যাহা বাহান্ন তাহাই তেপ্পান্ন

এ. এন. রাশেদা

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধকালীন তাজউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন সরকার– বাংলাদেশের প্রথম সরকার। এই সরকারের কোনো অন্যায় বা অন্যায্য নীতির কথা কেউ বলেনি; তবে যুদ্ধ বন্ধ করে শুধু বঙ্গবন্ধুর মুক্তির বিনিময়ে কনফেডারেশনের খন্দকার মোশতাক, শেখ মনি, তোফায়েল আহমদ, মাহবুবুল আলম চাষীসহ কারও কারও গোপন ও প্রকাশ্য প্রচারাভিযান ছিল এবং তারা নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার সাথে সাথেই তিনি নিজেই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অভিলাস ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে আবার প্রেসিডেন্ট তবে বেশিদিন না, ভয়ানক নিষ্ঠুরভাবে নিহত হওয়ার কারণে চিরবিদায় নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর খন্দকার মোশতাক, বিচারপতি সায়েম এবং জেনারেল জিয়াউর রহমানের প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হতে দেশবাসী দেখেছে। ১৯৭৭ সালের অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট পদে জিয়াউর রহমানের হ্যাঁ/না ভোটে– কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ‘না’ বাক্সে একসঙ্গে আমিসহ তিনজন ‘অন্যের ভোট’ দিয়েছিলাম। কারণ প্রিসাইডিং অফিসারের মুখে ‘আপনার ভোট তো হয়ে গেছে’ শুনে আমার ঐ সিদ্ধান্ত ছিল। বুথে আমরা ৩ জন একসঙ্গে গিয়েছিলাম, কোনো নির্বাচন পরিস্থিতিই ছিল না। পরে সন্ধ্যায় বাসায় এসে ১০০% হ্যাঁ বাক্সে ভোট পড়েছে বলে–বিগত আওয়ামী নেতা বলেছিলেন। আর আমার প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন ‘ভেজাল করে লাভ কী?’ তবে পার্টির জবাবদিহিতার সময় উত্তর না দিয়ে তা এড়িয়ে গিয়েছিলাম। পরবর্তীতে বিশেষ করে স্কুলের শিক্ষকদের খাল কাটার নির্দেশনা দিয়ে তাদের উপর সরকারি কর্মকর্তাদের বনভোজনের ব্যবস্থা করতে বাধ্য করায় শিক্ষকদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখেছি। এছাড়াও তো আছে সেনাবাহিনীতে বিদ্রোহ দমনের নামে বিনা বিচারে ফাঁসি দেয়ার কাহিনী। এরপর জেনারেল জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে ক্ষমতায় আসে স্বৈরাচারী লে. জে. হু. মোহাম্মদ এরশাদ। ১৯৮৩-তে মজিদ খানের শিক্ষানীতি চাপিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ছাত্রসমাজের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। ১লা মার্চ ১৯৮৪ সালে আদমজীতে শ্রমিক নেতা কমরেড তাজুল ইসলামকে হত্যা এবং ১৯৯০-এ নূর হোসেন, ডা. মিলন হত্যাসহ অগণিত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে এরশাদের পদত্যাগ। জিয়া, এরশাদ কেউই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নেয়নি যা ঘোষিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে ‘সাম্য, সামাজিক মর্যাদা ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য’। বঙ্গবন্ধু বাকশাল করার কারণ হিসেবে বলেছিলেন– গরিব মেহনতি মানুষের মুখে তিনি হাসি ফোটাতে চান– তাই সমাজতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে তিনি একদল গঠন করছেন। আর নিজ দল সম্পর্কে মূল্যায়ন করে বলেছিলেন– ‘সকলে পায় সোনার খনি আর আমি পাইছি চোরের খনি’। এবার ’৯০ থেকে আমরা বিএনপি-র ৫ বছর এবং আওয়ামী লীগের ৫ বছর পরে পুনরায় বিএনপি-র ৫ বছরের সামান্য ক্রিয়াকলাপের দিকে তাকাতে পারি। দেশের সম্পদ ধনিক শ্রেণির হাতের মুঠোয় তুলে দেওয়ার জন্য বিএনপি কি কি করেছে–উদাহরণস্বরূপ ২০০২ সালের একটি বর্ণনা তুলে ধরছি। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০০২ তারিখের সাপ্তাহিক একতা বলছে– ‘দফায় দফায় হামলা ও নজিরবিহীন পুলিশি নির্যাতন-নিপীড়নের মধ্য দিয়ে গত ২ ফেব্রুয়ারি ১১ দলের ডাকে সারা দেশে স্বতঃস্ফূর্ত অর্ধ দিবস হরতাল পালিত হয়েছে। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের যে আলামত ইতোপূর্বে লক্ষ করা যাচ্ছিল এই হরতালে তার নগ্ন রূপ উন্মোচিত হয়েছে। হরতালের সময় পুলিশ রাজধানী থেকে সাপ্তাহিক ‘একতা’র সম্পাদক এ. এন রাশেদা, একতার স্টাফ রিপোর্টার অনির্বান সাহা, সাপ্তাহিক ‘নতুন কথা’র স্টাফ রিপোর্টার মামুন ফরাজীসহ ১১ দলভুক্ত সিপিবি, বাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির ৩৩ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে। ১১ দলের সমন্বয়ক হাজী আব্দুস সামাদকেও পুলিশ লাঠিচার্জ করে আহত করে। এ সময় ধস্তাধস্তির ফলে ১১ দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা আহত হন। ডিজেল-পেট্রোলসহ জ্বালানি তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির দাম বৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতা-চাঁদাবাজি-দখলদারত্ব-রাজনৈতিক নির্যাতন, তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর বিদেশীদের কাছে বিক্রির চক্রান্ত, ঢাকা নগর থেকে পাইকারী হারে হকার-রিকশা ও গাড়ি উচ্ছেদের প্রতিবাদে এবং ’৭১-এর ঘাতক-দালাল-যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ১১ দল এই হরতালের ডাক দিয়েছিল। ঢাকাতেও হরতালের প্রচার কাজ চালানোর সময় ১১ দল কর্মীদের নানাভাবে বাঁধা দেওয়া হয়। হরতালের সমর্থনে ৩১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় ১১ দলগতভাবে রাজধানীর মুক্তাঙ্গন থেকে মশাল মিছিল করার উদ্যোগ নেওয়া হলে পুলিশ তাতেও বাধা দেয়। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ কয়েকশ’ নেতা-কর্মীকে পুলিশ মুক্তাঙ্গনে দীর্ঘক্ষণ অবরুদ্ধ করে রাখে। একপর্যায়ে পুলিশের বেষ্টনি ভেদ করে জোটের নেতাকর্মীরা জঙ্গি মিছিল বের করে। পরদিন ১ জানুয়ারি দেশের বিভিন্ন জেলা-থানাসহ রাজধানীর থানায় থানায় খণ্ড খণ্ড মশাল মিছিল বের হয়। এদিনও পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন জায়গায় ১১ দলের সমাবেশে পুলিশ ও বিএনপি সন্ত্রাসীরা জোটবদ্ধভাবে হামলা চালিয়ে অনেক নেতা-কর্মীকে আহত করে। রাজধানীর রমনা থানায় অনুষ্ঠিত মশাল মিছিলেও তারা বাঁধা দেয়। ৩১ জানুয়ারি দুপুর থেকেই পুলিশ সিপিবি কার্যালয়, তোপখানা রোডস্থ বিভিন্ন বামপন্থি দলের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে ভীতি সঞ্চার করার চেষ্টা করতে থাকে।’ ঐ দিনের সপ্তাহিক একতার আর এক শিরোনাম হলো– পাওনা পরিশোধের ব্যবস্থা না থাকায় শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ, ৩৫ ভাগ গচ্চা দিয়ে রাষ্ট্রীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিখাতে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত : “শতকরা ৩৫ ভাগ গচ্চা দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প-কারখানাগুলো ব্যক্তিখাতে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। সরকার নিয়ন্ত্রিত এসব শিল্প-কারখানা বিক্রি করার সকল ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে জোট সরকারের অনুগত প্রাইভেটাইজেশন কমিশনকে। এ লক্ষ্যে কমিশনের ‘বেসরকারিকরণ নীতিমালা ২০০২’ নামের একটি নতুন নীতিমালাও তৈরি হচ্ছে। কিন্তু ওই নীতিমালায় বিক্রি করে দেওয়া মিল-কারখানার হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর পাওনা পরিশোধের বিষয়টি স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে না। প্রাইভেটাইজেশন কমিশন ইতোমধ্যেই নতুন এই নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে। মন্ত্রিসভার আগামী বৈঠকেই তা অনুমোদন করা হতে পারে। জোট সরকারের তৈরি প্রাইভেটাইজেশন কমিশন ইতোমধ্যেই রাষ্ট্রায়ত্ত দুটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান কোফিল টেক্সটাইল ও কোহিনূর ব্যাটারি কোং বেসরকারি খাতে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে বিক্রি করেছে। আরো ১০টি সরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিক্রির লেটার অফ ইনটেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে ইস্যু করা হয়েছে। এছাড়া আরো ১২টি প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিখাতে বিক্রি করার প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বছরে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা লোকসানকে কারণ হিসেবে দাঁড় করিয়ে সরকার এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান ব্যক্তিখাতে ছেড়ে দিচ্ছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো বিক্রি করতে প্রাইভেটাইজেশন কমিশন নতুন উদ্যোক্তা বা ক্রেতাকে ৩৫ ভাগ ছাড় দেয়ার ফলে যে অর্থ গচ্চা যাচ্ছে তার পরিমাণ বিগত বছরগুলোতে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিট লোকসানেরও অনেক বেশি হবে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এতে শুধু পুঁজিপতি উদ্যোক্তা বা ক্রেতারাই লাভবান হবে। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। যেহেতু শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধের বিষয়টিও নতুন নীতিমালায় অস্পষ্ট। সে কারণে বিক্রি করে দেওয়া শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। জোট সরকার ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে তড়িঘড়ি করে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের হাত দিয়ে বিক্রি করার পাঁয়তারা শুরু করে। এতে সরকারের অনুগত কর্তৃপক্ষ এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রেতা-উদ্যোক্তা উভয়েই লাভবান হবে। কিন্তু পথে নামবে হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী আর গচ্চা যাবে হাজার হাজার কোটি টাকা মূল্যের রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি।” –তাহলে লোকসানের প্রকৃত কারণ না বের করে তা বন্ধ করা কী রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করা হলো? হলো কী ন্যায় প্রতিষ্ঠা? পত্রিকা লিখেছে– ‘বিগত আওয়ামী লীগ সরকারও তাদের সুবিধা বাগানোর জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যক্তিখাতে বিক্রি করার উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর আন্দোলন এবং নিজেদের অন্তর্দ্বন্ধের কারণে তা সম্ভব হয়নি। বর্তমান জোট সরকারও ক্ষমতায় এসেই শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা ছাড়াই প্রতিষ্ঠানগুলো বিক্রির পাঁয়তারা শুরু করেছে। তারা জানান, তাদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ না করলে শিগগিরই তারা আন্দোলনে নেমে পড়বেন। হাজার হাজার শ্রমিকের পেটে লাথি মারার এ ষড়যন্ত্র যে কোনো মূল্যে তারা প্রতিহত করবেন।’ আসলে তা তো হয়নি উল্টো ২০০৫ সালে তড়িঘরি করে আদমজী, বাওয়ানীসহ লাভজনক সব প্রতিষ্ঠানকে বিএনপি-সরকার বন্ধ করে দিয়েছিল। রাজশাহীর সরকারি রেশম শিল্পপ্রতিষ্ঠানকেও একইভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। আর ২০১০ থেকে ২০২৪-এ আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড এখন চোখের সামনেই আছে। আর জুলাই-আগস্ট ২০২৪ এর আন্দোলনের পর একই কায়দায় দখলবাজী, নদী সংলগ্ন গ্রামকে হুমকির মধ্যে ফেলে বালু উত্তোলন, কলকারখানায় আগুন– সরকারি প্রশাসন ব্যবহার করে বাস রিজার্ভ করে জনসভার আয়োজন, মাঠে নজীরবিহীনভাবে সোফা সাজিয়ে, চেয়ারকে থ্রি স্টার হোটেলের সাজে সজ্জিত করে জনসভা–কোন ইঙ্গিত দিচ্ছে? আবার ৪ ফেব্রুয়ারি ২০০২ সালে এক বিজ্ঞপ্তিতে ‘সরকারের গরিব মেরে ধনী পোষার নীতি হবে ভয়াবহ’ শিরোনামে সিপিবি বলেছিলো : ‘সরকারের গরিব মেরে ধনী পোষার নীতি হবে ভয়াবহ। বিশ্বব্যাংকের হুকুমে পরিবেশ দূষণ ও যানজটের অজুহাত দেখিয়ে ২০ বছরের পুরনো বাস ও অন্যান্য বাণিজ্যিক যানবাহন ঢাকা শহরে চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। ফলে লাখ লাখ শ্রমিক-মালিক বেকার এবং যাত্রীরা মহাসঙ্কটে পড়েছে। কমিউনিস্ট পার্টি মনে করে, পরিবেশ দূষণকারী বাস, ট্রাক, বেবি, টেম্পোর সাথে সাথে প্রাইভেট কার, জিপ ও সরকারি গাড়িও বন্ধ করা উচিত। কিন্তু তা নতুন-পুরানোর ভিত্তিতে নয়। প্রকৃতপক্ষে কালো ধোঁয়া এবং ডাইড্রলিক হর্ন দেখামাত্রই– গাড়িগুলোর মালিকানা নির্বিশেষে বন্ধ করা প্রয়োজন। সরকার ক্ষমতায় এসেই এ ধরনের ঢালাও এবং আকস্মিক সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণ হচ্ছে বিদেশি প্রভু এবং বিদেশী মোটর প্রস্তুতকারী কোম্পানি এবং তাদের এ দেশীয় দালালদের স্বার্থ হাসিল করা। প্রয়োজনের তুলনায় ট্রাফিক পুলিশ মাত্র ৮ ভাগের ১ ভাগ। রাস্তা ৩ ভাগের ১ ভাগেরও কম। রাস্তার ৭২% বেদখল ও ব্যবহারের অযোগ্য। এতোগুলো সমস্যায় হাত না দিয় যারা রিকশা উচ্ছেদ করে, চালু গাড়ি বন্ধ করে বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কটের মধ্যেও যথেচ্ছ ব্যয় করে, চকচকে গাড়ি ও প্রাইভেট কার, পাজেরো আমদানি করে ঢাকা শহরকে লন্ডন বানাতে চায় তারা আসলে দেশ ও জনগেণর বন্ধু হতে পারে না।” –একই প্রক্রিয়া চলেছে আওয়ামী লীগের সড়ে ষোল বছরের শাসনামলেও। আর জামায়াতে ইসলামী তো বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস না করে ১৯৭১-এ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অীঁরষষধৎু ভড়ৎপব হিসেবে কাজ করেছে। বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ বহু হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত করেছে। আবার ১৯৭৫ এর পর সক্রিয় হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাত কাটা, রগ কাটায় পারদর্শিতা দেখিয়েছে বর্তমানেও দেখাচ্ছে। ২০০৮ থেকে ২০২৪ এর ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ২০১৩, ২০১৮ ও ২০২৩-এ অন্যায়ভাবে দিনের ভোট রাতে এবং আমি ও ডামির নির্বাচন করে সাড়ে ১৬ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকে দেশকে চোর-ডাকাতের দেশে পরিণত করেছে– তবে খেসারত দিচ্ছে এখন দেশবাসী– কৃষক কৃষিপণ্যের লাভজনক দাম না পেয়ে, এমনকি লবণচাষী তার উৎপাদিত লবণ পথে ফেলে দিয়ে প্রতিবাদ জানাতে বাধ্য হচ্ছে। নদী-নালা, খাল-বিল পাহাড়-পর্বত দখলের খবর বহু পুরানো, যা এখনও চলছে। ১৯৭১ থেকে ২০২৪ সব সরকারই মেহনতি মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অন্ন বস্ত্রের নিশ্চয়তা দিয়ে সেই সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠা করেনি– ১৯৭১-এ যে সমাজের জন্য দামাল ছেলেরা যুদ্ধ করেছিল। ১৯৭২ থেকে ২০২৪-এর ৫ আগস্ট পর্যন্ত সরকারসমূহের এই ছিল ইতিহাস। ১০ আগস্ট ২০২৪-এ অধিষ্ঠিত বর্তমান সরকারও আর এক ইতিহাস তৈরির প্রক্রিয়ায় আছে। তবে সমাজে সেই ফ্যাসিস্ট কায়দাই চলমান। এখন প্রয়োজন শ্রমিক, কৃষক মেহনতী মানুষের রাজ কায়েমের জোর প্রচেষ্টা। ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা; সাম্য, সামাজিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার। লেখক : সাবেক অধ্যাপক নটর ডেম কলেজ, সম্পাদক শিক্ষাবার্তা ও সাপ্তাহিক একতা

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..