লেনিন দিবস স্মরণে

লেনিনের একটি দিন

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email

২২ এপ্রিল লেনিন দিবস- তাঁর ১৫৬ তম জন্মদিন। কমরেড লেনিনের নানাদিক বিষয়ে আমরা অনেকেই কমবেশি জানি। কিন্তু তিনি প্রতিদিন কীভাবে কাজ করতেন- তাঁর সেই কর্মদিবস সম্পর্কে আমরা কম অবগত। তাই লেনিন দিবসে তার প্রতিদিনের কাজের ধরন থেকে অনুপ্রাণিত হবার এই আলোচ্য নিবন্ধটি- একতা বিশেষ ফিচার : ১৯১৭ সালে কিভাবে দিন কাটাতেন লেনিন? নিশ্চয়ই কর্মব্যস্ততায় ভরপুর ছিল লেনিনের দিনগুলি। যেভাবেই তা কাটুক না কেন- তার মধ্যে একই সঙ্গে থাকতো প্রতি মিনিট ধরে গুছোনো কর্মপরিকল্পনার রুটিন এবং একজন বিপ্লবীর ১২ ঘন্টা আন্তরিক শ্রমের লৌহদৃঢ় প্রতিজ্ঞা। লেনিন পরিকল্পনা করতেন তা বাস্তবায়নের জন্য। কর্মশূন্য বড় বড় কথা তার চরিত্রে এক ফোঁটাও ছিল না। আমরা ১৯২১ সালের ১১ ই ফেব্রুয়ারি তারিখে লেনিন যেভাবে তার ১২ ঘন্টার কর্ম সাজিয়েছিলেন তা নীচে তুলে ধরলাম। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা ৩০ মিনিট : অর্থনৈতিক কমিশনের সভায় সভাপতিত্ব, সেখানে যেসব প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা হয়েছিল: ১। বন্টন, ২। অর্থায়ন, ৩। বৈদেশিক বাণিজ্য। এক ফাঁকে লেনিন তার সেক্রেটারিকে বলেন সে যেন দুপুর ১২ টায় ‘ক’ তাকে ফোন করলে সে যেন তাকে বলে যে লেনিন ১টা পর্যন্ত ব্যস্ত আছেন। দুপুর ১টা থেকে ২টার মধ্যে ফোন করে ‘ক’ যেন জেনে নেয় লেনিন কয়টার সময় তার সঙ্গে সাক্ষাত করবেন। দুপুর ১টা ৩০ মিনিট থেকে ২টা : ‘খ’ লেনিনের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। তার সঙ্গে ব্রিটেনের তেল কনসেশন ও দর কষাকষি নিয়ে আলোচনা হয়। দুপুর ২টা থেকে ২টা ১৫ মিনিট : মন্ত্রীসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান (narrwo council of peoples commissars) সঙ্গে সাক্ষাত। দুপুর ৩টা থেকে ৪টা : ‘ক’ এর সঙ্গে সাক্ষাত, ‘গ’ এর চিঠি পাঠ এবং চিঠির বিষয় মনে রাখার জন্য নোট করা। নোটে লেখা- ১। ‘গ’ এর নাম ২। আর্মেনিয়া ও জর্জিয়া, ৩। পার্সিয়া। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা : শ্রম এবং প্রতিরক্ষা দপ্তরের সভায় সভাপতিত্ব। সেখানে এই সময়ের মধ্যে ২২টি বিষয় পরীক্ষা করে মতামত দেন। এ ছাড়া এই সময় বিভিন্ন ব্যক্তিকে বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব দেন। সেসব লিখিত নির্দেশের মধ্যে ছিল- ১। আমাকে আগামীকাল সকাল ১১টায় মনে করিয়ে দিতে হবে। ২। মন্ত্রীসভায় সেক্রেটারির জন্য একটি থাকার জায়গা দরকার। ‘ঘ’ কে অনুরোধ করতে হবে যাতে সে সম্ভব হলে একটি কক্ষের ব্যবস্থা করে দেয়। ৩। ‘ঙ’ কে নির্দেশ দেন যাতে ‘খ’ এর একটি মেমোরান্ডাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিদেশি দপ্তরকে পৌছে দেয়। ৪। রাত ১১.৫০ মিনিটে লেনিন গাড়িতে করে সোকোলনিকি পার্কে ঘুড়ে আসতে যান। ১.২০ মিনিটে আবার ক্রেমলিনে ফিরে আসেন। সকাল ১১টার আগেও লেনিন অনেক কাজ করতেন। সেগুলি উপরোক্ত বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়নি। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পরেও ক্রুপস্ফায়ার (লেনিনের স্ত্রী) ভাষ্যমতে লেনিন প্রায়ই রাত ২-৩টায় শয্যা থেকে উঠে তার পড়ার ঘরে চলে আসতেন। অনেক সময় ফোন করে পরীক্ষা করতেন- যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তা পুরণ করা হলো কি না। অনেক সময় একাধিক ফোন ছাড়াও টেলিগ্রামও করতেন। একজন কর্মচারি জানিয়েছেন, কোনো কোনো দিন লেনিনকে রাত ২টা পর্যন্ত লেখাপড়া করতে দেখেছেন তিনি। তারপর আবার ভোর ৬টায় যখন তিনি ডিউটিতে এসেছেন তখনো দেখেছেন লেনিন তার চেয়ারে ফিটফাট হয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। তার মতে লেনিন আসলে খুব কম সময় ঘুমাতেন। বিপ্লবের পর পরই লেনিন একটি লেখা লিখেছিলেন যার নাম ‘কিভাবে প্রতিযোগিতা সংগঠিত করতে হয়’? সে লেখায় তিনি শিক্ষিত কেডারদের দুর্বলতা চিহিৃত করে লিখেছিলেন- তারা সাধারণত: যেসব দুর্বলতায় ভোগেন সেগুলি হচ্ছে- ১। আগোছালো ২। অমনোযোগী ৩। অপরিচ্ছন্ন ৪। অসময়ানুবর্তী ৫। অস্থীর ও দুশ্চিন্তাগ্রস্থ ৬। সর্বদাই কাজকে আলোচনা দিয়ে প্রতিস্থাপিত করার জন্য ব্যস্ত ৭। কাজের বদলে বাক্যবাগিশতা এবং ৮। তারা অসংখ্য কাজ শুরু করেন কিন্তু শেষ করেন না। লেনিন নিজে অত্যন্ত ভাল ছাত্র ও উচ্চ শিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও এসব ত্রুটি তাঁর ছিল না। শিক্ষিত কেডাররা কর্মক্ষেত্রে এসব অভ্যাস থেকে যাতে মুক্ত হতে পারে সেজন্য তাদেরকে এসব গুণ অর্জনের জন্য পরস্পর প্রতিযোগতার পরামর্শ তিনি দিয়েছিলেন। পাশাপাশি এসব ত্রুটি থেকে অপেক্ষাকৃত মুক্ত শ্রমিক নেতৃত্বেও প্রতি তার পরামর্শ ছিল ‘এসব শিক্ষিত কেডারদের সবসময় জবাবদিহীতা ও স্বচ্ছতার মধ্যে রেখে-নানাধরনের পুরস্কার-তিরস্কার-শাস্তির ব্যবস্থা চালু করতে হবে। যাতে তারা বুঝতে পারেন যে এসব শ্রমিকশ্রেণিসুলভ মানবিক দক্ষতা ও নৈতিক গুণাবলী অর্জন ছাড়া সমাজতন্ত্র সফলভাবে নির্মাণ সম্ভব হবে না। সংগ্রহ ও গ্রন্থনা : এম এম আকাশ উৎস : ‘Lenin: Great and Human’ by L. kunetskaya, k. Mashtakova, প্রগতি প্রকাশন, ২য় মুদ্রণ, ১৯৭৯- মস্কো।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..