ফের ভয়াবহ করোনা, শক্তিশালী হচ্ছে ডেঙ্গু

ঐশ্বর্য সৌরভ:

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
সারা দেশে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১৩ জুন পর্যন্ত মোট পাঁচ হাজার ৫৭০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ১৩ জুন দেশে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে ১৫ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে ২৯ হাজার ৫০২ জন মারা গেছেন। আর খবর লেখা পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ২০ লাখ ৫১ হাজার ৮০০ জন। প্রতিবেশী দেশগুলোতে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় খুব প্রয়োজন না হলে ভারতসহ আক্রান্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ না করতে জনগণকে অনুরোধ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সারা দেশের সব স্থল, নদী এবং বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও নজরদারি ব্যবস্থা বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের নতুন সাব ভ্যারিয়েন্ট, বিশেষ করে অমিক্রন এলএফ. ৭, এক্সএফজি, জেএন-১ এবং এনবি ১.৮.১ এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ রোধ করতে, ভারত ও অন্যান্য সংক্রামক দেশ এবং বাংলাদেশ থেকে ভারত এবং অন্যান্য সংক্রামক দেশে ভ্রমণকারী নাগরিকদের জন্য দেশের সকল স্থল, নৌ, বিমানবন্দরের আইএইচআর ডেস্কে নজরদারি জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি ঝুঁকি মোকাবিলায় কিছু কার্যক্রম নিতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেশের সব প্রবেশপথে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য থার্মাল স্ক্যানার বা ডিজিটাল হ্যান্ডহেল্ড থার্মোমিটার (নন-কন্টাক্ট পদ্ধতি) ব্যবহার করে শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করার নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়াও, স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে মাস্ক, গ্লাভস এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) মজুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সাথে, জনসাধারণকে সচেতন করতে এবং ভাইরাস ছড়ানো ঠেকাতে সংক্রমণ প্রতিরোধ নির্দেশিকা প্রচার করতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও কিছু নির্দেশনা দিয়েছে- প্রয়োজনে দিনে অন্তত সাতবার, প্রতিবার কমপক্ষে ২৩ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, নাক ও মুখ ঢেকে মাস্ক ব্যবহার, সংক্রমিত ব্যক্তির কাছ থেকে অন্তত তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখা, অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ না করা, হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় কনুই, টিস্যু বা কাপড় দিয়ে নাক এবং মুখ ঢেকে রাখা। স্বাস্থ্য বিভাগ যথাসম্ভব জনসমাগম এড়িয়ে চলা, মাস্ক ব্যবহারসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু হাতেগোনা কিছু মানুষ ছাড়া কেউই মাস্ক পরিধানের মতো সাধারণ নির্দেশনাও মানছেন না। গত ১৪ জুন সরেজমিন রাজধানীর মেট্রোরেল, বিভিন্ন গণপরিবহণ, শপিংমল, কাঁচাবাজার, বিনোদনকেন্দ্র, হাসপাতালসহ একাধিক স্থান ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এ অবস্থায় চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা করোনা সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাস সাধারণত শ্বাসতন্ত্র আক্রান্ত করে। মহামারির সময়ে কেএন-৯৫ মাস্ক, কাপড়ের মাস্ক বা ফেস শিল্ড ইত্যাদি ব্যবহার করে শ্বাসতন্ত্রে রোগগুলো থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হয়েছে। রোগী শনাক্তের হার বৃদ্ধিতে করোনা নিয়ে নতুন করে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রোগতত্ত্ববিদেরা। তবে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হলে বড় কোনো ঝুঁকি সৃষ্টি হবে না বলে মনে করছেন রোগতত্ত্ববিদ এবং সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন। গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাতে তিনি বলেন, যে নতুন উপধরন পাশের দেশগুলোতে দেখা গেছে, তা খুবই ভয়ংকর তা বলা যাচ্ছে না। তবে হঠাৎ করে রোগী শনাক্তের হার বাড়ার ফলে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এ ক্ষেত্রে সরকারকে আরও উদ্যোগী হতে হবে। হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। পরীক্ষা আরও বাড়ানো জরুরি। জেলা ও উপজেলায়ও পরীক্ষার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। এদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বছরজুড়েই। মশক নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে রাজধানীসহ সারা দেশে এডিস মশার ঘনত্ব বেড়েছে। ডেঙ্গুর বাহক এডিসের আচরণে পরিবর্তন এসেছে। প্রতিকূল অবস্থায়ও এ মশা টিকে থাকতে সক্ষম। কাজেই এডিসসহ সব ধরনের মশার বংশবিস্তার রোধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মন্তব্য নগরবাসীর। এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে এবার এডিস মশার বংশবৃদ্ধির হার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ঈদুল আজহার ছুটির আগের দুই সপ্তাহ ধরে চলা এ জরিপে দেখা যায়, প্রতি ১৫ বাড়ির মধ্যে ৭ থেকে ৮টি বাড়িতেই এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এডিসের লার্ভার ঘনত্ব থেকেই স্পষ্ট পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে এ বছর ডেঙ্গু মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে ৩ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল এবং দেড় হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল। বিগত বছরগুলোতে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলার পর ডেঙ্গু প্রতিরোধে কর্তৃপক্ষ কেন জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছে না, তা বোধগম্য নয়। ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষা পেতে বছরব্যাপী মশক নিধন ও অন্যান্য কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। সবাই সচেতন থাকলেই ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ করা সম্ভব। যেভাবেই হোক, ডেঙ্গুর উৎস পুরোপুরি নির্মূল করার দাবি ভুক্তভোগীদের। দেশে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বরিশাল বিভাগে। গত ১৩ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছরের এক দিনে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যু এটি। এতে বলা হয়, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বরিশাল বিভাগে সর্বোচ্চ ৮৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়াও, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ১০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে চারজন, ঢাকা বিভাগে তিনজন, রাজশাহী বিভাগে একজন ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় একজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। জানা যায়, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৪ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছরে এ যাবত মোট পাঁচ হাজার ১১ জন রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছরের ১৩ জুন পর্যন্ত মোট পাঁচ হাজার ৫৭০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৫৯ দশমিক পাঁচ শতাংশ পুরুষ এবং ৪০ দশমিক পাঁচ শতাংশ নারী রয়েছেন। উল্লেখ্য, গত ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মোট মৃত্যুবরণ করেছেন ৫৭৫ জন। এর আগে, ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয় ও পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন মোট ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। ডেঙ্গু জ্বরের নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক ওষুধ না থাকায় সচেতনতাই এর প্রধান প্রতিরোধ। যথাসময়ে বিশ্রাম, তরল খাবার ও সুষম পুষ্টি গ্রহণের মাধ্যমে শরীরকে শক্তিশালী করে তোলা যায়। পাশাপাশি প্লাটিলেটের পরিমাণ স্বাভাবিক রাখতে আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে জানান পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকরা। একদিকে ডেঙ্গু অন্যদিকে করোনা ভাইরাস দেশবাসীকে অস্থির করে তুলেছে। আবারও নতুন করে চোখ রাঙাচ্ছে কোভিড। সেই সঙ্গে জ্বর, সর্দি ও কাশি নিয়ে জেলা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। বর্তমানে প্রায় প্রতিটি ঘরে জ্বর, সর্দি, কাশিসহ ঠান্ডাজনিত রোগের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।
প্রথম পাতা
বাংলাদেশে বেড়েছে ধর্ষণ-গণপিটুনিতে হত্যা
ফদলস্ফজ
দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরিসহ ১০ দফা দাবি চা-শ্রমিকদের
‘মুরাদনগরের ঘটনা প্রমাণ দিচ্ছে সরকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ’
‘২০ বছর লে মজুরির কথাই বলছি’
গণতন্ত্র কায়েমের লড়াইয়ে বাম গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব অপরিহার্য
গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট নানা কর্মসূচি পালন করবে সিপিবি
বাংলাদেশ এখন কোথায়?
‘ভালোমানুষ’
শ্রমিক হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি দিন
জুলাইয়ের ৩ দিনে হাজারের বেশি রোগী ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে
‘পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখুন’
মুক্তিযুদ্ধের স্মারক সম্বলিত দেয়াল ভেঙে ফেলায় বামপন্থিদের ক্ষোভ

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..