জলবায়ু সম্মেলনে মিলল না জীবাশ্ম
জ্বালানির ব্যবহার কমানোর প্রতিশ্রুতি
Posted: 30 নভেম্বর, 2025
একতা বিদেশ ডেস্ক :
২০২৩ সালে ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ-আইপিসিসি নির্ধারণ করেছে- বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে সীমাবদ্ধ রাখতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানি ঘিরে গড়ে ওঠা মূলধনি সম্পদগুলোকে ত্যাগ করতে হবে এবং ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু এবারের জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে (কপ৩০) এ সিদ্ধান্তকে পুরোপুরিই উপেক্ষা করা হয়েছে।
গত ২৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চলীয় শহর বেলেমেতে সমাপ্ত হয়েছে জাতিসংঘের ইউএনএফসিসির সদস্য দেশগুলোর বার্ষিক এই জলবায়ু সম্মেলনের ত্রিশতম কনভেনশন। সম্মেলনে ‘জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বৈশ্বিক সংহতি ও সমন্বিত প্রচেষ্টা’ শীর্ষক একটি সাধারণ ঘোষণা গৃহীত হয়েছে।
এ ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও অভিযোজন, জলবায়ু অর্থায়ন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু কপ ৩০-এ সিদ্ধান্তমূলক নথিতে জীবাশ্ম জ্বালানির কোনো উল্লেখই নেই।
বিবিসি লিখেছে, তেল, কয়লা ও গ্যাসের ব্যবহার দ্রুত কমানোর প্রতিশ্রুতি চাওয়া ৮০টির বেশি দেশকে হতাশায় ফেলে শেষ হল এ সম্মেলনের। এমন এক চুক্তির মধ্য দিয়ে কপ৩০ এর পর্দা নামল, যেখানে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির দায়ের কথা সরাসরি বলাই হল না।
তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো তাদের পুরনো অবস্থান ধরে রেখেছে; তাদের ভষ্য, অর্থনীতির অগ্রগতির জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার করতে দেওয়া দরকার।
কলম্বিয়ার প্রতিনিধি ড্যানিয়েলা দুরান গনজালেস বিবিসিকে বলেন, “বিশ্বে যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হয়, তার ৭৫ শতাংশের বেশি জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে আসে বলে আমাদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণ বৈজ্ঞানিক প্রমাণ রয়েছে।
“সেই কারণে আমরা মনে করি, জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে এখন সেই বাস্তবতা নিয়ে কথা বলা শুরু করার সময় এসেছে।”
সম্মেলনের চূড়ান্ত পর্বে ‘স্বেচ্ছাসেবার’ ভিত্তিতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দেশগুলোকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করতে ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে যাবে বলে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেওয়ায় এবারই প্রথম জলবায়ু সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র কোনো প্রতিনিধিদল পাঠায়নি। ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তনের তত্ত্বকে ‘ভাঁওতাবাজি’ বলেন।
বিবিসি লিখেছে, দুই সপ্তাহের এই সম্মেলন বিশৃঙ্খলায় ভরা ছিল। শৌচাগারের পানি শেষ হওয়া, তীব্র বজ্রঝড়ে সভাস্থল প্লাবিত হওয়া এবং প্রতিনিধিদের গরম ও আর্দ্র কক্ষের ব্যবস্থা করতে অসুবিধা হওয়ার মত সমস্যা দেখা দেয়।
সম্মেলনে প্রায় অর্ধ লাখ নিবন্ধিত প্রতিনিধিকে দুইবার সরাতে হয়েছিল। প্রতিবাদকারী প্রায় ১৫০ জনের একটি দল নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম করে সভাস্থলে প্রবেশ করে; তারা ‘আমাদের বন বিক্রির জন্য নয়’ লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করছিলেন।
বিবিসি লিখেছে, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা সম্মেলনের জন্য বেলেম শহরকে বেছে নিয়েছিলেন, যাতে বিশ্বের দৃষ্টি আমাজন বনের দিকে চলে আসে এবং শহরে আর্থিক প্রবাহ বাড়ে।
দেশটির আরও উচ্চাকাক্সক্ষী জীবাশ্ম জ্বালানি চুক্তির ইচ্ছা থাকলেও ব্রাজিলের সমালোচনা রয়েছে আমাজনের মুখে তেল খননের পরিকল্পনার জন্য।
গ্লোবাল উইটনেস নামের ক্যাম্পেইন গ্রুপের তথ্য অনুযায়ী, ব্রাজিলে সামুদ্রিক তেল ও গ্যাস উৎপাদন ২০৩০-এর প্রথমার্ধ পর্যন্ত বাড়তে চলেছে।
বিবিসি লিখেছে, জাতীয় পরিস্থিতি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব—এই দুই নিরিখে দেশগুলোর প্রতিযোগিতামূলক স্বার্থ রয়েছে। কিছু দেশ সম্মেলনের ফল নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
ভারত জলবায়ু চুক্তির প্রশংসা করে বলেছে, এ চুক্তি ‘অর্থপূর্ণ’। ৩৯টি ছোট দ্বীপ ও উপকূলীয় রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্বকারী একটি গোষ্ঠী শনিবারের চুক্তিকে ‘অসম্পূর্ণ’ বললেও ‘অগ্রগতির’ দেখার কথা বলেছে।
দরিদ্র দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে আরও জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি চেয়েছে।
সিয়েরা লিওনের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী জিওহ আবদুলাই বলেন, “একটি অগ্রগতি হয়েছে। যারা অতীতে বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করেছে, তাদের জলবায়ু অর্থায়নে যে বিশেষ দায়িত্ব আছে— এখন আরও স্পষ্টভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে।”
কিন্তু ৮০টির বেশি দেশের জন্য এ এক হতাশাজনক সমাপ্তি, যারা চুক্তিতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে কঠোর অবস্থান নেওয়ার পক্ষে বলে আসছিল।
যুক্তরাজ্যের জ্বালানি ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী এড মিলিব্যান্ড বলেন, “আমি আরও উচ্চাকাঙ্ক্ষী চুক্তি চাইছিলাম।”
ইইউয়ের জলবায়ু কমিশনার ওপকে হোয়েকস্ট্রা সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা যে আরও বেশি, সব বিষয়ে আরও বেশি কিছু চাই, তা লুকানোর কিছু নেই।”
ব্রাজিল আলোচনার সূচনা করেছিল ‘উষ্ণমণ্ডলীয় বন সংক্রান্ত স্থায়ী তহবিল’ নামের একটি আলোচনা দিয়ে, যা দেশগুলোকে উষ্ণমণ্ডলীয় বন রক্ষার জন্য অর্থায়ন করবে। শেষ পর্যন্ত এ উদ্যোগ বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছ থেকে অন্তত ৬.৫ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে।
৯০টির বেশি দেশ বিশ্বব্যাপী বন উজাড় প্রতিরোধ পরিকল্পনা বা ‘রোডম্যাপ’কে সমর্থন করেছে।