আউটসোর্সিং কর্মীদের দুর্দশা কি কাটবে

Posted: 13 এপ্রিল, 2025

ছবিতে যে মানুষটিকে নিথর দেহ নিয়ে পড়ে থাকতে দেখছেন তার নাম কামরান হোসেন। আউটসোর্সিং চাকরিতে কর্মরত একজন বিদ্যুৎ লাইনম্যান কর্মী। এনওসিএস (মগবাজার) ডিপিডিসি দপ্তরে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন আউটসোর্সিং লাইনম্যান (মেইন্টেন্যান্স ম্যান লাইন) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। প্রতিদিনের মতো সকালে ঘুম থেকে অফিস যান, নিরলস পরিশ্রম করে বাসায় ফিরেন। কিন্তু গত ৮ এপ্রিল, ২০২৫ আর বাসায় না ফিরে, চলে গেছেন অনন্তকালের পথে। বিদ্যুৎ সংযোগ দেবার সময় বিদ্যুতায়িত হয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান আউটসোর্সিং চাকরিতে কর্মরত এই লাইনম্যান কর্মী। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) সুনামধন্য বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠান। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের প্রায় ২০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে মূলত বিদ্যুৎ বিতরণ করে রাজস্ব আদায় করে। এই প্রতিষ্ঠানের স্লোগান “নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ উৎফুল্ল গ্রাহক” বোঝায় যাচ্ছে গ্রাহকবান্ধব প্রতিষ্ঠান। যাদের মূল লক্ষ্য হল বিদ্যুৎ সেবার মাধ্যমে গ্রাহকতুষ্টি অর্জন করা। কিন্তু গ্রাহক সেবার মান বৃদ্ধিতে কাজ করলে গ্রাহকদের সেবা প্রদানে যেসব কর্মী দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তাদের জন্যে পরিকল্পিত কোনো উদ্যোগ কিংবা সহায়তা চোখে পড়ে না। তারপরেও প্রতিষ্ঠানের নাম বৃদ্ধি এবং গ্রাহক সেবার মান উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা পালন করে যান প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত আউটসোর্সিং কর্মীরা। প্রায় ২ হাজার জনবল প্রতিষ্ঠানটিতে ভিন্ন ভিন্ন পদে কর্মরত আছেন আউটসোর্সিং চাকরি হিসেবে। অফিস সহকারী থেকে নিরাপত্তা প্রহরী পর্যন্ত আউটসোর্সিং জনবল কাজ করে থাকেন নিদিষ্ট সময়ের জন্য। ডিপিডিসি টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নেয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে আউটসোর্সিং জনবল প্রদান করে, ডিপিডিসি যাচাই বাছাইয়ের (যোগ্যতা অনুযায়ী মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষা) মাধ্যমে এর মধ্য থেকে জনবল নিয়োগ দেয়। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ শহরে আউটসোর্সিং জনবল কাজের মধ্য দিয়ে অভিজ্ঞ ও যোগ্যতম হয়ে ১৯০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গ্রাহকদের সেবা দিয়ে থাকেন। আউটসোর্সিং কর্মীরা এই শ্রমের বিনিময়ে একটি সরকারি কর্মের পরিচয় পান, প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু তাদের বেতন-বোনাস খুবই নিম্নমানের, যা দিয়ে বর্তমান ঊর্ধ্বগতির বাজারে সংসার পরিচালনা করা খুব কঠিন। পরিবারের কারো অসুখ-বিসুখ হলে অসহায়ত্বের মতো বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করতে হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য বাধ্য হন হাত পাততে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কার্যসম্পাদনে কেউ যদি আহত হন তাহলে তার চিকিৎসার ভাড়ও বহন করতে গিয়ে পরিবার নিংস্ব হয়ে যায় অথচ প্রতিষ্ঠান থেকে তেমন আর্থিক সহায়তা পান না এসব কর্মী। কর্মরত অবস্থায় মারা গেল পরিবার ঝুঁকি ভাতাটুকুও পান না। নামমাত্র কিছু বিমা সুবিধা আছে যা খুবই নিম্নমানের। তারপরও আহত/নিহতদের পরিবারের পক্ষে সে টাকাও পাওয়া দুষ্কর। এসবের পরেও জীবনের তাগিদে ঝুঁকি নিয়ে মানুষের সেবার কাজ করে চলছেন এই সেক্টরের শ্রমিকেরা। কিন্তু নতুন টেন্ডার হলে কিংবা নতুন কিছু ঘটলে চাকরি নিয়ে দৌড়ঝাপে পড়তে হয় আউটসোর্সিং কর্মীদের। প্রতিযোগিতা দৌড়পাল্লায় পড়ে অনেকের একমাত্র চাকরি হারিয়ে পথে বসতে হয়। কর্মহীন এসব মানুষের জীবনে সংশয় দেখা দেয়। চাকরি চলে যাওয়ায়- হতাশা আর বেকারত্ব নিয়ে দিন পার করতে হয় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা এসব আউটসোর্সিং কর্মীদের। আজ হয়তো লাইনম্যান কামরান মারা গেছেন কাল হয়ত আরেকজন মারা যাবেন, না হয় পঙ্গুত্ব বরণ করবেন! কিন্তু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের সেবায় নিয়োজিত এসব হাড়ভাঙা পরিশ্রম করা আউটসোর্সিং কর্মীরা কি পর্যাপ্ত চিকিৎসা ভাতা, চাকরির নিরাপত্তা ও সম্মানী কখনো পাবে! এমন হাজারো দুর্দশা নিয়ে দিন পার করছে এসব কর্মজীবী মানুষ। লেখক : যুবনেতা