আয় সুরক্ষার রাজনৈতিক অর্থনীতি
Posted: 26 নভেম্বর, 2023
পুঁজিবাদী দেশের শোষক-শাসকশ্রেণি সংখ্যাগরিষ্ঠ মেহনতি দরিদ্র জনগণের কাছ থেকে নানাভাবে অর্থ আদায় করে তা আবার তাদের খয়রাতি রূপে প্রদান করে। এভাবে পুঁজিবাদ সংকট মোকাবিলার চেষ্টা চালায়। আর এর বাহারি নাম হলো কল্যাণ খাত। অধিকাংশ জনগণের ক্রমবর্ধমান আয় বৈষম্য ঠেকানোর এই পুঁজিবাদী কৌশল তুলে ধরা হয়েছে এই লেখায়।
পুঁজিবাদী সমাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, এই সমাজের অর্থনীতি বিনিময় মূল্যের ভিত্তিতে সংগঠিত হয়ে থাকে। সব ধরনের অর্থনৈতিক লেনদেন সমমূল্যের বিনিময়ের নিয়ম দ্বারা পরিচালিত। এর মূল কথাটি হল, কোনো এক ধরনের মূল্যের বিনিময়েই অন্য ধরনের সমমূল্যের পণ্য বা পরিষেবা বা অর্থ অর্জন করা সম্ভব। আয় সুরক্ষার ধারণাটি পুঁজিবাদের এই মূল প্রতিপাদ্যের বিরুদ্ধে। কোনো ব্যক্তি কোনো মূল্য উৎপাদন না করলেও তার জন্য একটি নির্দিষ্ট আয় সরকারের মাধ্যমে সুরক্ষিত করার নীতি আসলে পুঁজিবাদের মূল ভিত্তির বিরোধী। কিন্তু বর্তমান সময়ে ক্রমবর্ধমান আয় বৈষম্য, বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মহীনতা এবং বিশেষত নতুন প্রযুক্তির কারণে সরাসরি শ্রমের প্রয়োজনীয়তা কমে আসা পুঁজিবাদে নতুন ধরনের চাহিদার সঙ্কট তৈরি করছে। মোট কথা হল, মানুষ কাজ করার সুযোগ না পেলে পুঁজিবাদের সাধারণ নিয়মে তার আয় করার কোনো রাস্তা খোলা থাকে না। যেহেতু এই সমাজে বিনিময় মূল্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত মানুষ কেবল কাজের বিনিময়ই সমমূল্যের ক্রয়ক্ষমতা অর্জন করতে পারে। যদি সে কাজ না পায় তবে তার কাছে ক্রয়ক্ষমতা অর্জনের আর কোনো রাস্তা খোলা থাকে না। মানুষ যেহেতু কাজ পাচ্ছে না, অর্থনীতিতে যে ক্রয়ক্ষমতার সঙ্কট তৈরি হচ্ছে, তাকে মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যেই আয় সুরক্ষার নীতি পুঁজিবাদ প্রবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে। উন্নত দেশগুলিতে ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম বা সর্বজনীন আয় সুরক্ষার ধারণাটি এই পরিপ্রেক্ষিতেই গভীরভাবে আলোচিত হচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে সর্বজনীন আয় সুরক্ষা না হলেও, বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য শর্তসাপেক্ষে বা শর্তবিহীন ক্যাশ ট্রান্সফারের ব্যবস্থাপনা চালু হচ্ছে। উন্নত দেশে ইনকাম ট্যাক্স ক্রেডিট, নেগেটিভ ইনকাম ট্যাক্সের ধারণা অথবা বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কাজে অংশগ্রহণের স্বীকৃতি আয় সুরক্ষার বিভিন্ন পথ হিসেবে উঠে আসছে। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে চরম সঙ্কটে নিমজ্জিত সমাজের গরিব, নিম্নবিত্ত মানুষের কাছে আয় সুরক্ষার এইসব নানাবিধ পথ তাদের সাময়িক রিলিফ দিতে পারে। কাজ না পেলেও এই ধরনের আর্থিক সুরক্ষার মাধ্যমে অর্জিত ক্রয়ক্ষমতা একই সঙ্গে পুঁজিবাদে উৎপাদন ও তা বিক্রির মধ্যকার সামঞ্জস্য তৈরিতে সাহায্য করে।
আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে সরাসরি শ্রমের প্রয়োজনীয়তা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ক্রমাগত কমে আসছে। অতএব ব্যবস্থার কারণে, উন্নত প্রযুক্তিজনিত কারণে যে শ্রমের প্রতিস্থাপন হবে তাকে উপযুক্তভাবে নিয়োগ করার বিকল্প পথ পুঁজিবাদের জানা নেই। যুদ্ধোত্তর সময়ে উৎপাদন ও বণ্টনের মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষায় যে জনকল্যাণকর রাষ্ট্রের মডেলটি গড়ে উঠেছিল, তা আজকের পৃথিবীতে কার্যকর করা পুঁজিবাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তার কারণ সেখানে রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল যা আজকের পুঁজিবাদের কাছে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। ফিনান্স পুঁজির আধিপত্যের যুগে আজকের পুঁজিবাদ রাষ্ট্রের আর্থিক কর্মকাণ্ডের প্রসারকে মেনে নিতে রাজি নয়। তাই পুরনো জনকল্যাণের ধারণাটি কার্যকর করা সম্ভব নয়। এর প্রধান কারণ হল উপরের দিকের মানুষের ওপর করের বোঝা বাড়িয়ে সরকারের আয় বৃদ্ধির প্রক্রিয়া ও সেই আয়ের পুনর্বণ্টন ফিনান্স পুঁজির কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শ্রমিকের জন্য কম মজুরি ও ধনীদের ওপর কম কর–এই দুটি পন্থা সুনিশ্চিত রেখেই পুঁজিবাদ বিক্রির সমস্যা মোকাবিলার রাস্তা খুঁজতে চাইছে। আজকের দিনে আয় সুরক্ষার ধারণাটির প্রাসঙ্গিকতা এখানেই। মনে রাখা দরকার যে, নয়া উদারবাদের তাত্ত্বিক প্রবক্তা ও মুক্তবাজারের অন্যতম সমর্থক মিল্টন ফ্রিডম্যান এবং ফ্রেডরিক হায়েক আয় সুরক্ষার বড় সমর্থক ছিলেন। তাদের বক্তব্য ছিল, ন্যূনতম আয় সুরক্ষিত করলে সরকারের অন্যান্য দায় কমানো সম্ভব। ন্যূনতম মজুরি সুনিশ্চিত করা বা উৎপাদনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে চালু ভর্তুকিগুলো বন্ধ করে দিয়ে যদি একটি ন্যূনতম আয় মানুষের জন্য সরকার সুরক্ষিত করে দেয় তবে সে তার সামর্থ্য অনুযায়ী বাজারে গিয়ে পণ্য ও পরিষেবা ক্রয় করবে। যতটুকু পারবে ততটুকুই করবে, এক্ষেত্রে সরকারের আর কোনো দায়-দায়িত্ব থাকবে না। অতএব নয়া উদারবাদের ধারণাটির সঙ্গে ন্যূনতম আয় সুরক্ষিত করার ব্যবস্থাপনার কোনো সংঘাত নেই। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক পণ্ডিতরাও অনেক সময় এই কথা বলছেন যে, কাজের অধিকার ও নানা ধরনের সরকারি অনুদান ও ভর্তুকি বন্ধ করে আয় সুরক্ষার নানা প্রকল্প চালু করা উচিত। এর প্রধান উদ্দেশ্য হল, করের মাধ্যমে সরকারি আয় না বাড়িয়ে মানুষের কাছেই বিভিন্ন খাতে যে টাকা যাচ্ছিল তা বন্ধ করে দিয়ে নানা প্রকার ক্যাশ ট্রান্সফারের স্কিম চালু করা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন এই ধরনের স্কিম চালু করলে সরাসরি উপকৃত অংশের মানুষের রাজনৈতিক সমর্থন অনেক সহজে আদায় করা যায়। সর্বজনীন কোনো ব্যবস্থা বা অধিকার চালু করলে কিছুদিনের মধ্যেই মানুষ এই বিশেষ অধিকারের রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতকে ভুলে যায়। অথচ সরাসরি ব্যক্তিগত যোগাযোগের যে উপকার ক্যাশ ট্রান্সফারের মধ্য দিয়ে হয়ে থাকে তা উপকৃতের ওই রাজনৈতিক কর্তার প্রতি আনুগত্যকে প্রতিনিয়ত সজীব রাখে। এ কারণেই নয়া উদারবাদের যুগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই ধরনের আয় সুরক্ষা প্রকল্প চালু করতে বিশেষ উৎসাহ দেখাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বলা দরকার আয় সুরক্ষা শ্রমজীবী মানুষদের আয়ের ওপর কী প্রভাব ফেলবে তা শ্রমবাজারের প্রকৃতির ওপরও নির্ভর করে। দেশে যদি বেকারই কম থাকে অর্থাৎ শ্রমিকের চাহিদা তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে তবে আয় সুরক্ষার ব্যবস্থা মজুরি বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। এর কারণ হল, আয় সুরক্ষিত হওয়ার কারণে শ্রমজীবী মানুষের কাছে কম মজুরিতে কাজ করার কোনো বাধ্যবাধকতা থাকে না। ফলে তাদের দর কষাকষির ক্ষমতা বেড়ে যায়, যা মজুরি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। অন্যদিকে বাজারে যদি কাজের অভাব থাকে, তাহলে আয় সুরক্ষার ব্যবস্থা কর্মরত শ্রমিকদের মজুরি কমিয়েও দিতে পারে। এর কারণ হল নিয়োগকর্তা তখন শ্রমিকদের এই যুক্তি দেয় যে, সরকারের থেকে যেহেতু তারা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আয় পাচ্ছে ফলে কাজের জায়গায় মজুরি কম দিলেও তাদের পুষিয়ে যাবে। বেকারির পরিমাণ বেশি হলে যেহেতু শ্রমজীবীদের বিকল্প কাজের সুযোগ কম থাকে ফলে তারা ওই কম মজুরিতে কাজ করতেও রাজি হবে। এক্ষেত্রে সরকার প্রদত্ত আয় সুরক্ষা আসলে পুঁজিপতি বা নিয়োগকারীর কাছে সরকার প্রদত্ত সাবসিডি হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ আয় সুরক্ষা কর্মস্থলে মজুরি কমালেও একটি স্থায়ী শ্রমের জোগান সুনিশ্চিত করতে সাহায্য করে। এছাড়া খেয়াল করা দরকার, আমাদের মতো দেশে যেখানে পিতৃতান্ত্রিক চিন্তাভাবনা যথেষ্ট শক্তিশালী সেখানে আয় সুরক্ষা মহিলাদের শ্রম বাজারে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করে। অর্থাৎ ক্যাশ ট্রান্সফার বা ওই ধরনের প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থ পরিবারে যাওয়ার কারণে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীদের আবার গৃহকর্মে সীমাবদ্ধ রাখার একটি সুযোগ পেয়ে যায়। সবচেয়ে অসুবিধা হয় মধ্যস্তরের কর্মচারীদের। তাদের কাছে এই ন্যূনতম আয়ের সুরক্ষা কোনো নতুন পছন্দ সৃষ্টি করে না। সরকার প্রদত্ত আয় সুরক্ষায় জীবনযাপন করা তাদের কাছে কোনো পছন্দসই পথ নয়। অন্যদিকে সরকার আয় সুরক্ষা দেওয়ার বিনিময়ে ফেয়ার ওয়েজ বা অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষা ও সংগঠিত হওয়ার স্বীকৃত অধিকারগুলি অস্বীকার করার সামাজিক স্বীকৃতি অর্জন করে। সামগ্রিক শ্রমবাজারের যেহেতু এই অধিকারগুলি অল্প সংখ্যক শ্রমজীবীর জন্যই প্রযোজ্য, তাই এগুলিকে ‘অস্বাভাবিক বিশেষ সুবিধা’ হিসেবে দেখাতে শাসক শ্রেণি সুযোগ পেয়ে যায়। সরকারি আয় সুরক্ষা তাই ব্যবহৃত হয় অর্জিত পুরনো অধিকারগুলিকে খর্ব করার পরিপ্রেক্ষিত হিসেবে। অতএব আয় সুরক্ষার ব্যবস্থা বর্তমান নয়া উদারবাদী পুঁজি সম্পর্কে একদিকে যেমন ব্যক্তি মানুষকে কিছু আর্থিক সুরাহা দিয়ে থাকে, অন্যদিকে সামগ্রিক অর্থে তা সরকারি খরচে ন্যূনতম বেঁচে থাকার রসদ জুগিয়ে কম পয়সায় শ্রমের নিরবিচ্ছিন্ন যোগান সুনিশ্চিত করে। অর্থাৎ নয়া উদারবাদী ব্যবস্থায় পুঁজিপতি তার শ্রমিকের মজুরি কমানো ও ছাঁটাই-এর অবাধ স্বাধীনতা পেয়ে থাকে। আবার অন্যদিকে সরকার শ্রমজীবীর কিছুটা আয় সুরক্ষিত করার মাধ্যমে পুঁজিবাদে শ্রমের জোগানকে সুনিশ্চিত করে থাকে। অন্যভাবে বললে, যেহেতু এই আয় সুরক্ষার অর্থ ধনীদের উপরে নতুন করে কর চাপিয়ে সংগ্রহ করা হয় না, ফলে এক অর্থে সরকারি কোষাগারের অর্থ পুঁজিপতিদের সাবসিডি দিতে ব্যবহৃত হয়, এবং এই কোষাগারের অর্থ যেহেতু ধনী ও দরিদ্র উভয়ের থেকে সংগৃহীত পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ কর থেকে আসে, তাই আয় সুরক্ষার একটা অংশ যে গরিব মানুষের থেকেই সংগৃহীত হয় এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।
সবশেষে যে কথাটা বলা দরকার সেটা হল, আয় সুরক্ষায় প্রদত্ত আয়ের সঙ্গে যেহেতু কাজের কোনো সম্পর্ক থাকে না, ফলে অনুদানপ্রাপ্ত মানুষ একে কখনই অধিকার হিসেবে দেখে না বরং সরকারি বদান্যতায় প্রাপ্ত বাড়তি অনুদান হিসেবেই দেখে থাকে। অতএব এই অর্থের সঙ্গে মানুষের সঙ্ঘবদ্ধ চেতনার সম্পর্ক কম, বরং ব্যক্তিগত কৃতজ্ঞতার মাত্রা বেশি। এই অনুদানের অর্থ যদিও মানুষের থেকেই সংগৃহীত কিন্তু এই অর্থ প্রাপ্তি কোনো দল বা সরকারের তরফ থেকে প্রদত্ত দান হিসেবেই সাধারণ মানুষ দেখে থাকেন। ফলে এই ধরনের জনকল্যাণ শ্রমজীবী মানুষকে ক্রমাগত ব্যক্তিগত স্তরে সীমায়িত করে এবং ব্যক্তিগত কৃতজ্ঞতার যুক্তিতে সরকারি রাজনৈতিক পক্ষের প্রতি অনুগত করে তোলে। পুঁজিবাদে অর্থনৈতিক বৈষম্য যখন বাড়ছে, কর্মসংস্থান ও প্রকৃত মজুরি যখন কমছে তখন একটি খণ্ডিত অনুগত জনতা যা অধিকারবোধে সিঞ্চিত নয় তা যে কোনও নয়া উদারবাদী শাসকের কাছে একান্তভাবে কাম্য। একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নয়া উদারবাদী শোষণ ব্যবস্থা কায়েম রাখার অন্যতম পূর্বশর্ত হল খণ্ডিত জনতা যারা ক্রমাগত শোষিত হলেও স্বরহীন, যারা অধিকার নয়, বরং অনুদানের জন্য অপেক্ষমান, যারা শোষণের সম অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সংগঠিত হওয়ার চেতনায় উদ্বুদ্ধ নয়। বরং উৎপাদন-বহির্ভূত পরিচয়ের আহ্বানে ক্রমাগত বিভক্ত হতে প্রস্তুত। আয় সুরক্ষা বিপদ নয়, সংগঠিত চেতনার প্রতিস্থাপনটাই দীর্ঘস্থায়ী বিপদ। সংগঠিত চেতনার মাধ্যমে মানুষের প্রয়োজনীয়তার সীমাকে ক্রমাগত প্রসারিত করাই শ্রেণি সংগ্রামের অন্যতম রূপ। আমরা চাই প্রকৃত আয়ের পুনর্বণ্টন। ধনীদের আয় সুরক্ষিত রেখে এবং শ্রমজীবী মানুষের অর্জিত অধিকারগুলিকে খর্ব করে আয় সুরক্ষার প্রকল্পগুলি শাসক দলগুলিকে সাময়িক রাজনৈতিক ফায়দা দিলেও এই সত্যটি খেয়ালে রাখা দরকার যে, জনকল্যাণের খাতে সরকারি খরচ জিডিপির তুলনায় প্রতি বছর কমছে। যে কোনও রিলিফই মানুষের কাছে সাময়িক সমস্যার সুরাহা এনে দেয়। কিন্তু তা যদি তার সংগঠিত চেতনার বোধকে ক্রমাগত দুর্বল করে তবে তা শেষ বিচারে দীর্ঘস্থায়ী অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের প্রতিবন্ধক হয়ে ওঠে। এর বিরুদ্ধে সর্বজনীনতার বোধকে জাগ্রত করা ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার লড়াই একটি বামপন্থি প্রকল্প। এর সাথে আয় সুরক্ষা প্রকল্পের সেই অর্থে কোনো বিরোধ নেই। বিরোধ শুধু একটাই, মানুষের প্রয়োজনীয়তার চেতনাকে অতি ক্ষুদ্র পাওনার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার অভ্যাস যেন বৃহত্তর পরিবর্তনের প্রকল্পটিকে আচ্ছন্ন করে না ফেলে।
লেখক: ভারতের প্রখ্যাত মার্কসবাদী বুদ্ধিজীবী। লেখাটি মার্কসবাদী পথ থেকে সংগৃহীত।