স্বাস্থ্যখাতের বড় বড় মালেকদের খুঁজে বের করতে হবে

মাহবুব রেজা

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
স্বাস্থ্যখাতের সীমাহীন দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচার ও ক্ষমতাসীন দলের সিণ্ডিকেটদের রামরাজত্ব সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এ খাত সংশ্লিষ্টরা সরকারের ভেতরে বিকল্প সরকার তৈরি করে নিয়েছে, বলছেন স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্টরাই। তারা বলছেন, স্বাস্থ্যখাতের এসব নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকরা বিব্রত হলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই, তিনি স্বাস্থ্যখাতের এসব দুর্নীতি, অনিয়ম ও সিন্ডিকেটদের তোষণে বেসামাল হয়ে উঠছেন। গনমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে স্বাস্থ্যখাতে অন্যায়ভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়া সিন্ডিকেটে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নিকট আত্মীয়দের সম্পৃক্ততার কথা জানা গেছে। এসব নিয়ে সরকারের শীর্ষ মহলসহ দেশের বিভিন্ন সচেতন মহল থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি দিন দিন তীব্র হয়ে উঠছে। প্রশ্ন উঠেছে, সরকারের সব অর্জন কি তাহলে স্বাস্থ্যখাতের ব্যর্থতায় ধুয়ে-মুছে যাবে! এমন সরস কথাবার্তা রাজনীতির অন্দর-বাহির মহলে উচ্চ শব্দে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। কি সরকারি দল- কি বিরোধী দল কি সুশীল সমাজ- সর্বত্রই এক আলোচনা। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়সারা গোছের অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থার জায়গা তৈরি করতে পারছে না। গণমাধ্যমের সামনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাণ্ডজ্ঞানহীন, অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা জনমনে ধু¤্রজালের সৃষ্টি করছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদের পদত্যাগ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এবার কি আপনি ব্যর্থতার দায়ভার কাঁধে নিয়ে পদত্যাগ করবেন- এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, এ পরিস্থিতি করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি। পরীক্ষায় কত নাম্বার পেলেন, এটা নির্ভর করে আপনি পরীক্ষা কেমন দিয়েছেন। আমরা মনে করি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ভালো নাম্বার পেয়েছে। নাম্বারটা কি- যে আমাদের মৃত্যুর হার দেড় পার্সেন্ট। এটা হলো সবচেয়ে বড় নাম্বার। যেটা আমেরিকাতেও ছয় পার্সেন্ট, ইউরোপে ১০ পার্সেন্ট। তবে যেখানে যেখানে পরিবর্তন প্রয়োজন, সে বিষয়গুলো আমরা অবশ্যই দেখবো। আমরা চাই যে, এখানে সুষ্ঠু পরিচালনা হোক। ’ অন্যদিকে সরকারের শীর্ষ নীতিনির্ধারক মহল গণমাধ্যমে প্রকাশিত চিকিৎসা সেবা ও স্বাস্থ্যখাতের ধারাবাহিক নানা রকমের দুর্নীতি, অনিয়মের সিরিজ সংবাদে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা এ নিয়ে যারপর নাই বিরক্ত ও বিব্রত। ইতিপূর্বে দুর্নীতি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদকে পদত্যাগে বাধ্য করা, ভ্যাকসিন দুর্নীতি, জেকেজি এবং রিজেন্ট হাসপাতাল কেলেঙ্কারি, গণটিকা নিয়ে নানা তেলেসমাতি কাণ্ড সরকারকে মহামারির সময়ে বিপদে ফেলেছে। জানা যায়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সামান্য একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী গাড়িচালক আবদুল মালেক কোনো আলাদিনের চেরাগের বদৌলতে শত কোটি টাকার মালিক হয়ে গেলেন! এ যে আবদুল মালেক এত এত টাকা, ১০-১২টা ফ্ল্যাটের মালিক বনেছেন তা কি রাতারাতি হয়েছেন! অভিজ্ঞজনেরা বলছেন, নিশ্চয়ই না, অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে মালেকের পেছনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত আরও বড় বড় পদধারী মালেকরা রয়েছেন। এই মালেকদের আশ্রয়- প্রশ্রয়ে গাড়িচালক মালেকরা অর্থ বিত্তে, ধন দৌলতে ফুলেফেঁপে উঠছেন। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সামান্য গাড়িচালক মালেক যদি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা মহলের যোগসাজশে শতকোটি টাকা বাগিয়ে নেয়ার যাদু জানেন তাহলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে অন্য মালেক’রা কত হাজার কোটি টাকা এ খাত থেকে হাপিশ করেছেন? সাধারণ মানুষের জানার আগ্রহ, তাহলে কারা স্বাস্থ্যখাতের বড় বড় মালেক কে বা কারা? এইসব মালেকদের চিহ্নিত করা দরকার। জানা যায়, গাড়িচালক মালেক গ্রেফতার হওয়ার পর বেরিয়ে এলো তার অঢেল সম্পদ এবং কিভাবে তার উত্থান হল এসবের বিস্তারিত বিবরণ। মালেকের গ্রেফতারের পর মানুষের মনে স্বভাবসুলভ প্রশ্ন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে মালেক দিনে দিনে, বছরে বছরে শূন্য থেকে এ পর্যন্ত উঠে এসেছেন অথচ তারা কিছুই জানতেন না? মালেক চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন ১৯৮২ সালে সাভার স্বাস্থ্য প্রকল্পে। স্বাস্থ্য অধিদফতরে যোগ দেন ১৯৮৬ সালে। তবে তার উত্থান স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক শাহ মুনীর হোসেনের সময়। চার বছর মালেক সাবেক এই মহাপরিচালকের গাড়ি চালিয়েছেন। এই চার বছরে আবদুল মালেক জীবনে যা কিছু অর্জন তার ছবক নিয়েছিলেন। মহাপরিচালকের বদান্যতায় মালেক মঞ্জিলে মক্সুদে পৌঁছে যাওয়ার সব তরিকা শিখেছিলেন। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক সময়ের মহাপরিচালক শাহ মুনীর হোসেনের নামে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। তার নিজস্ব প্যাথলজি ল্যাবগুলো নিয়ম মেনে চলছিল না। অধিদফতরের বিভিন্ন কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ আছে। আবদুল মালেক এ সব কিছুরই সাক্ষী ছিলেন। সে কারণে শাহ মুনীর হোসেন তার ব্যাপারে শক্ত হতে পারেননি। র্যা বের অনুসন্ধানে জানা গেছে, শাহ মুনীর হোসেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক পদে থাকার সময় ২০০৯ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত আবদুল মালেক স্বাস্থ্য সহকারী পদে শতাধিক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে একটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে থাকা এক কর্মকর্তা বলেন, আবদুল মালেক ছিলেন শাহ মুনীরের ‘কালেক্টর’। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করে জানান, নানা সূচকে দেশের অগ্রগতি যখন দেশে বিদেশে বাংলাদেশকে সম্মানের জায়গায় নিয়ে জাচ্ছে সেখানে করোনা মহামারীর সুযোগে স্বাস্থ্যখাতের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে দুর্নীতির মাধ্যমে সুকৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। সিন্ডিকেটের রাঘব বোয়ালরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে আর ধরা পড়ছে গাড়িচালক মালেকের মতো চুনোপুঁটিরা। এ যেন শাঁক দিয়ে মাছ ঢাকা’র মোহমুগ্ধ এক খেলা। তারা স্বাস্থ্যখাতের সিন্ডিকেটের ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সন্দেহজনক অবস্থান পরিত্যাগ করার ইঙ্গিত দিয়ে জানান, মন্ত্রীর মন্ত্রণালয়ে গাড়িচালক মালেকের মতো এরকম অনেক মালেক লুকিয়ে আছেন তাদেরকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব তার। স্বাস্থ্যখাতের অনিয়ম, দুর্নীতি আর এর ভেতরকার সিন্ডিকেটদের দৌরাত্ম্য এখন সব মহলে ওপেন সিক্রেট হয়ে গেছে। তারা জানান, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্যখাত নিয়ে যত মনগড়া সাফাই গান না কেন তাতে কোন লাভ হবে না। দেশের স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির খবর এখন দেশ বিদেশের সবাই জানে। সুতরাং এসব দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে লোক দেখানো পদক্ষেপ না নিয়ে মন্ত্রীকে আরও কঠোর অবস্থানে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকারের সেবা খাতের অন্যতম স্বাস্থ্যখাত- আর এই খাতটিকে কেন্দ্র করে জেঁকে বসেছে এক শ্রেণির অসাধু চক্র। চক্রটি নানাভাবে জাল ছড়িয়ে রাষ্ট্র যন্ত্রের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠছে। গত ষোল মাসে এ চক্রটি সরকারের সকল শুভ কাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। করোনা মহামারির সময়ে চক্রটি সারা দেশে নিজেদের বিস্তৃত নেটওয়ার্কে সক্রিয় রয়েছে। সরকার স্বাস্থ্যখাতের এসব দুর্নীতি, অনিয়ম বন্ধে জুলাই মাসে টাস্কফোর্স গঠন করলেও কার্যত তা কোন সুফল বয়ে আনে নি। টাস্কফোর্স গঠনের পর সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেছিলেন এর মাধ্যমে দেশের হাসপাতাল, ক্লিনিকসহ স্বাস্থ্যখাতে জড়িত অন্যান্য সব প্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের অনিয়ম হচ্ছে কি-না, তা খতিয়ে দেখা হবে। স্বাস্থ্যখাতের অনিয়ম, দুর্নীতি, শক্তিশালী সিন্ডিকেট ও স্বার্থান্বেষী মহলের অশুভ কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখার কথা থাকলেও তা হয় নি। দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি-অনিয়ম সমূলে উৎপাটন করা কতটুকু সম্ভব তা নিয়ে শুরুতেই সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। তিনি সরকারের শুভ ইচ্ছে আছে উল্লেখ করে গনমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, স্বাস্থ্যখাতের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়াটা বেশ দুরূহ বলে উল্লেখ করেছেন। বিবিসি বাংলাকে তিনি জানান, গভীরে গিয়ে যারা এর সার্বিক প্রক্রিয়ার মধ্যে মূল ভূমিকাগুলো পালন করে থাকে, তাদের সবাইকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা বা একটা প্রতিরোধমূলক জায়গায় নিয়ে আসা- এটা খুবই কঠিন কাজ এবং অনেক সময় অসম্ভবও মনে হয়। কিন্তু যদি আইনের প্রয়োগটা হতো বা নীতিমালার প্রয়োগ হতো তাহলে কিন্তু এটা খুবই সম্ভব। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, যে প্রতিষ্ঠানগুলো বা যে কর্তৃপক্ষের ওপর দায়িত্ব তারা কিন্তু এক ধরণের সীমারেখা নির্ধারণ করে বসে আছে যে এই সীমারেখার ঊর্ধ্বে আর যাওয়া যাবে না, তাহলে হাত পুড়ে যাবে। যার ফলে টানাটানি হবে তথাকথিত কিছু চুনোপুঁটিদের নিয়ে। এবং রুই-কাতলারা ঠিকই বাইরে থেকে যাবে। সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল মহল স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পারফর্মেন্সে হতাশ। তারা বলছেন, করোনা মহামারীর সময়ে স্বাস্থ্যখাতের উদ্ভুত সমস্যা ও এর সমাধানে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের চেয়েও স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অনেক বেশি তাৎক্ষণিক বুদ্ধিসম্পন্ন এবং কৌশলী ও ডাইনামিক হতে হয়- তাকে যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথও উদ্ভাবন করতে হয় কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রী এক্ষেত্রে শতভাগ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। তারা এ বিষয়টি দলীয় ফোরামে, আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীকে একাধিকবার জানিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বারবার স্বাস্থ্যখাতের সকলকে সতর্ক করে দেয়ার পরও অবস্থার দৃশ্যত কোনো উন্নতি হয়নি। বরং পরিস্থিতি দিন দিন নাজুক থেকে নাজুকতর হচ্ছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। স্বাস্থ্যখাতের সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি আর লাগামহীন সমন্বয়হীনতা সরকারের চলমান সাফল্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে উপরন্তু এ খাতকে ধ্বংসের মুখে ফেলছে বলে শংকা প্রকাশ করছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করছেন করোনা মহামারির পুরোটা সময় জুড়ে স্বাস্থ্যখাত নানা ক্ষেত্রে দুর্নীতি, অনিয়মের এক নজিরবিহীন ইতিহাস গড়ে বিগত দিনের সুনামকে ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে। আর এসবের নেপথ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যখাতের শীর্ষপদ থেকে শুরু চুনোপুঁটিরাও। স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বে দেশের সুশাসনকেও প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা এর জন্য স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তহীনতা ও নিজ মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান না নেয়াকে দায়ী করছেন।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..