ইপিজেডে শ্রমিক হত্যার দায় সরকারের : বামজোট
Posted: 07 সেপ্টেম্বর, 2025
একতা প্রতিবেদক :
নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে শ্রমিকদের উপরে হামলা এবং যৌথ-বাহিনী কর্তৃক গুলি করে শ্রমিক হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতৃবৃন্দ বলেন, শ্রমিক হত্যার দায় সরকারকে নিতে হবে। এই হত্যার জবাব অন্তর্বর্তী সরকারকেই দিতে হবে। এই সরকারের আমলে বিগত দিনেও শ্রমিকের রক্ত ঝরেছে, গতকাল আবার ঝরলো। এসবের দায়ও সরকারকে নিতে হবে।
গত ৩ সেপ্টেম্বর বিকাল পাঁচটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। সমাবেশ পরিচালনা করেন সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ।
নেতৃবৃন্দ বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় বার বার শ্রমিক হত্যা হচ্ছে! গণতন্ত্র ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হলেও শ্রমজীবী মানুষ এই বৈষম্যের মধ্যেই আছে। চাকরির নিশ্চয়তা এবং কর্মক্ষেত্রে কাজের পরিবেশ নেই। ইতোমধ্যে অসংখ্য কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন কর্মসংস্থান নাই। কারখানা বন্ধের বিরুদ্ধে কথা বললে শুধু হামলা মামলা নয় গুলি খেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় দেশ চলতে পারে না। এমন অবস্থা চলতে থাকলে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত না হলে আবারো গণঅভ্যুত্থান হবে।
এসময় বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের পলিটবুরে্যার সদস্য অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, বাসদ (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী।
সমাবেশের পূর্বে সিপিবির নেতাকর্মীরা মিছিল যোগে প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে সমবেত হয়।
জোটের নেতারা বলেন, আমরা ঢাকা শহরে দেখলাম কেউ কেউ আন্দোলন করলে ঠান্ডা পানি ছিটিয়ে তাদেরকে বরণ করা হয়, আবার শ্রমিকরা আন্দোলন করলে কঠোর অবস্থান নেয়া হয়। মব সন্ত্রাস দমনে কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়া সরকার শ্রমিকদের উপরে আঘাত করে প্রমাণ করছে তারা শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষাকারী সরকার নয়।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, নীলফামারীতে উত্তরা ইপিজেডের এভারগ্রিন নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে সম্প্রতি ৫১ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়। এ নিয়ে সেখানে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। এ অবস্থায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা না দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য এভারগ্রিন কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ বিষয়ে ইপিজেডের প্রধান ফটকে নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়। ২ সেপ্টেম্বর সকাল আটটায় কাজে যোগ দিতে গিয়ে এভারগ্রিন কারখানার শ্রমিকেরা ওই নোটিশ দেখতে পান। ভেতরে ঢুকতে না পেরে তাঁরা ইপিজেডের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। এই যে পরিস্থিতির উদ্ভব হলো তার দায় মালিকপক্ষের– বলে মন্তব্য বামপন্থি নেতাদের।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া ও সর্বত্র কাজের নিশ্চয়তা এবং বকেয়া পরিশোধের দাবি জানান।
নেতৃবৃন্দ এই হত্যার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। একই সাথে নিহত পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক কারখানায় অরাজকতা চলছে। অনেকের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয় না, নিয়মিত বেতন-ভাতা পায় না। এজন্য বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন-সংগ্রাম চলছে। এ অবস্থায় সরকারকে দেশের সর্বত্র নিয়মিতভাবে প্রতিটি কারখানায় বেতন-ভাতা পরিশোধ ও কাজের সুষ্ঠুু পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান বাম জোটের নেতারা।
সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ প্রেসক্লাব থেকে পল্টন অভিমুখে মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, নীলফামারীর উত্তরা এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে (ইপিজেড) কারখানা বন্ধ ও ছাঁটাইয়ের জেরে শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষে একজন নিহত ও অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন। তবে, স্থানীয়দের ভাষ্য দু’জন নিহত হয়েছে।
মঙ্গলবার এ ঘটনায় নিহত মো. হাবিব (২১) নীলফামারী সদর উপজেলার ছোট সাঙ্গোলসি গ্রামের দুলাল ইসলামের ছেলে। তিনি উত্তরা ইপিজেডের ইকু ইন্টারন্যাশনালের কর্মী ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিহত হাবিব রাতের শিফট শেষে সকালে কারখানা থেকে বের হচ্ছিলেন। বাড়ি যাওয়ার পথে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ভিড়ের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি চালালে তিনি নিহত হন।
শ্রমিকদের অভিযোগ, উত্তরা ইপিজেড কর্তৃপক্ষ তাদের জন্য কিছুই করে না, বরং কারখানা মালিকদের স্বার্থ রক্ষা করে।