‘কিউবার জনগণ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত রুখে দেবে’

Posted: 18 জুলাই, 2021

একতা প্রতিবেদক : সমাজতান্ত্রিক কিউবার বিপ্লবী সরকার ও জনগণের সাথে সংহতি জানিয়ে এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ মৌলিক মানবাধিকার রক্ষার রোল মডেল সমাজতান্ত্রিক কিউবার বিরুদ্ধে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে সংহতি সমাবেশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। গত ১৭ জুলাই সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য আকবর খান, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূইয়া, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা নাঈমা খালেদা মনিকা। সভা পরিচালনা করেন বাসদ নেতা খালেকুজ্জামান লিপন। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ১৯৫৯ সালের সফল বিপ্লবের পর গত ৬০ বছরে কিউবা গোটা দুনিয়ার সামনে স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ মৌলিক মানবাধিকার রক্ষার একটা রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত ৬০ বছর ধরে প্রতিবিপ্লবের মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক কিউবাকে ধ্বংস করার জন্য ও তাদের নেতা কমরেড ফিদেল ক্যাস্ট্রোকে হত্যার জন্য ৬৩৮ বার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনকারী বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু কিউবা সরকার ও জনগণের পাশে থাকা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। বাম নেতারা বলেন, কিউবা একমাত্র দেশ যে দেশের নাগরিকদের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল যারাই যুক্তরাষ্ট্রে যাবে তাদেরকে নাগরিত্ব দেয়া হবে। কিন্তু দুই একজন মাদক কারবারী, দুষ্কৃতিকারী ছাড়া কোন কিউবান ওই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। ৬০ বছর ধরে অন্যায় অবরোধ জারি রেখে চরম অর্থনৈতিক সংকটেও সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে কিউবানদেরকে পুঁজিবাদে আকৃষ্ট করতে পারেনি। কিউবার বিপ্লবী জনগণ সমাজতন্ত্রের হীরা ফেলে পুঁজিবাদের কাঁচ হাতে তুলে নিয়ে ভিখিরি হতে চায়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাত্র ৯০ মাইল দূরে সাম্রাজ্যবাদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সমাজতান্ত্রিক কিউবা মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বক্তারা বলেন, ১৯৫৯ সালে বিপ্লবের পর সাম্রাজ্যবাদের মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার নাকের ডগায় শ্রমিক শ্রেণির রাষ্ট্র মেনে নিতে পারেনি। শুরু হয় একের পর এক ষড়যন্ত্র, কর্পোরেট মিডিয়ার প্রোপাগান্ডা। এতেও কাজ না হওয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট কেনেডির অনুমতি নিয়ে সিআইএ কিউবা থেকে পালিয়ে আসা মাদক কারবারী, জুয়াড়ি, ক্রিমিনালদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রতিবিপ্লব ঘটিয়ে ফিদেল ক্যাস্ট্রোকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে চেয়েছিল। সেলক্ষ্যে ১৯৬১ সালের ১৭ এপ্রিল ১৫০০ জন কিউবান ক্রিমিনালকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে বিপুল পরিমাণ মার্সেনারি ও উচ্চ প্রশিক্ষিত শতাধিক মার্কিন সামরিক ও সিআইএ’র সম্মিলিত বাহিনী ১৬টি বি-২৬ বোমারু বিমান, ৮টি সি-৪৬ ও ৬টি সি-৫৪ পরিবহন বিমান এবং ৫টি বড় সাপ্লাই জাহাজে করে প্রচুর ট্যাংক, আর্টিলারি ট্র্রাক, গোলাবারুদ নিয়ে শুরু ইধু ড়ভ চরমং অভিযানে নেমেছিল। কিউবার পিপলস আর্মি এবং কিউবার বিপ্লবী জনতা প্রবল প্রতিরোধে ওই প্রতিবিপ্লবী ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করে। ১৭-১৯ এপ্রিল মাত্র তিন দিনের ওই অভিযানের সমাপ্তি ঘটে দখলদার বাহিনীর চরম পরাজয়ের মাধ্যমে। এতে শতাধিক দখলদার নিহত হয়, ৩০০ জন আহত হয় এবং ১২০০ জন আটক হয়। মার্কিন বাহিনীর ৪ জন নিহত হয়, অর্ধশত এজেন্ট আটক হয়। মার্কিন বাহিনীর ৭টি বোমারু বিমান, ২টি জাহাজ, সবগুলো ট্যাংক ধ্বংস হয় এবং বাকি সকল অস্ত্রশস্ত্র কিউবান বাহিনীর হস্তগত হয়। আটকৃতদের প্রায় বেশিরভাগ আটক হয় কিউবান জনগণের হাতে। বক্তারা বলেন, ৬০ বছর পরে এবারেও মার্কিন চক্রান্ত ব্যর্থ করতে লাখো কিউবান সে দেশের প্রেসিডেন্ট দানিয়েল কানেজের আহ্বানে রাস্তায় নেমেছে। আগের মতোই কিউবার বিপ্লবী জনগণ সকল ষড়যন্ত্র চক্রান্ত প্রতিবিপ্লবী অপতৎপরতা প্রতিহ করে কিউবার বিপ্লব ও সমাজতান্ত্রকে রক্ষা করবে। বাম জোটের নেতারা বলেন, কিউবা সরকার করোনা মহামারীতে নিজের দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি অন্য কেউ সাড়া না দিলেও ইতালি, ফ্রান্সসহ ২৭টি দেশে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী পাঠিয়ে বিশ্ব মানবতাকে রক্ষা করেছে। ভ্যাকসিন বাণিজ্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ৫টি টিকা আবিষ্কার করেছে। কিউবার সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা কিউবার জনগণের পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদসহ কোন বহিঃশক্তি কিউবাকে ধ্বংস করতে পারবে না বলেও বক্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তারা কিউবার সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও সরকার এর পাশে বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসীকে সংহতি জানানোর আহ্বান জানান।