ভূ-রাজনৈতিক সিন্ধান্ত গ্রহণে সরকারকে সর্তক হবার আহ্বান বামেদের

Posted: 04 মে, 2025

একতা প্রতিবেদক : মায়ানমারে মানবিক করিডোর, নিউমরিং বন্দর বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়া ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলে সমরাস্ত্রের যন্ত্রাংশ তৈরি খবরে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। কাতারের বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলে সমরাস্ত্রের যন্ত্রাংশ তৈরির খাতে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানানোর বিরোধিতা করে বামজোট নেতারা বলেন, সরকারের এই ধরনের ব্যবসায়ী উদ্যোগ বাংলাদেশকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলবে। বিদেশি কোনো দেশের সমরাস্ত্রের যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা বাংলাদেশে হতে পারে না। বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সভায় নেতৃবৃন্দ এসব আহ্বান জানান। গত ৩০ এপ্রিল দুপুর ১২ টার দিকে জোটের অস্থায়ী কার্যালয় মুক্তিভবনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল—বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাসদ (মার্কসবাদী)-এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী, বাসদের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিখিল দাস, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য শহীদুল ইসলাম সবুজ প্রমুখ। সভায় এক প্রস্তাবে বলা হয়, আরাকানে মানবিক করিডোর প্রদানের সিদ্ধান্ত একটি স্পর্শকাতর বিষয়। এ ধরণের সিদ্ধান্তের সঙ্গে দেশের নিরাপত্তা, সামরিক ঝুঁকি, সার্বভৌমত্ব, এ অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর এ বিষয়ে অবস্থান- ইত্যাদি অনেকগুলো বিষয় যুক্ত এবং প্রত্যেকটিই গভীর পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণের দাবি রাখে। ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে ঐক্যমত্য ছাড়া এবং সরকারের পক্ষ থেকে পুরো বিষয়টি স্পষ্ট করে উপস্থাপন করা ছাড়া এ ধরণের স্পর্শকাতর বিষয়ে সরকার একক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা। এছাড়াও এই ধরনের অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্তের ফলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদসহ সাম্রাজ্যবাদী-আধিপত্যবাদী শক্তিগুলোর যুদ্ধ চক্রান্তের শিকার হতে পারে বাংলাদেশ। সভায় চট্রগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল হ্যান্ডেলিং এর জন্য বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সভায় বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর। এর সাথে শুধু বাণিজ্যিক লেনদেন নয়, দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নটি যুক্ত। বন্দরের তত্ত্বাবধানে টার্মিনালটি গত ১৭ বছর লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসাবে ভালোভাবে পরিচালিত হওয়া সত্ত্বেও বিদেশি কোম্পানির কাছে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কেন নেয়া হলো সেটা স্পষ্ট নয়। সভায় এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে নেতৃবৃন্দ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। সভায় মহান মে দিবসের সংগ্রামী চেতনাকে ধারণ করে শ্রমিকদের মজুরি, মর্যাদাপূর্ণ জীবন, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য সারাদেশের শ্রমজীবী মানুষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। একইসাথে নিবর্তনমূলক বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ করে শ্রমিক নেতাদের গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানানো হয়। বামজোট নেতারা অবিলম্বে এসব বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিলের জোর দাবি জানান।