নারীর সম-অধিকার বাস্তবায়ন কি সম্ভব?

সোহানা আহমেদ

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email

১৯ এপ্রিল ২০২৫ “সর্বক্ষেত্রে সর্বস্তরে নারীর প্রতি বৈষম্য বিলুপ্তি এবং নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের লক্ষ্যে পদক্ষেপ চিহ্নিতকরণ” শিরোনামে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকারের নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। এখানে কয়েকটি বিষয় গুরুত্বের সাথে দেখা হয়েছে; বিশেষ করে, অভিন্ন পারিবারিক আইনের বিষয়ে সুপারিশমালায় খুব আশা জাগানিয়া কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের উদ্দেশ্যে। অন্য সময়ের মতোই, অর্থাৎ যতোবারই নারীর অধিকার বিষয়ক কোনো প্রগতিশীল পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, ততোবারই ধর্মান্ধ স্বার্থান্বেষী মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলো যেভাবে মাঠ গরম করে ফেলেছে এবং তাদের অপরাজনীতি শুরু করেছে, এবারেও তেমনটাই ঘটছে। যেমন- অভিন্ন পারিবারিক আইন নাকি ইসলাম বিরোধী। তেমনটা তাদের কাছে মনে হতেই পারে; ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করা এই রাজনৈতিক দলগুলো অভিন্ন পারিবারিক আইনের বিরোধিতা তো করবেই। কারণ, তাদের কাছে বিবাহ, তালাক ইত্যাদি ক্ষেত্রে সমানাধিকার মানেই হলো নারীর দেহ ও মনকে যথেচ্ছ ব্যবহার করা, নারীর জন্য অমানবিক দুর্দশা তৈরির ‘তিন তালাক’ নামক জঘন্য প্রথা বন্ধ হয়ে যাওয়া, বহুবিবাহের ধর্মীয় বয়ান বন্ধ হওয়া, স্ত্রীর সম্পদ ও সম্পত্তি ভোগের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া, ইত্যাদি। তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে কিছু জামাতি-হিজবুতি ধরনের নারী দলের সদস্যরা, যারা পুরুষের ভোগ-বিলাসের জন্য একাধিক বিয়ে, পারিবারিক নির্যাতন ইত্যাদিকে বৈধতা দেয় ধর্মের নামে। তারা ভাবে যে, যেহেতু ধর্মে পুরুষের জন্য চার বিয়ে জায়েজ আছে, তাই এর বিরোধিতা করে অভিন্ন পারিবারিক আইন নামক নারীর জন্য মর্যাদাকর আইন প্রচলন ধর্মীয় বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। এই ধরনের নারীরা নিজেরাও অমর্যাদাকর জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে ভাবে অন্য নারীকেও অমর্যাদাকর জীবনযাপন করতে হবে। এই প্রতিবেদন বাংলাদেশে নারী অধিকার, সমতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নারী-মুক্তি আন্দোলনের পথে, দাবিদাওয়া আদায়ের দীর্ঘ পরিক্রমায় এক ধাপ এগিয়ে যাবার অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ, প্রতিবেদনে যে সকল বিষয়ের অবতারণা হয়েছে, তা আমাদের পূর্বসূরী নারীমুক্তি আন্দোলনের যোদ্ধাদের সংগ্রামেরই ফসল; এই দাবিদাওয়াগুলো তাঁরা অনেক আগে থেকেই করে গেছেন। আমাদের রয়েছে নারীমুক্তি আন্দোলনের এক গৌরবময় ইতিহাস। আমাদের সংগ্রামের পথ দেখিয়েছেন রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, ইলা মিত্র, সুফিয়া কামাল, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম-সহ সাম্প্রতিক সময়ের অনেক সাহসী নারী নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন সংগঠন। এই প্রতিবেদন তাই সেই সংগ্রামের ঐতিহ্যেরই ধারাবাহিকতামাত্র। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-উন্নয়নে অগ্রগতির উল্লেখযোগ্য দিক ছিলো সকল নাগরিকের সমান অধিকার, লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যরোধ এবং রাষ্ট্র ও জনজীবনের সকল ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমান অধিকারের স্বীকৃতি। যদিও রাজনীতি ও জনপরিসরে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, শিক্ষাখাতে নারীর অভূতপূর্ব অগ্রগতি সত্ত্বেও নারী নির্যাতন, নারীবিদ্বেষ, বাল্যবিবাহের মতো অমানবিক ও বৈষম্যমূলক চর্চাগুলো রয়েই গেছে। তাই সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ব্যক্তি জীবনে নারী-পুরুষের সমতা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। এই প্রতিবেদনের সুপারিশমালায় বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার এবং পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের জন্য করণীয় উল্লেখ করে তা বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে, যা কি না নারী অধিকার নিশ্চিত করবে এবং নারী-পুরুষ সমতার পূর্ণ নিশ্চয়তা দেবে। বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, অভিন্ন পারিবারিক আইন অর্জনের লক্ষ্যে অধ্যাদেশ জারি করার সুপারিশ করা হয়েছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশে নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য-নিরসনের লক্ষ্যে ও নারী-উন্নয়নে বিভিন্ন আইনগত, নীতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ ও কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিলো। তারই ধারাবাহিকতায়, এই প্রতিবেদনকে বলা যায় আরও উল্লেখযোগ্যভাবে জেন্ডার-সমতা অর্জনে পদক্ষেপসমূহ চিহ্নিত করার এবং সেগুলো বিভিন্ন মেয়াদে বাস্তবায়নে সুপারিশ তৈরি করার কাজটি সাহসিকতার সাথেই করতে পেরেছে। দু’একটি বিষয়ে আরও একটুখানি ব্যাখ্যার দাবি রাখা যায়। যেমন, অনুচ্ছেদ ৩.২.১.৪ এ সুপারিশমালায় প্রতিবন্ধী নারীদের অধিকার ও যৌনকর্মীদের অধিকার বিষয়ে উল্লেখ থাকলেও এলজিবিটিআইকিউ বা ভিন্ন যৌন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন সদস্যদের বিষয়ে কোনো উল্লেখ নাই। “বিষয়টি কি এমন যে, কেবলমাত্র ‘সিস’ নারীদের জন্যই সকল সুপারিশ?” যদিও ধর্ষণ আইন সংস্কারের বিষয়ে “লিঙ্গ, বয়স, ধর্ম, জাতীয়তা, ভাষা ও প্রতিবন্ধিতার পার্থক্য নির্বিশেষে নিরপেক্ষ বিচার ও আইনশৃঙ্খলা নিশিত করা”র সুপারিশ রয়েছে। আমরা জানি, বিগত সরকারগুলোর আমলে কিছু নারীবান্ধব নীতিমালা গৃহীত হয়েছিলো; যেমন পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইন, ২০১০। এই আইনটি ছিলো জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ, ১৯৭৯ ও শিশু অধিকার সনদ, ১৯৮৯ এর স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত নারী ও শিশুর সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ, পারিবারিক সহিংসতা থেকে নারী ও শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন। এছাড়াও রয়েছে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭। বর্তমান কমিশনের রিপোর্টে এই আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইন- ২০০৯ সালের মহামান্য উচ্চ আদালতের (হাইকোর্ট) রায়ের আলোকে যৌন হয়রানি, যৌন নিপীড়ন ও হেনস্তার সংজ্ঞা সুস্পষ্ট করে অধ্যাদেশ প্রনয়ণ করার সুপারিশ করা হয়েছে, যেটি ইতিবাচক। কিন্তু, নিপীড়নমূলক ব্যাবস্থা টিকে থাকে যে বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইনের কারণে, সেখানে অভিন্ন পারিবারিক আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ ব্যতীত সমতা বা সম-অধিকার যে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব না, সেটি বুঝতে সমাজের এক পক্ষ বরাবরই ব্যর্থ হয়েছে এবং এই আইনের প্রতি তারা বিষোদ্গার করেই যাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে যে, এই মৌলবাদী ধর্ম ব্যবসায়ীরা যুগে যুগে ছিলো, হয়তো ভবিষ্যতেও থাকবে। এদের বিরুদ্ধে এগিয়ে যেতেই হবে, প্রতিরোধ গড়ে তুলতেই হবে। বাংলাদেশের শ্রম আইনের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সুষ্ঠু মনিটরিং করে তা প্রয়োগ করার বিষয়টি এসেছে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে শ্রমিকের ন্যায্য মজুরির বিষয়টি নিয়ে দর কষাকষি যেন আজীবন ধরে চলতেই থাকে- এমনই দেখে আসছি। বিশেষ করে গার্মেন্টস সেক্টরের অবস্থা ভয়াবহ, মাসের পর মাস বেতন বন্ধ, ভাতা বন্ধ, আন্দোলন-সংগ্রাম, উদয়াস্ত পরিশ্রম করেও তিনবেলার বদলে দু’বেলা আধপেটা খেয়ে বেঁচে থাকা- অথচ তাতেও নাকি মালিকের উদরপূর্তি হয় না। উল্লেখ্য যে গার্মেন্টস কারখানায় অর্ধকোটির মতো কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যাগরিষ্ঠ হল নারী। মালিক বছরের পর বছর এই শ্রমিকের রক্ত-ঘাম শোষণ করেই তার বিপুল সাম্রাজ্য গড়ে তুললেও, বছর বছর নিত্যনতুন মডেলের গাড়ি কিনতে পারলেও, বছরে কমপক্ষে দুই বার সপরিবারে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা প্রমোদ ভ্রমণে যেতে পারলেও, মুনাফার লোভে এক কারখানার জায়গায় আরও দশটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে পারলেও শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা দেয়ার মতো টাকা নাকি তাদের কখনোই থাকে না। এই ব্যাপারে সরকারকে কোনোকালেই খুব একটা শক্ত হতে দেখা যায় না; হয়তো সরকারের কর্তাব্যক্তিরাই কিছু কিছু পোশাক কারখানার মালিক হয়ে থাকবেন। বরং কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে গার্মেন্টস মালিকেরা সরকারি গুন্ডা পেটোয়া বাহিনীর সাহায্য নেয় এইসব শ্রমিকদের শায়েস্তা করতে। বাংলাদেশের প্রতিটি সরকার, তা সে যে দলেরই সরকার হোক না কেন, তার কর্মীদের দিয়ে এই কাজটি করে থাকে। এই ‘লাঠিয়াল’ বাহিনী সব সময় প্রস্তুত থাকে, কখনো গার্মেন্টস শ্রমিকদের পেটাতে, কখনো বিরোধীদলের সভা পণ্ড করতে, কখনো ন্যায্য বেতনের দাবীতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ঠেকাতে। একই দৃশ্য চা শ্রমিকদের ক্ষেত্রে। ‘দাসযুগ’-এর এক নিদারুণ চিত্র যেন। একবার বাগানে শ্রমিক হিসেবে ঢুকেছে তো তার কয়েক প্রজন্ম এই দাসত্বের শিকলে বন্দী হয়ে পড়ে। এই অবস্থাকে সুযোগসন্ধানী মালিকেরা অপব্যাবহার করে তার সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে। বিগত সরকারের আমলে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরী বৃদ্ধির চাপ এসেছিলো মালিকদের উপর। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ও আশ্বাসে শ্রমিকেরা তাদের আন্দোলন থেকে সরে আসে। প্রধানমন্ত্রী চাইলেই একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত দিতে পারতেন চা শ্রমিকদের ন্যূনতম একটা মজুরি নির্ধারণ করে দিয়ে যাতে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে তিনবেলা খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার আশ্বাসটুকু পায়, তাদের সন্তানেরা শিক্ষার আলো পায়, শ্রমের বিনিময়ে যথাযোগ্য একটা মর্যাদাপূর্ণ জীবন পায়; কিন্তু আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, প্রধানমন্ত্রী মালিকের স্বার্থই দেখলেন। যৎসামান্য মজুরি বাড়ানো হলো কিন্তু তাদের সেই অ-ন্যায্য মজুরি ও দাসত্বের শৃঙ্খল আর ঘুচলো না। অর্থাৎ, দেশের প্রধান ব্যক্তিও সর্বদাই এই পুঁজিপতি শ্রেণির দাসানুদাস হয়েই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। বর্তমান সরকার থেকেও কি আমরা ভিন্ন কিছু আশা করছি? সময়ই বলে দেবে, তারা কী করতে পারবে? ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে নারীর অন্তর্ভুক্তি ও বিকাশ বিষয়ে সুপারিশমালায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদে করণীয় শিরোনামে ‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন ২০১৮’ সংশোধন করে সব পর্যায়ের ক্রীড়া কর্মকাণ্ড ও কাঠামোতে সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা, জাতীয় ক্রীড়ানীতি ২০২৩’-এর খসড়া অনুমোদন করে বাস্তবায়ন করা, বেতন বৈষম্য দূর করা, ইত্যাদি খুব সুন্দর সুন্দর সুপারিশ এসেছে। অথচ এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেই আমরা দেখেছি কিছুদিন আগে কিশোরীদের ফুটবল খেলা রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে; সরকার কোনও পদক্ষেপই নেয়নি, খেলা চালিয়ে নিতে প্রশাসন কোনও সহযোগিতাও করেনি। তারা মৌলবাদীদের হম্বিতম্বিতে এতই ভয় পেলেন যে শেষ পর্যন্ত খেলাই বন্ধ হয়ে গেল? আমরা কি এই ‘প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না-নেয়া’ সরকারের কাছেই নারী খেলোয়াড়দের জন্য সমানাধিকার চাইবো? আমাদের কি আশায় বুক বাঁধার বাস্তবতা আছে! সংস্কার কমিশনের নেতৃবৃন্দকে বেশ তৃপ্ত মনে হয়েছে, যেন-বা বিশাল একটা কাজ করে ফেলেছেন। এমনকি আমার মতো ছা-পোষা কেরানীরাও খুশী হয়েছিলাম এই ভেবে যে, সংস্কারের একটা সুযোগ যখন এসেছে, সেই সুযোগটা কাজে লাগুক। কিন্তু আদতে আমরা কী দেখতে পাবো শেষমেশ? অগাস্ট থেকে বাংলাদেশে শুরু হয়েছে ভয়াবহ রকমের হত্যাযজ্ঞ, সংখ্যালঘু নির্যাতন, নারী ধর্ষণ, রেহাই পায়নি শিশুরাও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা দেখেছি কীভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে মব লেলিয়ে দিয়ে ব্যাপকভাবে নারী নির্যাতন চলেছে, নারীকে পথে-ঘাটে অপমান অপদস্ত করা হয়েছে, বয়স্ক মানুষও অপমানিত ও নির্যাতিত হয়েছেন, শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করে পদত্যাগ করানো হয়েছে, কোমলমতি ছাত্রদের মিথ্যা আশ্বাসের আড়ালে পড়ালেখা বাদ দিয়ে হিংস্র ও উন্মাদ বানিয়ে দেয়া হয়েছে, পাড়ায় পাড়ায় কিশোর গ্যাং গুলোকে কাজে লাগানো হয়েছে মব তৈরিতে- একটা ঘটনারও কি বিচার হতে দেখেছি আমরা? বরং দেখেছি, অগাস্টে কারাগার থেকে হাজারো কয়েদীকে নিরাপদে পালিয়ে যাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে, জুলাই-অগাস্টের শত শত হত্যাকারীদেরকে ইনডেমনিটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাহলে, কার কাছে আমরা সততা আশা করছি, সংস্কারের আশা করছি, নারীর বিরুদ্ধে যতো প্রকার বৈষম্য রয়েছে, তার বিলোপের আশা করছি? আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত শুধুমাত্র স্বামীর হাতেই ৭১ জন নারী হত্যাসহ ৩৮৭টি শিশু নির্যাতনের ঘটনা, ৩৮৭টি নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা, ৭১টি গণ-ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে- একটা ঘটনারও কি বিচার হয়েছে? নারী-পুরুষের সমতার প্রতি সংবেদনশীলতা তৈরির জন্য সচেতনতা সৃষ্টির বিষয়ে বলতে হয়, বছরের পর বছর ধরে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য এই সমতাধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করার জন্য সামাজিক সচেতনতা বিষয়ক কর্মসূচি কি হয়নি, বা ছিলো না? তাতে নারীর প্রতি অসম্মান প্রদর্শন, নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ কি কমেছে? কর্মক্ষেত্রে ‘বদলে যাবা’র প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঘরে ফিরেই পরিবারের নারী সদস্যদের ওপর চড়াও হওয়া, এ যেন এক কখনোই-শেষ-না-হওয়া (বিরামহীন) একটা চক্র চলতেই থাকে। কীভাবে এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব? নিশ্চয়ই প্রচলিত আইন-কানুনে যতো প্রকার বৈষম্যমূলক আইনের ধারাগুলো রয়েছে সেগুলোর অবসান বা বিলুপ্তি এবং তার সাথে সমতা, ন্যায্যতা আর ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে আইন প্রনয়ণ করা। এই কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, সকল পরিকল্পনাই পরস্পর যুক্ত থাকে পরস্পরের সাথে- কোনো না কোনো ভাবে। নারীর জন্য অধিকার আদায়ের সংগ্রাম চলতেই থাকবে; পথ আটকে দেবার জন্য মৌলবাদীরা ছুটে আসবে, সেই বাধা ভেঙেই নারীকে এগিয়ে যেতে হবে। তারপরও, আশা জাগানিয়া প্রতিবেদনের জন্য সাধুবাদ জানাই নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনকে। লেখক : শিক্ষক

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..