আগস্ট মাসের বেতন ১৫ অক্টোবরের মধ্যে, সেপ্টেম্বর মাসের বেতন ৩০ অক্টোবরের মধ্যে এবং অন্যান্য পাওনা ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে এর মধ্যেই কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। তাতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শ্রমিকরা। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শিল্পাঞ্চলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..