সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণের আহ্বানে

চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষায় ২৭-২৮ জুন রোডমার্চ

জুবাইর সজল

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email

@ DP World-এর বিরুদ্ধে বন্দর ব্যবস্থাপনায় মনোপলি কায়েমের অভিযোগ @ ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া ও আফগানিস্তানে তথাকথিত “মানবিক করিডোর” ও বন্দরের নিয়ন্ত্রণের আড়ালেই গড়ে উঠেছে মার্কিন সামরিক প্রভাব ও “ডিপ স্টেট” কাঠামো অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-নিরাপত্তাজনিত অস্থিরতার সুযোগে চলছে দেশ বিক্রির পায়তারা। চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়ন্ত্রণ কিংবা কক্সবাজার-রাখাইন সীমান্তে “মানবিক করিডোর”- দেশের সাবর্ভৌমত্ব হুমকির মুখে পরতে পারে এমন সব সিদ্ধান্তই যেন আসছে যমুনা ভবন থেকে। তবে দেশের নিরাপত্তা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সরব সিপিবি-বাসদ-বিএনপিসহ একাধিক রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। এরিমধ্যে দেশবিরোধী এসকল সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে নিজের অবস্থান নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশের সেনা প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। মবের হাতে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অক্ষম সরকারপ্রধান ড. ইউনূস ঘোষণা দিয়েছেন বন্দর-করিডোরকে রক্ষায় এগিয়ে আসা দেশপ্রেমিক জনগণকে প্রতিহত করার। এমন হুমকির সাহসের পেছনে গণহত্যাকারী-মৌলবাদী রাজনৈতিক দল কিংবা সদ্য ভূমিষ্ঠ, অনিবন্ধিত, শত শত কোটি অর্থ দুর্নীতি করা রাজনৈতিক দলের যে ছায়া রয়েছে তা সহজেই চোখে পরে। কিন্তু শোষকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রাখাইনে করিডোর বা প্যাসেজ প্রদান এবং চট্টগ্রামের নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানিকে লিজ দেওয়ার পরিকল্পনা বাতিলের দাবিতে রোডমার্চের ঘোষণা দিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চাসহ বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশ্রপ্রেমকি জনগণ। দেশ রক্ষার ঐতিহাসিক দায় থেকে মাঠে আন্দোলন গড়ে তুলছে বামপন্থিরা। ইতিমধ্যে বিভিন্ন জেলা ও ঢাকায় কয়েক দফা সভা সম্পন্ন করেছে সংগঠনগুলি। আগামী ২৭ জুন ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে রোডমার্চ শুরু হবে। ২৮ জুন চট্টগ্রামে সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ হবে। ওই সময় দেশের সব জেলা-উপজেলায়ও সংহতি সমাবেশ ও পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। এই কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে বাম প্রগতিশীল বিভিন্ন দল ও সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ। কর্মসূচি সফল করতে এরই মধ্যে গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ-প্রচারণা শুরু হয়েছে। নিউমুরিং টার্মিনাল চট্টগ্রাম বন্দরের সর্বোচ্চ সক্ষমতাসম্পন্ন ও সবচেয়ে লাভজনক টার্মিনাল। এটি বন্দরের মোট কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ৫৫% এককভাবে পরিচালনা করে এবং বছরে গড়ে ১৫-১৭ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডল করে, যা বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য মেরুদণ্ড স্বরূপ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বন্দরের রাজস্ব আয় যেখানে প্রায় ৩,৭০০ কোটি টাকা, তার বড় অংশ আসে এই টার্মিনাল থেকে। অথচ, বন্দর কর্তৃপক্ষ এটি ১০ বছরের জন্য DP World-কে লিজ দিতে চায়, তাও কোনও আন্তর্জাতিক দরপত্র ছাড়াই। যে প্রতিষ্ঠানকে সরকার বিশ্বসেরা বলছে সেই DP World-এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশে অব্যবস্থাপনা, শ্রমিক শোষণ ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ২০২১ সালে সেনেগালের ডাকার বন্দরে তাদের বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গ ও অপারেশনাল স্বচ্ছতার অভাবের অভিযোগ উঠে, যা নিয়ে দেশটির সংসদে তদন্তও হয়। খোদ মার্কিনীরাই তাদের কংগ্রেসে DP World-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ রেখেছে। ২০০৬ সালে DP World-এর অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের ৬টি প্রধান বন্দর পরিচালনার বিষয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। মার্কিন কংগ্রেস এই চুক্তি বাতিলের পক্ষে ভোট দেয়, এবং DP World চুক্তি প্রত্যাহার করে। এছাড়াও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ ও ভারতেও DP World-এর বিরুদ্ধে বন্দর ব্যবস্থাপনায় মনোপলি কায়েমের অভিযোগ রয়েছে। এমন একটি বিতর্কিত কোম্পানিকে বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর টার্মিনাল কেন দেওয়া হচ্ছে? এদিকে, কক্সবাজারে মার্কিন সেনাদের “অগ্নি নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ” ও স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান স্টার লিংকের অনুমোদন। কাতার-তুরস্কের মাধ্যমে অস্ত্র কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ, এবং রাখাইন করিডোর নিয়ে দ্ব্যর্থক অবস্থানকে কেন্দ্র করে সামরিক বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন- বাংলাদেশ ধীরে ধীরে একটি প্রক্সি যুদ্ধভিত্তিক ভূরাজনৈতিক জালে জড়িয়ে পড়ছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়- ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া ও আফগানিস্তানে তথাকথিত “মানবিক করিডোর” ও বন্দরের নিয়ন্ত্রণের আড়ালেই গড়ে উঠেছে মার্কিন সামরিক প্রভাব ও “ডিপ স্টেট” কাঠামো। ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া ও আফগানিস্তানে তথাকথিত “মানবিক করিডোর” স্থাপনের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা ওই অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি করেছে। এই করিডোরগুলোকে মানবিক সহায়তার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত বলা হলেও, বাস্তবে এগুলো সামরিক ঘাঁটি, অস্ত্র সরবরাহ কেন্দ্র এবং গোয়েন্দা নজরদারি স্থাপনায় রূপ নিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সিরিয়ায় মার্কিন ড্রোন হামলা ও আফগানিস্তানে সামরিক একাডেমি স্থাপন এই কৌশলের অংশ। বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান (বিশেষত বঙ্গোপসাগরের কাছে এবং ভারত-চীন ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে) বিদেশি বন্দর নিয়ন্ত্রণ ও মানবিক করিডোরের নামে নতুন এক “নিয়ন্ত্রিত আধিপত্যের ক্ষেত্র” হয়ে উঠতে পারে। এ অবস্থায় রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারকদের বিচক্ষণতা, গণতান্ত্রিক চাপ ও বেসরকারি পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। শুধু দেশের নিরাপত্তা-সার্বভৌমত্ব নয়- জনগণের ভোটাধিকারের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছেন ড. ইউনূস। গণতন্ত্র রক্ষায় সিপিবি-বাসদ-বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইলেও প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা করলেন আগামী জুনের সম্ভাবনার কথা। যদিও রাজনৈতিক দলগুলোর চাপে ও লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর চার মাস এগিয়ে এনে আসন্ন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সম্ভাবনার ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার সক্ষমতা ড. ইউনূসের সরকারের রয়েছে কিনা সে বিষয়টাও প্রশ্নবিদ্ধ। কেননা একদিকে যেমন জুলাই চেতনাকে পুঁজি করে গড়ে ওঠা এনসিপিকে কিংস পার্টি হিসেবে পরিচালনা করতে দেখা যাচ্ছে, অন্যদিকে দেশবিরোধী শক্তি জামায়াতে ইসলামসহ মৌলবাদী গোষ্ঠী প্রীতি রয়েছে এই সরকারের মধ্যে। আসন্ন নির্বাচনে এসকল অপশক্তিকে ক্ষমতার কেন্দ্রে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা যে ড. ইউনূসের থাকবে তা বলা বাহুল্য। এই প্রেক্ষাপটে বামপন্থি ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনতার রোডমার্চ কেবল একটি শ্রমিকস্বার্থ রক্ষার আন্দোলন নয়- এটি দেশের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও ভূরাজনৈতিক স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রাম হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষার এই দাবিকে অবজ্ঞা করা মানেই জাতীয় অর্থনীতি ও নিরাপত্তার ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া।
প্রথম পাতা
জুলাইয়ের ৩ দিনে হাজারের বেশি রোগী ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে
‘পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখুন’
মুক্তিযুদ্ধের স্মারক সম্বলিত দেয়াল ভেঙে ফেলায় বামপন্থিদের ক্ষোভ
বাংলাদেশ এখন কোথায়?
‘ভালোমানুষ’
শ্রমিক হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি দিন
‘মুরাদনগরের ঘটনা প্রমাণ দিচ্ছে সরকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ’
‘২০ বছর লে মজুরির কথাই বলছি’
গণতন্ত্র কায়েমের লড়াইয়ে বাম গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব অপরিহার্য
গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট নানা কর্মসূচি পালন করবে সিপিবি
বাংলাদেশে বেড়েছে ধর্ষণ-গণপিটুনিতে হত্যা
ফদলস্ফজ
দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরিসহ ১০ দফা দাবি চা-শ্রমিকদের

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..