বিপ্লব অব্যাহত থাকবে, জনজোয়ারে জানালো কিউবা্

Posted: 18 জুলাই, 2021

একতা ডেস্ক : সূর্যের প্রথম আলোর সঙ্গেই পায়ে পায়ে চলতে শুরু করেছেন মানুষ। বিশাল বিশাল জাতীয় পতাকায় ঢাকা পড়েছে ব্যালকনি, বাড়ির ছাদ, পথঘাট। সূর্যের আলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ভিড়। ক্রমশ সেই ভিড় লাখো মানুষের জনস্রোতে পরিণত হয়েছে। হাতে হাতে তাদের হোসে মার্তি, ফিদেল, চে, রাউল, দিয়াজ-ক্যানালের ছবি। ১৭ জুলাই সকালে সেই জনজোয়ারে ভেসে গেছে হাভানার প্রাণকেন্দ্র। ‘বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক’, ‘ফিদেল দীর্ঘজীবী হোন’, ‘মুক্ত কিউবা দীর্ঘজীবী হোক’ স্লোগান স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে চারদিক। বহিঃশত্রুর ষড়যন্ত্র রুখতে আর ঘরের মধ্যে প্রতিবিপ্লবীদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে বিপ্লবকে রক্ষা করতে গোটা কিউবাই যেন এদিন নেমে এসেছিল রাস্তায়। গভীর রাত থেকেই হাভানার প্রাণকেন্দ্র চলে গিয়েছিল মানুষের দখলে। ১৭ জুলাই সকালে গলি থেকে রাজপথে শুধু মানুষের ঢল, যারা দলে দলে এগিয়ে চলেছিল সমাবেশের ময়দানে। সেই ভিড়ের মধ্যেই পথ করে মঞ্চে উঠেছেন রাষ্ট্রপতি মিগুয়েল দিয়াজ-ক্যানেল। কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরো, সেন্ট্রাল কমিটির অন্য সদস্যরা এবং গণসংগঠনের নেতারাও হাজির হয়েছেন। তারপর এসেছেন কিউবা বিপ্লবের অন্যতম সেনানী, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান রাউল কাস্ত্রো রুজ। উত্তাল হয়ে উঠেছে জনতা। স্লোগানে স্লোগানে, পতাকা নাড়িয়ে বিপ্লবের জয়ধ্বনি করেছেন। অভিবাদন জানিয়েছেন রাউলকে। রাউলের ছবি বুকে নিয়েই ভোর তিনটে থেকে সমাবেশের জায়গায় হাজির ছিলেন হেক্টর রোমান। পেশায় শিক্ষক শক্ত চোয়ালে দৃঢ়তার সঙ্গে জানালেন, একসঙ্গে আমরা তৈরি করব তেমন দেশ, যেমন আমরা চাই। এই ভাবনাই জোরের সঙ্গে প্রকাশ করলেন যুবনেতা আয়লিন আলভারেজ গার্সিয়া। ১৯৫৫ সালের আগস্ট মাসে ফিদেল কাস্ত্রোর বক্তব্য মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। ফিদেল বলেছিলেন, শুধু আজকের তরুণরা নয়, ভবিষ্যতেও কেউ গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামকে অস্বীকার করতে পারবে না। যা শুধু স্বাধীনতা বা মুক্তির জন্য ছিল না, ন্যায়বিচার আর সমতার জন্যেও ছিল। বিপ্লব রক্ষার লাখো অতন্দ্র প্রহরীদের সামনে বলতে উঠে রাষ্ট্রপতি মিগুয়েল দিয়াজ-ক্যানেল বলেন, কোনও হঠাৎ খেয়ালে সকালবেলা আমরা এই সমাবেশ করছি না। যারা গত ৬০ বছর ধরে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করছে, সেই বিদেশি হস্তক্ষেপকারীদের বিরুদ্ধে কিউবার জনগণ লড়াই করে দেশকে রক্ষা করেছেন। সেই শত্রুরাই এখন নিজেদের কিউবার রক্ষাকর্তা হিসাবে সাজাতে চাইছে। জোরের সঙ্গে তিনি বলেন, মিথ্যা, কুকীর্তি এবং ঘৃণা ছড়ানো বন্ধ করুন। কিউবা তীব্রভাবে ঘৃণার বিরুদ্ধে, কিউবা কখনও ঘৃণার দেশ নয়। ঘৃণা থেকে কোনও ভালো কিছু তৈরি হয় না। আমরা সম্প্রতি সোশাল নেটওয়ার্ক থেকে দেখছি যে এই ঘৃণা ছড়ানোর কাজ চলছে। একজন মা আমাকে গতকাল বলেছেন, তার নাবালিকা মেয়ে তাকে প্রশ্ন করেছে, ‘এটাই আমাদের কিউবা?’ ফেসবুকে প্রতিবিপ্লবীদের হিংসার ছবি দেখে সেই মায়ের চোখ জলে ভরে উঠেছিল। সবরকম নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে এই সোশাল নেটওয়ার্কের মালিকরা শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম খুলেছে ঘৃণা ছড়ানোর জন্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে সমাজতান্ত্রিক কিউবায় সরকার উৎখাতের জন্য সোশাল মিডিয়ায় তীব্র প্রচার চালানো হচ্ছে। কিউবার অভ্যন্তরে প্রতিবিপ্লবীদের নানাভাবে সাহায্য করা হচ্ছে। কিউবায় অবরোধ তীব্র করার জন্য কোভিড মহামারীর মধ্যেই ২৪০টির বেশি অবরোধের পন্থা নিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। তার জেরে সঙ্কটকে কাজে লাগিয়ে কিউবায় অস্থিরতা তৈরির জন্য মদত দিচ্ছে আমেরিকা। হিংসা, লুটপাট এবং অন্তর্ঘাতের জন্য সরাসরি আহ্বান জানাচ্ছে আমেরিকা। দিয়াজ-ক্যানেল বলেন, আমরা একটা সাইবার যুদ্ধের পরিশীলিত আগুনের মধ্যে রয়েছি। কিউবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত সপ্তাহেই এই বিষয়ে আমেরিকার যুক্ত থাকা নিয়ে সরাসরি অভিযোগ করেছিলেন। যার জবাব এখনও দেয়নি আমেরিকা। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, কেবল কিউবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটই নয়, রাষ্ট্রপতির সাইটে, গ্রানমাসহ বিভিন্ন মিডিয়া পোর্টালে সাইবার হানা হয়েছে। মিথ্যা, ভুয়া খবর-ছবি ছড়িয়ে দুনিয়াকে বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে, মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে নেমে পড়েছে আর সরকার তাদের দমন করছে। কিন্তু আমরা মানুষের পাশে রয়েছি, সাথে রয়েছি, বিপ্লব অব্যাহত থাকবে। (গণশক্তি থেকে নেওয়া)