উদ্ভট উটের পিঠে চড়ে চলেছে স্বদেশ!

পর্যবেক্ষক

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ বর্তমানে তরল এবং অনিশ্চিত। পরস্পরবিরোধী নানা দ্বন্দ্বে রাজনীতি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। একটি পত্রিকা লিখেছে এখন তা Big Ben এর লন্ডনের ঘড়ির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে! আসলে দেশের ৯৮ শতাংশ রাজনৈতিক দল ড. ইউনূসের কাছে দাবি করেছিল যে নির্বাচন (সংসদ) আগে হোক এবং ডিসেম্বরে হোক। শুধুমাত্র ধর্মভিত্তিক একটি রাজনৈতিক দল এবং নবগঠিত এনসিপি-র দাবি ছিল নির্বাচনের আগে জুলাই ঘোষণা অনুমোদন হোক এবং গণপরিষদ নির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচন আগে হোক। তাদের ও ড. ইউনূসের এখনকার সুনির্দিষ্ট দাবি, নির্বাচন এপ্রিলে হোক। দেশের অন্যতম বৃহৎ দল বিএনপি প্রথম থেকেই বলে আসছিলেন যে এপ্রিলে বাংলাদেশের কোন নির্বাচনই অতীতে হয় নি। কারণ সাধারণত তখন রোজা, গরম ও পাবলিক পরীক্ষা থাকে। এ সময় নির্বাচন কমিশনও বলেছেন যে, ২০২৫-এর ডিসেম্বর থেকে ২০২৬-এর জুনের মধ্যে যেহেতু ড. ইউনূস ক্ষমতায় এসেই নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সুতরাং তারা সর্বনিম্ন ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এবং সেই চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করে তারা প্রস্তুতও রয়েছেন। বামেরা বলছিলেন যে নির্বাচনী প্রয়োজনীয় ন্যূনতম সংস্কার করে ডিসেম্বরেই নির্বাচন হোক। কিন্তু অদৃশ্য কারণে বা জেদবশতঃ এখন পর্যন্ত নির্বাচনের কোন সুনির্দিষ্ট তারিখ বা রোডম্যাপ ঘোষিত হয়নি। কোন কোন অতি সন্দেহকাতর মানুষ মনে করে এপ্রিলেও হয়তো নির্বাচন হবে না। ইতোমধ্যে বিশাল লাট বহর নিয়ে ড. ইউনূস লন্ডন যাত্রা করেছেন। প্রথমে শোনা যায় যে সেখানে তিনি পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপও করবেন। সেই গুড়ে অবশ্য বালি! ষ্ট্রমার তার সঙ্গে দেখা করেননি, যদিও ড. ইউনূস এখনো বলে চলেছেন যে, ‘তিনি আশা করেন যে বিলাতের প্রধানমন্ত্রী তার নৈতিক দায়িত্ব পালন করবেন। অবশ্য এদিকে অ-নৈতিকভাবে তার সহযোগী বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ. মনসুর ঘোষণা দিয়েছেন যে পাচারকারীদের সঙ্গে আপোষ করেই নাকি পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে। এর আগে সদ্য ঘোষিত বাজেটে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল (চিরাচরিত কায়দায়!) যে কালো টাকা সাদা করার সুযোগও এবারের বাজেটে থাকবে। অনেকে একে pragmatic পদক্ষেপ বললেও কোন কোন থিংক ট্যাংক (সিপিডি, সানেম, ইত্যাদি) একে ‘অনৈতিক’ বলে অভিহিত করেছেন। জনগণ অবশ্য এসব দেখেশুনে অবাক হননি, মুচকি হেসেছেন বলেই মনে হচ্ছে। শ্রেণির ময়লা কয়লার মতো। ধুলেই চলে যায় না। দেশে এক অনিশ্চিত পরিস্থিতি। ঈদের জন্য দীর্ঘ ১০ দিন ছুটি নিয়েও সমালোচনা রয়েছে। ব্যাংকও বন্ধ অর্থনীতির চাকাও বন্ধ, বেকারত্ব ও দারিদ্র্য ক্রমবর্ধমান, সবমিলিয়ে জনগণের কষ্ট বাড়ছে ‘বই কমছে না। শুধু এক মাত্র ভরসা সবকিছুর খুব একটা দাম এখনো বাড়ছে না। কিন্তু দাম কমেও আম বিক্রি না হয়ে যে পচে যেতে পারে এবং তাতে মধ্য ও গরীব বিক্রেতাদের বিরাট সর্বনাশ হয়ে যেতে পারে সেই উল্টো প্রতিক্রিয়ার কথা কেউ ভাবছে না। মন্দায় কারখানা বন্ধ হয়ে বেকার শ্রমিকদের অবস্থা যে আরো খারাপ হয়ে যেতে পারে সে দিকটা নিয়ে কেউ ভাবছে না। কোন কোন অর্থনীতিবিদ আগে থেকেই বলছিলেন, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে প্রবৃদ্ধি বা মন্দার সঙ্গে স্থিতিশীল মূল্য, দুইটাই অর্থনীতির জন্য সমানভাবে ক্ষতিকর। ইংরেজিতে আরও সুন্দর করে টেক্সট বইয়ে লেখা আছে, growth at the cost of stability or stability at the cost of growth- কোনটাই কাম্য নয়। দেশে একেকজন একেক কথা বলছেন। ড. ইউনূস বলছেন “এপ্রিলে নির্বাচন”। সামরিক বাহিনী প্রধান বলেছেন- তার বাহিনী বেশি দিন মাঠে থাকলে সমস্যা, তাই যথাশীঘ্র ডিসেম্বরে নির্বাচন দেওয়া হোক। এক পরামর্শক বলেছেন ‘মানবিক করিডোর’ দেয়া হবে। ইউনূস বলেছেন- এটা এখনো প্রস্তাব। আর প্রস্তাবটিও আসলে “করিডোর” নয় প্রস্তাবটি হচ্ছে “প্যাসেজ”। এক নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেছেন যে বাংলাদেশ বাস্তব কারণে (practical reasons) ‘আরকান’ আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। কিন্তু অন্যদিকে মায়ানমারে একটি সরকার রয়েছে যাদের সঙ্গে এখনও রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছি আমরা- ফলে ARSA-র সঙ্গে সম্পর্কটা ঘোড়া ডিংগিয়ে ঘাস খাওয়ার মতো হয়ে যাচ্ছে। ফলে আমাদের জন্য কি একধরনের যুদ্ধ ও সার্বভৌমত্ব ঝুঁকি তৈরি হতে যাচ্ছে? এসব প্রশ্নের স্বচ্ছ স্পষ্ট কোন জবাব নেই। বলা হচ্ছে- ডাবল মুরিং কন্টেইনার বন্দরের মধ্যে ব্যবস্থাপনায় প্রচুর দুর্নীতি হচ্ছে, অথচ এওও বলা হচ্ছে- তারপরেও এতে স্থানীয় লোকদের কর্মসংস্থান হচ্ছে, সরকারের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণও থাকছে এবং এখন পর্যন্ত দুর্নীতি সত্ত্বেও আয়-উপার্জন সরকার সেখান থেকে পাচ্ছেন। কিন্তু এরপরেও ঘটা করে বিনিয়োগ সম্মেলন করে বলা হল একগাদা কথা। হটাৎ স্বপ্ন দেখানো শুরু হয়েছে যে এটা বিদেশিদের হাতে তুলে দিলে- আমরা একে দ্বিতীয় ‘সিঙ্গাপুরে’ পরিণত করে ফেলতে পারবো। কর্মসংস্থান শুধু বাড়বে না, আমাদের দক্ষ কর্মীরা দেশে বিদেশে চাকুরী নিয়ে ছড়িয়ে পড়বে। ভারত-নেপাল-চীন সবাই এই বন্দরে জাহাজ ভিড়াবে। রাধা নাচতে শুরু করবে। এসবই কি জনাব ইউনূস ক্ষমতায় থাকতে থাকতে হবে? আসলে এই কথা কেউ বলছেন না যে চট্টগ্রাম বন্দর আমাদের ষ্ট্র্যাটেজিক স্নায়ুকেন্দ্র। এর মাথা ব্যথা হলে তা কেটে ফেলাটা বা অন্যের নিয়ন্ত্রণে তুলে দেওয়াটা কোন সমাধান নয়। নিজেদের নিয়ন্ত্রণ রেখেই বিনিয়োগ ও ট্রেনিং এবং টেকনোলজি ট্র্যান্সফার করেই এই ব্যথা সারানো যেত এবং সেই চেষ্টাই নির্বাচিত সরকার করেন সেরকম দিকনির্দেশনাই ছিল কাম্য। কিন্তু এই উচ্চাকাক্সক্ষী স্বল্পকালীন অন্তর্বর্তী সরকার “পেন্ডোরার বাক্স” খুলে নানা ইস্যু সামনে নিয়ে এসে বলছেন, ‘হে জনগণ এই তোমাদের সুযোগ যা ভাল কাজ দরকার (সংস্কার!) এখনই আমি থাকতে থাকতে ইলেকট্রনিক গতিতে করে নাও।’ কিন্তু তার এখতিয়ারও নেই, ধারণাও নেই যে এগুলি সুশীল সমাজের এনজিও উপদেষ্টাদের কাজ নয়। তাদের দ্বারা তা সম্ভব নয়, বড়জোর কিছু দিকনির্দেশনা বা footprint রেখে যাওয়াই ছিল তাদের কাজ। এসব আসলে নির্বাচিত রাজনীতিবিদদের কাজ, যাদের থাকবে জনগণের ম্যান্ডেট ও জনগণের কাছে জবাবদিহির বাধ্য-বাধকতা এবং স্বচ্ছতা। থাকবে বিরোধী দলের সজাগ চেক এন্ড ব্যাল্যান্স। তাই এই মুহূর্তে দেশ অদ্ভুত সব এখতিয়ার বহির্ভূত ভাল স্বপ্ন ও কথার শিশুসুলভ ফুলঝুরিতে ভরপুর। কিন্তু সবচেয়ে খারাপটা হবে তখনই যখন এই ফাঁকে সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তি ঘোলা পানিতে তার মাছটি শিকার করে নিতে সক্ষম হবেন। নিজের স্বার্থ, দখলদারিত্ব ও শক্তিকে সংহত করে ক্ষমতা প্রলম্বিত করার সুযোগ পেয়ে যাবেন। তাই আবারো বলবো, বরং কম কিন্তু ভাল সেটাই হোক লক্ষ্য, আরো বলব, ‘এই মুহূর্তে দরকার নির্বাচিত সরকার।’
প্রথম পাতা
জুলাইয়ের ৩ দিনে হাজারের বেশি রোগী ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে
‘পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখুন’
মুক্তিযুদ্ধের স্মারক সম্বলিত দেয়াল ভেঙে ফেলায় বামপন্থিদের ক্ষোভ
বাংলাদেশ এখন কোথায়?
‘ভালোমানুষ’
শ্রমিক হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি দিন
‘মুরাদনগরের ঘটনা প্রমাণ দিচ্ছে সরকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ’
‘২০ বছর লে মজুরির কথাই বলছি’
গণতন্ত্র কায়েমের লড়াইয়ে বাম গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব অপরিহার্য
গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট নানা কর্মসূচি পালন করবে সিপিবি
বাংলাদেশে বেড়েছে ধর্ষণ-গণপিটুনিতে হত্যা
ফদলস্ফজ
দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরিসহ ১০ দফা দাবি চা-শ্রমিকদের

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..