নির্বাচন নিয়ে বিলম্ব দেশকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাবে
মোহাম্মদ শাহ আলম
শ্রমজীবী মানুষ বিশেষত গার্মেন্ট শ্রমিকসহ বিভিন্ন সেক্টরের শ্রমজীবীরা বেতন ভাতার দাবিতে ও ছাঁটাই এর বিরুদ্ধে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। বর্তমানে ‘সরকারকে অস্থিতিশীল করা’র কথা বলে শ্রমিকদের ওপর নিপীড়ন গ্রেফতারের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের ওপর মালিক ও সিন্ডিকেট চক্রের নিয়ন্ত্রণ আরো সংহত হয়েছে। কৃষক ফসলের লাভজনক দাম পাচ্ছে না। ধান উৎপাদন হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টন। কিন্তু সরকার মাত্র ৩ লক্ষ টন ধান ক্রয় করার ঘোষণা দিয়েছে। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি গত দুই মাসে আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। খুন-জখম-রাহাজানি-আধিপত্য বিস্তার, দখল-চাঁদাবাজির ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষ বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড চলছে। পুরোপুরিভাবে আইনের শাসন এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। গায়েবি ও মিথ্যা মামলার ফলে মানুষ নির্যাতিত হচ্ছে। তাই সামাজিক অস্থিরতা কমেনি।
বাংলা নববর্ষ সামনে রেখে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র- মঙ্গল শব্দ বাদ দেওয়ার মধ্য দিয়ে উগ্রপন্থীদের কাছে আস্থা অর্জনের চেষ্টা এবং চিরায়ত ঐতিহ্যর বিপরীতে নতুন ধারা সৃষ্টির চেষ্টা করলেও জনগণের প্রতিরোধের মুখে তা সফল হয়নি। এসময় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ তাদের দাবিতে রাজপথে অবস্থান অব্যাহত রেখেছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত হিজবুত তাহরীর ও উগ্র মৌলবাদী শক্তি বড় সমাবেশের মাধ্যমে তাদের অবস্থান দৃঢ় করার চেষ্টা করছে। এ সময় আন্দোলনকারী একাংশের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন সেনা প্রধানের বিরুদ্ধেসহ নানা কথা বার্তা, হুমকি, ইফতার পার্র্টির নামে রাজকীয় খরচ, এলাকায় মহড়া মানুষের কাছে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এদের আধিপত্য বিস্তারে অনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত আছে। ফলে সমাজ ও রাজনীতি ভীতিমুক্ত হতে পারছে না। একারণে নতুন দল দেশবাসীর মনে তারা কোন সাড়া ফেলতে পারেনি বরং এদের বিষয়ে আশাবাদী অনেকে হতাশ হচ্ছে।
ঐক্যমত কমিশন সংস্কার এর নামে বিভিন্ন দলের সাথে বৈঠক করেছে। মতামত নিচ্ছে, কিন্তু সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় আলোচনার বিপরীতে সরকারের অংশ সরকার থেকে বেরিয়ে এসে দল গঠন করাটা ছাত্রদের কথা প্রাধান্য দিয়ে বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতি বাদ দিয়ে সংস্কারের নামে বিতর্কিত বিষয়গুলো যেমন, গণপরিষদ, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট, প্রদেশ গঠন প্রভৃতি বিষয়ে ঐক্যমতের চেষ্টা করছে। কোন কোন গ্রুপ সামনে/পেছনে থেকে জাতীয় সরকার, নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া, ড. ইউনূসকে আরও ক্ষমতায় রাখার বিষয়টি সামনে আনছে। এর ফলে সরকারের ভূমিকা নিয়ে রাজনীতিতে ও মানুষের মধ্যে বির্তক সৃষ্টি হয়েছে। উগ্রপন্থীরা নানাভাবে আরো ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
সম্প্রতি জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরে রোহিঙ্গা অঞ্চলের কর্মসূচি প্রধান হলেও সরকার তার প্রতিও জাতিসংঘের সমর্থন দেখানোর চেষ্টা করেছে। চীন সফরে উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত রাজ্যকে নিয়ে বির্তকিত মন্তব্য করেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর ইউনূস। তিনি নাকি বলেছিলেন ‘উত্তর-পূর্বে ভারতের সাতটি রাজ্য স্থলবেশিষ্ট্য অঞ্চল, তাদের সমুদ্রে পৌছানোর কোনো উপায় নেই। এই অঞ্চলে আমরাই সমুদ্রের দেখভাল করি। এটি একটি বিশাল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে। এটা চীনা অর্থনীতির একটি সম্প্রসারণ হতে পারে।’ এই পরিস্থিতিতে ডক্টর ইউনূসের সাথে বৈঠক করে নরেন্দ্র মোদী বলেন- এমন কোনোও উস্কানিমূলক মন্তব্য করা উচিত নয়, যাতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরো বৃদ্ধি পায়। বিমসটেকের সম্মেলনে মোদী এ কথা বলেন। এ নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত বাংলাদেশে ট্রান্সসিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে দিয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ভারত থেকে বাংলাদেশ স্থলপথে তুলা আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। ২০২৪-এ জুলাই অভ্যুত্থানের পর পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ও যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে বিমান যোগাযোগের চুক্তি হয়েছে। সরকার পাকিস্তান থেকে তুলা আমদানি করার উদ্যোগ নিয়েছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সফর করে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন। যদিও সরকার পাকিস্তানকে সরকারকে একাত্তরের গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়া বকেয়া দেনাপাওয়া পরিশোধ করা, দুইদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানি ও বাঙালিদের ফেরত যাওয়া ও আনার কথা উল্লেখ করেছে। ভারত পাকিস্তানের মধ্যে বৈরি সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ভারত পাকিস্তানের এই বৈরতার প্রভাব বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতিতে ক্রিয়াশীল। ঐতিহাসিক কারণে দুই দেশ সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষের মধ্যেও হীনমৌনতার বোধ দেখা যায়। এটি দেশের স্বাধীন উদ্যোগ নেওয়ার পথে বাধা।
প্যালেস্টাইনের গাজায় বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষ মাঠে নেমেছে। তবে মৌলবাদী গোষ্ঠী এবং সাধারণ অনেকে এখনো সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান ঘোষণা করেনি। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ইসরাইলী জায়নবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বামপন্থীরা সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে।
রোহিঙ্গা ও আরাকান পরিস্থিতি নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। আরাকান আর্মি রাখাইনয়ে ৮০% এলাকার তাদের দখলে নিয়েছে। আরাকানের সাথে আমাদের প্রায় ২০০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। কিছুদিন আগে জাতিসংঘের মহাসচিব রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফর করেছেন। বাংলাদেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিল সাহেব আরাকানে সরবরাহ করিডোর চালু করার কথা বলেছেন। ইতোমধ্যে এশিয়া প্যাসিফিক এ আমেরিকা সামরিক বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার সফর করেছেন এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে বৈঠক হয়েছে। বর্তমানে আমেরিকা ষ্টেট ডিপার্টমেন্ট এর দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলাদেশ সফর করছেন। তারা বিভিন্ন মহলের সাথে বৈঠকও করছেন। বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াত এবং এনসিপি সাথে বৈঠক করেছেন। শোনা যায়- বৈঠকের বিষয় ছিল বাংলাদেশে নির্বাচন ও রোহিঙ্গা সমস্যা। এখানে ক্ষমতাপ্রতার্শী এই দলগুলোর মধ্যে মতামতের পার্থক্য সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। এই সমস্ত চলমান কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে।
নির্বাচন নিয়ে বির্তক উত্তেজনা আরো বেড়েছে। নির্বাচনের সুনিদিষ্ট রোডম্যাপ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিএনপির বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। বলতে গেলে ব্যর্থ হয়েছে। কোনো কোনো উপদেষ্টা তারা যে অনির্বাচিত সরকার এ কথা মানতে চাচ্ছেন না। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এককাঠি এগিয়ে জনগণের নাম করে বলেছেন- জনগণ নাকি তাদেরকে ৫ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই। কিন্তু অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নির্বাচনের সুনিদিষ্ট রোডম্যাপের দাবি তুলেছেন। অতিসত্ত্বর নির্বাচন না হলে দেশের সংকট আরো বাড়বে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র বৃদ্ধি পাবে। দেশ ভূ রাজনীতির ফাঁদে পড়বে। দেশে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মধ্যে পড়বে বলে জনগণ মনে করে।
তাই এ সংকট থেকে দেশ জাতি এবং দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে হলে নির্বাচন নিয়ে ছলচাতুরি বিলম্ব করা কোনো কারণেই উচিত হবে না।
প্রথম পাতা
করিডোর নয়, মানুষ চায় দ্রুত নির্বাচন
ক্ষেতমজুরদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য শোষণ-বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হবে
নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থ উপাচার্য ও প্রক্টর-কে পদত্যাগ করতে হবে
ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে
দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে
‘এক যাত্রা দুই ফল’
গুজব ও ধর্মীয় উসকানির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও নারীসমাজ
চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি বিদেশিদের হাতে না দেওয়ার আহ্বান
বগুড়ায় উদীচীর জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনে হামলা-ভাঙচুর
সংবিধান পুনর্লিখন ও চার মূলনীতি পরিবর্তনের বিপক্ষে সিপিবি
Login to comment..