পল্টন হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য নায়কদের চিহ্নিত করে বিচার করতে হবে
Posted: 22 জানুয়ারী, 2023
একতা প্রতিবেদক :
পল্টন হত্যাকাণ্ড দিবস উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
বগুড়া : বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) বগুড়া জেলা কমিটির উদ্যোগে ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি ঢাকায় পল্টন ময়দানে কমিউনিস্ট পার্টির মহাসমাবেশে বোমা হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ২২ তম বার্ষিকী উপলক্ষে গত ২০ জানুয়ারি সিপিবি বগুড়া জেলা কমিটি সাতমাথায় এক বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। সিপিবি বগুড়া জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক এনামুল হক মুকুলের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি বগুড়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ফরিদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হরি-শংকর সাহা, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ কুমার পাল, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সাজেদুর রহমান ঝিলাম, সদর উপজেলা কমিটির সভাপতি শাহনিয়াজ কবির খান পাপ্পু, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য লিয়াকত আলী কাক্কু, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন বগুড়া জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান আহমেদ রবিন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বগুড়া জেলা সংসদের সভাপতি ছাব্বির আহম্মেদ রাজ প্রমুখ।
বিক্ষোভ সমাবেশে বলেন, পল্টন হত্যাকান্ডে শহীদ হিমাংশু মন্ডল, আব্দুল মজিদ, মোক্তার হোসেন, বিপ্রদাস রায়ের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শোষণ মুক্ত সমাজ ও মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ বিনির্মাণে জোট মহাজোটের রাজনীতির বাহিরে বাম বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির সমাবেশ গড়ে তুলার প্রক্ত্যয় ব্যক্ত করেন। বক্তারা পল্টন হত্যাকাণ্ডে দায়সারা চার্জশিট ও বিচার হয়েছে বলে দাবি করেন। বক্তারা পল্টন বোমা হামলায় হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে হোতাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। বিক্ষোভ সমাবেশে অবিলম্বে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি আইন করে নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।
সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি বগুড়া সদর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অখিল পাল।
গাইবান্ধা : পল্টন হত্যাকাণ্ড দিবসে গাইবান্ধায় সমাবেশ ও মিছিল করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে কমিউনিস্ট পার্টির মহাসমাবেশে বোমা হামলা করা হলে শহীদ হন কমরেড হিমাংশু, মজিদ, হাসেম, মোক্তার ও বিপ্রদাস। আহত হন অনেক কমরেড। গত ২০ জানুয়ারি সকাল ১১টায় সিপিবি গাইবান্ধা জেলা কার্যালয় চত্বরে প্রবীণ কমিউনিস্ট কমরেড সুভাষ শাহ রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি অ্যাড. শাহাদত হোসেন লাকু, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল, সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মুরাদ জামান রব্বানী, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গোলাম রব্বানী মুসা, ক্ষেতমজুর নেতা ময়নুল কবীর মন্ডল প্রমুখ।
বক্তারা বোমা হামলায় শহিদ কমরেডদের স্মরণ করে বলেন, ২০০১ সালে সিপিবি’র মহাসমাবেশে বোমা হামলা ছিল গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। এর মাধ্যমে দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করা, প্রগতির চাকা বন্ধ করে দেয়া। এই ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত আছে। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের হাত ধরে তা অব্যাহত আছে। অর্থ পাচার, ভোটাধিকার হরণ, গণতন্ত্র ধ্বংস করছে তারাই।
আরো বলেন, বর্তমান দুঃশাসন হটাতে হবে, ব্যবস্থার বদল করতে হবে আর বাম প্রগতিশীল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ, দেশের সম্পদ, গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে রক্ষা করতে হবে।
পরে একটি লাল পতাকা মিছিল শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ১নং রেল গেইটে এসে শেষ হয়।
চট্টগ্রাম : বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি অধ্যাপক অশোক সাহা বলেছেন, ২০০১ সালে ঢাকার পল্টনে সিপিবির মহাসমাবেশে বোমা মেরে আমাদের অনেক নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ড ইতিহাসের এক রক্তাক্ত অধ্যায়। গত ২০ জানুয়ারি বিকেলে নগরীর সিনেমা প্যালেস মোড়ে পল্টন হত্যা দিবসে সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার উদ্যোগে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। পাকিস্থানপন্থিরা দেশের রাজনৈতিক লড়াই সংগ্রামে হামলা চালাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পল্টন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আমাদের দুইশোজনের বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ হত্যাকাণ্ডের পিছনে রয়েছে মৌলবাদী গোষ্ঠী যারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিশ্বাস করে না। ১৯৭১ সালে লাখো মানুষের বুকের রক্তের বিনিময়ে যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে তখন তো আমরা এটা আশা করিনি। আমরা আশা করিনি ওই পাকিস্থানপন্থিরা আমাদের দেশের রাজনৈতিক লড়াই সংগ্রামে হামলা চালাবে।’
সিপিবি মহাসমাবেশে বোমা মেরে মানুষ মারার ঘটনা নিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাসি-তামাশা করেছিলেন মন্তব্য করে সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মৃণাল চৌধুরী বলেন, পল্টনে সিপিবির সমাবেশে যখন নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে তখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল। আমরা তৎকালীন সরকার প্রধান শেখ হাসিনার সাথে দেখা করি। ঘটনার সব ভিডিও চিত্র গুলো দিই। কিন্তু তিনি খুব রহস্যজনকভাবে হাস্যরসিকতায় বলেছিলেন, বিপ্লব করতে হলে তো অনেক রক্ত ত্যাগ করতে হয়। মানে এটা হাসি-তামাশার খেলা। খুলনা থেকে আসা আমাদের পার্টির সদস্য হিমাংশু মন্ডলের ব্যাগের মধ্যে নাকি বোমা ছিল। ঐ বোমা থেকেই বিস্ফোরণ হয়েছে।
জামাত, হেফাজতকে আওয়ামী লীগ সরকার লালন পালন করছে দাবি করে এসময় তিনি বলেন, জামাত, হেফাজত, হরকাতুল জিহাদ কেউই স্বাধীনতার পক্ষে নয়। তারা প্রগতির পক্ষেও নয়। তারা অসাম্প্রদায়িকতার পক্ষেও না। আপনারাই এদেরকে লালন পালন করছেন। আপনার দলের মধ্যেই এরা ঢুকে গেছে। আপনি রক্ষা করছেন হেফাজতকে। এরা কোনোদিন আপনাদেরকে রক্ষা করবে না। আপনারা প্রগতির পক্ষে যান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে যান, আপনাদেরকে কোনোদিন তারা রক্ষা করবেনা। এটা আপনাদের মনে রাখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমরা বাস্তবায়ন করতে চাই বলে আমাদের উপরে হামলা হয়েছে।
সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি অশোক সাহার সভাপতিত্বে ও সহ-সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক উত্তম চৌধুরী, সদস্য সীতারা শামীম, রেখা চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুল আবসার, যুবনেতা রবি শংকর সেন নিশান, ছাত্রনেতা শুভ দেবনাথ।
খুলনা : বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) খুলনা জেলা কমিটির উদ্যোগে গত ২০ জানুয়ারি শুক্রবার পল্টন হত্যাকাণ্ডের ২২তম বার্ষিকী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হয়। পল্টন হত্যাকাণ্ডে শহীদ কমরেড হিমাংশু মণ্ডলের সমাধিস্থলে বটিয়াঘাটা বসুরাবাদে সকাল ৯টায় শহীদদের স্মরণে স্মৃতিসৌধের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয়। বিকেল ৩টায় কেন্দ্রীয় সদস্য ও জেলা সভাপতি মনোজ দাশের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় সদস্য ও খুলনা জেলা সাধারণ সম্পাদক এস এ রশীদের পরিচালনায় এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের শুরুতে কমরেড হিমাংশু মণ্ডলের সমাধিতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), যুব ইউনিয়ন ও ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন গণসংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয়। সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন সিপিবি নেতা ও বটিয়াঘাটা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই গাইন, সিপিবি উপজেলা সভাপতি অশোক সরকার, ডুমুরিয়া উপজেলা সভাপতি চিত্তরঞ্জন গোলদার, দাকোপ উপজেলা সভাপতি কিশোর রায়, খুলনা মহানগর সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. নিত্যানন্দ ঢালী, রূপসা উপজেলা সভাপতি শেখ আব্দুল হালিম, জেলা সদস্য সমীরণ গোলদার, প্রকৌশলী সুখেন রায়, শাহিনা আক্তার, প্রীতিষ মণ্ডল, অ্যাড. সন্দীপ রায়, সুব্রত কু-ু, টিইউসি জেলা সভাপতি এইচ এম শাহাদাৎ, শ্রমিকনেতা রঙ্গলাল মৃধা, সোনাডাঙ্গা থানা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নিতাই পাল, খালিশপুর থানা সভাপতি হুমায়ুন কবির, মহানগর সহ-সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান রাসেল, ডুমুরিয়া উপজেলা সাধারণ সম্পাদক পূর্ণেন্দু বিশ্বাস, বটিয়াঘাটা উপজেলা সাধারণ সম্পাদক নীহার গোলদার, সিপিবি নেতা ফজলুল হক, নারায়ণ জোতদার, শহীদ হিমাংশু মণ্ডলের ছেলে কল্লোল মণ্ডল, যুবনেতা ধীমান বিশ্বাস, আফজাল হোসেন রাজু, মৌফারশের আলম লেনিন, রামপ্রসাদ রায়, মিঠুন মণ্ডল, আকবর হোসেন, ছাত্রনেতা সৌমিত্র সৌরভ, শাইমা আলী প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ২০০১ সালে পল্টনে সিপিবি যখন দ্বি-দলীয় মেরুকরণের বাইরে সমাবেশে বাম বিকল্প গড়ার আহ্বান করেছিল তখনই সাম্প্রদায়িক শক্তি বোমা বর্ষণ করে শুধু সিপিবি নয় বাম প্রগতিশীল শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল, কিন্তু কমিউনিস্টদের বোমা মেরে হামলা করে নিশ্চিহ্ন করা যায় না। ব্রিটিশ আমল থেকে যারা কমিউনিস্টদের ধ্বংস করতে চেয়েছিল, তারাই নিশ্চিহ্ন হয়েছে। বামপন্থীরা কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়না আবার তাদের উপর হত্যা-জুলুম-নির্যাতনকারীকে ছেড়ে দেয়না। বক্তারা আরও বলেন, বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে মানুষ নানা সমস্যায় দিশেহারা।
সমাবেশ শেষে বসুরাবাদ হতে পদযাত্রা শুরু করে বটিয়াঘাটা বাজারে এসে শেষ হয়।
রাজশাহী : পল্টন হত্যাকাণ্ডের শহীদদের স্মরণে গত ২০ জানুয়ারি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি( সিপিবি) রাজশাহী জেলা ও মহানগরের উদ্যোগে জেলা পার্টি অফিসে বিকেল ৫টায় এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সিপিবি মহানগরের সভাপতি হুমায়ুন রেজা রেনুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অজিত মন্ডলের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিবি জেলা সাধারণ সম্পাদক আফতাব হোসেন কাজল, মাহমুদ হোসেন, রতন ভট্টাচার্য, উদীচী কেন্দ্রীয় সহ- সভাপতি ও জেলা সভাপতি জুলফিকার আহমেদ, শিক্ষকনেতা অসিত সাহা, যুব ইউনিয়ন মহানগরের সভাপতি অসীম সরকার লিটন, সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান জিমি, সাবেক ছাত্রনেতা হাফিজ উদ্দিন পিন্টু প্রমুখ।
বক্তাগন শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে বেগবান করার আহ্বান জানান এবং ২০ জানুয়ারি ২০০১ এ পল্টন হত্যাকাণ্ডের শহীদদের প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।