সংকট নিরসনে জনগণকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান সিপিবির

Posted: 11 ফেব্রুয়ারী, 2024

একতা প্রতিবেদক : প্রহসনের, ‘ডামি’ নির্বাচন বাতিল, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি প্রবর্তনসহ নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, রেশন ব্যবস্থা ও ন্যয্যমূল্যের দোকান চালু, খেলাপি ঋণ ও বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া টাকা উদ্ধার, দুর্নীতি-লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, ন্যূনতম জাতীয় মজুরি নির্ধারণ, কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ, ক্ষেতমজুরসহ সবার কাজের নিশ্চয়তা, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির মূল্য বৃদ্ধির পাঁয়তারা বন্ধসহ দেশের অর্থনৈতিক ও জনজীবনের সংকট দূর করার দাবিতে গত ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ, জনসভা, সমাবেশ ও মিছিল করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। তারই কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার খবরের একাংশ। ভাঙ্গা : গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ফরিদপুর জেলার ভাংগা উপজেলা কমিটির উদ্যোগে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ জানিয়ে জিনিসপত্রের দাম কমানো, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনী পদ্ধতি চালুসহ বিভিন্ন দাবিতে ভাংগা উপজেলার মালিগ্রাম বাজারে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিপিবি ভাংগা উপজেলা কমিটির সভাপতি কৃষকনেতা আতাউর রহমান কালু এর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রফিকুজ্জামান লায়েক, জেলা কমিটির সদস্য ও কৃষক সমিতি জেলা কমিটির সভাপতি সুধীন সরকার মঙ্গল, সিপিবি জেলা কমিটির সদস্য ও উপজেলা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত হোসেন, উপজেলা কমিটির সদস্য ও ঘারুয়া শাখা সম্পাদক ফকির কামরুজ্জামান প্রমুখ। বরিশাল : সিপিবি বরিশাল জেলা কমিটির সম্পাদকমণ্ডলির সদস্য বিশ্বনাথ দাস মুন্সির সভাপতিত্বে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বরিশাল শহরে এই মানবন্ধন সমাবেশ পলিত হয়। এসময় জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সমাবেশ থেকে নেতৃবৃন্দ নিত্যপণ্যসহ জিনিসপত্রের দাম কমানোর দাবি জানান। বক্তারা অবিলম্বে শ্রমজীবী ও মেহনতি মানুষের জন্য টিসিবির গাড়ির পণ্য সরবরাহ ও রেশন ব্যবস্থা চালুর জোর দাবি জানান। সিলেট : দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, রেশন ব্যবস্থা ও ন্যায্যমূল্যের দোকান চালু এবং ডামি নির্বাচন বাতিলের দাবিতে সিপিবি সিলেট জেলা কমিটির উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির ঘোষণা অনুযায়ী গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৫ ঘটিকার স্থানীয় কোর্ট পয়েন্টে জেলা কমিটির সভাপতি সৈয়দ ফরহাদ হোসেনের সভাপতিত্বে এবং মনীষা ওয়াহিদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক খায়রুল হাছান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সুমন, জেলা কমিটির সদস্য নিরঞ্জন দাস খোকন, উদীচী সিলেটের সহ সভাপতি রতন দেব প্রমুখ। বক্তাগণ তাদের বক্তব্যে বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একদলীয় ডামি নির্বাচন বাতিল করে নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে অবিলম্বে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হবে। বর্তমানে বিশ্বে যেখানে নিত্যপণ্যের মূল্য হ্রাস পাচ্ছে সেখানে আমাদের দেশে অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে অবাধে লুটপাট চালাচ্ছে। বক্তাগণ এদের বিরুদ্ধে অতিসত্বর কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান। নেতৃবৃন্দ বলেন, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি প্রবর্তনসহ নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, রেশন ব্যবস্থা ও ন্যয্যমূল্যের দোকান চালু, খেলাপি ঋণ ও বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া টাকা উদ্ধার, দুর্নীতিবাজ লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, ন্যূনতম জাতীয় মজুরি নির্ধারণ, কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ, ক্ষেতমজুরসহ সবার কাজের নিশ্চয়তা, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির মূল্য বৃদ্ধির পাঁয়তারা বন্ধসহ দুঃশাসন হঠিয়ে ব্যবস্থা বদলের সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির পতাকা তলে সমবেত হয়ে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। বগুড়া : প্রহসনমূলক নির্বাচনে গঠিত জাতীয় সংসদ বাতিল, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংখ্যানুপাতিক ব্যবস্থা চালু, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানোর দাবিতে দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) বগুড়া জেলা কমিটির উদ্যোগে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪ ঘটিকায় সাতমাথায় বিক্ষোভ সমাবেশ বগুড়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুল ফরিদ’র সভাপতিত্বে ও শুভ শংকর গুহ রায় বাবুন’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবিদ হোসেন, বগুড়া জেলা কমিটির সম্পাদকমণ্ডলির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ কুমার পাল, সাজেদুর রহমান ঝিলাম, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন বগুড়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. পারভেজ রহমান, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সাব্বির আহমেদ রাজ প্রমুখ। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থেকে দেশে ফ্যাসিস্ট, স্বৈরাচারী একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করছে। এই একদলীয় শাসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে গণতন্ত্র কে গলাটিপে হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ। মানুষের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নিয়ে রাজনীতির মাঠ বিরোধী দল শুণ্য করে প্রহসনমূলক আমি আর ডামির নির্বাচন করেছে। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, দুর্নীতি, সীমাহীন লুটপাট, বিদেশে টাকা পাচার, সিন্ডিকেটের কারসাজিতে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধগতির মাধ্যমে চরম দুঃশাসন চালাচ্ছে। নেতৃবৃন্দ এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বদল করে বাম বিকল্প গড়ে তোলার সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। যশোর : বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) যশোর জেলা কমিটির উদ্যোগে গত ৩ ফ্রেবুয়ারি বিকাল ৪টায় দড়াটানা ভৈরব চত্বরে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, লুটপাট দুর্নীতি বন্ধ, পাচারের টাকা ফেরত আনা, ৭ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি জেলা কমিটির সভাপতি অ্যাড. আবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ইলাহদাদ খান, সহ-সম্পাদক আমিনুর রহমান হীরু, শ্রমিক নেতা মাহবুবুর রহমান মজনু, জেলা কমিটির সদস্য মফিজুর রহমান নান্নু প্রমুখ। দেবীদ্বার : একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে অগণতান্ত্রিক সরকার বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছে। অবিলম্বে একতরফা নির্বাচন বাতিলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) কুমিল্লা জেলা কমিটির উদ্যোগে কমরেড সুজাত আলী সমাজ গবেষণা কেন্দ্রে ‘এক তরফা নির্বাচন বাতিল, তেল- গ্যিাস- বদ্যুৎসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে চান্দিনা’ শীর্ষক সভায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম প্রধান অতিথি হিসেবে এসব বক্তব্য তুলে ধরেন। চান্দিনা শহরে বিক্ষোভ মিছিল শেষে অনুষ্ঠিত সমাবেশে কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের স্বার্থে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। শাসকগোষ্ঠী এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যে, এ সরকারসহ কোনো দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করার পরিবেশ নেই। তিনি জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন– এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে ‘ব্যবস্থা পাল্টাতে হবে এবং আওয়ামীলীগ-বিএনপি মেরুকরনের বাহিরে বাম বিকল্প শক্তির সমাবেশ গড়ে তুলতে হবে।’ সিপিবি কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল কমিশনের সদস্য ও কুমিল্লা জেলা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুজাত আলীর সভাপতিত্বে এবং সিপিবি কুমিল্লা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. অশোক জয় দেবের সঞ্চালনায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য পরেশ কর। এছাড়াও আলোচনা করেন, সিপিবি কুমিল্লা জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজউদ্দিন আহমেদ, এবিএম আতিকুর রহমান বাশার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিকাশ দেব, নূর আহমেদ, জেলা কমিটির সদস্য সূধাংশু কুমার নন্দী, সৈয়দ খলিলুর রহমান বাবুল, আব্দুুর রব, বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান বাঙ্গাল, নারী নেত্রী সুফিয়া বেগম প্রমুখ। খুলনা : দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতি, পুনর্বাসন ছাড়া ব্যাটারিচালিত রিকসা ও হকার উচ্ছেদের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ১ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) খুলনা মহানগর কমিটির উদ্যোগে পিকসার প্যালেস থেকে বিক্ষোভ মিছিল নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পিকচার প্যালেস মোড়ে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। মহানগর কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান বাবুর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. নিত্যানন্দ ঢালী’র পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন, সিপিবি কেন্দ্রীয় সদস্য ও খুলনা জেলা সভাপতি ডা. মনোজ দাশ এবং কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাধারণ সম্পাদক এস এ রশীদ। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এইচ এম শমাহাদাৎ, সুতপা বেদজ্ঞ, মোস্তাফিজুর রহমান রাসেল, সদর থানা সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাবু, সোনাডাঙ্গা থানা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নিতাই পাল, খালিশপুর থানা সভাপতি হুমায়ুন কবীর, সিপিবি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা কিংশুক রায় প্রমুখ। বক্তারা বলেন, দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ দিশেহারা। একদিকে সরকার ব্যাটারিচালিত রিকসা ও হকার উচ্ছেদের কারণে যে মানুষগুলো প্রতিদিন তার সংসারের ভরণপোষণের অর্থ রোজগার করে বাসায় নিয়ে যেত, আজ সেই মানুষগুলো সম্পূর্ণভাবে বেকার। পুনর্বাসন ছাড়া সরকার এই মানুষদের এক অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে যা অমানবিক আচরণ। এ সকল কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে দেশের কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষকে কমিউনিস্ট পার্টির পতাকাতলে এসে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান নেতৃবৃন্দ।