শি জিনপিং-জো বাইডেন শীর্ষ বৈঠক থেকে কী আশা করা যায়

Posted: 19 নভেম্বর, 2023

এশিয়া-প্যাসিফিক একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক এবং বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতির নেতাদের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য এই বৈঠকের জন্য সকলের চোখ এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো শহরের দিকে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ১৪ থেকে ১৭ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রানসিস্কো শহরে অবস্থান করবেন। আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষকদের মতে বিশ্বব্যাপী অস্থিতিশীলতা এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে, চীন আঞ্চলিক শান্তির জন্য তার উদ্যোগগুলি এবং চীন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি সুস্থ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার বিষয়ে বিস্তারিত জানাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এজেন্ডায় কি আছে? ২৯০ কোটি মানুষ বা বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ অধ্যুষিত ২১টি APEC অর্থনীতি, যার মধ্যে তিনটি প্রধান শক্তি যেমন চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া রয়েছে, যাদের আওতায় রয়েছে বিশ্ব বাণিজ্যের প্রায় অর্ধেক এবং বিশ্বের মোটজিডিপি’র ৬০ শতাংশেরও বেশি। চাইনিজ একাডেমি অফ সোশ্যাল সায়েন্স অব আমেরিকান স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের সহযোগী গবেষক ঝাং ইয়েফেই বলেছেন, ‘এপেক নেতাদের বার্ষিক বৈঠকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক শৃঙ্খলার সমন্বয় এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক নীতির পাশাপাশি সদস্যদের মধ্যে সরকারি ও সামাজিক সম্পর্কের সমন্বয় জড়িত থাকবে,’ এই বছর জুড়ে APEC বৈঠকগুলি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক বিষয়গুলির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে স্থায়িত্ব, ডিজিটালাইজেশন, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, বাণিজ্য সুবিধা, জ্বালানি নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় সহযোগিতাকে গভীরতর করার এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি পরিচালনা করার বিষয়ে চীনের প্রধান প্রস্তাবগুলোকে সম্পূর্ণভাবে তুলে ধরতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং APEC নেতাদের আসন্ন বৈঠকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেবেন। ঝাং ইয়েফেই আরও বলেছেন, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বক্তৃতায় একটি অংশীদারিত্বমূলক ভবিষ্যতসহ (with a shared future) এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি আঞ্চলিক সম্প্রদায় গড়ে তোলার পক্ষে কথা বলতে পারেন, যা পারস্পরিক আস্থা, অন্তর্ভুক্তি এবং বিজয়ী সহযোগিতা সমন্বিত আঞ্চলিক অংশীদারিত্বকে আরও গভীরতর করতে পারে। একটি বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের বৈশ্বিক শৃঙ্খলার জন্য শি জিন পিং একটি ভাগীদার ভবিষ্যতসহ (with a shared future) তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি বিশদভাবে বর্ণনা করতে পারেন, যার মধ্যে রয়েছে একটি নতুন ধরণের অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের প্রচার, শান্তিপূর্ণ বিকাশের পথ গ্রহণ, সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতার চর্চা এবং মানবজাতির সাধারণ মূল্যবোধকে এগিয়ে নেওয়া, যা APEC-এর চেতনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। সেই সঙ্গে APEC ভূক্ত সকল সদস্য রাষ্ট্রের উচিত পণ্য, শ্রমিক তথা শ্রম ও পুঁজির অবাধ প্রবাহ এবং সরকার ও জনগণের মধ্যে আদান-প্রদানের অধিকতর উন্নতির পরিপ্রেক্ষিতে সর্বসাধারণের স্বার্থ অনুসন্ধান করা। এই বছরের সভায় APEC-এর ভিশন-২০৪০’ বাস্তবায়নের জন্য APEC সদস্যরা তাদের প্রয়াস অব্যাহত রাখবে উল্লেখ করে, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন গং বলেন, ‘এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের জন্য এখনও জায়গা রয়েছে সেই ভিশন অর্জনের ক্ষেত্রে নেতৃত্বের ভূমিকা প্রদান করার।’ জন আরও বলেন, ‘আমাদের খুব কৃতজ্ঞ এবং ভাগ্যবান হওয়া উচিত যে এই অঞ্চলটি একেবারে শান্তিপূর্ণ। আমাদের এখানে শান্তি বজায় রাখা এবং বেগবান অর্থনৈতিক বিকাশের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। কারণ, এই অঞ্চলটি এই মুহূর্তে অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণবন্ত, এবং আমি মনে করি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সত্যিই একত্রে কাজ করা উচিত।’ এপেক নেতাদের বৈঠকে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি শি জিনপিং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গেও দেখা করবেন। বিশ্ববাসীর বহু প্রত্যাশিত এই বৈঠকটি এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন বিশ্বের দুটি প্রধান শক্তি সাম্প্রতিক মাসগুলিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তরে যোগাযোগ পুনরায় শুরু করেছে এবং ঘন ঘন পারস্পরিক আলোচনা বজায় রেখেছে। চীনের ভাইস প্রিমিয়ার হে লাইফং সান ফ্রান্সিসকোতে মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি জ্যানেট ইয়েলেনের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন। বেইজিংয়ে তাদের জুলাইয়ে আলোচনার পর চার মাসের মধ্যে তারা দ্বিতীয়বার মুখোমুখি হয়েছেন। দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে চীনা পক্ষ হয়তো নতুন কিছু বলতে পারে, কিন্তু চীন-মার্কিন সম্পর্কের বিকাশের ক্ষেত্রে তিনটি নীতিসম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। যা ইতোপূর্বে শি জিন পিং দ্বারা প্রস্তাবিত, যথা-‘পারস্পরিক শ্রদ্ধা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং সকলে জয়ী হওয়ার সহযোগিতা (win-win cooperation) ‘এই নীতিগুলি যথেষ্ট বিস্তৃত এবং সত্যিই চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলিকে আঘাত করে। কারণ দুটি দেশকে একে অপরের স্বতন্ত্র জাতীয় অবস্থাকে সম্মান করতে হবে, শান্তিপূর্ণ অস্তিত্বের নীচের লাইনকে সমুন্নত রাখতে ঝুঁকিগুলি পরিচালনা করতে হবে এবং এর ভিত্তিতে সাধারণ স্বার্থ অনুসন্ধান করতে হবে।’ এই বৈঠকে দুই পক্ষ কূটনৈতিক অগ্রগতি ঘটালেও চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের দ্বান্দ্বিকতা এমনই যে, দুই দেশের মধ্যে কাঠামোগত দ্বন্দ্ব এখনও বিদ্যমান থাকায় সম্পর্কের বরফ ভাঙা দূরবর্তী ব্যাপার। চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার কর্মকাণ্ড বন্ধ করেনি। যেমন, চীনা কোম্পানিগুলোর ওপর লাগাতার নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং অক্টোবরে চীনের সামরিক বিকাশের ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা। যে দ্বিপাক্ষিক দ্বন্দ্বমূলক সম্পর্কের বরফ ভাঙার বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চীন এবং চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে তার অবস্থান পরিবর্তন করার মধ্যে নিহিত রয়েছে। ‘উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি এখনও চীনের উত্থানকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখে এবং তারপর চীনকে তথাকথিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগী হিসাবে বিবেচনা করে, তবে চীনের সবল-সমর্থ বেগবান বিকাশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের জন্য যে সুযোগগুলি সামনে এনেছে তা অতলে হারিয়ে যাবে।’ ‘অনেক জায়গায় সংঘাতের আগুন বিদ্যমান রয়েছে। তথাপি একটি স্থিতিশীল ও স্বাস্থকর চীন-মার্কিন সম্পর্কের বিকাশ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং বিশ্বের জন্য তথা অত্র অঞ্চলের জন্য সবচেয়ে বড় শান্তিপূর্ণ লভ্যাংশ হতে পারে।’