ঘুষের জন্য তালাক!

Posted: 07 জুলাই, 2024

একতা প্রতিবেদক: কথায় আছে বৌ গেলে বৌ পাওয়া যায়। কিন্তু ভাই গেলে ভাই পাওয়া যায় না। কিন্তু নীলফামারীতে ঘটেছে অন্য এক ঘটনা। ভাইয়ের জন্য না। ঘুষের জন্য বৌকে নির্যাতন করে তালাক দিয়েছেন নীলফামারীর উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান। আশরাফুজ্জামানের স্ত্রী রেজওয়ানা হাসনাত খুশবু অভিযোগ করেছেন, ঘুষকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় তাঁর ওপর নেমে আসে নির্যাতন। এর জেরেই তাঁকে দেওয়া হয়েছে তালাক। অভিযোগ উঠেছে, নীলফামারী জেলায় সাতটি ‘মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’ নির্মাণকাজের তদারকির সময় ঠিকাদারের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন আশরাফ। গত বুধবার গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব নবিরুল ইসলামের কাছে রেজওয়ানা হাসনাত খুশবু লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, মসজিদ নির্মাণের কাজে ঘুষকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় তাঁর ওপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। শেষ পর্যন্ত বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটিয়েছেন আশরাফ। এ ক্ষেত্রেও আশ্রয় নিয়েছেন জালিয়াতির। আশরাফের বাড়ি নীলফামারী সদর উপজেলার রামনগর গ্রামে। তাঁর বাবা আব্দুল মান্নান গ্রাম্য চিকিৎসক। আশরাফ ২০১৮ সালে চাকরিতে যোগদানের আগে তাদের পরিবার চলত পিতার সামান্য উপার্জনে। ছিল একটি মাত্র ঘর। তিনি চাকরি পেয়ে কয়েক বছরে করেছেন আলিশান বাড়ি। গ্রামে কিনেছেন জমি। বাড়িতেই গড়েছেন দুই বছরের ছেলের নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দৃশ্যত এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম না থাকলেও অ্যাকাউন্টে চলে লাখ লাখ টাকার লেনদেন। দিনাজপুর গণপূর্ত বিভাগ থেকে ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর উপসহকারী প্রকৌশলী আশরাফ নীলফামারীতে যোগদান করেন। তাঁকে নীলফামারী সদর উপজেলা ও জলঢাকা উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণকাজের তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের মার্চের মধ্যেই সদর উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ শেষ হয়। এর নির্মাণকাজের চুক্তিমূল্য ১৩ কোটি ৫ লাখ টাকা হলেও, ব্যয় বাড়িয়ে ১৬ কোটি ৯২ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া জলঢাকা উপজেলার মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ চলমান। খুশবু অভিযোগ করেন, ২০২১ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে আশরাফুজ্জামান মোবাইল ফোনে মসজিদ নির্মাণকাজে ঘুষ গ্রহণের বিষয়ে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতেন। তিনি ঘুষের টাকার বদলে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। খুশবু বলেন, ‘একদিন ফোনালাপ শেষ হলে আমি তাঁকে বলি যে, মসজিদ আল্লাহর ঘর। এখান থেকে তুমি ঘুষ নেবে? এতে তিনি প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এ সময় গর্ভে সন্তান থাকায় প্রচণ্ড অপমানিত বোধ করলেও কাউকে কিছু বলিনি। কিন্তু এর পর থেকে সামান্য ব্যাপারেও কথা কাটাকাটি হতো। এভাবে ধীরে ধীরে শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন।’ আশরাফের বাড়ির এক পাশে মেসার্স আব্দুর রাফি ট্রেডার্সের নামে করা হয়েছে একটি গুদাম ঘর। ২০২২ সালে আশরাফুজ্জামানের বাবা আব্দুল মান্নানের নামে মেসার্স আব্দুর রাফি ট্রেডার্সের ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানের গত পাঁচ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্টে বলা হয়, জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে ৩৪ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ডিপোজিট এবং ৩৩ লাখ ৪৬ টাকা উইথড্র করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ৯ ও ১০ জানুয়ারি ৯ লাখ ও ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা জমা হয়েছে। ২০২৪ সালের ৩১ মার্চে প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে এফডিআর ক্লোজ বাবদ ১৯ লাখ ৯৭ টাকা জমা হয়েছে। রেজওয়ানা হাসনাত খুশবু অভিযোগ করেন, আশরাফুজ্জামানের নামে সোনালী, রূপালী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট আছে। তাঁর বাবা-মায়ের নামেও আছে একাধিক অ্যাকাউন্ট। এসব অ্যাকাউন্টে সদর উপজেলার দুটি মসজিদের কাজ থেকে ২৫ লাখ এবং জলঢাকার একটি মসজিদ প্রকল্পের ঠিকাদারের কাছ থেকে নেওয়া ২০ লাখ টাকা রাখা হয়েছে।