বেতন বৃদ্ধির দাবিতে পর্তুগালে
স্কুল ছেড়ে সড়কে শিক্ষকরা
Posted: 22 জানুয়ারী, 2023
একতা বিদেশ ডেস্ক :
বেতন বৃদ্ধি ও উন্নত কর্মপরিবেশের দাবিতে লাখো শিক্ষক ও স্কুলকর্মী রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে।
গত ১৪ জানুয়ারি শিক্ষক, স্কুলকর্মীদের এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির আয়োজক ছিল ইউনিয়ন অব অল এডুকেশন প্রফেশনালস। বিক্ষোভকারীরা ব্যানারে তাদের দাবি লিখে এনেছিলেন, শিক্ষামন্ত্রী জোয়াও কস্তার পদত্যাগ চেয়ে স্লোগান দিয়েছেন।
ইউরোপের দেশটিতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর চেয়ে বড় বিক্ষোভ আর দেখা যায়নি; এ কর্মসূচিকে দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারের জন্যও বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে, বলেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
পর্তুগালে সর্বনিম্ন বেতনকাঠামোতে থাকা শিক্ষকরা প্রতিমাসে এক হাজার ১০০ ইউরো (এক হাজার ২০০ ডলারের কাছাকাছি) বেতন পান; শীর্ষসারির অনেক শিক্ষকেরই আয় থাকে মাস প্রতি ২ হাজার ইউরোর নিচে।
এখন জীবনযাপনের যে ব্যয়, তাতে এই বেতন ‘খুবই কম’, বলছেন বিক্ষোভকারীরা।
‘শিক্ষকরা ন্যায্য বেতন চান, কেননা আমরা সারাজীবন ধরে কাজ করেছি, কখনোই দুর্নীতি করিনি, চুরি করে কখনোই বাজে নজির স্থাপন করিনি, দুর্ভাগ্যজনকভাবে যেমনটা রাজনীতিকদের দিক থেকে হয়েছে,’ বিক্ষোভ শুরুর আগে বলেন ইতিহাসের শিক্ষক ৬২ বছর বয়সী মারিয়া দুয়ার্তে।
আন্তোনিও কস্তা নেতৃত্বাধীন সোশালিস্টরা বছরখানেক আগের নির্বাচনে পার্লামেন্টে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় বসলেও এরপর থেকে বেশ ঝামেলার মধ্য দিয়েই যেতে হচ্ছে তাদের।
অতীত অসদাচরণ ও প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকাণ্ডের অভিযোগে এরই মধ্যে তাদের ১৩ মন্ত্রী ও রাজ্য সম্পাদককে দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছে।
‘যে নেতারা এই বিক্ষোভ দেখছেন, পরবর্তীতে কী পদক্ষেপ নেবেন তারা সে বিষয়ে খুব সন্তর্পণে চিন্তা করাটা তাদের জন্য ভালো হবে, কেননা আমরা এই কর্মসূচির প্রতিক্রিয়া দেখতে চাই, গুরুতর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এমনটা দেখতে চাই আমরা,’ বলেছেন গণিতের শিক্ষক এইতর মাতোস।
৪৭ বছর বয়সী এই ব্যক্তি জানান, শিক্ষকদের আয় এখন ‘নিয়মিত কমছে’ এবং প্রায়ই তাদেরকে এমন স্কুলে নিয়োগ দেওয়া হয়, যা তাদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে।
‘আমাদের সম্মান দিতে হবে। আমাদের যা সত্যিকারের প্রাপ্য তা দিতে হবে তাদেরকে, অল্প যা আছে আমাদের, তা তারা কেড়ে নিতে পারে না,’ বলেছেন বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের শিক্ষক ৫২ বছর বয়সী লুসিন্দা লোপেজ।
শিক্ষাখাতের দুর্দশায় শোক জানিয়ে বিক্ষোভকারীদের অনেককেই কালো পোশাক পরতেও দেখা গেছে। সরকার তাদের পরিস্থিতির উন্নতিতে কিছুই করছে না বলেও অভিযোগ তাদের।
বেতন বাড়ানোর দাবিতে পর্তুগালের শিক্ষকরা গত বছরের ডিসেম্বর থেকেই একের পর এক ধর্মঘট করে যাচ্ছিলেন। তাদের ধর্মঘটের কারণে অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।
এতে ক্ষুব্ধ শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, কিছু শিক্ষককে ক্লাসে ফেরাতে তিনি ডিক্রি জারির কথাও ভাবছেন।
একই দাবিতে তারা ১৬ জানুয়ারি ফের রাস্তায় নেমেছেন তারা। তবে এবার তাদের সঙ্গে শামিল হয়েছেন ছাত্র/ছাত্রী এবং অভিভাবকগণ।
রাজধানীর একটি স্কুলের শিক্ষক আন্দ্রে জানান, শিক্ষকদের এই সমস্যাগুলো অনেক পুরোনো প্রতিবছর সরকার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা কখনোই বাস্তবায়ন হয় না, বর্তমানে আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে তাই আমরা রাস্তায় নেমেছি, ছাত্র/ছাত্রী এবং অভিভাবকরাও আমাদের সঙ্গে রয়েছেন।
অভিভাবকদের পক্ষ থেকে সন্তানের পড়ালেখায় বিপত্তি বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হলেও তারা শিক্ষকদের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন তবে, সন্তানদের দিনের পর দিন ক্লাস বিরতি তাদেরকে কিছুটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করছে। স্থানীয় এবং প্রবাসী বাংলাদেশি অভিভাবকগণ একই অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন।