কমিউনিস্ট মতাদর্শে একতার জয়যাত্রা অব্যাহত থাকুক

হায়দার আকবর খান রনো

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
বাংলাদেশে এখন অনেক বিশাল আকারের খবরের কাগজ, টেলিভিশন ও বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম রয়েছে। এগুলোর মালিক বড় বড় ধনীক গোষ্ঠী। বুর্জোয়া প্রচার মাধ্যম কখনোই বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার পথে যেতে পারে না। মেহনতি মানুষের শ্রেণি সংগ্রামকে খাটো করে দেখানোই এসব প্রচার মাধ্যমের অন্যতম লক্ষ্য। এমনকি আমাদের দেশের বুর্জোয়া শ্রেণি চরিত্রগতভাবে লুটেরা ধরনের এবং সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির ওপর নির্ভরশীল। তাই তাদের মালিকানাধীন সংবাদপত্রে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিও প্রতিফলিত হতে পারে না। এই জন্য কমিউনিস্টদের নিজস্ব ভিন্ন চরিত্রের প্রচার মাধ্যম দরকার। ‘একতা’ সেই ধরনেরই একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা। আজ থেকে একশ’ বছরেরও বেশ আগে লেনিনের তার বিখ্যাত ‘কী করিতে হইবে’ শীর্ষক গ্রন্থে সারা রুশ দেশব্যাপী একটি একক পত্রিকার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেন। লেনিনের উদ্যোগেই রাশিয়ায় কমিউনিস্ট পার্টির (তখন নাম ছিল সোশ্যাল ডেমোক্রেট পার্টি) মুখপত্র হিসেবে ‘ইস্ক্রা’ নামক একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত হতো। সেই পত্রিকা তখন গোপনে বিদেশে ছাপা হতো এবং চোরা পথে রাশিয়ায় প্রবেশ করত। লেনিন এই পত্রিকাকে একই সাথে প্রচারক ও সংগঠক হিসেবে অভিহিত করেন। কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্রের এই দ্বিবিধ চরিত্র এখনো প্রাসঙ্গিক। ১৯১২ সালের দিকে রাশিয়ায় আবার নতুন করে বিপ্লবী জোয়ার শুরু হলে তখন প্রকাশ্যে পত্রিকা বের করার জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তখন বলশেভিক পার্টি ‘প্রাভদা’ নামে একটি পত্রিকা বের করে। বারবার পুলিশী আক্রমণে প্রাভদার প্রকাশনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তারপরও প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েই প্রাভদা প্রকাশিত হতে থাকে এবং তার পাঠক সংখ্যাও জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে। এই দৃষ্টান্তটি আমাদের জন্য শিক্ষণীয়। আরও আগে ১৮৪৮ সালে (১ জুন) জার্মানির বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের সময় কার্ল মার্ক্স কোলন থেকে ‘নয়ে রাইনিশে জাইটুং’ পত্রিকা প্রকাশ করেন। এই পত্রিকায় কার্ল মার্ক্স বিপ্লবে শ্রমিক শ্রেণির কর্তব্যের পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের অনেক বিষয়াবলি তুলে ধরেন। পত্রিকার জন্য অর্থ সংগ্রহ করা কঠিন ছিল। কার্ল মার্ক্স তার উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে তার অর্ধেক দান করেন এই পত্রিকার জন্য এবং বাকি অর্ধেক দিয়েছিলেন বেলজিয়ামের শ্রমিকদের অস্ত্র কেনার জন্য। বিপ্লব পরাজিত হলে পত্রিকা বন্ধ হয়ে যায়। এবং কপর্দকশূন্য কার্ল মার্ক্স ইংল্যান্ডে ফিরে আসতে বাধ্য হন। এই সকল কথা বলার উদ্দেশ্য হলো পত্রিকা কমিউনিস্টদের জন্য কী পরিমাণ গুরুত্বপূর্ণ। কমিউনিস্ট পার্টি বুর্জোয়া প্রচারের ওপর নির্ভর করতে পারে না। তার অবশ্যই থাকতে হবে নিজস্ব মুখপত্র, কমপক্ষে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা তা যত ছোট আকারেই হোক না কেন। ‘একতা’ সেই লক্ষ্যেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অর্ধ শতাব্দীর বেশি কাল ধরে এই পত্রিকা প্রকাশিত হয়ে আসছে। পার্টি চেষ্টা করেছে এই পত্রিকার মাধ্যমে তার মতামত তুলে ধরতে। পার্টির মুখপত্র পার্টির সংগঠনের মাধ্যমেই বিতরণ করতে হবে এবং পাঠকরা দাম দিয়েই তা কিনবে। এইভাবে পত্রিকা পালন করবে সংগঠকের ভূমিকা। একই সঙ্গে পার্টি সভ্য, সমর্থক ও দরদীদের অর্থ সাহায্যের ওপরই দাঁড়াবে এই মুখপত্র। বিগত অর্ধ শতাব্দীর ইতিহাস ঘাঁটলে আমরা পর্যালোচনা করতে পারব এই কাজ পার্টি কতটা সফলতার সঙ্গে করতে পেরেছে। আমি এই সংক্ষিপ্ত লেখায় সেই আলোচনায় যাচ্ছি না। তবে একটি কথা বলতে চাই, পার্টির মুখপত্র কেবলমাত্র পার্টির বক্তব্য ও কিছু তাত্ত্বিক লেখা দিয়েই ভরলে চলবে না। এর মধ্যে অবশ্যই থাকতে হবে বাংলাদেশের ও সারা দুনিয়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়াবলি। লেখার মানকে উন্নত করতে হবে। বিভিন্ন রচনার মধ্যে যেমন প্রতিফলিত হবে মার্ক্সীয় ও লেনিনীয় দৃষ্টিভঙ্গি, তেমনই তার মধ্যে নান্দনিক উৎকর্ষতাও থাকতে হবে। আমি আশা করব ‘একতা’ সেই পথে আরো অগ্রসর হবে।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..