কমরেড লেবু-কমলেশ-বিষ্ণু ও মানিক
ডা. মনোজ দাশ
স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনালগ্ন, মুক্তিযুদ্ধকালীন রণাঙ্গন এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী দেশ পুনর্গঠনের ইতিহাসে কমিউনিস্ট নেতা শহীদ ওয়ালিউর রহমান লেবু ও কমলেশ বেদজ্ঞ গোপালগঞ্জবাসীর কাছে সুপরিচিত ও জনপ্রিয় দুটি নাম। বিষ্ণুপদ কর্মকার ও রামপ্রসাদ চক্রবর্তী মানিক ছিলেন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা। গোপালগঞ্জের মানুষ তাদের প্রিয় নেতাদের পরম শ্রদ্ধার সাথে যেমন স্মরণ রেখেছেন, তেমনই ৫২ বছরেও এই চার মুক্তিযোদ্ধা হত্যার বিচার না হওয়ার তাদের মধ্যে হতাশা, দুঃখ ও ক্ষোভ আছে।
ওয়ালিউর রহমান লেবু : ওয়ালিউর রহমান লেবুর জন্ম গোপালগঞ্জের আড়পাড়া গ্রামে। অকৃতদার, সদা হাস্যোজ্জল ব্যক্তিটি বামপন্থি রাজনীতিকে পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত ও মার্কসীয় দর্শনের ওপর অপরিসীম জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন তিনি। তার নিরলস প্রচেষ্টায় গোপালগঞ্জ বামপন্থি রাজনীতির শক্তিশালী ঘাঁটিতে পরিণত হয়। ৬৯-এর ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজনীতির পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে অতিদ্রুত গোপালগঞ্জের জনগণের মধ্যে তার পরিচয় ঘটতে থাকে। ১৯৭০ সালের পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াহিদুজ্জামান তাকে রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাকরি নিয়ে ইতালি যাবার প্রস্তাব করেন। কমরেড লেবু তা প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কমিউনিস্ট পার্টির গোপালগঞ্জ মহকুমার সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। ২৫ মার্চ পাকবাহিনীর বর্বর হামলার পর থেকে বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার প্রতিরোধ আন্দোলনে তিনি ছিলেন অগ্রণী যোদ্ধা। পাকহানাদার বাহিনীকে মোকাবিলা করার জন্য মার্চেই তিনি জনগণকে সংঘটিত করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন এবং গড়ে তোলেন প্রতিরোধ বাহিনী। এপ্রিলের প্রথম দিকে হানাদার বাহিনী গোপালগঞ্জে প্রবেশ করলে পার্টির সিদ্ধান্তে বৃহত্তর প্রস্তুতির জন্য তিনি ভারতে চলে যান। স্বাধীনতা যুদ্ধের রূপরেখা নিয়ে কমিউনিস্ট পার্টির নেতা আব্দুস সালাম, খোকা রায়, অনিল মুখার্জী ও মোহাম্মদ ফরহাদের সাথে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির মূল নেতৃত্ব রাজেশ্বর রাও এবং এম এ ডাঙ্গের সাথে যে ঐতিহাসিক বৈঠক হয় ওয়ালিউর রহমান লেবু সে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে ৮নং সেক্টরে ক্যাপ্টেন মঞ্জুকে সার্বিক সহায়তা করার জন্য কমরেড লেবুকে পলিটিক্যাল এ্যাটাচির দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি কঠোরভাবে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে এসব দায়িত্ব পালন করেন। ক্যাপ্টেন মঞ্জুর সাথে তার ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা থাকায় এ কাজ আরও সহজ ও বস্তুনিষ্ঠ হয়। কমরেড লেবু ভারতের বনগাঁ, লবনহ্রদ, রানাঘাট, মেদিনীপুর, বর্ধমান, বহরমপুরসহ বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগ্রহ করে বনগাঁর রেস্ট ক্যাম্পে কিছুদিন রেখে পরবর্তীতে ট্রেনিং এর জন্য পাঠিয়ে দিতেন। এছাড়া তিনি মুক্তিযুদ্ধের নয়মাসে দেশের অভ্যন্তরে ও নিজ এলাকায় পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
দেশ হানাদার মুক্ত হওয়ার পর গোপালগঞ্জে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিজয় মিছিল করেন। তারপর আত্মনিয়োগ করেন দেশ পুনর্গঠনে। সে সময়ে মহকুমাভিত্তিক যে পুর্নবাসন কমিটি গঠিত হয়েছিলো তিনি তার অন্যতম সদস্য ছিলেন। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং গোপালগঞ্জে অবস্থিত মিত্র বাহিনীর ক্যাপ্টেন আর মহান ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে অস্ত্র জমা নেয়ার অনুষ্ঠান পরিচালনা করে। ওয়ালিউলর রহমান লেবু সেই কমিটির মূল দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছিলেন। স্বাধীনতার পর কমরেড লেবু সাংগঠনিক কাজে আত্মনিয়োগ করেন। কাশিয়ানী, মোকসেদপুর, কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ সদরসহ প্রতিটি থানায় তিনি গড়ে তুলেছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির শক্তিশালী সংগঠন।
কমলেশ বেদজ্ঞ : কমলেশ বেদজ্ঞ ২২/বি তেলিপাড়া লেন, শ্যামবাজার, কলকাতায় জন্ম নেন। কোটালীপাড়ার সিকিরবাজারের কাছে ডৌয়াতলী নামক গ্রাম ছিল পৈতৃক নিবাস। প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাস করার পর তিনি পিতার অমতে ইন্ডিয়ান নৌবাহিনীতে যোগ দেন। বছরখানেক তিনি নৌবাহিনীতে চাকরি করেন। পরবর্তীতে তার পিতা নৌবাহিনী থেকে ছাড়িয়ে এনে তাকে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি করেন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি বাম রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। ১৯৬৯ সালে লেনিনের জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে কমিউনিস্ট পার্টির সমাবেশে কমলেশ বেদজ্ঞ সভাপতিত্ব করেন। ১৯৭১ এর মার্চের প্রথমদিকেই কমলেশ বেদজ্ঞ কোটালীপাড়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার কাজে নেমে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধে ৮নং সেক্টরের অধীন কোটালীপাড়া, আগৈলঝড়া, গৌড়নদী, কালকিনি অঞ্চলে হেমায়েতবাহিনীর তিনি ছিলেন ডেপুটি কমান্ডার। যুদ্ধে হেমায়েত আহত হবার পরে কমলেশ বেদজ্ঞই বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন। ইন্ডিয়ান নৌবাহিনীতে চাকরির সুবাদে উচ্চতর ট্রেনিং থাকায় একাজে তার অনেক সুবিধা হয়েছিল। রাজাপুর, রামশীল, দোনারকান্দি, পয়সারহাট, স্বরূপকাঠি, ভাঙ্গা, পাইকারবাড়ি, সিকিরবাজার, ঘাঘরের যুদ্ধসহ এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে তিনি সরাসরি পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে অত্যন্ত দুঃসাহসিকতার ও সফলতার পরিচয় দেন। হেমায়েতবাহিনীর কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধার তিনিই ছিলেন মূল চালিকাশক্তি। তাকে ঘিরেই বেশিরভাগ যুদ্ধে এই বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা অভূতপূর্ব সব বিজয় ছিনিয়ে এনেছে।
স্বাধীনতার পর তিনি জনসেবায় ও দেশপুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। সেফ দা চিলড্রেনে চাকরী নিয়ে কোটালীপাড়ার মানুসেবার সেবায় দিনরাত কাজ করেছেন। বসন্ত-কলেরা ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত মানুষের পাশে নির্দ্বিধায় দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। কোটালীপাড়ায় তিনি গড়ে তোলেন ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টির বিরাট সংগঠন। ১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচনে কমলেশ বেদজ্ঞ ফরিদপুর ১০ আসনে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। ৭ মার্চের এই নির্বাচনে স্বল্প ব্যবধানে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। ৯ মার্চ কোটালীপাড়া ন্যাপের কার্যালয়ের সামনে শত শত কর্মীর উপস্থিতিতে নির্বাচনী মূল্যায়ন সভায় কমরেড লেবু ও কমলেশ বেদজ্ঞ বক্তব্য রাখেন।
বিষ্ণু ও মানিক : বিষ্ণুপদ কর্মকার ও রামপ্রসাদ চক্রবর্তী মানিক ছিলেন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা। বিষ্ণু ছিলেন গোপালগঞ্জ মহকুমা ছাত্র ইউনিয়নের সহসভাপতি। তিনি সুবক্তা এবং খুব জনপ্রিয় ছিলেন। মানিক ছিলেন কমলেশ বেদজ্ঞের আপন মামাতো ভাই।
কমরেড লেবু-কমলেশ-বিষ্ণু ও মানিক হত্যাকাণ্ড : ১৯৭৩ সালের ১০ তারিখে ওয়ালিউর রহমান লেবু, কমলেশ বেদজ্ঞ, বিষ্ণুপদ কর্মকার, রামপ্রসাদ চক্রবর্তী মানিক ও লুৎফর রহমান গঞ্জর কোটালীপাড়া থেকে গোপালগঞ্জের দিকে রওনা দেন। গোপালগঞ্জে আসার পথে টুপুরিয়া নামক স্থানে হেমায়েতসহ তার পোষা সশস্ত্র গুন্ডারা ওয়ালিউর রহমান লেবু, কমলেশ বেদজ্ঞ, বিষ্ণুপদ কর্মকার, রামপ্রসাদ চক্রবর্তী মানিককে দা, নিড়ানি, ছেনি, শাবল, কোদাল ইত্যাদি ধারাল অস্ত্র দিয়ে আক্রমন করে এবং ঘটনা স্থলেই পৈশাচিকভাবে তাদের হত্যা করে। ছাত্রনেতা লুৎফর রহমান গঞ্জরকে মৃতভেবে খুনীরা ফেলে রেখে যায়। খুন করার পরে খুনি হেমায়েত গোপালগঞ্জ থানায় এসে রিপোর্ট করে গ্রামবাসী ৫ জন ডাকাতকে হত্যা করেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে এই চার মহান মুক্তিযোদ্ধার মরদেহ দেখতে পায়। আর লুৎফর রহমান গঞ্জরকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। গোপালগঞ্জের এই চার প্রিয় নেতার হত্যাকান্ডের খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। হেমায়েত থানায় আছে জেনে পাঁচ সহস্রাধিক মানুষ থানা ঘেরাও করে ফেলে। পুলিশ হেমায়েতকে বাঁচাবার জন্য নদীপথে বরিশালে নিয়ে যায়। সড়কপথ জনগণ অবরোধ করে রাখায় ফরিদপুরে তাকে নেয়া সম্ভব হয়নি। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দুদিন পর মারাত্মক আহত লুৎফর রহমান গঞ্জর মৃত্যুকালীন জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি হেমায়েতের পৈশাচিকতার বিবরণ তুলে ধরেন।
কেন এই হত্যাকাণ্ড? এই চার কমিউনিস্ট মুক্তিযোদ্ধাকে যে মাসে হত্যা করা হয় সেই ১৯৭৩-এর মার্চ মাসেই রাষ্ট্রীয়ভাবে হত্যাকারী হেমায়েতকে বীরবিক্রম উপাধি দিয়ে পুরস্কৃত করে। কোন সন্দেহ নেই অনেক বিতর্কিত ভূমিকা সত্ত্বেও হেমায়েত মুক্তিযোদ্ধা ছিল। চার শহীদের মধ্যে ওয়ালিউর রহমান লেবু ৮ নম্বর সেক্টরের পলিটিক্যাল এ্যাটাচি ছিলেন। সম্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন। আর কমলেশ বেদজ্ঞ ছিলেন পচিশটিরও বেশী সফল যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অসম সাহসী এক লড়াকু মুক্তিযোদ্ধা। বিষ্ণুপদ কর্মকার ও রামপ্রসাদ চক্রবর্তী মানিকও মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ সমরে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও হেমায়েত এই চার মহান কমিউনিস্ট মুক্তিযোদ্ধাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেও রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেল। এর অর্থ কী দাঁড়ায়? ...ওয়ালিউর রহমান লেবু ও কমলেশ বেদজ্ঞ গোপালগঞ্জ অঞ্চলে শক্তিশালী বাম সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। স্বভাবতই শাসক শ্রেণি তাদের উপর সন্তুষ্ট ছিলো না। শাসক শ্রেণিকে তারা গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল। তাদের জনপ্রিয়তায় শাসক শ্রেণি ভীত ও ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েছিলো। এটি ধারণা করা হয় ওয়ালিউর রহমান লেবু ও কমলেশ বেদজ্ঞের অসম্ভব জনপ্রিয়তাই এই হত্যাকাণ্ডের প্রাথমিক কারণ। অন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ছিলো কমলেশ বেদজ্ঞের ডায়রিতে মুক্তিযুদ্ধকালীন ঘটনার বর্ণনা ছিলো এবং যুদ্ধকালীন রাজাকার ক্যাম্পের পতন ঘটিয়ে প্রাপ্ত সম্পদের তালিকা ছিলো। এই সম্পদ হেমায়েতের কাছে রাখা হয়েছিলো। মুক্তিযুদ্ধের পরে যাদের সম্পদ তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য কমলেশ বেদজ্ঞ বারবার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু হেমায়েত রাজী হয়নি। কমলেশ বেদজ্ঞ সম্পদ জনগণের কাছে ফিরিয়ে না দিলে প্রাপ্ত সম্পদের তালিকা জনগণের কাছে প্রকাশ করার চ্যালেঞ্জ প্রদান করেন। রাজনৈতিক-সাংগঠনিক ও ব্যক্তিগত লাভের আশায় শাসক শ্রেণির কোন না কোন অংশের সমর্থনে খুনন হেমায়েত চক্র মুক্তিযুদ্ধকালীন গচ্ছিত সম্পদ আত্মসাৎ করা এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন অপকর্ম ঢেকে রাখার জন্য এই নির্মম ও পাশবিক হত্যাকান্ড ঘটায় বলে মনে করা হয়।
৪৪ বছরেও বিচার হয়নি: শুরুতেই বিচার প্রক্রিয়ায় শাসক দলের প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ ছিলো। মৃত্যুকালীন জবানবন্দি দেওয়া গঞ্জরকে সাক্ষী দিতে বারবার ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। হেমায়েত বাঁচার জন্য বারবার দলবদল করেছে। মার্শাল’ ল কোর্টে এই বিচার প্রক্রিয়াকে চিরতরে বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। হাইকোর্ট বারবার হেমায়েতের আবেদনের প্রেক্ষিতে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। বারবার আদালত বদল হয়েছে। অনেক চেষ্টার পরে ১৯৯৮ সালে আবার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু বারবার সেই একই দীর্ঘসূত্রিতা ও প্রভাবশালীদের চাপে বিচার প্রক্রিয়া স্বাভাবিক গতিতে আগাতে পারেনি। সর্বশেষ ২০১৫ সালে মামলাটির স্থগিতাদেশ খারিজের আবেদনের প্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট মামলাটি বিরতিহীনভাবে স্বল্প সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তির আদেশ প্রদান করলে আসামিপক্ষ আবার সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ নিয়ে বিচার প্রক্রিয়া অনিশ্চিত করার ষড়যন্ত্র করে। ইতোমধ্যে খুনি হেমায়েতের মৃত্যু হয়েছে।
শহীদদের স্বপ্ন ও আমাদের দায়িত্ব : এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে রাজনৈতিক কারণেই। শাসক শ্রেণির দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থ এবং ব্যক্তিস্বার্থের মধ্যেই এই হত্যাকাণ্ডের কারণ খুঁজতে হবে। বুর্জোয়া আইন আদালত সাধারণভাবে শাসক শ্রেণির পক্ষেই থাকে। তারপরেও প্রচলিত আইন আদালতকে কার্যকরভাবে ব্যবহারের জন্য আমরা চেষ্টা চালাবো না কেন? বিচারের জন্য সাধ্যমত সাহসী-আন্তরিক ও পরিকল্পিত প্রচেষ্টা না নিলে প্রচলিত আইনে কোন হত্যাকাণ্ডেরই বিচার সম্ভব হবে না। প্রচলিত আইনে তাদের বিচারের আন্তরিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি শহীদ বিপ্লবীদের স্বপ্নের বাস্তবায়নই হতে পারে হত্যাকারী ও শাসক শ্রেণির ওপর সবচেয়ে বড় প্রতিশোধ। আমরা কি এভাবে সমগ্র বিষয়টির মুখোমুখি দাঁড়াতে প্রস্তুত?
লেখক : সভাপতি, খুলনা জেলা কমিটি, সিপিবি
স্মরণ
কমরেড মন্মথ নাথ দে
Login to comment..