মানুষ হত্যার দায়ভার সরকারের

Posted: 28 জুলাই, 2024

এমন রক্তাক্ত, মৃত্যু উপত্যকা শেষ কবে দেখেছে বাংলাদেশ? নতুন প্রজন্মের সন্তানেরা তাদের জীবনে বোধহয় এমন দৃশ্য মনে করতে পারবে না? স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের মানুষ নানা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন, প্রাণ দিয়েছেন। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে গেছে সাম্প্রতিক কালের কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। ব্যাপকতা, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের সম্পৃক্ততা, দলমত নির্বিশেষে সবার সমর্থন তো এই আন্দোলনের যৌক্তিকতার কথাই তুলে ধরে। সরকারের লোকজনও বলেছে, কোটা সংস্কার হওয়া দরকার। কিন্তু তারপরেও শুধুমাত্র আন্দোলন দমাতে গিয়ে সরকার সারাদেশে দুই শতাধিক নিরীহ মানুষের প্রাণ নিয়েছে। মায়ের বুক খালি করার এই দায় অবশ্যই সরকারকে নিতে হবে, এর দায়ভায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগের। প্রতিটি হত্যার জবাব আজ হোক কাল- এই সরকারকে ও আওয়ামী লীগকে দিতে হবে। যদিও আওয়ামী লীগ সরকার রক্তের উপর দাঁড়িয়ে তাদের অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার অপচেষ্টা করবে। কিন্তু দেশের মানুষ, এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে ছাড় দেবে না। ২০১৮ সালের পর এবার যখন এই আন্দোলন শুরু হয়, তখন অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন হয়তো শান্তিপূর্ণ উপায়ে সবাইকে নিয়ে সরকার কোটা সংস্কারের পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু আন্দোলনে গতি আসার পর সরকারের উচ্চমহল থেকে নেতারা, মন্ত্রীরা ছাত্রসমাজের দাবিকে উপেক্ষা করতে থাকেন। শুধু তাই নয়; এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে নানা উসকানিমূলক বক্তব্যও দেন। এর মধ্য দিয়ে ছাত্রসমাজের ক্ষোভ আরও বাড়ে। তারপরও সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা আশা করেছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হয়তো এ ব্যাপারে দিক-নির্দেশনা দেবেন, যাতে করে আন্দোলনকারী ও মানুষ আশ্বস্ত হয়ে ঘরে ফিরবেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো পদক্ষেপেই দেখা যায়নি। ততদিনে রাজপথে রক্ত ঝরে গেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতেও ছাত্র সমাজ ও দেশবাসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণে সুনির্দিষ্টভাবে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের ঘোষণা আশা করেছিল। কিন্তু সরকারপ্রধানের ভাষণে তার কোনো প্রতিফলন ছিল না। উপরন্তু রাজপথে লাশের সংখ্যা বেড়েই চলেছিল। এটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আরও ক্ষুব্ধ করে তুলে। এখন তো এটা স্পষ্ট, কোটা সংস্কার নিয়ে সরকারের দ্বি-চারিতাই মূলত দায়ী। সরকার সন্ত্রাসী কায়দায় রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে ছাত্রদের আন্দোলনকে দমন করতে চেয়েছে। সরকার এখন বলছে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘তৃতীয় পক্ষ ভর করে’ সহিংসতা করেছে। তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কেন হত্যা করা হলো? কেন দিনের পর দিন ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ রাাখার সিদ্ধান্ত নিল? এগুলো কোনো গণতান্ত্রিক সরকারের কাজ হতে পারে না। এগুলো স্বৈরাচারী সরকারের আচরণ। অবিলম্বে পরিপূর্ণভাবে এসব সেবা চালু করে মানুষের জীবনযাপন স্বাভাবিক করা উচিত। সরকারের হত্যা-গুম, নিপীড়ন-নির্যাতন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতি, লুটপাটের কারণে সাধারণ মানুষের জীবনে এমনিতেই নাভিশ্বাস উঠেছে। তার উপর রক্তের হোলিখেলায় মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত, ভীত-সন্ত্রস্ত্র। মানুষ এখন শুধু একটু স্বস্তিতে বাঁচতে চায়। যদিও তারা জানে, এই সরকারের পক্ষে আর কোনোভাবেই মানুষকে স্বস্তি দেওয়া সম্ভব না। কোটা সংস্কার আন্দোলনে মোট কতজন নিহত হয়েছেন- সেই সংখ্যা এখনও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। কতজন আহত হয়েছে, আহতরা শারীরিকভাবে কতোটা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন তাও অজানা। আমরা মনে করি, কোটা সংস্কার আন্দোলনে যারা নিহত-আহত হয়েছেন তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা উচিত। নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের চিকিৎসা ও সহায়তা করা উচিত। অবশ্যই দেশের মানুষ এই সরকারের নারকীয় তা-বের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই জারি রাখবে। কারণ, শহীদের রক্ত কখনও বৃথা যেতে পারে না।