জাতীয় সম্পদ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায়

সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণের রোডমার্চ

করিডোরের বিপক্ষে ও বন্দর রক্ষায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চ অনুষ্ঠিত

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email

‘সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণের’ আহ্বানে ২৭-২৮ জুন ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চের উদ্বোধনী সমাবেশ ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত হয় [ ছবি:  রতন কুমার দাস ]
একতা প্রতিবেদক : জাতীয় সম্পদ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দাবিতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ করেছে ‘সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণ’। কর্মসূচির মূল স্লোগান ছিল- ‘মা মাটি মোহনা, বিদেশিদের দেব না’। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে না দেওয়া, স্টারলিংক ও করিডোরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধচক্রে জড়ানোর উদ্যোগ বন্ধ করা, আধিপত্যবাদী দেশগুলোর সাথে বিগত সব সরকারের আমলে স্বাক্ষরিত চুক্তি প্রকাশ ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি জানানো হয় রোডমার্চ থেকে। গত ২৭ জুন সকাল ১০ টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে দুই দিনের এই রোড মার্চ কর্মসূচি শুরু হয়ে ২৮ জুন শেষ হয়। দেশের বামপন্থি দল ও সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ‘সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণ’ এর ব্যানারে এই রোড মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। রোড মার্চ ঢাকা থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশ করে ২৮ জুন চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজে গিয়ে শেষ হবে। প্রথম দিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে শুরু করে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন অংশগ্রহণকারীরা। সেখান থেকে বিকাল ৫টায় কুমিল্লার চান্দিনায় মিছিল করে টাউন হল ময়দানে সমাবেশ করে। দ্বিতীয় দিন ফেনীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে মিরসরাই পৌঁছে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। সেখান থেকে বিকাল ৫টায় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজে সমাপনী সমাবেশ করে তারা রোড মার্চ কর্মসূচির সমাপ্তি করবেন। একই দিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় সংহতি সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হবার খবর পাওয়া গেছে। রোডমার্চ শুরুর আগে প্রেস ক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স রোড মার্চ কর্মসূচির চার দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো- নিউমুরিংসহ চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে দেওয়া চলবে না, রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে পরিচালনা করতে হবে; রাখাইনে করিডোর দেওয়ার ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে; স্টারলিংক, সমরাস্ত্র কারখানা, করিডোরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধচক্রে জড়ানোর উদ্যোগ বন্ধ করতে হবে; এবং মার্কিন, ভারতসহ সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদী দেশগুলোর সাথে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারসহ বিগত সকল সরকারের আমলে স্বাক্ষরিত সকল চুক্তি প্রকাশ করতে হবে ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী অসম চুক্তি বাতিল করতে হবে। এসময় রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আগামীকাল বিকালে চট্টগ্রাম বন্দরে ঐতিহাসিক সমাবেশের মধ্য দিয়ে আমাদের শান্তিপূর্ণ রোড মার্চ কর্মসূচি শেষ করবো। চট্টগ্রাম বন্দর দেশের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদ। দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি-হৃৎপিণ্ড। আমরা আশা করবো, বিগত সরকারের ধারাবাহিকতায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বন্দর ইজারা দেওয়াসহ যে কাজ করতে চাইছে তার থেকে তারা পিছু হটবেন। আর এটা নিয়ে আগামীকাল রোড মার্চের শেষে আর কোনও বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে হবে না। কিন্তু যদি সরকার এই দায়িত্ব পালন না করে তাহলে আগামীকাল সমাপনী সমাবেশ থেকে আমরা ঘোষণা পাঠের সাথে সাথে আন্দোলনের বৃহত্তর কর্মসূচি দেবো। এসময় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সিপিবির কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদের উপদেষ্টা খালেকুজ্জামান, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের সমন্বয়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. মুশতাক হোসেন, গণমুক্তি আন্দোলনের আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন আহমেদ নাসু, তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর ও খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সচিব বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এমএম আকাশ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লিগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাসদ (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ-এর সাধারণ সম্পাদক হারুনার রশিদ ভূইয়া, বাংলাদেশের সোসালিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, গণমঞ্চের মাসুদ খান, গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা সত্যজিৎ বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নেতা কামাল হোসেন প্রমুখ। সমাবেশের শুরুতে গণসংগীত পরিবেশন করে গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্য। এছাড়াও প্রায় ৬৫টির অধিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সংগঠন বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। রোডমার্চে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীদের হাতে বিভিন্ন স্লোগান-সংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। এসবের মধ্যে রয়েছে ‘ইন্টেরিম সরকার, সাম্রাজ্যবাদের পাহারাদার’, ‘বন্দর-করিডর’, বিদেশিদের দেব না’, জাতীয় স্বার্থবিরোধী সকল অসম চুক্তি বাতিল কর’, ‘মার্কিন ভারতসহ সকল সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও’, ‘চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া চলবে না’, ‘মার্কিন কোম্পানি স্টারলিংকের সঙ্গে চুক্তি বাতিল কর’ প্রভৃতি স্লোগান। সমাবেশে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আমরা মনে করি, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা হলো গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা। আধিপত্যবাদ আর সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আকাঙ্ক্ষা। ইতিপূর্বে বিভিন্ন আন্দোলনে প্রাণ বিসর্জন দেওয়া সব শহীদের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জানাই। আমাদের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী এই আন্দোলন দীর্ঘদিনের। রুহিন হোসেন প্রিন্স আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমরা আহ্বান করছি, অবিলম্বে বন্দর ইজারাসহ রাষ্ট্রবিরোধী করিডোর দেওয়ার চিন্তা বাদ দিতে হবে। সরকার যদি এই দায়িত্ব পালন না করে, আগামীকাল সমাবেশে ঘোষণাপাঠের সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনের বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করব। ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চ কর্মসূচিতে একাত্মতা পোষণ করেছেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বিষয়টি জানিয়ে বলেন, ‘তাঁরা শারীরিক অসুস্থতার জন্য উপস্থিত হতে পারেননি। কিন্তু তাঁরা আমাদের সঙ্গে রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, বাম ছাত্র সংগঠন, নারী সংগঠনও এই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছেন। নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনীতে হওয়া সমাবেশে বক্তারা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দেশের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদ। দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি-হৃৎপি-। আমদানি ও রপ্তানির ৯২ ভাগ এই বন্দর দিয়ে হয়। ভৌগোলিক কারণে এই বন্দরের সাথে জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা জড়িত। চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বৃহৎ ও লাভজনক টার্মিনাল হলো নিউমুরিং টার্মিনাল। এই টার্মিনালকে বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। যে প্রক্রিয়া শুরু করেছিল স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার। তার ধারাবাহিকতায় দেশ ও জনগণকে না জানিয়ে গোপনে এই উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আন্তর্জাতিক দরপত্র ছাড়াই দুবাইভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ড কোম্পানিকে চট্টগ্রামের নিউমুরিং টার্মিনালের দায়িত্ব দিতে সরকার এখন মরিয়া। সরকারের এই এখতিয়ার বহির্ভূত কর্মকাণ্ড সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে বলে মন্তব্য করেন নেতারা। এছাড়া, সরকার মিয়ানমারের রাখাইনে কথিত মানবিক করিডোর বা ত্রাণ চ্যানেল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো এই করিডোর দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে। কিন্তু মানবিক করিডোরের কথা বলা হলেও তা মার্কিনের ‘চীন ঘেরাও’ নীতির স্বার্থে যে ব্যবহৃত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে বাংলাদেশ ভূ-রাজনৈতিকভাবে আক্রান্ত হবে বলে জানান তারা। রোডমার্চের পথসভায় বক্তারা বলেন, সামরিক শিল্পের মতো স্পর্শকাতর খাতে তুরস্ক ও কাতারকে অস্ত্র তৈরির কারখানা নির্মাণের আহ্বান করেছে এই সরকার। যুদ্ধমুক্ত পৃথিবী ও বিশ্বশান্তির পক্ষে বংলাদেশের জন্য এটা সামরিক ঝুঁকি বৃদ্ধি করবে। তাই এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানান তারা।
প্রথম পাতা
‘ভালোমানুষ’
শ্রমিক হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি দিন
জুলাইয়ের ৩ দিনে হাজারের বেশি রোগী ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে
‘পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখুন’
মুক্তিযুদ্ধের স্মারক সম্বলিত দেয়াল ভেঙে ফেলায় বামপন্থিদের ক্ষোভ
বাংলাদেশ এখন কোথায়?
বাংলাদেশে বেড়েছে ধর্ষণ-গণপিটুনিতে হত্যা
ফদলস্ফজ
দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরিসহ ১০ দফা দাবি চা-শ্রমিকদের
‘মুরাদনগরের ঘটনা প্রমাণ দিচ্ছে সরকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ’
‘২০ বছর লে মজুরির কথাই বলছি’
গণতন্ত্র কায়েমের লড়াইয়ে বাম গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব অপরিহার্য
গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট নানা কর্মসূচি পালন করবে সিপিবি

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..