একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করতে হবে

Posted: 19 নভেম্বর, 2023

জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে জলাঞ্জলি দিয়ে আরেকটি একতরফা নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। দেশের বেশিরভাগ দল ও সর্বস্তরের মানুষের মতামত উপেক্ষা করে ইতোমধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। অথচ এই মুহূর্তে দেশে একটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় তদারকি সরকারের দাবিতে আন্দোলন চলছে। এবং গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে পরিস্থিতি সংঘাতময় হয়ে উঠেছে। ফলে দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার মতো ন্যূনতম পরিবেশও নেই। সেই পরিস্থিতিতে তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন প্রমাণ করেছে, তারা আসলে চায় না দেশের সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। দেশের মানুষ যাতে নিজের পছন্দমতো প্রার্থীকে নিজে ভোট দিতে পারে– সেই পরিস্থিতি সৃষ্টির কোনো ব্যবস্থাই তারা করেনি। ফলে সংবিধানের দোহাই দিয়ে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার মেয়াদ বাড়িয়ে নেয়াই ঘোষিত তফসিলের একমাত্র লক্ষ্য। সাধারণভাবে বলতে গেলে, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যতোগুলো নির্বাচন হয়েছে, তার কোনটিই প্রভাবমুক্ত তো দূরের কথা শতভাগ সুষ্ঠুও হয়নি। প্রতিটি নির্বাচনেই কালো টাকা, পেশি শক্তি ও প্রশাসনিক কারসাজি মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। অতীতে সামরিক শাসকরা নির্বাচন ব্যবস্থাকে তাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার হাতিয়ারে পরিণত করেছিল। ১৯৯০ সালের পর চারটি বিভিন্ন নির্বাচনে দেশের সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করতে এবং মোটামুটি বাধাহীনভাবে প্রচার চালাতে পেরেছে। তাদের বর্তমান আওয়ামী লীগের আমলে নির্বাচন ব্যবস্থাকে আবারো স্বৈরাচারের আমলের অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রব্যবস্থার সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিলে অবস্থা তারচেয়ে খারাপ। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের একটি ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সংবিধানে সেই ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে একতরফাভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। শুধু তাই নয়, তারা মন্ত্রীসভার পাশাপাশি সংসদ বহাল রেখে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের একটি উদ্ভট পদ্ধতিও চালু করে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে, যেনতেনভাবে ক্ষমতায় থাকাই তাদের লক্ষ্য। মূলত দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও তাদের বলয়ের লুটেরা গোষ্ঠীর লুটপাট অব্যাহত রাখা ও স্বার্থন্বেষীদের স্বার্থ রক্ষার জন্যই নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। এই অবস্থা থেকে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের দাবি উঠলেও, তাতে কর্ণপাত না করে শাসকগোষ্ঠী ও নির্বাচন কমিশন আরেকটি একতরফা নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের সাধারণ মানুষকে তাদের ভোটাধিকার হরণের বিরুদ্ধে জেগে উঠতে হবে। এই সরকার যাতে কোনোভাবেই আর কোনো একতরফা নির্বাচন করতে না পারে সে জন্য আন্দোলন জোরদার করতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি প্রবর্তন, নির্বাচনকে টাকা-পেশীশক্তি-প্রশাসনিক কারসাজি-সাম্প্রদায়িক প্রচারণা মুক্ত করা, নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কারসহ নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে গণআন্দোলন-গণসংগ্রাম জোরদার করতে হবে। দুঃশাসনের পতনের মাধ্যমে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া বিদ্যমান লুটেরা ব্যবস্থার বদল ঘটানো সম্ভব হবে না।