একতা বিদেশ ডেস্ক :
ইরানের উপ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল হোজ্জাতুল্লাহ কোরেইশি রাশিয়ার উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলেকজান্ডার ফোমিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছেন। রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় দু পক্ষ এ আলোচনায় বসে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দু পক্ষ চলমান সামরিক ও সামরিক-কৌশলগত সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করে। এছাড়া, দুই উপ মন্ত্রী আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে মতবিনিময় করেন। প্রতিরক্ষা খাতে পারস্পরিক যোগাযোগ ও ঘনিষ্ঠ আলোচনা থাকবে বলেও তারা প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। রাশিয়ার ফেডারেল সার্ভিস ফর মিলিটারি অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশনের প্রধান দিমিত্রি শুগায়েভ বলেছেন, রাশিয়া থেকে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র পেতে আগ্রহী ইরান। তিনি বলেন, “ইরানের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। আমরা চুক্তিভিত্তিক প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করছি এবং আশা করছি শিগগিরি অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ শুরু হবে। ইরান বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র নিতে আগ্রহী।”
এর আগে চীন বলেছে, ইরানের ওপর আমেরিকার পক্ষ থেকে আরোপ করা সমস্ত অবৈধ ও একতরফা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা উচিত। ইরানের ওপর আমেরিকা যে সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি অনুসরণ করছে তারও নিন্দা জানিয়েছে বেইজিং। তারা বলেছে, ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যে বিতর্ক ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে তার মূল কারণ হলো আমেরিকা। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন রাজধানী বেইজিংয়ে নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেছেন। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ইরানের পরমাণু সমঝোতা পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্য নিয়ে যে আলোচনা চলছে সে সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে চীনা মুখপাত্র এ কথা বলেন।
ওয়াং ওয়েনবিন জানান, পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়নে সমস্ত পক্ষ সহযোগিতা করবে বলে আলোচনায় বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। তিনি জানান, আলোচনায় অংশগ্রহণকারী সব পক্ষ নতুন একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর ব্যাপারে রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখিয়েছে। তবে এখনো বেশ কিছু ইস্যুতে মতানৈক্য রয়েছে। এ অবস্থায় চীন আশা করে- আলোচনার সমস্ত পক্ষ সব ধরনের মতানৈক্যের ঊর্ধ্বে উঠে পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে বাকি অমীমাংসিত ইস্যুগুলো সমাধানের লক্ষ্যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা নিয়ে কাজ করবে।
আর ভিয়েনায় ইরানের পরমাণু সমঝোতা পুনরুজ্জীবনের আলোচনায় প্রতিটি বিষয়ে ঐক্যমত্যে না পৌঁছা পর্যন্ত চূড়ান্ত সমঝোতা হবে না বলে জানিয়েছে রাশিয়া। এ আলোচনায় অংশগ্রহণকারী রুশ প্রতিনিধিদলের প্রধান মিখাইল উলিয়ানোভ একথা জানিয়েছেন। ভিয়েনা সংলাপের সফলতা নিয়ে রাশিয়া আশাবাদী বলে কোনো কোনো গণমাধ্যম যে খবর দিয়েছে সে ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি এক টুইটার বার্তায় এ মন্তব্য করেন।
উলিয়ানোভ বলেন, “পরমাণু সমঝোতার ব্যাপারে ভিয়েনা সংলাপে ধীরগতিতে অগ্রগতি হচ্ছে। এটি হচ্ছে বাস্তবতা। তবে আমরা সব সময় পরিস্থিতি মূল্যায়নের ব্যাপারে সতর্ক। প্রতিটি বিষয়ে সব পক্ষ ঐক্যমত্যে না আসা পর্যন্ত চূড়ান্ত সমঝোতা হবে না। আমরা প্রায় তার কাছাকাছি পৌঁছে গেলেও আরো কিছু সময়ের প্রয়োজন।” ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতাকে আবার আগের অবস্থায় সক্রিয় করার জন্য অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় বর্তমানে ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের সংলাপ চলছে।
‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগের নীতি অনুসরণ করে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালের মে মাসে পরমাণু সমঝোতা থেকে আমেরিকাকে বের করে নেন। এরপর এক বছর পর্যন্ত ইরান এই সমঝোতা বাস্তবায়নে সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল কিন্তু অন্য পক্ষগুলো সমঝোতা বাস্তবায়ন না করায় ৩৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে ইরান সমঝোতার বেশকিছু ধারা বাস্তবায়ন স্থগিত করে দেয়। বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার দেশকে এই সমঝোতায় ফিরিয়ে আনার আগ্রহ প্রকাশ করলেও তিনি ইরানকে আগে তার প্রতিশ্রুতিতে পুরোপুরি ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। কিন্তু ইরান বলেছে, আমেরিকা আগে এই সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গেছে বলে তাকে আগে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে এতে ফিরে আসতে হবে। ইরান ও আমেরিকার মধ্যকার মতপার্থক্যের এই জায়গাটি নিয়ে মূলত ভিয়েনায় ধারাবাহিক সংলাপ চলছে।