হাসপাতালগুলো ডেঙ্গু আর চিকুনগুনিয়া রোগী দিয়ে ভরা

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
একতা প্রতিবেদক : হাসপাতালগুলো ডেঙ্গু আর চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগী দিয়ে ভরা। ঢাকার বেশিরভাগ এলাকায় বাসায় বাসায় ডেঙ্গু রোগী। বাংলাদেশে বেশ কিছুদিন ধরে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের প্রকোপ বেড়েছে। এডিস মশাবাহিত এই দুই রোগেরই উপসর্গ প্রায় একই রকম। একই মশাবাহিত এই দুই রোগের উপসর্গ এক হলেও বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। দুই রোগের রোগীদেরই প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার ও ফল খেতে পরামর্শ দিচ্ছে চিকিৎসকরা। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের প্রচুর পরিমাণে পানি, ডাবের পানি, শরবত, জুস, গ্লুকোজ, স্যুপ, দুধ খেতে হয়। অনেক সময় বমির কারণে খাবার খেতে না পারলে তখন স্যালাইনও দেয়া হয়। তবে চিকুনগুনিয়াতে আক্রান্ত রোগীকে তরল খাবারের পাশাপাশি বিশেষ করে ফল বেশি খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৪৪ হাজার ৪৭৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ১৮৮ জনের। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে মোট ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মোট ৫৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৩০-এর কম বয়সী রোগীদের মৃত্যুর সংখ্যই বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গুতে প্রাণ হারানো ১৮৭ জনের মধ্যে ৯৪ জনেরই বয়স ৩০ বছরের নিচে। এছাড়া হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর খুব কম সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মৃত্যু হওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে। এর কারণ হিসেবে সময়মতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পাওয়ায় ‘শক সিনড্রোম’ তৈরি হওয়ার কথা জানান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৫৬ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে। আর ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে জটিল উপসর্গে। এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্তের ২৬ শতাংশ ঢাকা মহানগরীর। কিন্তু মোট মৃত্যুর ৬৩ শতাংশই হয়েছে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে। এসব রোগী যে ঢাকারই, তা কিন্তু নয়। অনেক রোগী ঢাকার বাইরের। কিন্তু জটিলতা নিয়ে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তির পর মৃত্যু হয়েছে। ঢাকায় বরাবরই রোগী অনুপাতে মৃত্যুহার বেশি থাকে। তবে এবার তা আগের দুই বছরের চেয়ে বেশি। আর গড় জাতীয় মৃত্যুহারের দ্বিগুণের বেশি। চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ৪৪। আর ঢাকায় মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ৯৮। ডেঙ্গুর নতুন ধরন এলে কিছু জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে বলে জানান চিকিৎসকেরা। যেমন ধরন-৩-এ আক্রান্ত রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন বলে জানান দেশের খ্যাতনামা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক টিটো মিঞা। সাধারণত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ডেঙ্গুর প্রভাব অনেক বেশি বাড়তে থাকে। তাই এই সময়ে অনেক বেশি সচেতন থাকা জরুরি বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসবরা। সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের চিকুনগুনিয়ার কারণে বাংলাদেশকে ভ্রমণকারীদের স্বাস্থ্য সতর্কতার দ্বিতীয় স্তরে অন্তর্ভুক্ত করেছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার মার্কিন দূতাবাস এ তথ্য জানায়। দ্বিতীয় স্তরের সতর্কতায় যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি বলছে- বাংলাদেশ, কেনিয়া, মাদাগাস্কার, সোমালিয়া এবং শ্রীলঙ্কায় চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব রয়েছে । মশা চিকুনগুনিয়া সৃষ্টিকারী ভাইরাস ছড়ায়। মশার কামড় রোধ করে আপনি নিজেকে যেভাবে রক্ষা করতে পারেন, তার মধ্যে আছে পোকামাকড় প্রতিরোধক ব্যবহার করা, লম্বা হাতার শার্ট এবং লম্বা প্যান্ট পরা, এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বা জানালা এবং দরজায় পর্দা রয়েছে এমন জায়গায় থাকা। সিডিসি আরও জানায়, চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাবের আছে এমন কোনও অঞ্চল পরিদর্শন করছেন— এমন ভ্রমণকারীদের জন্য টিকা দেওয়ার পরামর্শ দেয় সিডিসি।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..