ধুলায় নাকাল রাজধানী

Posted: 21 নভেম্বর, 2021

একতা প্রতিবেদক : বায়ুদূষণের জন্য রাজধানী ঢাকা এখন বিশ্বের মধ্যে আলোচিত শহর। প্রায়ই বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানে ঢাকার নাম উঠে আসছে। এর মধ্যেই ধুলায় ধূসর রাজধানী। রাজপথ থেকে অলিগলি সর্বত্রই উড়ছে ধুলা। সরকারি হিসাবেই রাজধানীর বাতাসে ধুলোবালি সহনীয় মাত্রার তিন গুণ বেশি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট ও ইনস্টিটিউট ফর হেলথ ম্যাট্রিকস অ্যান্ড ইভালুয়েশনের গবেষণায় জানা যায়, বিশ্বে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে দিল্লির পরই ঢাকার অবস্থান। দূষিত বায়ুর কারণে বেড়ে গেছে শ্বাসতন্ত্রের নানা রোগ। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা কেটে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিআরটি, ওয়াসার পানি সরবরাহ লাইন নির্মাণ, ড্রেনেজ নির্মাণসহ চলছে নানাবিধ উন্নয়নমূলক কাজ। ফলে পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে রাজধানীর সর্বত্রই এখন ধুলায় ধূসর। আগারগাঁওয়ে অবস্থিত পরিবেশ অধিদফতরের ভবনের থেকে আধা কিলোমিটারের মধ্যে আগারগাঁও এলাকা। চলছে মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ। ধুলা যেন না উড়ে, সে জন্য কোনো ব্যবস্থাই নেই। অথচ এ ব্যাপারে নীরব পরিবেশ কর্মকর্তারা। খোঁড়াখুঁড়ির প্রভাবে রাস্তা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গে এ রাস্তায় বেড়েছে ধুলার উপদ্রব। প্রচণ্ড ধুলায় নাস্তানাবুদ এ অঞ্চলের বাসিন্দারা। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে অফিসগামী, স্কুলগামী, শিক্ষার্থীসহ নিম্ন আয়ের মানুষ। আর ধুলার একই অবস্থা উত্তরা হাউস বিল্ডিং থেকে দিয়াবাড়ীর রাস্তা পর্যন্ত। তবে মেট্রোরেলের কাজের প্রভাব বেশি পড়েছে দিয়াবাড়িতে। এ অঞ্চলে ধুলা বেড়েছে ভয়াবহ আকারে। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে এখন ধুলার সঙ্গেই চলতে হচ্ছে ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, বাংলামোটর অঞ্চলের লোকজনকে। সেইসঙ্গে রামপুরা, নয়াপল্টন, পল্টনেও ধুলায় ধূসর হচ্ছে সবাই। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রাস্তা সংস্কারের কারণে নতুন করে ধুলার এলাকায় পরিণত হয়েছে মালিবাগ, শান্তিনগর, শাহজাহানপুর, রাজারবাগ অঞ্চল। এখানে গাড়ি চলাচলের সঙ্গে উড়ছে প্রচণ্ড রকমের ধুলা। আর এর দূষণের শিকার হচ্ছে পথচারীরা। আল-আমিন নামের এক ব্যক্তি, থাকেন মিরপুর শেওড়াপাড়ায়। তিনি বলেন, রাস্তায় বের হওয়া মানে ধুলার সঙ্গে যুদ্ধ করে চলাফেরা করা। মাস্কও কাজ করছে না। এ ছাড়া রাস্তার পাশে বাসা হওয়ায় জানালা খোলা থাকলেই ঢুকছে ধুলা। নোংরা হচ্ছে আসবাব, পোশাক। সরেজমিনে দেখা যায়, যেসব এলাকায় রাস্তাঘাট বেশি ভাঙাচোরা, সেখানে ধুলার মাত্রা তত বেশি। যেসব এলাকায় উন্নয়নকাজ চলছে, সেখানেও একই অবস্থা। নগরবাসী বলছেন, তারা রোজ ধুলার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হলেও তা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নেই। ধুলা নিয়ন্ত্রণে সড়কে পানি ছিটানোর উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। মান্ধাতা আমলের এ উদ্যোগ কাজে লাগবে কি-না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, শুক্রবার ছুটির দিন ফাঁকা সড়কেও ধুলার দাপট। পানি ছিটিয়েও পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। সম্প্রতি ঢাকার বায়ুদূষণ সম্পর্কে যৌথভাবে গবেষণা করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও ওয়ার্ক ফর বেটার (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্ট। ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের অ্যাডভোকেসি কর্মকর্তা মারুফ রহমান সমকালকে জানান, সহনীয় বায়ুদূষণ মাত্রা পিএম ২.৫। তবে ঢাকার বাতাসে তা ১৮২ থেকে ২৭২ শতাংশ বেশি। নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত শুস্ক মৌসুমে সহনীয় মাত্রার চেয়ে ৮ থেকে ১৩ গুণ বেশি দূষণীয় থাকে ঢাকার বাতাস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান অনুযায়ী, প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পিএম ২.৫ এর মাত্রা ১০ পর্যন্ত থাকাটা সহনীয়। তবে অধিদফতর বলছে, তারা মান ধরে ৬৫।যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার এক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা গত ১০ বছরে ৮৬ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধুলা দূষণের কারণে ঢাকায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে নানা সংক্রামক ব্যাধি। শীতকালে শ্বাসকষ্ট, যক্ষ্মা, হাঁপানি, চোখের সমস্যাসহ ফুসফুসে ক্যানসারের রোগীর সংখ্যা বেশি বাড়ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. আতিয়ার রহমান বলেন, ধুলা দূষণের কারণে নানা সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে নগরবাসীদের। তাছাড়া দূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা।