চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি বিদেশিদের হাতে দেওয়ার চক্রান্ত বন্ধ কর

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
চট্টগ্রাম সংবাদদাতা : চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেয়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও বন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক অশোক সাহা ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। বিদেশি অপারেটরের হাতে তুলে দেয়ার চক্রান্ত বন্ধের পাশাপাশি দেশীয় বেসরকারি মাফিয়াচক্রের হাত থেকে এনসিটিকে মুক্ত করে বন্দরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছেন সিপিবি নেতারা। বিবৃতিতে সিপিবি নেতারা বলেন, দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দর। দেশের রাজস্ব আয়ের বড় অংশের যোগান দেয় এ সমুদ্রবন্দর। আর চট্টগ্রাম বন্দরের হৃৎপি- হিসেবে পরিচিত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)। ২০০৭ সালে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে এনসিটি নির্মাণ করে। এরপর আরও আড়াই হাজার কোটি টাকা খরচ করে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ইক্যুইপমেন্ট স্থাপন করে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, যখন গুরুত্বপূর্ণ এ টার্মিনালটি পরিচালনার প্রসঙ্গ আসে, তখন বন্দর কর্তৃপক্ষ এর ভার তুলে দেয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে। আমরা দেখেছি, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মদদপুষ্ট ব্যবসায়ী চক্র এনসিটিসহ বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোকে ঘিরে মাফিয়াদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল। সিপিবির পক্ষ থেকে তখনই আমরা বারবার এর প্রতিবাদ করেছিলাম। সম্প্রতি পত্রিকান্তরে আমরা জেনেছি, বিগত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগমুহূর্তে এনসিটি পরিচালনার ভার বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় একটি কমিটিও গঠন করে। কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় তারা বিদেশিদের হাতে এনসিটি তুলে দিতে পারেনি। অত্যন্ত দু:খের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, বিগত স্বৈরাচার সরকারের মতো বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়েও এনসিটি বিদেশিদের হাতে দেয়ার জোর চক্রান্ত শুরু করেছে। দুবাই-আমিরাতসহ বিভিন্ন বিদেশি গোষ্ঠীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। সম্প্রতি বন্দর চেয়ারম্যান বিদেশিদের হাতে এনসিটি দেয়ার সিদ্ধান্তের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন এক সংবাদ সম্মেলনে। সিপিবি নেতারা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও বন্দর কর্তৃপক্ষের এমন কার্যকলাপ আমাদের হতাশ করছে। চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষ, চট্টগ্রামবাসী স্বাভাবিকভাবে বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ছেন। আমাদের কাছে বোধগম্য হচ্ছে না, বন্দর যদি নিজের টাকায় টার্মিনাল বানাতে পারে, তাহলে সেটি নিজে পরিচালনা করতে পারবে না কেন? সেই টার্মিনাল কেন বিদেশি গোষ্ঠী কিংবা দেশি মাফিয়াচক্রের হাতে তুলে দিতে হবে? এর আগে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি জেটিসহ পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করেছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার সেটি সৌদি আরবের কাছে ইজারা দিয়েছে। এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করার সময় সিপিবি এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ করেছিল। চট্টগ্রাম বন্দরকে নিয়ে যুগ যুগ ধরে এমন ষড়যন্ত্র, চক্রান্তের খেলা চলে আসছে। ১৯৯৬ সালে একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানকে বন্দর নির্মাণের জন্য কর্ণফুলী নদীর মোহনা ইজারা দেওয়ার চক্রান্ত হয়েছিল। তখন বাংলাদের কমিউনিস্ট পার্টির তিনজন নেতা- বর্তমান সভাপতি কমরেড মো. শাহ আলম, পার্টির বন্দরের নেতা কমরেড নজরুল ইসলাম ও সুনীল আইচ হাইকোর্টে রিট মামলা দায়ের করেছিলেন। সেই মামলার রায়ে যুক্তরাষ্ট্রের এসএস কোম্পানিকে দেয়া ইজারা বাতিল হয়। সিপিবির পক্ষ থেকে আমাদের সুষ্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, চট্টগ্রাম বন্দরকে নিয়ে বারবার এ ধরনের ছিনিমিনি খেলা, আমরা কাউকে খেলতে দিতে পারি না। এনসিটি, পিসিটি, সিসিটিসহ বন্দরের কোনো স্থাপনা দেশি-বিদেশি কোনো ধরনের বেসরকারি খাতে দেয়া যাবে না। চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বন্দরের তত্ত্বাবধানে বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারীরাই পরিচালনা করতে সক্ষম। সিপিবি নেতারা আরও বলেন, আমরা অবিলম্বে চট্টগ্রাম বন্দরের যেসব স্থাপনা পরিচালনায় বেসরকারি গোষ্ঠী যুক্ত আছে, তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। এনসিটিকে বিদেশিদের মাধ্যমে পরিচালনার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে পিসিটি পরিচালনায় সৌদিআরবের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে করা চুক্তি বাতিলের দাবি জানাই। বন্দরের সকল কার্যক্রম বন্দরের নিজস্ব শ্রমিক-কর্মচারীদের মাধ্যমে পরিচালনা করতে হবে।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..