ক্ষমতায় থাকা-আসার প্রতিযোগিতায় কৃষক উপেক্ষিত

Posted: 04 মে, 2025

৫৩ বছরে শাসক শ্রেণি এদেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখা শ্রমজীবী মানুষকে উপেক্ষা করে পুঁজিপতি ব্যবসায়ী ধনিক শ্রেণির স্বার্থকেই রক্ষা করে চলেছে। শাসক শ্রেণির ক্ষমতায় থাকা আর ক্ষমতায় আসার প্রতিযোগিতায় এদেশের শ্রমজীবী মানুষ বরাবরের মতো বর্তমানেও রয়েছে উপেক্ষিত। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের নামে দেশের শাসনব্যবস্থার খোলনলচে পাল্টে ফেলার প্রতিযোগিতায় শ্রমিক কৃষক মেহনতি শ্রমজীবী মানুষের জীবিকার নিশ্চয়তা বিধানের কোনো উদ্যোগ এখনো লক্ষ্য করা যায়নি। সংস্কারের নামে বিস্তর আলাপ হলেও ন্যূনতম মজুরি, স্বাস্থ্য অধিকার, শিক্ষার অধিকার, নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা, জননিরাপত্তা, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমজীবী কৃষক ও কৃষি শ্রমিকের জীবন-জীবিকার নিরাপত্তার নিশ্চয়তার আলাপ একেবারেই অনুপস্থিত। সারাদেশে বোরো ধানের ভরা মৌসুম চলছে। প্রতিবছরের মতো এবারও সরকার ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এবার বোরো ধান উৎপাদন খরচ বিগত বছরগুলোর চেয়ে বৃদ্ধি পেলেও এ বছর কেজিপ্রতি মাত্র ৪ টাকা বৃদ্ধি করে ৩৬ টাকা কেজি দরে সাড়ে ৩ লাখ টন ধান, ৪৯ টাকা কেজি দরে ১৪ লাখ টন সেদ্ধ চাল, সেই সাথে ৩৬ টাকা কেজি দরে গম কেনার সরকারি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে ২৪ এপ্রিল থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। সরকারের এই সিদ্ধান্তে কৃষক তার ফসলের লাভজনক দাম থেকে বঞ্চিত হবে এবং সিন্ডিকেট চালের ব্যবসায়ীরা লাভবান হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্যমতে, সারাদেশে ৫০ লাখ হেক্টর জমিতে এবার বোরো আবাদ হয়েছে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ কোটি ২৬ লাখ টন। ফলনের লক্ষ্যমাত্রা হেক্টরপ্রতি ৪ দশমিক ৪৬ টন। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে বোরোর উৎপাদন ছিল ২ কোটি ১০ লাখ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ২ কোটি ৭ লাখ টন। ফলন বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে লাগামহীনভাবে বাড়ে কৃষকের ফসল উৎপাদনের খরচ। বর্ধিত দামে সার, বীজ, সেচ, কীটনাশক, ধান কাটা, মাড়াই শেষে বাড়ির উঠোন পর্যন্ত নিতে বা বাজারে বিক্রি করে যে দাম পায় তাতে কৃষকের ত্রাহী অবস্থা। উৎপাদন খরচ আর বিক্রির সাথে কোনো হিসাব মিলাতে পারে না। মহাজনি এনজিওদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে, রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে, বজ্রপাতে মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে কৃষক ফসল ফলায় আর বারবার লোকসান গুনতে থাকে। ব্যাপক উৎসাহে ধান কাটতে গিয়ে প্রতিবছর বজ্রপাতে মৃত্যু হয় অসংখ্য কৃষকের। গত ২০১১ সাল থেকে ২০২৫ সালের ২৮ জুলাই পর্যন্ত মোট ৩৮৬৭ জন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে বজ্রপাতে। বজ্রপাত নিরোধ বা পূর্ব সতর্কতার মাথামোটা প্রকল্প গ্রহণ করে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে ঠিকই, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং প্রাণহানি প্রতিবছর বেড়েই চলছে। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে কৃষকের আকাঙ্ক্ষা ছিলো বিস্তর। অন্তর্বর্তী সরকার ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করলেও দেশের অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তির ওপর টিকিয়ে রাখার মূল শক্তি এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমজীবী কৃষক। কৃষকদের জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করা ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে ‘কৃষি সংস্কার কমিশন’ গঠন করা জরুরি ছিলো। কিন্তু শ্রমজীবী কৃষকের ফসল উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থার সংস্কার বা বৈষম্য নিরসনের দিকে সরকারের কোনো ভ্রুক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। কৃষক আশা করেছিল- চলতি মৌসুমে বোরো ধান বিগত সময়গুলোর চেয়ে বেশি পরিমাণে ক্রয় করবে। দীর্ঘদিন ধরে কৃষকদের দাবি ছিল –মোট উৎপাদনের ন্যূনতম ২০% বা ৫০ লক্ষ টন বোরো ধান সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় করবে। কিন্তু সরকারের মাত্র সাড়ে ৩ লক্ষ টন ধান আর ১৪ লক্ষ টন চাল ক্রয়ের ঘোষণা কৃষকদের চরমভাবে হতাশ করেছে। গতবছর ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ লক্ষ টন। সরকারের এই সিদ্ধান্তে কৃষক তার ফসলের লাভজনক দাম থেকে বঞ্চিত হবে। প্রকারান্তরে সিন্ডিকেট চালের ব্যবসায়ীরাদের স্বার্থরক্ষার জন্যই সরকারের এই সিদ্ধান্ত। কৃষক কষ্ট করে উৎপাদন করে ধান। ফড়িয়া আর দালালদের মাধ্যমে চাতাল মালিকরা কৃষকের কাছ থেকে নামেমাত্র দামে ধান নিয়ে চাল তৈরি করে কম দামে সরকারি গুদামে ও খোলা বাজারে বিক্রি করে। সরকার প্রতিবছর জেলাভিত্তিক তালিকাভুক্ত চালকল থেকে চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে থাকে। চালকলের মালিকরা সিন্ডিকেট হয়ে অধিক মুনাফার জন্য বোরো এবং আমন মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে চালের সংকটকালে খোলা বাজারে বিক্রি করে। একদিকে ধান ক্রয়ের জটিল পদ্ধতির কারণে কৃষক সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে আগ্রহী না হয়ে বাধ্য হয়ে কম দামে নগদ টাকায় ফড়িয়াদের কাছে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হয়। অপরদিকে মাফিয়া চাল ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার লোভে বেশি দামে খোলা বাজারে তাদের সুবিধা মতো খোলা বাজারে চাল বিক্রি করে। ফলে প্রতি বছরই সরকার ধান এবং চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়। লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। এভাবেই চাতাল মালিক আর চালের ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। সরকার চাল এবং ধান ক্রয়ের পরিমাণগত বৈষম্যের মধ্যদিয়ে মূলত ব্যবসায়ীদের স্বার্থকেই রক্ষা করছে। কৃষকের কাছ থেকে কম পরিমাণে চাল ক্রয়ের কারণ হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ধান থেকে চাল ভাঙানোর ব্যবস্থা সরকারের নেই, তাছাড়া ধান সংগ্রহ করে গুদামজাত করার ব্যবস্থাপনাও পর্যাপ্ত নেই। পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্যগুদাম, হিমাগার নির্মানের দাবি দীর্ঘদিনের। বিগত পতিত সরকার খাদ্যগুদাম নির্মাণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্প শেষ করার মেয়াদকাল বারবার বৃদ্ধি করে এবং সেই প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি করে মূলত জনগণের টাকা লুটপাট করে। প্রকল্পের মেয়াদকাল শেষ হলেও ব্যবহার্য অগ্রগতি এখনো দৃশ্যমান হয় নাই। সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সরকারের তালিকাভুক্ত ব্যক্তিমালিকানাধীন চালকল ও চাতালের গুদামগুলোতে কৃষকের কাছ থেকে সরকারের ক্রয়কৃত ধান সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চাতাল কলে কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় করে সরকারের ধান ভাঙানোর উদ্যোগ দিতে হবে। বিআইডিএস ২০১৯ সালে এক গবেষণায় প্রকাশ করে যে, দেশে নিবন্ধিত চাল মিল ও চাতাল আছে প্রায় ২০ হাজার, অনিবন্ধিত আরও বেশি। কিন্তু দেশে সারা বছরে যত চাল কেনাবেচা হয়, এককভাবে তার সবচেয়ে বড় অংশ এখন প্রায় ৫০টি বড় চালকল প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করে। এই অটো রাইস মিলের প্রতিটি প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ৫০০ টন চাল উৎপাদন করে। মূলত তাদের নিজস্ব গুদামে থাকা ধান ভাঙিয়ে তারা ওই চাল উৎপাদন করে থাকে। এই বড় কর্পোরেট চালকলগুলোই সিন্ডিকেট হয়ে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। ধানের ভরা মৌসুমে সরকারের খাদ্যশস্য সংরক্ষণ সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ভারতে সরকারিভাবে কৃষকের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ধান ক্রয় করে ব্যক্তি পর্যায়ে চাতাল কলের গুদামে সংরক্ষণ করে। পরবর্তীতে খাদ্য সংকটকালে সেই ধান ভাঙিয়ে খোলা বাজারে বিতরণের ব্যবস্থা করে ভারতের সরকার। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭০ লক্ষ টন। আমাদের দেশেও চলতি বোরো মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার ২০% বা ৫০ লক্ষ টন বোরো ধান সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় করতে হবে। আগামী বাজেটে সরকারিভাবে চালকল চালু করার অর্থ বরাদ্দ করে দ্রুতই বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত মূলত কৃষকরা ধানের লাভজনক দাম থেকে বঞ্চিত হবে পক্ষান্তরে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরাই লাভবান হবে। দীর্ঘদিনের বৈষম্যের স্বীকার এদেশের কৃষকদের জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করা ও বৈষম্য দূর করার জন্য সরকারের অবিলম্বে কতিপয় কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের ঘোষণা থাকলেও প্রকৃত উৎপাদক কৃষকের কৃষি কার্ড না থাকা এবং ধান ক্রয়ের জটিল ব্যবস্থাপনার কারণে প্রান্তিক কৃষকরা সরকারি গুদামে ধান বিক্রয় করতে পারে না। কৃষকরা সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে আগ্রহী হন না। এই কারণে প্রতিবছরই সরকার তার খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়। সরকারি প্রণোদনা এবং অন্যান্য কৃষি পরিষেবা দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার জন্য ২ কোটি ২৭ লাখ ৫৩ হাজার ৩২১টি কৃষক পরিবারকে কৃষি কার্ড দেওয়ার ‘প্রোগ্রাম অন অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন এন্ট্রাপ্রেনারশিপ অ্যান্ড রেসিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার)’ প্রকল্পটির কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে। এই প্রকল্পের অধীনে বিগত সরকার কৃষকদের কৃষি সহায়তার জন্য মাত্র ১ কোটি ৪৩ লাখ ৭৫ হাজার কৃষি কার্ড বিতরণ করেছে বলে সরকারি তথ্যসূত্রে জানা যায়। কিন্তু প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, যাদের কৃষি কার্ড দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে অধিকাংশই কৃষির সাথে সম্পৃক্ত নয়। বিগত দিনে কৃষি কার্ড বিতরণ করা হয়েছে নিছক রাজনৈতিক বিবেচনায়। প্রকৃত কৃষকদের এই কৃষি কার্ড থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এজন্য, ভূমিহীন কৃষকসহ প্রকৃত উৎপাদক কৃষকদের কৃষি কার্ড বিতরণ করতে হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি ক্রয় কেন্দ্র চালু করে কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করতে হবে। সার, বীজ কীটনাশক, সেচসহ ফসল উৎপাদন উপকরণের দাম কমাতে হবে। কৃষকদের সরাসরি ভর্তুকি দিতে হবে। চাতাল কল মালিক ও চাল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভেঙে কৃষক ও ভোক্তা সমবায় বাজার চালু করতে হবে। সরকার নির্ধারিত দামে কৃষকদের পর্যাপ্ত সার দিতে হবে। বিএডিসি সক্রিয় করতে হবে। পল্লী রেশন ও শস্য বিমা চালু করতে হবে। স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে কৃষি ঋণ দিতে হবে। কৃষকের সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আমূল ভূমি সংস্কার, কৃষি জমি রক্ষা ও ভূমি আইনের জটিল প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। সরাসরি উৎপাদক কৃষকের কাছ থেকে ন্যূনতম ৫০ লাখ টন ধান ক্রয় করতে হবে। আগামী জুন-জুলাই মাসে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জন্য বাজেট করা হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে কৃষকদের প্রধান দাবি হবে- গ্রামীণ অর্থনীতিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বাজেট প্রণয়ন করা। প্রতি বছর কৃষিখাতকে উপেক্ষা করা হয়েছে। প্রকৃত উৎপাদক কৃষক বাজেটের সুফল থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বাজেটে বরাদ্দের অধিকাংশই নানান প্রকল্পের নামে লুটপাট করা হয়েছে।পতিত ৩০০ আসনের সংসদে প্রায় ১৯৯ জন সিআইপি-ভিআইপি ব্যবসায়ী এমপি ছিলেন। কিন্তু কৃষক প্রতিনিধি কোনো এমপিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে কৃষিবিষয়ক ৫টি মন্ত্রণালয়ের (১. কৃষি ২. মৎস্য ও পশু সম্পদ ৩. পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন ৪. ভূমি ৫. পানি সম্পদ) জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৪৭ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ। বিগত বছরের জন্য তা বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ ধরা হয়েছিল (শতাংশের হিসাব ধরে) কিন্তু প্রকৃত হিসাব হলো- গত বছরের কৃষি বরাদ্দের পরিমাণ ৪৩ হাজার ৭০৩ কোটি টাকাকে এ বছরের ১৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি দিয়ে সমন্বয় করলে কৃষি বরাদ্দের শুভঙ্করের ফাঁকিটা বোঝা যায় যে, বরাদ্দের পরিমাণ আসলে কমেছে। বাজেটের ভর্তুকির টাকার বিরাট অংশ লুটপাট করা হয়েছে কৃষিযন্ত্র ক্রয়ের নামে। আবার কৃষি খাতের ৫টি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কৃষি ও কৃষকের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত দুটি মন্ত্রণালয়- কৃষি ও মৎস্য-পশুসম্পদ। যাদের জন্য বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে যথাক্রমে ২৭ হাজার ২১৪ কোটি টাকা ও ৪ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। বিগত বছরের বাজেটে এই খাতে দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ধরা হয়েছিল যথাক্রমে ২৫ হাজার ১১৮ কোটি টাকা ও ৪ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট বাজেটের আকার বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি সমন্বয়ের তুলনায় এই খাতে বাজেটের প্রকৃত বরাদ্দ মোটেই বাড়েনি। আগামী বাজেটে কৃষিখাতে সরাসরি কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করি বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি কৃষক। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশের মোট পরিবারের সংখ্যা ৩,৫৫,৫২,২৯৬টি। এর মধ্যে কৃষক পরিবার ১,৬৮,৮১,৭৫৭টি। মোট জনশক্তির মধ্যে কৃষিতে ৪৫.৪% নিয়োজিত থেকে এদেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখছে। এদেশের কৃষক-শ্রমিক-শ্রমজীবী মানুষের জীবন-জীবিকা এখন অনিশ্চয়তার খাদের কিনারায়। ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত গণঅভ্যুত্থান থেকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারক এখনই শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। এদেশের হাজার বছরের লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস থেকে শ্রমজীবী মেহনতি মানুষ শক্তি সঞ্চয় করছে। কৃষক-শ্রমিক-শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের সম্মিলিত সম্ভাব্য গণঅভ্যুত্থানের আগেই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। লেখক : সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ কৃষক সমিতি