বিশ্বকাপের আয়নায় হতশ্রী বাংলাদেশ

Posted: 19 নভেম্বর, 2023

ক্রীড়া প্রতিবেদক : অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ দিয়ে যেন শেষ হলো ‘অত্যাচার।’ অনেক আশা নিয়ে, অনেক বছর যে টুর্নামেন্টের দিকে তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশ, এক সময়ে মনে হচ্ছিল সেটা দ্রুত শেষ হলেই যেন বাঁচেন ক্রিকেটাররা। এই পরিস্থিতি ডেকে এনেছিলেন তারা নিজেরাই। শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার ‘ছোট’ লক্ষ্য কোনোমতে পূরণ হলেও ‘বড়’ লক্ষ্যের ধারেকাছে যেতে নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে সাকিব আল হাসানের দল। কী ছিল বাংলাদেশের লক্ষ্য? অন্তত চার-পাঁচটি জয়। অনেকেই দেখছিলেন সেমি-ফাইনালের স্বপ্ন। শিরোপার স্বপ্নও হয়তো দেখেছেন কেউ কেউ। কিন্তু সাকিবরা টুর্নামেন্ট শেষ করেছেন কেবল দুটি জয় নিয়ে। শ্রেয়তর রান রেটে শ্রীলঙ্কা ও নেদারল্যান্ডসকে পেছনে ফেলে হয়েছেন অষ্টম। কোনোমতে জায়গা করে নিয়েছেন ২০২৫ সালের আট দলের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। ২০ বছরের মধ্যে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ। গত চার আসরে অন্তত তিনটি করে জয় ছিল তাদের ঝুলিতে। ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগে তৃতীয় হওয়া দলটির স্বপ্ন দেখার যৌক্তিক কারণও ছিল। টুর্নামেন্টের অভিজ্ঞ দলগুলোর একটি বাংলাদেশ। কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরুর আগে নিজেরাই নিজেদের কাজটা কঠিন করে ফেলেন তারা। হুট করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন সেই সময়ের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। পরে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তিনি ক্রিকেটে ফিরলেও টিকতে পারেননি বিশ্বকাপ দলে। টুর্নামেন্টে খেলতে ভারতে যাওয়ার দিন একটি টেলিভিশনে সাকিবের সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, পর্দার আড়ালের চিত্রটা খুবই অস্বস্তিকর। দেশের সেরা ওপেনারকে যে ভাষায় তিনি আক্রমণ করেন, তাতে এক দলে তাদের খেলা খুবই কঠিন। সেই সাক্ষাৎকারে সাকিব পুরো চাপ নিয়ে নেন নিজের কাঁধে। পরে টুর্নামেন্টে তার ব্যাটিং ও বোলিংয়ে ব্যর্থতায় সমালোচনা উচ্চকিত হয় আরও। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের টাইম আউটের ঘটনায় শেষ পর্যন্ত বিতর্ককে সঙ্গী করেই দেশে ফেরেন তিনি। গতিময় পেসার ইবাদত হোসেনের চোট বাংলাদেশকে ভুগিয়েছে বেশ। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে মাঝের ওভারের জন্য তিনিই ছিলেন সবচেয়ে বড় ভরসা। তার অনুপস্থিতির সঙ্গে তাসকিন আহমেদের চোট এলোমেলো করে দিয়েছে বোলিং আক্রমণকে। স্পিনেও ভালো করতে পারেননি সাকিব, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাসুম আহমেদ ও শেখ মেহেদি হাসানরা। ব্যাটসম্যানরা ছিলেন আগাগোড়াই ব্যর্থ। একটু লড়াইয়ের ছাপ ছিল কেবল মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে। কিন্তু প্রথম চার ব্যাটসম্যান রান না পাওয়ায় তার কাজটা ছিল মূলত ইনিংস পুনর্গঠন কিংবা ব্যবধান কমানোর। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পাওয়া ভিরেন্দার শেবাগ মনে করেন, বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভরাডুবির দায় মূলত ব্যাটসম্যানদের। তাদের নিদারুণ ব্যর্থতাতেই বাংলাদেশ এখনও ‘অর্ডিনারি’ দলই রয়ে গেছে। এই আসরের প্রেক্ষাপটে তার কথার বিরোধিতা করার পক্ষে খুব একটা যুক্তি নেই। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ এখনও পায়ের নিচে মাটি খুঁজে ফিরছে। কিন্তু ওয়ানডেতে এরই মধ্যে হয়ে উঠেছে সমীহ করার মতো দল। কিন্তু বিশ্বকাপে সেই ছাপ তারা রাখতে পারেননি। নিজেদের প্রিয় সংস্করণে ব্যর্থতায় ঘরোয়া ক্রিকেটের ঘাটতির জায়গাগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সমালোচনার একটা বড় জায়গায় আছে মিরপুরের উইকেট। বাংলাদেশের মূল ক্রিকেটর ভেন্যুর উইকেট কেমন আচরণ করবে সেটা নিয়ে সংশয়ে থাকেন এই মাঠে শতাধিক ম্যাচ খেলা ক্রিকেটাররাও। মূলত নিচ, মন্থর টার্নিং পিচই মেলে। যেখানে উইকেট পাওয়ার জন্য বোলারের খুব বেশি কিছু করতে হয় না। পিচই মূল কাজটা করে দেয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এমন পিচে খেলতে সমস্যা নেই। কিন্তু সমস্যা হলো ঘরোয়া ক্রিকেটের ম্যাচগুলোও হয় এমন পিচেই। চট্টগ্রাম, সিলেটের ভালো উইকেটে নিয়মিত খেলেন না তারা। যে কারণে ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ব্যাটিং, বোলিংয়ের অভ্যাস গড়ে উঠে না। জানেন না সেখানে কীভাবে খেলতে হবে। এই ব্যাপারটা বিশ্বকাপে খুব ভুগিয়েছে। কোনো কোনো মাঠে ওভার প্রতি ৬/৭ রানও হয়তো খরুচে বোলিং নয়। কিন্তু মিরপুরের বাস্তবতায় চার-পাঁচের বেশি রান দিলেই সেটা হয়ে যায় খরুচে। সেটা মাথায় থাকে বলেই হয়তো একটু রান বেশি দিলে অস্থির হয়ে যান বোলাররা। তাতে বোলিং হয়ে যায় আরও এলোমেলো। ভালো উইকেটে খেলার অভ্যাস না থাকায় ব্যাটসম্যানরাও বুঝে উঠতে পারেননি কীভাবে খেলবেন। সেভাবে মাসল মেমোরিও গড়ে উঠে না তাদের। এই কথাগুলো আগেও বিভিন্ন সময় সামনে এসেছে কিন্তু কোনোবারই গা করেনি বিসিবি। বিশ্বকাপে বিব্রতকর অভিজ্ঞতার পর হয়তো ভাবতে বাধ্য হতে পারে তারা।