২৫ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির আন্দোলন দুর্বার করতে হবে
Posted: 21 মে, 2023
একতা প্রতিবেদক :
দেশের শ্রম মন্ত্রণালয় থাকলেও সেটা শ্রমিকদের স্বার্থে কাজ না করে মালিকের স্বার্থ রক্ষা করছে। এই মন্ত্রণালয় শ্রম মন্ত্রণালয় হলেও প্রকৃত অর্থে তা মালিক মন্ত্রণালয়ে পরিণত হয়েছে- বলেছেন সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
গত ১৯ মে রাজধানীর পুরানা পল্টনস্থ মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের উদ্যোগে আঞ্চলিক কমিটির নেতৃবৃন্দদের নিয়ে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় কর্মশালায় আলোচনায় তিনি এ কথা বলেছেন।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষ, সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান শামীম। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহ-সভাপতি মাহাবুব আলম, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের উপদেষ্টা আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, সহ-সভাপতি জলি তালুকদার, জিয়াউল কবীর খোকনসহ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম শ্রমিক আন্দোলন ও বর্তমান রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করার সময় বলেন, বর্তমানে দেশ ব্যবসায়ীদের স্বার্থে পরিচালিত হচ্ছে। দেশের ৯৫ ভাগ শ্রমিক মেহনতি মানুষ আজ শোষণের শিকার। এখান থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হলো শ্রমিক শ্রেণির রাষ্ট্র কায়েম করা।
মালিকপক্ষ যেন ১০ শতাংশের বেশি মুনাফা নিতে না পারে এবং মুনাফার অংশ যাতে শ্রমিককের মাঝে বণ্টন করা যায় সেজন্য দেশে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠনের জন্য একতাবদ্ধ শক্তিশালী শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
মাহাবুব আলম বলেন, সরকার লসের কথা বলে পাটকল, চিনিকল বন্ধ করে দিয়েছে। এতে বেকার বেড়েছে সেই সাথে চিনিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম আজ সাধারণ মানুষের লাগালের বাইরে। সরকার যে উন্নয়নের কথা বলছে, তা দেশের বড়লোকদের। শ্রমিকশ্রেণির ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। এই থেকে মুক্তি পেতে হলে শ্রমিকদের ক্ষমতায় যেতে হবে। যার জন্য দরকার বৃহত্তর শ্রমিক আন্দোলন।
আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন গার্মেন্ট সংগঠনের ইতিহাস ও বর্তমান করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, শ্রমিকদের সম্পৃক্ততা ছাড়া বাংলাদেশের কোনো জাতীয় আন্দোলন সফলতা পায়নি। শ্রমিকরা তাদের অধিকার সবসময় আন্দোলনের মাধ্যমে আদায় করেছেন। বর্তমানে শ্রমিকরা অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করেন। শ্রমিকরা কর্পোরেট দাসে পরিণত হয়েছে। এখান থেকে মুক্তি পেতে হলে শ্রমিকদের নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের দাবি আদায় করতে হবে।
জলি তালুকদার বলেন, মালিকরা সবসময় শ্রমিকদের শোষণ করে আসছে। তারা মিথ্যা বুঝিয়ে শ্রমিকদের দ্বিধাবিভক্ত রাখতে চায়। এজন্য শ্রমিকদের সংগঠিত থাকতে হবে। যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে। শ্রমিক সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে।
জিয়াউল কবীর খোকন বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন এখনো অধিকাংশই মালিকদের পক্ষে। যেটুকু শ্রমিকদের জন্য রয়েছে সেটাও মালিকরা দিতে চাননা। এজন্য শ্রমিকদের শ্রম আইন নিয়ে সচেতন হতে হবে, শ্রম আইনে তাদের অধিকার সম্পর্কে জানতে হবে। যাতে মালিকরা ঠকাতে না পারে।
সভাপতির বক্তব্যে মন্টু ঘোষ বলেন, আমরা শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা দাবি করেছি। কিন্তু রাষ্ট্রটা এতোটাই স্বৈরতান্ত্রিক যে, তারা শ্রমিকের ন্যায্য মজুরির দাবির কথাও শুনতে চায় না। মজুরি বৃদ্ধির সাথে সাথে শ্রমিকের জন্য রেশনিং, চিকিৎসা এবং বাসস্থানের অধিকার নিশ্চিত করে শ্রমিকের সাথে মানবিক আচরণ করা রাষ্ট্রের কর্তব্য হওয়া উচিত। অবিলম্বে মজুরি বোর্ড গঠন করে গার্মেন্ট শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা বাস্তবায়ন করতে হবে এবং মজুরি বোর্ডে প্রকৃত শ্রমিক প্রতিনিধির প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। যার গুরুদায়িত্ব গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের উপরে। সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দকে শ্রমিকদের মজুরি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে এবং এর জন্য আরও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে ও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।
ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা বাস্তবায়ন করতে গার্মেন্ট শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।