বিশ্বকাপে ‘টাইমড আউট’ বাংলাদেশ ক্রিকেট

Posted: 12 নভেম্বর, 2023

ক্রীড়া প্রতিবেদক : শ্রীলঙ্কা ম্যাচে বেশ কিছু বিরল ঘটনার জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশ। আউট হয়ে ফেরার পর ডাগ আউটেই সাকিব আল হাসানের কাছ থেকে প্রাপ্য ‘ঝারি’ খেয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দলকে জিতিয়ে ফেরার পর সীমানা দড়ির কাছে বাকিটা বুঝে নিয়েছেন তাওহিদ হৃদয়। মূলত তার পরামর্শেই বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হয়েছিলেন মিরাজ। যেটা করতে একদম না করেছিলেন সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেছিলেন, হৃদয় মারবে, মিরাজ দেখে খেলবে। সাধারণত এই কথাগুলো অধিনায়ক বলেন, ড্রেসিংরুমে। সবার আড়ালে। কিন্তু যুদ্ধের মেজাজে থাকা সাকিব সেগুলো বলে দিলেন ক্যামেরার সামনেই। এই সবের আগেই অবশ্য সবচেয়ে বড় বিরল ঘটনা ঘটিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রায় দেড়শ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো ব্যাটসম্যানকে ‘টাইমড আউট’ করে। শ্রীলঙ্কার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস নির্ধারিত ২ মিনিটের মধ্যে প্রথম বল খেলার জন্য মুখোমুখি না হওয়াতেই এই বিপত্তি। আইনের মধ্যে থাকায় তার বিরুদ্ধে টাইমড আউটের আপিল করে সফল হন সাকিব। নিশ্চিতভাবেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রথম বল খেলার জন্য তৈরি হতে না পারা প্রথম খেলোয়াড় ম্যাথিউস নন। বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচেই মুজিব উর রহমানের ক্ষেত্রে দেরি হয়েছিল এর চেয়েও বেশি। কিন্তু তখন আউটের আবেদন করেনি বাংলাদেশ। খুব মৌলিক একটা ব্যাপারে ভুল করেছিলেন ম্যাথিউস। নতুন হেলমেট আনার আগে সাকিব কিংবা দুই আম্পায়ারের কাউকে কিছু বলেননি তিনি। ম্যাচের পরেও ভুল করেছেন তিনি। নিজের আউটের জন্য তিনি কাঠগড়ায় তুলেছেন আম্পায়ারদের। তাদের একজন শুরুতেই সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, প্রথম বল খেলার জন্য তৈরি হতে ম্যাথিউসের হাতে কেবল ৩০ সেকেন্ড সময় আছে। তাতেও খুব একটা গা করেননি লঙ্কান অলরাউন্ডার। ম্যাচ শেষে সাকিব এবং বাংলাদেশ দল সম্পর্কে কথা বলেন খুবই আপত্তিকর ভাষায়। টাইমড আউট ক্রিকেটের বাইরের কিছু নয়। কোনো ধরনের চুরিও নয়। নিয়মের ভেতরে থাকা আউটের জন্য প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাত না মেলানো, তাদের সম্পর্কে আজেবাজে কথা বলাও কোনো স্পোর্টসম্যানশিপ নয়। এর বাইরে ম্যাথিউসের ভাই একটি প্রতিক্রিয়ায় বলেন, শ্রীলঙ্কায় গেলে পাথর ছুঁড়ে মারা হবে সাকিবকে! এসব ঘটনা চাপ পড়ে গেছে টাইমড আউটের প্রেক্ষাপট। ১৪৬ বছরে যে আউটের কথা বিবেচনা করেননি কোনো অধিনায়ক, সেটা কেন করতে গেলেন সাকিব? ম্যাচ শেষের প্রতিক্রিয়ায় সাকিব বলেন, তার মনে হয়েছে তিনি যুদ্ধে আছেন। আর যুদ্ধে দলকে জেতাতে নিয়মের মধ্যে থাকা সুযোগ তিনি নিতে চেয়েছেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরুর পর টানা ছয় ম্যাচ হেরে সাকিবরা নিজেদের নিয়ে এসেছিলেন এই পরিস্থিতিতে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখতে লঙ্কানদের বিপক্ষে জয়ের কোনো বিকল্প ছিল না। জাহাজডুবি মানুষ যেমন খড়কুটো ধরে জীবন বাঁচাতে চায়, সাকিবও ভীষণ অপ্রচলিত এক আউট দিয়ে সেই চেষ্টাই করেছেন। ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টাইমড আউট হয়েছেন ম্যাথিউস। বাংলাদেশের পর নিউ জিল্যান্ডরে বিপক্ষেও হেরে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা শঙ্কায় পড়ে গেছে শ্রীলঙ্কার। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচে বড় ব্যবধানে না হারলে হয়তো ২০২৫ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় ওই টুর্নামেন্টে জায়গা করে নেবে বাংলাদেশ। কিন্তু চলমান বিশ্বকাপ দিয়ে সাকিবের দল যে বাস্তবতা জানল, বিশ্বকাপের আয়ানায় নিজেদের যে অবস্থা জানল তাতে কি বাংলাদেশের ক্রিকেট নিজেই টাইমড আউট হয়ে যায়নি? একেবারে তৃণমূলে গিয়ে ক্রিকেটকে ঢেলে সাজানোর বার্তা পায়নি? জেগে উঠার বার্তায় কি ঘুম ভাঙবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের?