পৃথিবীর ‘শিরদাঁড়া’ বাঁকা হচ্ছে আমেরিকার জন্য
Posted: 04 মে, 2025
যতদিন যাচ্ছে হেলে যাচ্ছে পৃথিবী! কি শুনতে অবাক লাগলো? কিন্তু এটাই সত্যি। অন্তত তেমনটাই বলছে গবেষণা। বিজ্ঞানীদের দাবি, ২০ বছরেরও কম সময়ে মানুষের নানা কার্যকলাপ বিশেষ করে ভূগর্ভস্থ জলের ক্রমাগত উত্তোলনের ফলে পৃথিবীর অক্ষ প্রায় ৩১.৫ ইঞ্চি (অথবা ৮০ সেন্টিমিটার) পরিবর্তিত হয়েছে।
এই গতিবিধি সাময়িকভাবে ছোট মনে হলেও, দেখায় প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছভাবে ধ্বংস কীভাবে গ্রহের ঘূর্ণনের ধরণকে পরিবর্তন করতে পারে।
সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কি-ওয়েন সিওর নেতৃত্বে এবং জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটারসে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে যে- ১৯৯৩ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে, ভূগর্ভস্থ জলের বিশাল পরিমাণ- প্রায় ২,১৫০ গিগাটন- ভূগর্ভস্থ জলের মজুদ থেকে নেওয়া হয়েছে। যার বেশিরভাগই কৃষিকাজ এবং দৈনন্দিন মানুষের ব্যবহারের জন্য। ব্যবহারের পরে, এই জল সাধারণত মহাসাগরে গিয়ে শেষ হয় এবং ভরের এই পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপৃষ্ঠের স্তরকে কিছুটা বাড়িয়েছে (প্রায় ০.২৪ ইঞ্চি)। ফলে পৃথিবীর ভারসাম্য পরিবর্তন করেছে।
ভূগর্ভস্থ জলের এই বিশাল ক্ষতি পৃথিবীর ঘূর্ণন মেরুকে প্রতিবছর প্রায় ৪.৩৬ সেন্টিমিটার গতিতে পূর্ব দিকে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে। বিজ্ঞানীরা আগেই জানিয়েছিল হিমবাহ গলে যাওয়ার মতো জলের বৃহৎ আকারের চলাচল পৃথিবীর ঘূর্ণনের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু এই গবেষণায় দেখা গেছে যে- ভূগর্ভস্থ জল পাম্প করে তুলে নেওয়ার প্রভাব মারাত্মক। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা বরফ গলে যাওয়ার চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর।
মাটি থেকে জল তুলে নেওয়া, আমাদের গ্রহকে কেবল পরিবেশগতভাবে নয়, এমনকি মহাকাশে এটি কীভাবে চলাচল করবে তাতেও গভীর প্রভাব ফেলে।
গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে- পশ্চিম উত্তর আমেরিকা এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতের মতো জায়গাগুলি থেকে প্রচুর পরিমাণে ভূগর্ভস্থ জল পাম্প করা হয়েছে। এই অঞ্চলগুলি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ পৃথিবীতে তাদের অবস্থান ভূগর্ভস্থ জল অপসারণের সময় পৃথিবীর অক্ষকে প্রভাবিত করার সম্ভাবনা আরও বেশি করে বাড়িয়ে দেয়।
বর্তমানে, পৃথিবীর অক্ষের সামান্য পরিবর্তন আমাদের ঋতু বা দৈনন্দিন আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য যথেষ্ট নয়। তবে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা যদি আমরা একই হারে ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার করতে থাকি, তাহলে গ্রহের জলবায়ুর উপর দীর্ঘমেয়াদী গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে।
হাজার হাজার বছর ধরে, পৃথিবীর অক্ষের ছোট ছোট পরিবর্তনও জলবায়ু ব্যবস্থার কার্যকারিতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এই কারণেই আমাদের জলসম্পদকে বুদ্ধিমানের সঙ্গে পরিচালনা করাটা আগের চেয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
গবেষণাটি বিশ্বজুড়ে সরকার, পরিবেশগতগোষ্ঠী এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা পাঠায়। আমরা যে আর ভূগর্ভস্থ জলের হ্রাসকে উপেক্ষা করতে পারি না। এটা যে কেবল স্থানীয় সমস্যা নয় বরং সারাবিশ্বকে ব্যাপক প্রভাবিত করতে পারে তাও স্পষ্ট। আমরা কতটা ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার করি তা হ্রাস করে এবং ভূগর্ভস্থ জল সংরক্ষণ করে, আমরা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর কাত হওয়ার গতি কমাতে বা এমনকি পরিবর্তন করতে সক্ষম হতে পারি। তবে এর জন্য বহু বছর ধরে ধারাবাহিক প্রচেষ্টার প্রয়োজন। প্রয়োজন দীঘস্থায়ী পরিকল্পনা।