পরিবেশ রক্ষায় প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email

একতা পরিবেশ ডেস্ক : ১. “শ্রেণিসংগ্রাম ব্যতীত পরিবেশবাদী আন্দোলন মূলত গার্ডেনিং/বাগান করা” -চিকো মেন্ডেস, ব্রাজিলিয়ান বামপন্থী নেতা ও পরিবেশবাদী বর্তমান বিশ্বে পুঁজিবাদের করালগ্রাসে কেবল মানুষই না, প্রাণ প্রকৃতি পরিবেশও পড়েছে। বর্তমানে পরিবেশবাদী আন্দোলন খুবই জনপ্রিয়। নিওলিবারেল শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবেশ রক্ষা নিয়ে নানা রকম আলাপ প্রচলিত আছে। পরিবেশবাদী আন্দোলন প্রধানত এনজিওগুলোর কারণে বেশ জনপ্রিয়। বামপন্থী হিসেবে পরিবেশবাদী আন্দোলনের সাথে শ্রেণিদৃষ্টিভঙ্গিকে ধারণ করার পাশাপাশি শ্রেণিসংগ্রামকেও এর সাথে যুক্ত করা অতীব জরুরি। এক গবেষণা থেকে পাওয়া যায় যে ঢাকা শহরে উচ্চবিত্তদের এলাকায় অপচনশীল বর্জ্য বেশি উৎপন্ন হয়। অন্যদিকে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত এলাকাগুলোতে মূলত পচনশীল বর্জ্য বেশি উৎপন্ন হয়। কিন্তু বিদ্যমান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির কারণে সৃষ্ট পরিবেশ দূষণের ফলে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত জীবনই বেশি আক্রান্ত হয়। এ থেকে সহজেই বুঝতে পারা যায় কেন শ্রেণি দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। তথাকথিত প্রথম বিশ্বের পরিবেশ দূষণের ভুক্তভোগী মূলত হয় তৃতীয় বিশ্বের লোকজন। পরিবেশ দূষণ থেকে সুরক্ষা পাওয়ার জন্য তেমন কোনো ব্যবস্থাপনা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে না থাকার ফলে বড়লোক রাষ্ট্রগুলোর পরিবেশ দূষণের মাশুল দেয় গরিব রাষ্ট্রগুলো। বাংলাদেশের সুন্দরবন থেকে ব্রাজিলের আমাজন, সর্বত্রই চলছে ধ্বংসযজ্ঞ। এর পিছনে একটা রাজনৈতিক অর্থনীতি তথা পুঁজিবাদী ব্যবস্থাপনা রয়েছে। প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস হওয়ার পিছনের একটা বড় কারণ অপরিকল্পিত শিল্পায়ন বা সহজ ভাষায় বললে কর্পোরেট কোম্পানিরগুলোর লাভ-লোকসান এখানে মুখ্য। লোভী পুঁজিপতিরা তাদের তল্পিবাহক সরকারকে দিয়ে প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংস করে। এর কারণে ভূমি, বাসস্থানসহ সর্বস্ব হারায় গরীব মানুষ, ক্ষতিপূরণটুকুও পায় না। পাখি গাছসহ আরো নানা প্রাণের যে ক্ষতি হয় তার তো কোনো ক্ষতিপূরণও সম্ভব নয়। বর্তমান সময়ের পরিবেশবাদী আন্দোলনে শ্রেণি দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সর্বপ্রাণবাদী ধারণাও যুক্ত করা জরুরি। যা কেবল মানুষ কেন্দ্রীক চিন্তা নয়, সকল প্রাণ কেন্দ্রীক চিন্তা ধারণ করবে। এনথ্রোসেন্ট্রিক তথা মানুষকেন্দ্রীক পরিবেশবাদী আন্দোলন থেকে সর্বপ্রাণবাদী পরিবেশবাদী আন্দোলনকে গ্রহণ করা প্রয়োজন এই কারণে যে প্রতিটি প্রাণেরই এই দুনিয়াতে তার ন্যায্য হিস্যাসহ বাঁচার অধিকার রয়েছে। পুঁজিবাদ আর সাম্রাজ্যবাদ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মহামতি লেনিন বলেছিলেন- ‘সাম্রাজ্যবাদ হল পুঁজিবাদের চূড়ান্ত পর্যায়।’ সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো গরিব রাষ্ট্রগুলোতে তাদের দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ও কর্পোরেট কোম্পানিগুলো তাদের নানা ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে কোনো রকম পরিবেশের তোয়াক্কা না করে। ফলে পরিবেশবাদী লড়াইয়ে সাম্রাজ্যবাদী দিকগুলোও বিবেচনা করা জরুরি। ২. মাটি, পানি, বায়ু, শব্দ, আলো- সব ধরনের দূষণ একত্র হয়ে পরিবেশদূষণ হয়ে থাকে। বিশ্বব্যাংকের দেওয়া তথ্য মোতাবেক, বাংলাদেশে ২০১৯ সালে বায়ুদূষণসহ চার ধরনের পরিবেশ দূষণে ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষের অকালমৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বায়ুদূষণের কারণে। এ ছাড়া দূষণের কারণে ওই বছর দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ সমপরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশের পরিবেশ এতটা দূষিত যে বেঁচে থাকার জন্য এদেশের মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত বাতাস গ্রহণ করে থাকে। ২০২৩ সালের আইকিউএয়ারের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত বাতাসের দেশ এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে যথাক্রমে পাকিস্তান ও ভারত রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া মানের চেয়ে ১৫ গুণের বেশি পিএম পাওয়া গিয়েছে বাংলাদেশের বাতাসে। পিএম হলো পার্টিকুলেট ম্যাটার, যেটি দ্বারা বোঝা যায়, বাতাসে ভাসমান কঠিন বা তরল পদার্থের ক্ষুদ্র কণার মিশ্রণের পরিমাণ। ধুলা, ধোঁয়া, ছাই, ধাতব কণা, জৈব পদার্থ, বনভূমি দাহ, আগ্নেয়গিরি, ঝড়, ধূলিঝড়, যানবাহন, কলকারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র, ইটভাটা, কৃষি, নির্মাণকাজসহ ইত্যাদি কারণে বাতাসে পিএম বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার প্রকাশিত ‘২০২৪ বিশ্ব বায়ু গুণমান প্রতিবেদন’ মতে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বিশ্বের তৃতীয় দূষিত শহর। বাংলাদেশের বায়ুদূষণের পেছনে অসংখ্য কারণ রয়েছে। সাধারণত ঢাকায় চলাচল করা যানবাহনের ৮০ শতাংশ বাস এক যুগের বেশি পুরোনো, ওই যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত ধোঁয়া মারাত্মকভাবে বায়ুদূষণ করে থাকে। এ ছাড়া যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া, রাস্তাঘাটের অতিরিক্ত যানজট বায়ুদূষণ বৃদ্ধির পেছনে দায়ী। পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশে মোট ৭ হাজার ৮৬টি ইটভাটা চালু আছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৫০৫ ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। এসব ইটভাটায় বছরে প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ ইট তৈরি হচ্ছে। এসব ইটভাটার বছরে ১৩ কোটি মেট্রিক টন মাটি লাগে। অবৈধ ইটভাটাগুলো পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়াই বছরের পর বছর চলছে, নিম্নমানের জ্বালানি ব্যবহারসহ আরও নানা মাধ্যমে এসব ইটভাটা মারাত্মকভাবে বায়ুদূষণ করছে। বাংলাদেশে প্রায় ৪৬ হাজার কলকারখানা রয়েছে। অধিকাংশ কলকারখানায় পুরোনো ও অনুন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার, নিম্নমানের জ্বালানি ব্যবহারের কারণে নির্গত ধোঁয়া ও ধূলিকণা, বিভিন্ন রাসায়নিক গ্যাস, যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড ইত্যাদি বায়ুদূষণের জন্য দায়ী। অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণকাজের কারণে নির্মাণ সাইট থেকে ধুলাবালু, ভবন ভাঙার ধূলি মারাত্মকভাবে দূষণ সৃষ্টি করে থাকে। কাঠ, কয়লা, কেরোসিনসহ ইত্যাদি অপরিমার্জিত জৈব জ্বালানি ব্যবহার, গ্রামাঞ্চলে জৈব জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বায়ুদূষণ সৃষ্টি করছে। এ ছাড়া বন উজাড়, কৃষিকাজ, অপরিচ্ছন্নতা, পরিবেশ আইনের শিথিল প্রয়োগ বায়ুদূষণের পেছনে দায়ী। বায়ুদূষণের কারণে বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়ে থাকে যথা শ্বাসকষ্ট, হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, ক্যানসার, অ্যালার্জি ইত্যাদি। এ ছাড়া বায়ুদূষণের কারণে মারাত্মকভাবে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে থাকে। পানিদূষণ পরিবেশদূষণের পেছনে একটি অন্যতম প্রধান কারণ। বাংলাদেশে নানাভাবে পানিদূষণ হয়ে থাকে। এর মধ্যে শিল্পকারখানা মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। কলকারখানার বর্জ্য পানিতে প্রত্যক্ষভাবে ফেলা পানিদূষণের পেছনে মারাত্মকভাবে দায়ী। কারখানার রাসায়নিক পদার্থ, ভারী ধাতু, তেল ও রঞ্জক পানিতে মিশে পানিদূষণ সৃষ্টি করে থাকে। এ ছাড়া শিল্পকারখানাগুলোর ত্রুটিপূর্ণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে পানিদূষণ হয়ে থাকে। কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অপরিকল্পিত ব্যবহারের কারণে কীটনাশক, সার ও রাসায়নিক উপাদান এবং কৃষিক্ষেত থেকে বর্জ্য পানিতে মিশে পানির দূষণ ঘটাচ্ছে। এ ছাড়া পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাব, অপরিকল্পিত ও অপরিচ্ছন্ন শহরাঞ্চল, কঠিন বর্জ্য পানিতে ফেলা, যানবাহনের তেল ও রাসায়নিক পানিতে মিশে যাওয়া, তেল-গ্যাসের অনুসন্ধান ও উত্তোলনের কারণ, আর্সেনিকদূষণ, জলাভূমি ভরাট, পানি ব্যবহারের অসচেতনতা, নদীতে চলমান যানের ময়লা-আবর্জনা পানিতে ফেলা, নদীর পাশে তৈরি হওয়া বাজারের সব বর্জ্য নদীতে ফেলাসহ ইত্যাদি কারণে মারাত্মকভাবে পানিদূষণের সৃষ্টি হয়ে থাকে। পানিদূষণের কারণে নানা ধরনের পানিবাহিত রোগ হয়ে থাকে, যেমন ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড এবং পানিতে এডিস, অ্যানোফিলিস মশার জন্ম হয়ে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া, ফাইলেরিয়া ইত্যাদি মশাবাহিত রোগও পানিদূষণের কারণে হয়ে থাকে। এমনকি দূষিত পানি পানের কারণে জন্ডিস হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া পানিদূষণের কারণে জীববৈচিত্র্য হ্রাস, জলজ প্রাণীর বিলুপ্তি, কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হওয়াসহ আরও নানা ক্ষতি হয় এবং হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পরিবেশদূষণের আরেকটি অংশ হলো শব্দদূষণ, যা বাংলাদেশের একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা। বাংলাদেশে শব্দদূষণ একটি মারাত্মক সমস্যা, যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। নানা কারণে শব্দদূষণ হচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার এবং যানবাহন বৃদ্ধির কারণে শব্দদূষণের সৃষ্টি হচ্ছে। প্রয়োজন ছাড়াই হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার, সাইলেন্সারবিহীন মোটরবাইক, যানজটের কারণে মারাত্মক শব্দদূষণের সৃষ্টি হচ্ছে। শিল্পকারখানাগুলোতে অনুন্নত ও ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও আবাসিক এলাকার কাছে কারখানা গড়ে ওঠাও শব্দদূষণ করে থাকে। এ ছাড়া নির্মাণকাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, বিবাহ, রাজনৈতিক সমাবেশে ও বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে উচ্চ স্বরে মাইক ও স্পিকার বাজানো এবং বহু জায়গায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে জেনারেটরের ব্যবহারের কারণেও মারাত্মক শব্দদূষণের সৃষ্টি হয়ে থাকে। শব্দদূষণের কারণে মানুষের শারীরিক ও মানসিক দুই ধরনের ক্ষতিই হয়ে থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ শব্দের সংস্পর্শে থাকলে শ্রবণশক্তি হ্রাস পেতে পারে। শব্দদূষণের কারণে মানসিক চাপ, উদ্বেগ, বিরক্তি ও মারাত্মক ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে, যা শারীরিক ও মানসিক দুই ধরনের ক্ষতিরই কারণ। শুধু মানুষই নয়, বরং শব্দদূষণের কারণে পাখিসহ অন্য প্রাণীরাও মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে। ক্রমশ পরিবেশদূষণ বৃদ্ধি পাওয়ার আরেকটি কারণ হলো অতিরিক্ত মাটিদূষণ হওয়া। মাটিদূষণের ফলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধন হয়ে থাকে। আমরা প্রতিনিয়ত প্লাস্টিক ও পলিথিনের অতিরিক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে মারাত্মকভাবে মাটিদূষণ করে থাকি। এ ছাড়া শিল্পকারখানার বর্জ্য, কৃষিক্ষেত্রে অতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার, বন উজাড় ও সহজে পচে না এমন ময়লা মাটিতে ফেলা মাটিদূষণের অন্যতম কারণ। মাটিদূষণের ফলে মাটির উর্বরতা হ্রাস পায় এবং ফসল উৎপাদন কমে যায়। এ ছাড়া মাটিদূষণের কারণে দূষিত মাটিতে উৎপাদিত খাবার মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। মাটিদূষণের ফলে জীববৈচিত্র্য হ্রাস, পানিদূষণসহ পরিবেশের ভারসাম্যও নষ্ট হয়ে থাকে। আমাদের দেশ ও পৃথিবীতে ক্রমশ অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়া আরেকটি দূষণ হলো আলোকদূষণ। অতিরিক্ত আলোর ব্যবহার আনন্দ ও আধুনিকতার ছাপ মনে করা হলেও নীরব ঘাতকের মতো অতিরিক্ত আলোর ব্যবহার মারাত্মকভাবে মানুষসহ পরিবেশের অন্যান্য প্রাণীদের ক্ষতি করে যাচ্ছে। অতিরিক্ত আলো ব্যবহারের কারণে মানুষের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, ঘুমের ব্যাঘাত হয়ে শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা বাড়ছে। আলোদূষণের কারণে পাখি ও অন্য প্রাণীদের ক্ষতিসহ মহাকাশবিজ্ঞানীদের গবেষণায়ও বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। বায়ু, মাটি, পানি, শব্দ ও আলোকদূষণ রোধে যানবাহনের ধোঁয়া কমানো, কালো ধোঁয়া নির্গমণ হয় এমন যানবাহন বন্ধ করা, কলকারখানা থেকে নির্গমণ হওয়া ক্ষতিকারক ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ এবং এ ব্যাপারে কঠোর আইন প্রয়োগ, জৈব জ্বালানি ব্যবহার কমিয়ে এনে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার, ইটভাটার ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ, নির্মাণ সাইটের ধুলা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ ছাড়াও বনায়ন, পানিদূষণ রোধে কলকারখানার বর্জ্য-পানি পরিশোধন করে নদীতে ফেলা, মানুষের বর্জ্য-পানি সঠিকভাবে নিষ্কাশন করা, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সার ব্যবহার বৃদ্ধি করা, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, জলাভূমি রক্ষা করা, শব্দদূষণ রোধে যানবাহনের হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো নিয়ন্ত্রণ করা, সাইলেন্সারবিহীন মোটরবাইক জব্দ করা, আবাসিক এলাকায় শিল্পকারখানা বন্ধ করা, শিল্পকারখানাগুলোতে উন্নত যন্ত্রের ব্যবহার ও পুরোনো যন্ত্রের সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে। মাটিদূষণ রোধে প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করে পাটজাতীয় পণ্যের ব্যবহার, নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা ফেলানো, আলোকদূষণ রোধে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি আলো ব্যবহার না করা, আলো নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা স্থাপন করে আলোর অপচয় রোধ করা, এলইডি আলোর মতো উন্নত আলো ব্যবহার করাসহ সব ধরনের দূষণের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং কঠোর আইনি ব্যবস্থা তৈরি করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। পরিবেশ আমাদের বেঁচে থাকার জায়গা, পরিবেশের ক্ষতি করা হলো নিজের ও নিজের আশপাশের সবার ক্ষতি করার সমান। তাই পরিবেশ রক্ষার্থে ও দূষণরোধে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই বড় ধরনের পরিবর্তন এনে দিতে পারে। এসব দূষণ রোধে রাষ্ট্রের জনগণ ও সরকার- সবাই আন্তরিক না হলে, একসঙ্গে কাজ না করতে পারলে এর থেকে পরিত্রাণ সম্ভব না।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..