শেকড়ে হাত নয়

কংকন নাগ

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে হঠাৎ করেই আলোচনায় বাহাত্তরের সংবিধানের চার মূলনীতি। গণঅভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বা চেতনার সাথে কোন রকম সম্পর্ক না থাকলেও, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সংবিধান, জাতীয় সঙ্গীতসহ বিভিন্ন মীমাংসিত বিষয় নিয়ে আলোচনার অবতারণা করে একাত্তরে পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসররা। দীর্ঘদিন মহান মুক্তিযুদ্ধের আওয়ামী বয়ান শুনে বিভ্রান্ত তরুণ প্রজন্মের একটি অংশও বুঝে-না বুঝে তাদের অযৌক্তিক দাবির সাথে সহমত জানিয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপেও বারবার উঠে এসেছে সংবিধানের চার মূলনীতি বিষয়ক আলোচনা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন এই আলোচনার অবতারণা। তার আগে আরেকবার জেনে নেয়া যাক, কী ছিল সংবিধানের চার মূলনীতিতে? ১৯৭১ সালে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্য বিজয় অর্জনের পর ৭২ সালে প্রণীত হয় সংবিধান। যেখানে চার মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে। এই চার মূলনীতি মূলত বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির নৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভিত্তি। পাকিস্তানি বর্বর শাসন থেকে মুক্তির প্রেরণা জুগিয়েছে জাতীয়তাবাদ। একইসাথে বহিরাগত আধিপত্যের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে শিখিয়েছে এই মূলনীতি। মূলনীতিতে সমাজতন্ত্র যুক্ত করার মূল লক্ষ্য ছিল- যাতে রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন, অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত হয়। গরিব ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও কর্মসংস্থানের ন্যায্য সুযোগ নিশ্চিত করার জন্যই সমাজতন্ত্র যুক্ত হয় চার মূলনীতির অন্যতম হিসেবে। গণতন্ত্রের মূল লক্ষ্য হলো, কথা বলার অধিকার, সরকার নির্বাচনের অধিকার এবং সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। ন্যায়বিচার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও জনতার অংশগ্রহণমূলক শাসনব্যবস্থার গ্যারান্টিও দেয় গণতন্ত্র। আর, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে, রাষ্ট্র কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের পক্ষে নয়, বরং সব ধর্মের মানুষের সমান মর্যাদায় বসবাস করার নিশ্চয়তা দেবে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর অনেকেই বাহাত্তরের সংবিধানকে ‘মুজিববাদী সংবিধান’ হিসেবে বর্ণনা করছেন। যারা এই কাজটি করছেন তারা মূলত মহান মুক্তিযুদ্ধকে একার কৃতিত্ব হিসেবে তুলে ধরার যে আওয়ামী অপচেষ্টা, প্রকারান্তরে তাকেই প্রতিষ্ঠা করার কাজ করছেন। অথচ, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাহাত্তরের সংবিধান কোনভাবেই শুধুমাত্র শেখ মুজিবুর রহমান বা আওয়ামী লীগের একার সংবিধান নয়। মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়া কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র-যুবকসহ লাখো মেহনতি মানুষের সকলের সম্মিলিত ইচ্ছারই বহিঃপ্রকাশ ছিল বাহাত্তরের সংবিধান। তাই, এই চার মূলনীতি শুধু সংবিধানের পৃষ্ঠা নয়, এগুলো মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা। সেগুলো বাদ দেওয়া মানে শুধু ইতিহাস বিকৃতি নয়, জনগণের অধিকার ও দেশের ভবিষ্যৎ বিপন্ন করা। আর সেজন্যই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে বারবারই সংবিধানের চার মূলনীতি পরিবর্তনের প্রস্তাবের বিরোধীতা করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। সংলাপে সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার এবং গণতন্ত্রকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করলে দেখা যাবে, এর সবগুলোই বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতির মধ্যে আগে থেকেই অন্তর্ভুক্ত করা রয়েছে। শুধু সমাজতন্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করলে যে কেউই বুঝতে পারবে, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের মতো বিষয়গুলো সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। তাই, সংবিধান থেকে সমাজতন্ত্র বাদ দেয়ার কোন যুক্তিই নেই। একইভাবে জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের মতো মূলনীতিগুলোও বহাল রাখা অত্যাবশ্যকীয়। সম্প্রতি নবগঠিত (এনসিপি) জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ যে দলগুলো এই চার মূলনীতি বাতিলের দাবি জানিয়েছে, তাদের অবশ্যই ভিন্ন কোন নেতিবাচক উদ্দেশ্য আছে। বাস্তবে এরা কোনো গণতান্ত্রিক শক্তি নয়, বরং ক্ষমতাসমর্থিত রাজনৈতিক প্রকল্প, যার লক্ষ্য হচ্ছে বিভ্রান্তি ছড়ানো, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করা এবং সংবিধানকে দুর্বল করে দেয়া। তাই, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী তরুণ প্রজন্মসহ সর্বস্তরের মানুষের সচেতন হওয়ার এখনই সময়। যারা আজ চার মূলনীতি বাতিলের কথা বলে, তারা কাল ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র কিংবা সামরিক শাসনের কথা বলবে। এদের থামাতে হবে এখনই। সংবিধানের চার মূলনীতিকে রক্ষা করা মানে বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষা করা। এই চেতনার বিরুদ্ধে যেকোনো ষড়যন্ত্র জনগণ কখনোই মেনে নেবে না। বাহাত্তরের সংবিধানের সঙ্গে আপস নয়।
প্রথম পাতা
দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরিসহ ১০ দফা দাবি চা-শ্রমিকদের
‘মুরাদনগরের ঘটনা প্রমাণ দিচ্ছে সরকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ’
‘২০ বছর লে মজুরির কথাই বলছি’
গণতন্ত্র কায়েমের লড়াইয়ে বাম গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব অপরিহার্য
গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট নানা কর্মসূচি পালন করবে সিপিবি
বাংলাদেশে বেড়েছে ধর্ষণ-গণপিটুনিতে হত্যা
ফদলস্ফজ
জুলাইয়ের ৩ দিনে হাজারের বেশি রোগী ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে
‘পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখুন’
মুক্তিযুদ্ধের স্মারক সম্বলিত দেয়াল ভেঙে ফেলায় বামপন্থিদের ক্ষোভ
বাংলাদেশ এখন কোথায়?
‘ভালোমানুষ’
শ্রমিক হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি দিন

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..