ধর্মীয় ফ্যাসিস্টরা বিনিয়োগ-পরবর্তী মুনাফা ঘরে তুলতে মরিয়া

Posted: 30 নভেম্বর, 2025

দীর্ঘ আওয়ামী ফ্যাসিবাদী যুগের অবসানের পর দেশে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী যুগের পত্তন হয়েছে। ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ এই দেশে আগেও ছিল। কিন্তু “যুগ” হিসেবে ছিল না। আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলের হাতেই এই দেশে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে। সমাজ থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মোকাম- নীতি নির্ধারণীয় পর্যায় পর্যন্ত ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ অধিষ্ঠিত হয়েছে, ক্ষমতায়িত হয়েছে। কিন্তু ৫ আগস্ট ২০২৪-এর আগে সর্বত্র তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল না। তাদের “যুগ” শুরু হয়েছে ৫ আগস্টের পর। ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকে। ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানে অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তির পাশাপাশি ধর্মপন্থি উদার ও উগ্র দলগুলোরও কৌশলী অংশগ্রহণ ছিল। হাসিনার পতন তাদের সেই অংশগ্রহণের মাহাত্ম্য বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের অর্ধশত বছরেরও বেশি সময়ে অধিকাংশ ধর্মপন্থি দলের কোনো গণমুখী ভূমিকা ছিল না। কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তারা স্টেক নিতে পারেনি। তাদের জন্য, বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর জন্য জুলাই অভ্যুত্থান এমন এক ঘটনা হয়ে এসেছে, যেখানে তারা তাদের গণমুখী অংশগ্রহণ প্রজেক্ট করতে পারছে। তাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই প্রথম কোনো গণমুখী আন্দোলনে সম্পৃক্ততা প্রমাণ করতে পারছে। ফলে তারা জুলাই অভ্যুত্থানকেই তাদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মোকাম দান করেছে। তাই তারা বলছে, অতীতের সব ভুলে যাও। জুলাই বিপ্লবই (?) এই দেশের আসল বিপ্লব। জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়েই “নতুন বাংলাদেশ” কায়েম হয়েছে। অর্থাৎ এই বয়ান নির্মাণের মধ্য দিয়ে তারা ভাবছে তাদের একাত্তরের পাপ মুছে ফেলা যাবে। তারা ভাবছে, এই ন্যারেটিভের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের অতীতের সমস্ত গণতান্ত্রিক আন্দোলন, জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম, সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের ইতিহাস মুছে ফেলা যাবে। এসব মুছে ফেলার মধ্যেই তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব স্থায়ীত্ব লাভ করবে বলে তাদের বিশ্বাস। এজন্য জুলাই অভ্যুত্থানে নিজেদের এজেন্সি দাবি করতে গিয়ে জনগণের এজেন্সি খারিজ করে দিতে চাইছে জামায়াততে ইসলাম। জামায়াত বলতে চায়, এই অভ্যুত্থানে তারাই মাস্টারমাইন্ড। বিভিন্ন বক্তৃতাবাজিতে তাদের নেতাকর্মীরা এসব বলে বেড়িয়েছে। শুধু বলে ক্ষান্ত হয়নি, তারা যে জুলাই অভ্য্যুত্থানের মূল শক্তি তা প্রমাণের জন্য ৫ আগস্টের পর থেকে নানা ন্যারেটিভ হাজির করা শুরু করেছে। সেই ন্যারেটিভকে শক্তিশালী করার জন্য অন্যান্য ধর্মবাদী গোষ্ঠীগুলোকেও হাত করেছে। তারা জনমনে এটা প্রতীয়মান করতে সচেষ্ট হয়েছে যে, জুলাই অভ্যুত্থান একটা ইসলামপন্থি অভ্যুত্থান। যেহেতু আওয়ামী লীগকে তারা আগে থেকেই ইসলামীবিরোধী দল হিসেবে ফ্রেম করতো; আদতে আওয়ামী লীগ কখনোই তা ছিল না। আওয়ামী লীগকে ইসলামবিরোধী ফ্রেম করতে পারলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যে কোনো গণতান্ত্রিক বিজয়কেই ইসলামের বিজয় বলে সাব্যস্ত করা সহজ। সে কারণে আওয়ামী লীগের পতনের মধ্য দিয়ে ৫ আগস্টের পর দেশে ইসলামের বিজয় সূচিত হয়েছে বলে প্রজেক্ট করার চেষ্টা করেছে জামায়াতসহ অন্যান্য ধর্মপন্থি দল। এবং তারই বাইপ্রোডাক্ট বা ফল হিসেবে আমরা দেখতে পাচ্ছি, ৫ আগস্ট-পরবর্তী সমস্ত রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক তৎপরতাকে বিচারের জন্য পরিমাপক হিসেবে হাজির করা হচ্ছে ধর্মকে, ইসলামকে। এমন কি রাষ্ট্র সংস্কারের নিমিত্তে যেসব কমিশন গঠন করা হয়েছে, সেসব কমিশনের রিপোর্টগুলোকেও বিচার করা হয়েছে ধর্মের স্কেল দিয়ে। ইসলাম ধর্মের মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিবেচনা করে অনেক কমিশনের রিপোর্টকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করা হয়েছে। অথচ এই দেশে তো ইসলাম মানে জামায়াতে ইসলাম বা ওহাবি-সালাফি ব্যাখাই চূড়ান্ত ব্যাখ্যা নয়। এই দেশে ইসলামের বহু বিচিত্র জনবাদী, উদার ও প্রগতিশীল ব্যাখ্যা আছে। এজেন্সি আছে। তারা কর্তৃত্ববাদী নয়, আগ্রাসনবাদী নয়, প্রতিক্রিয়ামূলক রাজনীতিতে তারা আগ্রহী নয়। এই সুযোগে জামায়াতে ইসলামসহ অন্যান্য ওহাবি-সালাফি মতাদর্শী ফ্যাসিবাদী ইন্টারপ্রিটেশনই অন্তর্বর্তী সরকারের নীতি হয়ে উঠেছে। জামায়াতসহ অপরাপর ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী দল ও গোষ্ঠীগুলো তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ক্ষমতা চর্চা করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই সময়ে। ফলে এই সময়কে প্রলম্বিত করা, এই সময়ে সব ধরনের রাজনৈতিক ফায়দা লুটে নেওয়া ছাড়া জামায়াতপন্থিদের আর কোনো পথ নেই। জামায়াতপন্থিরা তা-ই করছে। ৫ আগস্টের পর দেশে তৌহিদী জনতা, জুলাই মঞ্চ ইত্যাদি নামে অনেকগুলো মব বাহিনী তৈরি হয়েছে, যাদের কাজ অনাবশ্যকভাবে সর্বত্র ধর্মকে হাজির করা। সর্বত্র ধর্মের স্কেল নিয়ে হাজির হওয়া। ভিন্নমত, ভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠী, লিঙ্গ, জাতি, ধর্ম তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক আয়োজন, প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিলে হামলা করে তারা কর্তৃত্ব জাহির করছে জুলাইকে ব্যবহার করে। আওয়ামী লীগ যেমন “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা” ব্যবহার করে সর্বত্র তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতো, এরাও জুলাইয়ের চেতনা ব্যবহার করে তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া হয়েছে। গত ১৫ মাসে দেশের মাজার, দরগাহ, মন্দির-মসজিদ, বাউল আখাড়ায় হামলা, নারীসহ বিভিন্ন লিঙ্গীয় পরিচয়ের মানুষের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো, আদিবাসীদের ওপর আক্রমণ, বিভিন্ন নাগরিককে নাস্তিক, শাতেমে রাসুল ট্যাগ দিয়ে হত্যার হুমকি, অনলাইন-অফলাইনে অনরবত ভিন্নমত ও রাজনৈতিক শক্তিকে দমনের জন্য শক্তি প্রদর্শনের মহোৎসব একটা কেন্দ্রীয় শক্তি দ্বারা চালিত হচ্ছে। সেই কেন্দ্রের নাম জামায়াতে ইসলামী। সে কেন্দ্রের প্রশাসনিক ঠিকানা যমুনা ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। এই দেশে কয়েক দশক ধরে জামায়াতে ইসলামীসহ উগ্র ধর্মপন্থি দল ও গোষ্ঠী ব্যাপক বিনিয়োগ করে গেছে। রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক এবং অবশ্যই অর্থনৈতিক বিনিয়োগও। এখন তাদের মোক্ষম সময়, তাদের বিনিয়োগ থেকে মুনাফা ঘরে তোলা। আগে তাদের মুনাফা খেয়েছে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মতো দলগুলো। এখন তারা রাজনৈতিক-সামাজিকভাবে সক্ষম, তাই তারা সাব্যস্ত হয়েছে, তাদের মুনাফা আর বিএনপি-আওয়ামী লীগের ঘরে দেবে না। ফলে তারা আজ মরিয়া তাদের রাজনৈতিক-সামাজিক বিনিয়োগের মুনাফা ঘরে তুলতে। ওহাবি-সালাফিজমের মতো উগ্র ও খারেজি মতাদর্শ প্রতিষ্ঠায় কয়েক দশকে জামায়াত, চরমোনাই, হেফাজতসহ অন্যান্য গোষ্ঠীগুলো ব্যাপক বিনিয়োগ নিশ্চিত করেছিল। এজন্য ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে নানা পলিমিক্সের আশ্রয় নিতে হয়েছে তাদের। পপুলিস্ট নীতির কারণে কখনো বিএনপি, কখনো আওয়ামী লীগ তাদের ক্ষমতায়িত করেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পূর্ণ সুযোগ নিয়ে এই গোষ্ঠী যত্রতত্র নিজস্ব মতাদর্শের মাদরাসা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। ফ্যাসবাদী ব্যবস্থায় সে সুযোগ তারা আরও বেশিমাত্রায় ভোগ করেছে, কারণ আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শক্তিও যখন গণতন্ত্র হরণ করে, ক্ষমতা কুক্ষীগত করে রেখেছিল, তখন ধর্মীয় ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠীগুলোকে হাতে রেখে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করেছে। এরা আওয়ামী লীগ আমলেই নির্বিঘ্নে ঘৃণাবাদী ধর্মীয় বয়ান, তাফসির অনুষ্ঠান, বড় বড় ধর্মীয় বক্তা তৈরি, ইনফ্লুয়েন্সার তৈরি, ধর্মকে ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একচ্ছত্র আধিপত্য গড়ে তোলার মাধ্যমে সামাজিক শক্তি আহরণ করেছে। শক্তি সঞ্চয়ের পরপরই তারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তাদের তৎপরতা শুরু করেছে। তারা জানে তাদের এতদিনের বিনিয়োগ থেকে মুনাফা তুলতে গেলে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে হাজির হবে সাধারণ সহজিয়া মুসলমান, যারা দিক্ষীত সুফিবাদী, তরিকতপন্থি, মাজার-দরগাহপন্থি ইসলাম দ্বারা। এবং আরেকটা বড় প্রতিবন্ধক শক্তি হিসেবে হাজির হবে, এই দেশের উদার গণতন্ত্রপন্থি, প্রগতিশীল নাগরিক শক্তি, শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি। ফলে নির্বাচনের আগেই এই শক্তিকে ধরাশায়ী করাটা জামায়াতসহ ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী শক্তির প্রধান এজেন্ডা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন। অভ্যুত্থান-পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন একটা দেশের মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রের নানা প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক রূপান্তর ও সংস্কার এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সুসংহতকরণের আলাপগুলো যেখানে মুখ্য হয়ে ওঠার কথা, যেখানে দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারের আলাপগুলো সামনে আসার কথা, সেখানে বারবার ধর্ম প্রশ্নকে সামনে নিয়ে আসা স্পষ্টত অভিসন্ধিমূলক রাজনৈতিক তৎপরতা। এটা তারা করছে একটা পলিটিক্যাল পোলারাইজেশনের জন্য। এটা তারা করছে, একটা রাজনৈতিক অংক থেকে। অংকটা সহজ। ধর্মের উন্মাদনা যত প্রখর করে তোলা যাবে, ধর্মভিত্তিক দলগুলোর রাজনৈতিক অস্তিত্ব ও স্টেক আরও শক্তিশালী হতে থাকবে। এই উন্মাদনায় যারা প্রতিক্রিয়ামূলক তৎপরতা নিয়ে হাজির থাকবে, স্ব স্ব মেরুতে তারা প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে। আর যারা কোনো মেরুতে থাকবে না, তাদের অপ্রাসঙ্গিক বা গৌণ করে দেওয়া যাবে। এইটাই মোটাদাগে জামায়াত-চরমোনাই-হেফাজতের খেলা। এইসব খেলা সবসময় কাজ করে না। তবে মাঝে মাঝে কাজ করে। আগে আওয়ামী লীগ এসব গেমপ্ল্যান করতো। এর মধ্য দিয়ে একদিকে উগ্র ধর্মবাদীদের চাপে ফেলে নানা পলিটিক্সের মধ্য দিয়ে তাদের বশে রাখতো, অপরদিকে সাম্প্রদায়িকতা ও উগ্রবাদ দমনে নিজেদের অবিকল্প হিসেবে হাজির করে প্রগতিশীল উদার নাগরিকদের কাছ থেকে সমর্থন আদায় করতো। কিন্তু এবার খেলা উল্টো। যেহেতু এবার জামায়াত-চরমোনাই-হেফাজাতের হাতে ক্ষমতা, যেহেতু আওয়ামী লীগ রাজনীতির ময়দানে নেই, সেহেতু তাদের গেমপ্ল্যানে এখন তাদের বিরোধী সব মতকেই আওয়ামী লীগের দোসর ও ধর্মদ্রোহী বলে মেরুকরণ করবে। এই খেলায় যারা উদার গণতন্ত্রপন্থি, মানে বিএনপির মতো মধ্যপন্থি দল তারা একটু বিপদে পড়তে পারে। যদিও বিএনপি সে বিপদে পড়তে চাইছে না। তাই তার নেতারা কাদিয়ানিবিরোধী সমাবেশে হাজির হচ্ছে। ধর্মের নামে চলা অবিচারগুলোতে বিএনপিকে পপুলিস্ট বক্তব্য দিতে দেখা যাচ্ছে। কারণ, উগ্রবাদীরা নির্বাচনকে সামনে রেখে যে খেলায় মত্ত হচ্ছে, সেখানে চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও বিএনপি তাদের সারথি হয়ে থাকবে বলেই আঁচ করা যাচ্ছে। তবে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে জামায়াতী বা ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী দলগুলোর সঙ্গে অপেক্ষাকৃত উদার গণতন্ত্রপন্থি বিএনপির একটা মৃদু দ্বন্দ্ব দৃশ্যমান। সেটার পরিণতি কী হচ্ছে তা স্পষ্ট হওয়া যাবে কিছুদিনের মধ্যেই। যে আলাপটা দিয়ে লেখাটা শেষ করতে চাই, সেটা হলো, বাউল আবুল সরকারকে গ্রেপ্তার এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে বাউলদের ওপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের গণতান্ত্রিক সমাজে এক ধরনের উদ্বেগ-উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এইটা সমাজের প্রধান দ্বন্দ্ব তো নয়। কিন্তু এ দ্বন্দ্ব ডমিনেট করছে আমাদের। এবং একে দূরে সরিয়ে অন্য তৎপরতায় মনোযোগ দেওয়াও যাচ্ছে না, কারণ রাজনৈতিক ময়দানের “কর্তৃত্ব”। আগামী নির্বাচনকে ঘিরে কোন ধরনের পোলারাইজেশন ঘটছে, এবং তাতে কারা কোন পোলে নেতৃত্ব দিচ্ছে, কারা প্রাসঙ্গিক থাকছে এসব আলাপ এর সঙ্গে জড়িত। অবস্থাদৃষ্টে স্পষ্ট হয়ে উঠছে খোদ সরকারের মদদে এ ধরনের পোলারাইজেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অথচ একটা আধুনিক রাষ্ট্রের রূপান্তরের প্রশ্নে পোলারাইজেশন হওয়ার কথা ছিল– কারা গণতন্ত্রের পক্ষে আর কারা বিপক্ষে। তার পরিবর্তে সরকারি মদদে পোলারাইজেশন ঘটছে–কারা ধর্মের পক্ষে, আর কারা বিপক্ষে। এবং এখানে ধর্মের নামে চ্যাম্পিয়ন হতে চাইছে জামায়াত। তারা ভিলেনাইজ করার চেষ্টা করছে গণতন্ত্রকামী, বৈচিত্র্যপন্থি, উদার, প্রগতিশীল ও বামপন্থি গোষ্ঠীগুলোকে। তারা এদের বিরুদ্ধে আওয়ামী দোসর, সফট আওয়ামী লীগার, শাহবাগী, নাস্তিক, শাতেমে রাসুল, ধর্মদ্রোহী ইত্যাদি ট্যাগ দিচ্ছে। কারণ, এ ধরনের ট্যাগ দিতে পারলে এদের মোকাবিলা ধর্মপন্থিদের পক্ষে সহজ। এদের মোকাবিলা করা ধর্মীয় ফ্যাসিবাদীদের জন্য আরেকটা কারণে ফরজ কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেটা হলো- জুলাই অভ্যুত্থানে এই শক্তি বড় নিয়ামক রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে মাঠে ছিল। তো এ শক্তিকে মাঠ থেকে বিতাড়িত করতে না পারলে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদীদের জন্য জুলাইয়ের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব নেওয়া সহজ নয়, সহজ নয় ধর্ম ও সমাজের কর্তৃত্ব অর্জনও। তাদের রাজনীতি যেহেতু ধর্ম নিয়ে, ফলে ধর্মের কর্তৃত্ব গ্রহণ ছাড়া সমাজের কর্তৃত্ব গ্রহণ তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ধর্মের কর্তৃত্ব গ্রহণের উপায়, ধর্মের ডোমিন্যান্ট ব্যাখ্যাকারী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করা। ধর্মের অন্য সব ব্যাখ্যাকে বাতিল করা, রাষ্ট্রের সাধারণ গণতান্ত্রিক নিয়ম, সামাজিক সংহতি ও বৈচিত্র্যকে খারিজ করা, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও পেশীশক্তিকে ব্যবহার করে আরেকটা কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দিকে যাওয়াই এখন জামায়াত নিয়ন্ত্রিত অন্তর্বর্তী সরকারের এজেন্ডা। লেখক: কবি ও সাংবাদিক